৭টি ১ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়া ২০২৪

৭টি ১ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়া ২০২৪

আপনার কাছে যদি ১ লক্ষ টাকা মূলধন থাকে এবং উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা থাকে, তাহলে বর্তমান সময়ের সেরা ১ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়া গুলো সম্পর্কে জেনে নিন এখানে। 

বাংলাদেশের বেকারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান না থাকা, কারিগরি দক্ষতা না থাকা এবং মোটা অংকের মূলধন না থাকার কারণে অনেকেই বেকারতা থেকে মুক্ত হতে পারছে না। কিন্তু আপনি যদি পরিশ্রমী হোন তাহলে মাত্র ১ লক্ষ টাকা মন্ত্র নিয়েই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

আপনাদের জন্য এই আর্টিকেলে বাছাই করা ৭টি ১ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। 

১ লাখ টাকায় ব্যবসা

(১) টি-শার্ট ডিজাইন ও প্রিন্টিং ব্যবসা

টি-শার্ট ডিজাইন ও প্রিন্টিং ব্যবসা
টি-শার্ট ডিজাইন ও প্রিন্টিং ব্যবসা

বর্তমান সময়ে অল্প বুঝিতে ব্যবসা করার জন্য একটি আদর্শ ব্যবসা হলেও টি-শার্ট ডিজাইন ও প্রিন্টিং ব্যবসা। এই ব্যবসাটি শুধুমাত্র অল্প পুঁজির ব্যবসা-ই নয়, বরং আপনি চাইলে ধীরে ধীরে নিজস্ব একটি ব্র্যান্ডও তৈরি করতে পারবেন।

এক কালারের সাদামাটা টি-শার্ট নিয়ে, তার মধ্যে সুন্দর ও আকর্ষণীয় ডিজাইন প্রিন্ট করে উচ্চ দামে বিক্রি করা যায়। এর জন্য আপনি বিভিন্ন পাইকারি মার্কেট থেকে কমদামে সাধারণ টি-শার্ট কিনে নিবেন।

আপনি প্রথমে ডিজাইনিং শিখে নিলে, নিজে নিজেই টি-শার্ট ডিজাইন করতে পারবেন। অথবা, বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করেও বিভিন্ন ডিজাইন তৈরি করা যায়। সে সকল ডিজাইন টি-শার্ট গুলোতে প্রিন্ট করিয়ে নিয়ে একটি কোয়ালিটি টি-শার্ট তৈরি করতে পারবেন।

এই ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রাথমিকভাবে আপনি ১ লাখ টাকায় ব্যবসার জন্যঃ

  • সাধারন টি-শার্ট,
  • প্রিন্টিং মেশিন বা সরঞ্জাম,
  • এবং গ্রাফিক ডিজাইন সফটওয়্যার
  • ডিজাইনিং কোর্স করা ইত্যাদি করে নিতে হবে।

এই ধরনের ব্যবসা অনলাইনে এবং অফলাইনে করা সম্ভব। এমনভাবে ব্যবসা করে অনেকেই মাসিক ২৫,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারে। পাশাপাশি ধীরে ধীরে নিজের নিজস্ব ব্যান্ডের নামে টি-শার্ট বিক্রি করে ব্যবসাটি আরও প্রসারিত করা সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ বর্তমান সময়ের সেরা ৭টি স্টক মালের ব্যবসা আইডিয়া

(২) অটোরিকশা ব্যাটারি চার্জিং ও গ্যারেজ ব্যবসা

বাংলাদেশে অটো রিকশার ব্যাপক ব্যবহার থাকায় ব্যাটারি চার্জিং ও রক্ষণাবেক্ষণ একটি খুবই প্রয়োজনীয় ব্যবসা। সাধারণত দেশের অটো রিক্সা গুলো প্রতিদিনই পরিবহন সেবা দেওয়ার পর রাতে চার্জ দিতে হয়।

এক্ষেত্রে অধিকাংশ অটোরিকশা চালকদের গাড়ি নিরাপদে রাখার এবং চার্জ দেওয়ার জন্য উপযুক্ত জায়গা থাকে না। তাই আপনি যদি অটোরিকশা ব্যাটারি চার্জিং ও গ্যারেজ ব্যবসা শুরু করতে পারেন, তাহলে অনেক রেগুলার কাস্টমার পেতে পারেন। 

