অর্থ উপার্জনের সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে ব্যবসা করা। তবে স্বল্প পুঁজি নিয়ে কি ব্যবসা করা যায়, তা নিয়ে আমাদের অধিকাংশেরই ভাবনা। তাই আপনাদের জন্য সেরা ৬টি ২ লাখ টাকায় লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া আলোচনা করা হবে এই লেখাতে।
যেকোনো ব্যবসা শুরুর আগে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনি কোন ধরনের ব্যবসা করতে চান, কেমন ব্যবসা আপনার জন্য উপযুক্ত হবে, আপনার মূলধন অনুসারে কি কি ব্যবসা করা যাবে তা বিচার-বিশ্লেষণ করে নিতে হবে।
অনেকের কাছেই পুঁজি থাকলেও সঠিক দিকনির্দেশনার ও পরিকল্পনার অভাবে অনেকেই ব্যবসা শুরু করতে পারছে না। তাই মধ্যম পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে, সেরা ৬টি ২ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়া জেনে নিন এখানে।
২ লাখ টাকায় লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া
(১) বেকারি ব্যবসা
২ লাখ টাকায় ব্যবসা শুরু করতে চাইলে, এই পুঁজিতে আদর্শ একটি ব্যবসা হলো বেকারি আইটেম নিয়ে ব্যবসা করা। বেকারিতে তৈরি খাবারের চাহিদা ছিল সর্বদাই। ভালো কোয়ালিটির কিছু দেশি ও বিদেশি বেকারি আইটেম নিয়ে কাজ শুরু করতে পারলে, অল্প দিনের মধ্যেই ব্যবসাটি বড় করতে পারবেন।
আপনার এলাকার জনবহুল একটি স্থানে দোকান ভাড়া নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। প্রাথমিক অবস্থায় আপনার বেকারিতে বিভিন্ন ধরনের রুটি, বাটার বন, বিস্কুট, টোস্ট, পেস্ট্রি, বিভিন্ন ধরনের কেক ইত্যাদি আইটেম রাখতে পারেন। পরবর্তীতে চাহিদার ভিত্তিতে আইটেম বাড়াতে পারবেন। এছাড়াও আপনি চাইলে “লাইভ বেকারি” দিতে পারেন। বর্তমানে লাইভ বেকারির খাবারের চাহিদা অনেক বেশি।
বেকারি ব্যবসার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে:
- জনবহুল স্থানে একটি দোকান।
- বেকারির ডেকোরেশন, চুলা তৈরি, জ্বালানি ও অন্যান্য সরঞ্জাম।
- খাবার তৈরীর সরঞ্জাম ক্রয়।
- কাঁচামাল ক্রয়।
খেয়াল রাখবেন আপনার খাবার তৈরির স্থানগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে, সেই খাবারের চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুনঃ ৭টি ১ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়া ২০২৪
(২) গার্মেন্টস স্টক লট পন্যের ব্যবসা

গার্মেন্টস স্টক লট পন্য বলতে সে সকল পণ্যকে বোঝানো হয়, যেগুলো গার্মেন্টসে তৈরির পর ক্রেতার কাছে বিভিন্ন কারণে পৌঁছাতে না পারায় গার্মেন্টসে স্টক হয়ে পড়ে থাকে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্প কারখানা গুলো তুলনামূলক কম বললে তাদের পণ্য বাজারে ছেড়ে দেয়।
এ সময় আপনি পাইকারি রেটের চেয়েও কম মূল্যে পণ্য কিনে, নিজে বিক্রি করতে পারবেন। অথবা, নিজের লভ্যাংশ রেখে খুচরা দোকানিদের কাছেও বিক্রি করতে পারবেন।
সাধারণ কাপড়ের ব্যবসা গুলোতে প্রতি ১ লক্ষ টাকা ইনভেস্টে যদি ২০,০০০ টাকা লাভ করা যায়, তাহলে স্টক লট ব্যবসায় প্রতি লাখে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব।
গার্মেন্টস স্টক লট পন্যের ব্যবসা শুরু করতে আপনার প্রয়োজন হবে:
- প্রাথমিকভাবে ২ লক্ষ টাকা পুঁজি।
- আপনার টার্গেটেড বাজার নির্ধারণ।
- মার্কেটিং এবং চলমান বাজার সম্পর্কে ধারণা।
- নির্দিষ্ট কোন পণ্য ক্রয়ের আগে, তার বাজার চাহিদা জেনে নেওয়া।
