সিভি লেখার নিয়ম অথবা বায়োডাটা লেখার নিয়ম বাংলায় এই আর্টিকেলটি পড়তে এসেছেন, তাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের জীবনের চলার পথে প্রায়শই নিজেকে পরিচয় দিতে হয়। কিন্তু এই পরিচয় যখন অফিসিয়ালি দেওয়া লাগে তখন তাকে বায়োডাটা বা জীবন বৃত্তান্ত বলে।
বায়োডাটা বা জীবন বৃত্তান্তে আমি কে, আমার কী পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা কী? এসব উল্লেখ্য করতে হয়। কিন্তু আমরা বায়োডাটা লেখার নিয়ম অনেকেই জানি না। সিভি লেখার নিয়ম সঠিকভাবে না জানার কারণে চাকরির আবেদন করতেও ভয় লাগে। আজ আমরা “বায়োডাটা লেখা নিয়ম বাংলায়” এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কীভাবে বায়োডাটা লিখতে হয় বা সিভি লেখার নিয়ম গুলো জানবো।
সিভি লেখার নিয়ম সম্পর্কে কী কী বিষয় জানবো?
১. বায়োডাটা কী?
২. বায়োডাটা লেখার নিয়ম বাংলায়।
৩. সিভি কী?
৪. সিভি লেখার নিয়ম।
৫. রিজুম কী?
৬. রিজুম লেখার নিয়ম।
৭. ইংরেজিতে সিভি লেখার নিয়ম।
৮. বিয়ের বায়োডাটা কী?
৯. বাংলায় বিয়ের বায়োডাটা লেখার নিয়ম।
১০. ইংরেজিতে বিয়ের বায়োডাটা লেখার নিয়ম।
বায়োডাটা লেখার নিয়ম বাংলায়: বায়োডাটা কী?
বায়োডাটা একটি ইংরেজি শব্দ এর অর্থ “biographical details” বা “জীবন বৃত্তান্ত”, “জীবন সংক্রান্ত তথ্য”। অর্থাৎ আপনার জীবন সংক্রান্ত তথ্যগুলো যে ডকুমেন্টে থাকবে, তাকে আমরা বায়োডাটা বলতে পারি। বায়োডাটায় আপনার পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা অভিজ্ঞতা ইত্যাদি উল্লেখ্য থাকবে।
বায়োডাটা লেখার নিয়ম বাংলায়: CV সিভি কী?
CV, সিভির পূর্ণ নাম “Curriculum Vita” এটার বাংলা হলো জীবনের ঘটনাক্রম। আমাদের দেশে সিভি শব্দটি খুবই পরিচিত। নাটক, সিনেমা কিংবা বাস্তব জীবনেও চাকরির কথা বললেই, মাথায় আসে সিভি জমা দেওয়ার বিষয়টি। কিন্তু সিভি সবচেয়ে বেশি দরকার হয় উচ্চশিক্ষা কিংবা বিদেশে উচ্চশিক্ষা বা পিএইচডি করতে গেলে। কর্পোরেট দুনিয়ার সিভি এবং একাডেমিক সিভি আলাদা।
একাডেমিক সিভিতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ে করা বিভিন্ন প্রজেক্টগুলো এবং সেগুলোর রেজাল্ট। থিসিস টপিক, শিক্ষা জীবনে পাওয়া পুরস্কার, কোন বিষয়ে পড়তে আগ্রহী ইত্যাদি জিনিস উল্লেখ্য থাকে। একাডেমিক সিভি কত পৃষ্ঠায় লিখতে হবে তা নির্দিষ্ট থাকে না। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে ৬৯ পৃষ্ঠার সিভিও জগতে বিদ্যমান।
তবে আপনারা জেনে অবাক হবেন, সুইডেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক পুরস্কার পেয়েছেন বাঙালির গর্ব অমর্ত্য সেন। উনার সিভি ৩০ পৃষ্ঠা। চাইলে আপনি (scholar.harvard.com) এই ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখতে পারেন। মোটকথা, একাডেমিক সিভিতে জীবনের সকল শিক্ষাগত যোগ্যতা, গবেষণা, ডিগ্রি, পুরস্কার লিখতে হবে। তবে চাকরির সিভি ভিন্ন। চাকরির সিভি সর্বোচ্চ দুই পৃষ্ঠার হতে হয়। পরবর্তী ধাপে চাকরির সিভি লেখার নিয়ম জানবো।
আরো পড়ুন: প্রায়শই জিজ্ঞেস করা হয় এমন ১২৫টি জব ইন্টারভিউ প্রশ্ন
বায়োডাটা লেখার নিয়ম বাংলায়: রিজুম কী?