এক্ষেত্রে প্রতিদিন রাতে ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য ১৫০-২৫০ টাকা পর্যন্ত নিতে পারবেন। সেখানে আপনার খরচ হবে মাত্র কয়েক ইউনিট বিদ্যুৎ বা ২০-৫০ টাকা। আর গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাকি টাকা নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে একটু প্রসারিত জায়গা থাকলে আপনি ১৫-৩০ টি পর্যন্ত অটোরিকশা রাখতে পারবেন। 

এই ব্যবসা শুরুর জন্য আপনাকে: 

  • একটি প্রসারিত জায়গায় টিনের বেড়া নির্মাণ করে গ্যারেজ তৈরি করতে হবে। 
  • বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ মিটার নিতে হবে। 
  • অটোরিকশা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। 

বড় পরিসরে করতে চাইলে খরচ অনেক বেশি হলেও, আপনি ছোট পরিসরে ১-১.৫ লক্ষ টাকায় ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। অথবা, আপনি চাইলে ১-১.৫ লক্ষ টাকায় অটোরিকশা কিনে ভাড়ায় চালাতে দিয়েও ইনকাম করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ লাভজনক ৭টি ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া

(৩) ফাস্ট ফুডের ব্যবসা

ফাস্ট ফুড ব্যবসার চাহিদা বর্তমান সমাজে অনেকাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের বেকার তরুন সমাজ এখন এই একমালিকানা ব্যবসার দিকে ঝুকছে। কারন এই ব্যবসাতে অল্প পুজি বিনিয়োগ করেই ভালো পরিমান ইনকাম করা সম্ভব। একটি ছোট ফাস্ট ফুড স্টল দিয়ে বার্গার, স্যান্ডউইচ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, এবং রোল ইত্যাদি খাবার বিক্রি শুরু করতে পারবেন। 

বর্তমানে শহরাঞ্চলে এই ব্যবসা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তবে আপনি যদি গ্রামাঞ্চলেও থাকেন, তাহলে গ্রামের বাজারে বা স্কুল-কলেজের পাশে এমন ব্যবসা দিতে পারেন। ণ্যের মান এবং দাম সঠিকভাবে রাখলে নিয়মিত গ্রাহক পাওয়া সম্ভব। প্রাথমিকভাবে এই ব্যবসা শুরু করতে আপনার প্রয়োজন হবে:

  • একটি ছোট চলমান গাড়ি/ ফুডকার্ট বা ভালো স্থানে একটি ছোট দোকান।
  • একটি গ্যাস স্টোভ।
  • খাবার তৈরি ও পরিবেশন করার আসবাবপত্র।
  • খাবার তৈরির কাঁচামাল ইত্যাদি।

মাত্র ১ লাখ টাকায় ব্যবসাটি শুরু করে এই ব্যবসা থেকে মাসিক ২০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার বেশিও ইনকাম করা সম্ভব। পরবর্তীতে আয় বাড়লে আরও নতুন আইটেম যোগ করে ব্যবসা সম্প্রসারণ করা সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ দেশি মুরগী পালন পদ্ধতি | মুরগীর জাত নির্বাচন, বাসস্থান, খাবার ও চিকিৎসা

(৪) কফি শপের ব্যবসা

কফি শপের ব্যবসা
কফি শপের ব্যবসা

কফি শপ বর্তমান জেনারেশনের কাছে একটি জনপ্রিয় আড্ডাস্থল। শহরে বা বিশ্ববিদ্যালয় ও অফিসের আশেপাশে ছোট্ট একটি কফি শপ দিয়ে শুরু করলে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করা সম্ভব। এই ধরনের শপে কফির পাশাপাশি কেক, প্যাটিস, ও ডোনাটের মতো হালকা খাবারের আইটেম রাখা যায়।

ব্যবসা শুরুর জন্য আপনাকে ১ লাখ টাকায় ব্যবসার জন্য-

  • একটি ছোট কফি মেকার,
  • গ্রাইন্ডার,
  • প্রয়োজনীয় আসবাব,
  • এবং প্রাথমিক কাঁচামাল কিনে নিতে পারবেন।

ছোট এই ব্যবসাটি বড় ব্যবসা থেকে কোন অংশে কম মনে করা যাবেনা। কারন এই ধরনের ব্যবসা সঠিক জায়গা বুঝে শুরু করতে পারলে, আপনি মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকারও বেশি ইনকাম করতে পারবেন। প্রথমে ছোট আকারে শুরু করে পরবর্তীতে কাস্টমার বাড়লে ব্যবসাটি আরও প্রসারিত করা সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ সেরা ৬টি ২ লাখ টাকায় লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া