আরও পড়ুনঃ বর্তমান সময়ের সেরা ৭টি স্টক মালের ব্যবসা আইডিয়া।
(৩) মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট ও ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা

বর্তমানে প্রায় সর্বত্রই এই ব্যবসাটির প্রচলন হয়ে গেছে। আপনি যদি সঠিক জায়গা বুঝে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের ব্যবসা শুরু করতে পারেন, তাহলে অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব।
আমরা প্রায় সকলেই এখন লেনদেনের ক্ষেত্রে বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায় ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকি। এই মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমগুলোর চাহিদা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এজেন্ট হয়ে এই মাধ্যমগুলোতে লেনদেন করা একটি লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া।
সবচেয়ে বেশি প্রচলিত বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এজেন্টদের লাভের পরিমাণ হলো- প্রতি ১০০০ টাকা লেনদেনে ৪.২৮ টাকা। পাশাপাশি ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা চালু রেখে প্রতি ১০০০ টাকা রিচার্জে ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা পাবেন।
মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট ও ফ্লেক্সিলোড ব্যবসার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে:
- জনবহুল স্থানে একটি ছোট্ট দোকান।
- ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স।
- কোম্পানির SR দের সাথে কথা বলে এজেন্ট নিবন্ধন করা।
- মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রাথমিক বিনিয়োগের জন্য ১ লক্ষ + টাকা।
(৪) ছোট গ্যারেজের ব্যবসা
আপনার নিজের এলাকায় একটি ছোট গ্যারেজ দিয়েও ২ লাখ টাকায় ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। এই ব্যবসার জন্য গ্রাম্য এলাকা হলো আদর্শ স্থান।
সাধারণত গ্রামগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যারেজ নেই। তাই গ্রাম্য এলাকার মোটরসাইকেল, অটো রিকশা, সিএনজি ইত্যাদি যানবাহনগুলো মেরামতের জন্য একটি ছোট গ্যারেজ দিতে পারলে অনেক বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব।
আপনার যদি গ্যারেজের কাজ সম্পর্কে পূর্ব ধারনা থাকে, তাহলে এই ব্যবসাটি আপনার জন্য আদর্শ হতে পারে। ধীরে ধীরে ব্যবসা বড় হলে আপনার গ্যারেজে উপরোক্ত যানবাহন গুলো মেরামতের পাশাপাশি গাড়ির বিভিন্ন পার্টস এবং জ্বালানির তেলও বিক্রি করতে পারবেন।
ছোট গ্যারেজের ব্যবসা শুরু করতে আপনার প্রয়োজন হবে:
- রাস্তার পাশে একটি দোকান ভাড়া। (দোকানের সামনে খালি জায়গা থাকলে ভালো হয়)
- গাড়ি মেরামতের যাবতীয় সরঞ্জাম।
- প্রাথমিক অবস্থায় কিছুটা মার্কেটিং খরচ।
- সম্ভব হলে গাড়ির ছোটখাটো পার্টস পাইকারি বাজার থেকে কেনা।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায় ২০২৪
(৫) কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে ব্যবসা

কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউশন ডিলারশিপ নিয়ে ১-২ লক্ষ টাকার মধ্যে লাভজনক ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। বর্তমানে বাংলাদেশে হাজারো নতুন নতুন কোম্পানি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিজেদের পণ্য বিক্রির জন্য ডিলার নিয়োগ দিয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে আপনার নিজের এলাকায় ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে কোন একটি ছোট/ মাঝারি পরিসরের কোম্পানির ডিলারশিপ নিতে চাইলে ১-২ লক্ষ টাকায় শুরু করতে পারবেন। সাধারণত অধিকাংশ ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসার ক্ষেত্রেই মুদির দোকানগুলোকে টার্গেট করা হয়। এছাড়াও আরো বিভিন্ন পণ্যের ডিলারশিপ নিতে পারবেন।
ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা শুরু করতে আপনার প্রয়োজন হবে:
- প্রাথমিকভাবে কোম্পানিতে ইনভেস্ট ১-১.৫ লক্ষ টাকা।
- ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স এবং স্থানীয় বাজার চাহিদা ও মার্কেটিংয়ের ধারণা।
- প্রতিদিন পণ্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে একটি পরিবহন ভ্যান (২০-৩০ হাজার টাকা)।
- পণ্য রাখার জন্য একটি গোডাউন।
সাধারণত কোম্পানি থেকে ডিস্ট্রিবিউটরদের ৬-১৩% পর্যন্ত লভ্যাংশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি আপনার অধীনে একজন সেলসম্যানকে ১৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেতনে কোম্পানি থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। আপনি যদি নিজেই ডিলার হওয়ার পাশাপাশি সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ (SR) হতে পারেন তাহলে আর বেশি লাভবান হতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ অনলাইন আয় করার সহজ উপায় জেনে নিন।
(৬) কসমেটিকস পন্যের ব্যবসা
কসমেটিকস পণ্যের চাহিদা প্রায় সর্বত্রই কম-বেশি রয়েছে। সাধারণত বিভিন্ন বাজারে/ মার্কেটে যে কসমেটিকস পণ্যের দোকানগুলো দেখে থাকি, সেগুলোতে অনেক টাকা ইনভেস্ট করতে হয়। তবে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে কিংবা জনবহুল এলাকাতে আরো কম টাকায় এই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
আপনি যদি কসমেটিকস পণ্যের ব্যবসার জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা বাছাই করতে পারেন, তাহলে এই ব্যবসায় অধিক লাভবান হতে পারবেন। স্থানীয় এলাকায় ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দোকানে তুলতে পারলে বেচাকেনা অনেক বেশি হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারি বাজারগুলো থেকে পণ্য নিয়ে আপনার দোকানে বিক্রি করতে পারবেন।
কসমেটিকস পন্যের ব্যবসা শুরু করতে আপনার প্রয়োজন হবে:
- উপযুক্ত স্থানে একটি দোকান ভাড়া নেওয়া।
- দোকানটি জাঁকজমকপূর্ণভাবে ডেকোরেশন করা বাবদ ৫০,০০০ টাকা।
- শুরুতে ১.৫ লক্ষ টাকার পণ্য উত্তোলন করা।
এছাড়াও এই ধরনের দোকানগুলোতে আপনি বাচ্চাদের খেলনা আইটেমও বিক্রি করতে পারবেন।
শেষকথা
উপরোক্ত ব্যবসা গুলো ছাড়াও আরো অনেক ২ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়া রয়েছে। যেমন: ক্যাটারিং সার্ভিস ব্যবসা, নিজের বাড়িতে মৎস্য কিংবা পোল্ট্রি খামার করা, ছোট রেষ্টুরেন্টের ব্যবসা ইত্যাদি।
এছাড়াও আপনি যদি এমন কোন ব্যবসা আইডিয়া পেয়ে থাকেন, যেগুলো এখনো আপনার এলাকাতে শুরু হয়নি, তাহলে সেই ব্যবসাগুলোর দিকে বেশি লক্ষ্য রাখতে পারেন। কারণ পরবর্তীতে সেই ব্যবসা গুলোকে বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।