“Resume” এটি একটি ফরাসি শব্দ। যার অর্থ সংক্ষিপ্ত করা। চাকরিতে নিয়োগ লাভের উদ্দেশ্যে যে জীবন বৃত্তান্ত লেখা হয় তাকে রিজুম বলে। রিজুমে সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যক্তিগত তথ্য ও শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা লিখতে হয়। মোট কথা, চাকরির সিভিকে রিজুম বললে দোষ হবে না। তবে এটা সাধারণত তাদের জন্য প্রযোজ্য, যারা সবেমাত্র লেখাপড়া শেষ করেছে এবং চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বায়োডাটা, সিভি, রিজুম; এগুলোর মধ্যে পার্থক্য কী?
“বায়োডাটা লেখার নিয়ম বাংলায়” এই আর্টিকেলে এগুলোর পার্থক্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। বায়োডাটা ও সিভির মধ্যে পার্থক্য: বায়োডাটা হল আপনার জীবন বৃত্তান্ত। এখানে ব্যক্তিগত তথ্য বেশি প্রাধান্য পাবে। যেমন: উচ্চতা, গায়ের রঙ, ধর্ম, জাতীয়তা, জাতীয় পরিচয়পত্র নং ইত্যাদি।
কিন্তু সিভিতে আপনার সংক্ষিপ্ত আকারে সাধারণ ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সমূহের বিবরণ থাকবে। মূল কথা হলো, সিভিতে আপনার কর্মকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। সেখানে আপনার কাজ ও অভিজ্ঞতার বর্ণনা লিখবেন।
সিভি ও রিজুম এর মধ্যে পার্থক্য: চাকরির সিভি ও রিজুম মোটামুটি একই রকমের হলেও এর মাঝে সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য আছে। সিভি চাকরির ক্ষেত্র ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। কিন্তু রিজুম বেশিরভাগ সময় চাকরির জন্যই ব্যবহার হয়।
রিজুমে আপনার সাধারণ ব্যক্তিগত তথ্যের সাথে শুধুমাত্র শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা যোগ করতে হয়। যেমন: আপনার জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার সন ও জিপিএ এবং সেটার সাথে পূর্বে কোনো কাজ করেছেন কি না সেটা উল্লেখ্য করতে হয়।
কেননা যারা চাকরি নিয়োগ দেয়, তাদের কাছে অসংখ্য চাকরির প্রার্থীর ডকুমেন্ট জমা হয়। প্রতিটি ডকুমেন্ট অতটা সময় ধরে দেখা সম্ভব হয় না। তারা শুধু আপনার কাজ করার দক্ষতার উপর বেশি জোর দেয়। কেননা আপনার কাজ করার দক্ষতা না থাকলে তো কোম্পানি আপনাকে দিয়ে লাভবান হতে পারবে না। এবার বোঝা গেলো সিভি ও রিজুম এর মধ্যে পার্থক্য।
আরো পড়ুন: আবেদন পত্র লেখার নিয়ম | দরখাস্ত লেখার নিয়ম
রিজুম ও সিভির মধ্যে পার্থক্য কী, তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।
- রিজুম একটি পেজে হওয়া উচিত।
- সিভি এক বা দুই কিংবা অভিজ্ঞতা অনুসারে পেজ বাড়তে পারে।
- রিজুম, যারা প্রথমবার কোনো চাকরিতে যাচ্ছেন অর্থাৎ শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরিতে আবেদন করতে যাচ্ছেন, তারা এটা ব্যবহার করবেন।
- সিভিতে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়। এটা সাধারণত অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের জন্য। মানে যারা অনেক বছর চাকরি করেছেন তাদের জন্য।
বায়োডাটা লেখার নিয়ম বাংলায়
বায়োডাটা লেখার নিয়ম সঠিকভাবে না জানলে হাস্যরসের পাত্র হতে হয়। বায়োডাটা লেখার নিয়ম হচ্ছে বায়োডাটায় যে তথ্যগুলো থাকবে, তা অবশ্যই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলবে। যেমন: আপনার নাম লেখার পর আপনার পিতার নাম না লিখে যদি শিক্ষাগত যোগ্যতা লেখেন, তবে সেটা অসুন্দর দেখাবে। বায়োডাটা লেখার নিয়ম ভালো করে জেনে লিখলে, সেটা আপনার স্মার্ট হওয়াকে নির্দেশ করবে।
আরো পড়ুন : প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম
বায়োডাটা কীভাবে লিখতে হয় :
- প্রথমে আপনার নাম।
- আপনার পিতা-মাতার নাম।
- আপনার জন্ম তারিখ।
- আপনার বর্তমান ঠিকানা বা অস্থায়ী ঠিকানা।
- আপনার স্থায়ী ঠিকানা।
- আপনার উচ্চতা।
- আপনার রক্তের গ্রুপ।
- আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা।
- আপনার পেশা। এখানে আপনারা এর আগে কোন ফিল্ডে কাজ করেছেন এবং কত বছর তার বিবরণ লিখবেন। অর্থাৎ আপনার কী কী কাজের অভিজ্ঞতা আছে এবং কী কী কাজ করতে পারেন তা লিখবেন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা অবশ্যই মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর সাহায্যে টেবিল বানিয়ে লিখবেন। প্রথম কলামে পরীক্ষার নাম। দ্বিতীয় কলামে বোর্ড বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম। তৃতীয় কলামে শিক্ষাবর্ষ। চতুর্থ কলামে জিপিএ।
এই হলো একটি আদর্শ বায়োডাটা। তবে আরও অধিক তথ্যের জন্য এখানে জাতীয় পরিচয়পত্র নং, পাসপোর্ট নং, ব্যবসায়ী হলে ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স নং যোগ করতে পারেন। সবশেষ আপনার ইমেইল ও ফোন নম্বর দেবেন।
সিভি লেখার নিয়ম বাংলায়
সিভি কীভাবে লিখবেন? সিভি কীভাবে লিখতে হয়? এগুলো জানতে হলে আগে একটি আদর্শ সিভি দেখতে হবে। সেটা দেখেই আপনি সিভি কীভাবে লিখতে হয় তা সম্পর্কে একটি ধারণা পাবেন। আমরা আপনাদের সুবিধার্থে এখানে কিছু সিভি যুক্ত করে দিয়েছি।
চাকরির জন্য সিভি কীভাবে লিখতে হয়? কোন ফরমেটে সিভি লিখতে হয়, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে পারেন। মনের মাঝে প্রশ্ন আসতে পারে সিভি কত দীর্ঘ হবে? ধারাবাহিকভাবে সব প্রশ্নের উত্তর উল্লেখ্য করছি।
প্রথমত আপনি কিসের জন্য সিভি লিখবেন তা নির্ধারণ করুন। যদি একাডেমিক সিভি লেখেন, তাহলে সেখানে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি যে সকল বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন সেগুলো লিখবেন। থিসিস, প্রোজেক্ট, পুরস্কার ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ্য করবেন।
চাকরির সিভি লেখার নিয়ম:
- প্রথমে আপনাকে সিভির অবজেক্টিভ বা সামারি ঠিকমতো লিখতে হবে। (Objective / summary)
- শিক্ষাগত যোগ্যতা সুন্দর করে লিখতে হবে। (Educational qualification)
- আপনার সাথে যোগাযোগ করার তথ্য। (Contact information)
- দক্ষতা। (Skill)
- রেফারেন্স। (Reference)
আসুন এবার এগুলোর বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।
সিভি লেখার নিয়ম: অবজেক্টিভ বা সামারি (objective / summary)
সামারি / অবজেক্টিভ কী? ক্যারিয়ারে আপনার কী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে সেটাই সুন্দর করে লেখাকে বলে অবজেক্টিভ বা সামারি। আপনার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যটা অবশ্যই সংক্ষেপে লিখতে হবে। কিন্তু এক লাইনে নয়। সাধারণত ছোট ছোট চার-পাঁচটি বাক্য নিয়ে লিখতে হয়। (আপনি যদি নতুন হন তাহলে অবশ্যই কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তি দ্বারা লিখিয়ে নেবেন। কেননা একেক চাকরিতে এক এক রকম অবজেক্টিভ প্রয়োজন হয়।)
সিভি লেখার নিয়ম: যোগাযোগের তথ্য (contact information)
আপনার সাথে যোগাযোগ করার তথ্যই হলো কন্টাক্ট ইনফরমেশন।
- আপনার নাম।
- প্রফেশনাল টাইটেল।
- ইমেইল এড্রেস।
- মোবাইল নম্বর।
- লিঙ্কডইন (LinkedIn)
- বাড়ির ঠিকানা।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় মনে রাখতে হবে। সেটা হলো, এখানে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা খুবই জরুরী। ইমেল এর আগে কখনোই নাম আসবে না। বাড়ির ঠিকানা সব সময় শেষে রাখতে হবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা (Educational Qualification): সিভি লেখার নিয়ম
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পড়ালেখার সঠিক বিবরণ না দিলে কেউই আপনাকে চাকরি দিতে চাইবে না। এই অংশটা খুবই মনোযোগের সাথে লিখতে হবে। সামান্যতম ভুল করা যাবে না। এখানে বায়োডাটার মতো টেবিল বানাতে হবে না।
- প্রথমে আপনার ডিগ্রির নাম (অবশ্যই বোল্ড অক্ষরে)
- তারপর বিষয়। ( বিজ্ঞান, মানবিক, কমার্স ইত্যাদি)
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম।
- প্রয়োজনে বোর্ডের নাম।
- সর্বশেষে পাশ করার সাল লিখবেন।
সিভি লেখার নিয়ম: কাজের অভিজ্ঞতা (Work Experience)
চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞাপন থেকে দেখে নেবেন তারা কী ধরনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক চায়। সেই চাহিদা অনুযায়ী আপনার অভিজ্ঞতা থাকলে আপনি তা আগে উল্লেখ্য করবেন। যদি প্রাসঙ্গিক কোনো অভিজ্ঞতা আগে উল্লেখ করার বদলে অন্য কোনো অভিজ্ঞতা লেখেন তাহলে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক নাও পেতে পারেন।
কেননা নিয়োগকর্তারা খুব দ্রুত সিভি দেখে এবং শুধু তাদের চাহিদা মোতাবেক তথ্যগুলোই আগে দেখে। যদি আপনার লেখার ধরন তাদের পছন্দ না হয় তবে চাকরির আশা ছেড়ে দিতে হবে।
সিভি লেখার নিয়ম: দক্ষতা (Skill)
আপনার কাজের দক্ষতার কথা লিখতে হবে। অবশ্যই তারা কী ধরনের দক্ষতা চায় তা জেনে বুঝে লিখবেন। যেমন: তাদের প্রধান চাহিদা মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে পারদর্শীতা। আপনি মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর পাশাপাশি ওয়েব ডিজাইনিং জানেন। এখন কোনটা আগে উল্লেখ্য করবেন? অবশ্যই মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর দক্ষতা।
সিভি লেখার নিয়ম: রেফারেন্স (reference)
কখনোই আপনি আপনার আত্মীয়-স্বজনের রেফারেন্স দেবেন না। আপনি যার মাধ্যমে কাজ শিখেছেন বা কর্মস্থলের সিনিয়র কারো নাম উল্লেখ্য করবেন। মনে রাখবেন যাদেরকে রেফারেন্স হিসেবে রাখবেন, অবশ্যই তাদের অনুমতি নিয়ে নেবেন। দয়া করে ভুল তথ্য কখনো দেবেন না। রাজনৈতিক পরিচয় তো কখনোই দেবেন না।
কোন ফরমেটে সিভি লিখবেন?
দুনিয়ার সকল নিয়োগকর্তা সিভির ফরমেটে আপনার পরিচয়, ঠিকানা, কন্টাক্ট, লিঙ্কডইন ইত্যাদি চাইবে। ক্যারিয়ার summary লেখার জন্য বলবে। আপনার কাজগুলো তুলে ধরতে বলবে। শিক্ষা ও প্রফেশনাল প্রাপ্তি গুলো উল্লেখ্য করতে বলবে। কী কী কোর্স করেছেন, তা লেখা লাগবে। এগুলোই আসল, তবে গুছিয়ে ও সৌন্দর্যের জন্য অবশ্যই সিভির ফরমেট কীভাবে হবে তা জানা দরকার।
“বায়োডাটা লেখার নিয়ম বাংলায়” এই আর্টিকেলে সিভি লেখার নিয়ম তথা সিভি লেখার ফরমেট সম্পর্কে সবিস্তারে বলবো।
সিভির ফরমেট
- আপনার যদি পিসি বা ল্যাপটপ না থাকে তবে স্মার্টফোনে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ডাউনলোড করে নিন এবং সেখানে লিখুন।
- তারও আগে একটি খাতায় খসড়া লিখে ফেলুন। তাহলে টাইপ করতে ভুল হবে না।
- আপনার তথ্য যদি বেশি পরিমাণে হয় তবে মার্জিন ছোট করে নিবেন।
- A4 মাপের কাগজ ব্যবহার করবেন।
- এমনভাবে তথ্যগুলো লিখুন যাতে সর্বোচ্চ দুইটি পৃষ্ঠা লাগে।
- পার্সোনাল কন্টাক্ট এর তথ্যাদি অতিরিক্ত পরিমাণে দেওয়ার দরকার নেই।
- সেকশন গুলো আলাদা আলাদা করে লিখুন। প্রতিটি হেডিং সামান্য বড় করে লিখলে সুন্দর দেখায়।
- ফন্ট হিসেবে সাধারণ ফরমাল ফন্ট ব্যবহার করতে হবে। যাতে এক পলক দেখলেই বোঝা যায় কী লেখা আছে। ফ্রন্ট হিসেবে এরিয়াল বা কনস্টান্টশিয়া ব্যবহার করবেন। প্যাঁচানো অক্ষর পরিহার করবেন।
- কখনোই দীর্ঘ প্যারা লিখবেন না। চেষ্টা করবেন বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করতে। বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করে পূর্ব চাকরির অভিজ্ঞতা লিখবেন। এতে করে সিভির সৌন্দর্য ফুটে উঠবে।
- মনে রাখবেন এক সেকশনের তথ্য, অর্ধেক এক পৃষ্ঠায় অর্ধেক অন্য পৃষ্ঠায় যেন না হয়। এটা খুবই গুরুত্ব সহকারে লক্ষ্য রাখবেন। এমনটা হলে সিভি কেমন যেন দৃষ্টিকটু বা বেখাপ্পা লাগে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস : সিভি লেখার নিয়ম
- যে প্রতিষ্ঠানে সিভি জমা দেবেন, সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগে থেকে একটু রিসার্চ করে নেবেন। সেখানকার সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য রাখতে হবে সিভিতে।
- অপ্রাসঙ্গিক কিছু লেখা যাবে না।
- হাজারো সিভির মাঝে আপনার সিভি যেন নিয়োগকর্তার নজরে পড়ে, সেজন্য সেই রকম সুন্দর করেই লিখতে হবে।
- আপনি যদি ইমেইলে সিভি পাঠাতে চান তবে অবশ্যই পিডিএফ করে পাঠাবেন। কেননা ইমেইল করতে গিয়ে হঠাৎ ভুলেতে কিবোর্ডের কোনো বাটন প্রেস হয়ে গেলো, কিন্তু সেটা আপনার নজরে পড়লো না। তবে সিভির বারোটা বেজে গেছে। কেননা সিভিতে একটি অক্ষর ভুল হওয়া মানে আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হওয়া। এই ভুলটা অনেকেই করে থাকেন।
সিভি লেখার নিয়ম: কমন ভুলগুলো
- নিজের নামের সাথে মিল রেখে ইমেইল এড্রেস ব্যবহার না করা। আমরা অনেক সময় (popatlal420@gmail.com / terenaam120@gmail.com) এমন ধরনের উদ্ভট টাইপের ইমেইল এড্রেস ব্যবহার করি। যা একদমই করা উচিত নয়। সব সময় নিজের নামের সাথে মিল রেখে সংক্ষিপ্ত ইমেইল এড্রেস ব্যবহার করুন। সবচেয়ে ভালো হয় চাকরির জন্য আলাদা একটি ইমেইল ব্যবহার করা।
- সিভি এবং ছবি কখনোই আলাদা আলাদা ভাবে পাঠাবেন না। পাসপোর্ট সাইজের ছবি সিভির ডান দিকে একদম উপরের কোণায় লাগাবেন। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড হতে হবে সাদা। টি-শার্ট বা গেঞ্জি পরে কখনোই ছবি তুলবেন না। হালকা নীল বা হালকা সবুজ রঙের শার্ট ব্যবহার করবেন।
- ইমেইলে সব সময় সাবজেক্ট ইংরেজিতে লিখবেন। কেননা বাংলায় লিখলে তা গ্রহণযোগ্যতা হারায়।
- তথ্যগুলো এলোমেলো লিখবেন না। শিক্ষাগত যোগ্যতা লেখার সময় একটি ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন।
উল্লেখ্য যে, আপনি সর্বশেষ যে ডিগ্রী অর্জন করেছেন সেটা উপরে লিখবেন এবং সেই ক্রমানুসারে সকল ডিগ্রি গুলো লিখবেন। - সার্টিফিকেটগুলোতে আপনার যে নাম ও জন্মতারিখ রয়েছে সেটাই দেবেন। বংশ, পদবীর নাম গুলো যদি সার্টিফিকেটে ভুল থাকে তাহলে ভুলটাই দেবেন। কেননা ইন্টারভিউ-এ সিভির সাথে যখন সার্টিফিকেট মেলাবে, তখন নিয়োগকর্তারা সেখানে অমিল লক্ষ্য করলে আপনার প্রতি নেগেটিভ ধারণা পোষণ করবে।
ভুলগুলো আহামরি কোনো ভুল নয়। কিন্তু এই ছোট্ট ভুলের কারণেই আপনি চাকরি নামক সোনার হরিণ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। তাই ভুলগুলোকে ছোট করে দেখবেন না। ভুলগুলো এড়িয়ে চলবেন।
রিজুম লেখার নিয়ম
রিজুম মূলত তাদের জন্য, যারা সবেমাত্র শিক্ষাজীবন শেষ করেছে। আপনাদের যাদের চাকরির পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তারা অভিজ্ঞতার স্থলে আপনাদের দক্ষতা লিখুন। কী কী কোর্স করেছেন তা লিখুন। রিজুমে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার পূর্ণ বিবরণ দিতে হবে। রিজুম অবশ্যই এক পৃষ্ঠার হতে হবে। রিজুম লেখার ক্ষেত্রে রেফারেন্স হিসেবে আপনার শিক্ষককে উল্লেখ্য করতে পারেন।
- ইংরেজিতে বায়োডাটা লেখার নিয়ম
- ইংরেজিতে সিভি লেখার নিয়ম
- ইংরেজিতে রিজুম লেখার নিয়ম
“বায়োডাটা লেখার নিয়ম বাংলায়” আর্টিকেলে যেভাবে উল্লেখ্য করেছি, এই সবগুলো সেই একই নিয়মে লিখতে হবে। শুধু বাংলার জায়গায় ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করবেন।
“বায়োডাটা লেখার নিয়ম বাংলায়” এই আর্টিকেল পড়ে এতক্ষণে নিশ্চয় জেনে গেছেন বায়োডাটা লেখার নিয়ম , রিজুম লেখার নিয়ম সমূহ। তবুও হয়তো আপনি অনেক দ্বিধায় আছেন। আপনার লেখা আর্টিকেলটি আদর্শ হল কি না? এতই যদি কনফিউশনে থাকেন তবে jobscan.com এই ওয়েবসাইটে গিয়ে সিভি তৈরি করতে পারেন। ভালো খবর হচ্ছে, এটা ব্যবহার করতে পারবেন সম্পূর্ণ ফ্রি এবং এটা আন্তর্জাতিকভাবে চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য তৈরি।
এটা ব্যবহার করা অতটা জটিল নয়। এটার বিশেষ সুবিধা হলো, এটায় আবেদন ট্রেকিং ব্যবস্থা আছে। এটি একটি সিভিকে ডেটাবেজ করে সাজিয়ে রাখে। কোনো কোম্পানি যখন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়, তখন কোম্পানিগুলো খুব সহজে এখান থেকে চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এটার ব্যবহার খুবই সহজ। এটাতে আপনার কাছ থেকে তথ্য চাওয়া হবে। আপনি এক দিক দিয়ে তথ্যগুলো দিবেন আর অটোমেটিক সিভি তৈরি হবে।
কী বেশ মজার না? এখানে আপনি বিদেশের চাকরির নিয়োগ প্রার্থীদের আদর্শ সিভিগুলো দেখতে পারেন।
সিভি লেখার নিয়ম সম্পর্কে কিছু মতামত: সিভি অনেক ফরমেটেই লেখা যায়। তবে আমরা এখানে বাংলাদেশে প্রচলিত সিভি লেখার নিয়ম দেখিয়েছি ও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সিভির পিডিএফ গুলো দেখার পর যদি এই আর্টিকেলের সাথে কিছু অমিল লক্ষ্য করেন তবে ঘাবড়ে যাবেন না।
বাংলায় বিয়ের বায়োডাটা লেখার নিয়ম
আমরা বায়োডাটা লেখার নিয়ম শিখেছি। সিভি লেখার নিয়ম শিখলাম। অনেকেই আছেন চাকরি পেয়ে গেছেন। এবার অনেকেই আছেন বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু কীভাবে বিয়ের বায়োডাটা লিখবেন তা জানেন না।
আসুন, বিয়ের বায়োডাটা লেখার নিয়ম শিখে নিই।
বিয়ের বায়োডাটা লেখার ক্ষেত্রে আপনার জীবনের পূর্ণ বৃত্তান্তের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে শুধু ধর্মের নাম দিলেই হয় না। ধর্মের অনুশাসন মানেন কি না। কিংবা কতটুকু মানেন সেটা উল্লেখ্য করা লাগে। ধর্ম সম্পর্কে কী ধারণা রাখেন সেই সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে হয়।
- বিয়ের বায়োডাটা লেখার নিয়ম গুলো কী কী?
- বিয়ের বায়োডাটা কীভাবে লিখবেন?
- বিয়ের বায়োডাটা কোন ফরমেটে সাজাবেন?
- বিয়ের বায়োডাটায় সর্বপ্রথম বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম লিখতে হয়। অন্য ধর্মের হলে তাদের ধর্মীয় বাক্য লিখবে। যেমন: প্রভু করুনাময়, ঈশ্বর সর্বশক্তিমান।
- এরপর আপনার পূর্ণ নাম লিখবেন। এখানে আপনার ডাক নাম ব্র্যাকেটে দিতে হবে।
- আপনার জন্ম সাল।
- আপনার উচ্চতা।
- আপনার ওজন।
- রক্তের গ্রুপ।
- কোনো রোগ আছে কি না? কিংবা কোনো বড় ধরনের এক্সিডেন্ট হয়েছে কি না, তা উল্লেখ করবেন।
- আপনার গায়ের রঙ।
- পাত্র-পাত্রী হিন্দু হলে তাদের জাত লিখতে হবে।
- বৈবাহিক অবস্থা। ( যদি পূর্বে বিবাহিত হয়ে থাকেন তাহলে সেই স্বামী বা স্ত্রীর নাম। কোনো সন্তান থাকলে সেই সন্তানদের নাম। অবশ্যই সন্তানদের বয়স ও কী করে তা উল্লেখ করতে হবে)
- শিক্ষাগত যোগ্যতার পূর্ণ বিবরণ।
- পেশা।
- আপনার ঠিকানা। (এখানে সংক্ষিপ্ত ঠিকানা ব্যবহার করবেন না। এমন ভাবে ঠিকানা লিখুন যাতে চিঠি আপনার ঠিকানায় পৌঁছাতে পারে।)
এরপর হলো পারিবারিক বিবরণের পালা
- পিতার নাম। সেই সাথে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশা।
- মাতার নাম এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশা।
- ভাই বোন কতজন এবং আপনি কত নম্বর সেটা উল্লেখ্য করবেন।