(৫) বইয়ের দোকান

স্কুল বা কলেজের আশেপাশে ছোট একটি বইয়ের দোকান চালু করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। সাধারনত আমাদের দেশে এই ধরনের দোকান দিতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যায়। তবে চিন্তার কোন কারন নেই, আপনার কাছে যদি মাত্র ১ লক্ষ টাকা পুজি থাকে, তাহলে এই ১ লাখ টাকায় ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। 

শুরুতে ছোট একটি দোকান ভাড়া নিতে পারেন। এক্ষেত্রে যেখানে বেশি ভাড়া ও এডভান্স চাইবে, সেখান থেকে কিছুটা দূরে দোকানের ব্যবস্থা করাই উত্তম। তারপর আপনাকে দোকানটি গুছিয়ে বইয়ের তাক সাজানো ও অন্যান্য ডেকোরেশন করতে হবে। সবকিছু সম্পন্ন হলে বইয়ের পাইকারি বাজার থেকে পাঠ্যবই, স্টেশনারি, গাইড ও অন্যান্য বিভিন্ন প্রকার বই আনতে হবে। 

খেয়াল রাখবেন, আপনার যেহেতু পুজি কম, তাই বাজার যাচাই করে বিভিন্ন ধরনের বই সংগ্রহ করে ব্যবসাটি ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। তাই ব্যবসা শুরুর আগে স্থানীয় এলাকায় কি কি ধরনের বই এবং স্টেশনারি পণ্যের চাহিদা রয়েছে, তা আগে থেকেই বিশ্লেষন করে নিবেন।

(৬) ফ্যাশন হাউস

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশেও ফ্যাশন সচেতন মানুষদের জন্য ফ্যাশন হাউসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ছোট পরিসরে একটি দোকান দিয়ে শুরু করে আপনি ট্রেন্ডি পোশাকের পাশাপাশি শাড়ি, পাঞ্জাবি, জুয়েলারি এবং কসমেটিকস নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন।

বিশেষ করে উৎসবের সময়ে ফ্যাশন হাউসে ক্রেতার চাপ বেশি থাকে। আপাত দৃষ্টিতে ১ লাখ টাকায় ব্যবসাটি শুরু করা কঠিন। তবে একটি দোকান ম্যানেজ করতে পারলে, পণ্যের জন্য প্রাথমিক ভাবে এই বিনিয়োগ দিয়েই ভালো উপার্জন সম্ভব। দোকানের সজ্জা এবং গ্রাহকদের সাথে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই এই ব্যবসাটি প্রতিষ্ঠা করা যায়।

এক্ষেত্রে পণ্য বাছাই করার সময়, বর্তমান সমাজের ট্রেন্ড সম্পর্কে আপনার ভালো আইডিয়া থাকতে হবে। সঠিকভাবে ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারলে প্রতি মাসে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা যাবে।

আরও পড়ুনঃ লাভজনক পদ্ধতিতে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন করবেন যেভাবে

(৭) অরগানিক ফুডের ব্যবসা

দেশে সাধারন মানুষের স্বাক্ষরতার হার বাড়ার পাশাপাশি বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। তাই সারাদেশ জুড়ে এখন অরগানিক ফুডের চাহিদাও অনেক বেশি। আপনি যদি স্থানীয়ভাবে চাষ করা অরগানিক সবজি, মধু, চিয়া সীড, ঘানি ভাঙ্গা তেল, আখরোট, মধুময় বাদাম, মসলা আইটেম, ভেজালমুক্ত ফল এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করতে পারেন, তবে তা সাধারণ মানুষের জন্য আকর্ষণীয় হবে।

সরাসরি দোকান দিয়ে ব্যবসা করতে না পারলে, আপনি সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনলাইনেও এরকম ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। পরবর্তীতে সাপ্লাই ও বিক্রয় বাড়াতে হলে স্থানীয় কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করে নিত্য নতুন পণ্য যোগ করতে পারবেন। এভাবে ভবিষ্যতে আপনার এই ব্যবসার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

এধরনের ব্যবসার লাভ নির্ভর করবে আপনার মার্কেটিং ধারনার উপর। আপনি মার্কেটিং সম্পর্কে যত বেশি দক্ষ হবেন, বিক্রি এবং লাভ ততই বৃদ্ধি পাবে।

শেষকথা

উপরোক্ত ১ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়াগুলো থেকে কোন একটি আপনার পছন্দ হলে, সেই ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে দ্রুতই শুরু করে দিতে পারেন।

About Sajjad Hossain

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *