বাংলাদেশের বাজার চাহিদা অনুযায়ী সেরা ৭টি স্টক মালের ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে জানতে পারবেন এখানে।
মূলত কম দামে পণ্য মজুদ করে যখন বাজার চাহিদা বৃদ্ধি পায় তখন নিজের লাভের হার যুক্ত করে বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করাকেই আমরা স্টক মালের ব্যবসা বলে থাকি। বর্তমানে বাংলাদেশে এই ব্যবসা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
অনেক ব্যক্তি রয়েছে যারা নিজেদের অর্থ কোথায় ইনভেস্ট করবে তা বুঝতে পারছে না। তাই আপনাদের জন্য বর্তমান সময়ের সেরা ৮টি স্টক মালের ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হলো।
স্টক মালের ব্যবসা আইডিয়া
(১) খেজুরের স্টক বিজনেস
অল্প পুজি বিনিয়োগ করে স্টক মালের ব্যবসা করে লাভবান হওয়ার জন্য খেজুর একটি উপযুক্ত পণ্য। খেজুরের চাহিদা বছর জুড়ে থাকলেও, সারাবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খেজুর পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে আপনি সততার সাথে ভিন্ন কন্ঠ অবলম্বন করে লাভজনক ব্যবসা করতে পারবেন।
বাংলাদেশের খেজুর ব্যবসায়ীরা রমজান মাসের জন্য খেজুর মজুদ করে, রমজান মাসে বেশি দামে বিক্রি করে। কিন্তু যেহেতু রমজান মাসে সর্বত্র খেজুর পাওয়া যায়, তাই আপনি এসময় পাইকারি দরে খেজুর কিনে সংরক্ষণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার পণ্য আমদানি করার বাড়তি খরচও বহন করতে হবেনা।
পরবর্তীতে আর যখন খেজুরের উৎপাদন হয় না, তখন এর দামও অনেক বেশি থাকে। তখন আপনি লাভের হার যুক্ত করে বিক্রি করতে পারবেন। এসময় আপনি ৬০ টাকা দরে কেনা খেজুর ১৫০-২০০ টাকায় এবং ২০০ টাকা দরে কেনা খেজুর ৩২০-৪০০ টাকা/কেজি পর্যন্ত বিক্রি করতে পারবেন। তাছাড়া খেজুরের এমন প্রকার রয়েছে, যেগুলো কেজিপ্রতি ১,৮০০-৩,৫০০ টাকা পর্যন্তও বিক্রি হয়।
আরও পড়ুনঃ সেরা ৬টি ২ লাখ টাকায় লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া।
(২) মধুর স্টক ব্যবসা
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটু ঘুরপাক করলেই দেখা যায় কত ব্যবসায়ীরা মধুর ব্যবসা করছে। শীতকালে মধুর চাহিদা ৩-৪ গুণ বৃদ্ধি পায়। তাই গরমকালে যখন মধুর চাহিদা কম থাকে তখন মধু সংরক্ষণ করে রাখলে, শীতকালে আপনার লভ্যাংশ যুক্ত করে সেই মধুর ব্যাপক ব্যবসা করতে পারবেন।
অন্যদিকে, মধু খুব সহজেই সংরক্ষণ করে রাখা যায়। কারণ এটি পচনশীল খাদ্যদ্রব্য নয়। আবার বর্তমানে অনেকেই তাদের চাষকৃত মধু বিক্রি করে থাকে। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে সংগ্রহ করা মধু তুলনামূলকভাবে কম পাওয়া যায় এবং সেগুলোর চাহিদাও অনেক বেশি হয়।
তাই আপনি যদি প্রাকৃতিক মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করতে পারেন, তাহলে তা কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু এর জন্য আপনাকে অর্গানিক ফুড প্রোভাইডার হিসেবে বিশ্বস্ততা অর্জন করতে হবে (যেমনঃ Ghorer Bazar BD)। আপনি যদি প্রাকৃতিক খাদ্য বিক্রির বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পারেন, তাহলে অনলাইনে কিংবা অফলাইনে মধুর ব্যবসা করতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ ফেসবুক থেকে আয় করার উপায় ২০২৪
(৩) ডিম এর স্টক ব্যবসা

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের প্রতিদিনের ডিমের চাহিদা প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ পিস বা তারও বেশি। সেই হিসেবে প্রতি মিনিটেই প্রায় ৩১ হাজারেরও বেশি ডিম প্রয়োজন।
অত্যন্ত চাহিদা সম্পন্ন হওয়ায় ডিমের বাজারদর প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনার কাছে যদি মধ্যম পরিমানে মূলধন থাকে, তাহলে ডিম সংরক্ষণের জন্য একটি উপযুক্ত গুদামঘর তৈরি করে বিভিন্ন খামারিদের কাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
খেয়াল রাখবেন, ডিম অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি খাদ্য উপাদান। তাই এটি সূক্ষ্মতার সাথে পরিবহন করতে হয় এবং হালকা ঠান্ডা তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। তবুও সংরক্ষণের কিছুদিনের মধ্যেই স্বল্প লাভেই বিক্রি করে দিতে পারেন। ডিমের ক্ষেত্রে ১০-১২% পর্যন্ত লাভের হার পাওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায় ২০২৪
(৪) পেঁয়াজ এর স্টক ব্যবসা
খাদ্য ফসলের মধ্যে অন্যতম চাহিদা সম্পন্ন হলো পেঁয়াজ। সাধারণত শীতকালে যখন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, তখন এর বাজার মূল্য কিছুটা কম থাকে।
এসময় পেঁয়াজ এর স্টক বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ কিনে সংরক্ষণ করে, পরবর্তীতে পেঁয়াজের উপাদান কমে গেলে তখন সেগুলো বাড়তি দামে বিক্রি করা যায়। তাছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন উৎসব এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় পেয়াজের দাম বেশি থাকে।

স্বাভাবিকভাবেই এসময় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পায়। তাই আপনি যদি এর ১-২ মাস আগে পেঁয়াজ কিনে সংরক্ষণ করেন, তাহলেও উপযুক্ত সময়ে বাজারে ছেড়ে ভালো পরিমান ইনকাম করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আপনার আশেপাশে কোন ভালো মানের কোলেস্টেরল/ হিমাগার থাকলে এবং বেশি বিনিয়োগ করতে পারলে ব্যবসাটি সহজ হবে।
সাধারণত বাংলাদেশে পেঁয়াজের স্টক ব্যবসায়ীরা পণ্য ক্রয় ও আনুষাঙ্গিক খরচ বাদ দিয়েও তাদের বিনিয়োগের ১২%-২০% পর্যন্ত নীট লাভ করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ৭টি ১ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়া ২০২৪
(৫) আলুর স্টক ব্যবসা
বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আলুর ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু বছরব্যাপী চাহিদা থাকলেও এই সবজিটি বছরব্যাপী চাষ হয় না। তাই শীতকালে আলু মজুদ করে রাখলে বছরজুড়ে তা বিক্রি করতে পারবেন। তাছাড়া আলু পচনশীল হলেও তা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।
অন্যান্য স্টক মালের ব্যবসার তুলনায়, আলুর স্টক ব্যবসা অনেক বেশি লাভজনক। ধরে নিন, “আপনি শীতকালে ২০-২৫ টাকা/কেজি দরে উৎপাদনকারীদের থেকে আলু কিনে নিলেন। তারপর কোলেস্টেরলে সেই পন্য ২-৩ মাস রেখে সংরক্ষণ করলেন এবং তারপর বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তা বিক্রি শুরু করলেন।

এক্ষেত্রে মজুদকরণ ও বাজারজাতকরণ সহ আপনার কেজি প্রতি আরো ৫-৭ টাকা খরচ হতে পারে। তারপর সেই আলু আপনি খুচরা ব্যবসা করলে ৪৫-৬০ টাকা এবং পাইকারি ব্যবসা করলে ৪০ টাকা/কেজি দরে বিক্রি করতে পারবেন। তাহলে আপনার কেজিপ্রতি ১৫-৩০ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারবেন।
(৬) জামা কাপড়ের স্টক ব্যবসা
স্টক ব্যবসার কথা বললে জামা কাপড়ের স্টক মালের ব্যবসা অন্তর্ভুক্ত করতেই হয়। সাধারণত শীতকালের জামাকাপড় গরমকালে এবং গরমকালের জামাকাপড় শীতকালে তেমন ব্যবহার করা হয় না।
আপনার আশেপাশের মার্কেটগুলোতে দোকানিরা যখন শীতকালের জন্য দোকানে জামাকাপড় উত্তোলন করে, তখন সকল জামা কাপড় বিক্রি হয় না। এ সময় দোকানদারেরও সেই জামাকাপড় বিক্রি করে মূলধন সংগ্রহ করে আবার গরমের জামাকাপড় দোকানে উঠাতে হয়।
এসময় অনেক ব্যবসায়ীরা শীতের পোশাক প্রায় অর্ধেক দামেও বিক্রি করে দেয়। এমতাবস্থায়, আপনি যদি সেই পোশাকগুলো কিনে পরবর্তী বছরের শীতকালে বিক্রি করেন, তাহলে লাভবান হতে পারবেন। একইভাবে গরমকালের জামাকাপড়ের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। তাছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির স্টক লট পণ্য নিয়েও এভাবে ব্যবসা করা যায়।
এক্ষেত্রে আপনার কাছে শুধু জামাকাপড় গুলো কিনে রাখার মূলধন এবং সঠিকভাবে সংরক্ষণের উপযুক্ত স্থান থাকলেই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখবেন, পণ্যের কোয়ালিটি এবং বাজার চাহিদা না বুঝে ক্রয় করলে, পরবর্তী বছরে তার চাহিদা নাও থাকতে পারে।
আরও পড়ুনঃ অনলাইন আয় করার সহজ উপায় জেনে নিন।
(৭) ইটের স্টক ব্যবসা
স্টক মালের ব্যবসা করার জন্য আপনার মূলধন অনেক বেশি হলে, আপনি ইটের ব্যবসা করতে পারেন। সাধারণত বর্ষাকালে দেশের বহু ইটের ভাটা বন্ধ থাকে। এসময় ইট উৎপাদন হয় না।
তাই শুকনো মৌসুমে তুলনামূলক কম দামে বিপুল পরিমাণে ইট সংগ্রহ করে রাখলে, বর্ষাকালে সেগুলো বাড়তি দামে বিক্রি করতে পারবে। আর প্রায় সারা বছরই মানুষের ইটের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
শেষকথা
বাংলাদেশের অসংখ্য স্টক মালের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সিন্ডিকেট তৈরি করে পণ্যের বাজারমূল্য বৃদ্ধি করে। এক্ষেত্রে আপনি যদি এই ব্যবসা করেন, তাহলে আপনার উচিত হবে সিন্ডিকেট বহির্ভূত কাজ করে বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা।
স্টক মালের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে, যখন কোন পণ্যের যোগান বাজারে কম থাকবে, তখন তা বিক্রি করে দিবেন। অসাধু ব্যবসায়ীদের মতো বাড়তি লাভের আশায় সেগুলো জমিয়ে রাখবেন না।