- প্রতিটি ভাই এবং বোনের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, বৈবাহিক অবস্থা লিখতে হবে। (ভাবিদের নাম উল্লেখ না করলেও চলবে। তবে দিতে চাইলে দিতে পারেন। অবশ্যই দুলাভাইদের নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশা দিতে হবে।)
- এরপর আপনার চাচার বিবরণ।
- চাচা কতজন এবং আপনার পিতা কত নম্বরে সেটা উল্লেখ করুন।
- চাচাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা ও বৈবাহিক অবস্থা দিন। (ফুফু বা চাচীদের ব্যাপারে সাধারণত কেউ লেখে না। তবে ফুফু / চাচিদের মধ্যে যদি কেউ ভালো কোনো সরকারি চাকরিজীবী বা বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়ে থাকে, তবে সেটা উল্লেখ করলে ভাল হয়।)
এরপর নানার বাড়ির বিবরণ
- নানার নাম। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশা।
- নানীর নাম। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশা।
- নানার বাড়ির পূর্ণ ঠিকানা।
- মামা/ খালা কতজন সেটা লিখতে হবে এবং আপনার মা কত নম্বর সন্তান তা উল্লেখ করতে হবে। (মামির নাম উল্লেখ না করলেও সমস্যা নেই।)
- খালার নাম ও তাদের বৈবাহিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা। ( খালা যদি বিবাহিত হয়ে থাকে তবে খালুর নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পেশা উল্লেখ্য করবেন।)
এরপর পাত্র-পাত্রীর ব্যক্তিগত তথ্যাদি
আপনি কেমন ধরনের জীবনসঙ্গী পছন্দ করেন। কী করতে ভালো লাগে। শখ কী। এগুলো উল্লেখ্য করতে পারেন। তাহলে সেটা বিবাহ-পরবর্তী জীবনে কাজে দিবে।
ধর্ম সম্পর্কে কী ধরনের বিশ্বাস ও তার বিবরণ দিতে হবে।
- ধর্ম কী?
- মাযহাব/ ফিক্বহ বা আকিদা কী?
- ব্যক্তি জীবনে ধর্ম কতটুকু পালন করেন।
এছাড়া পাত্র-পাত্রী পক্ষের চাহিদা মোতাবেক বিভিন্ন তথ্য যুক্ত করা যেতে পারে।
বিয়ের বায়োডাটায় ছবি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের বায়োডাটায় কেমন ধরনের ছবি দেবেন?
বিয়ে বায়োডাটায় পাসপোর্ট সাইজের ছবির চেয়ে একটু বড় ছবি দিতে হয়। সেখানে হাস্যজ্জল মুখের ছবি মানানসই। কোমর পর্যন্ত ছবি দেবেন। তাহলে আপনার আকার আকৃতি সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। অবশ্যই ছবিটা বেশি পরিমাণে এডিট করবেন না। নচেৎ সামনাসামনি দেখলে আশাহত হবে।
১০০ সিভি ফরমেট ডাউনলোড করুন
ভিজিটরদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা:
আমরা আমাদের “বায়োডাটা লেখার নিয়ম বাংলায়” এই আর্টিকেলে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি সিভি লেখার নিয়ম, রিজুম লেখার নিয়ম, বিয়ের বায়োডাটা লেখার নিয়ম ভালোভাবে উপস্থাপন করতে। তবুও যদি আপনার নজরে কোনো ভুল-ভ্রান্তি পরে, তাহলে সেটা নিশ্চয়ই দৈব ভুল। আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা অবশ্যই তা সংশোধন করে নেব। আপনার দিন শুভ হোক।
আপনর উপস্থাপন যথেষ্ট ভালো লেগেছে ধন্যবাদ