দোয়া কুনুত কি

দোয়া কুনুত কি ? উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ (Dua Kunut)

দোয়া কুনুত কি অর্থ উচ্চারণসহ : প্রতিদিনের ৫ ওয়াক্ত সালাত ফরজ হওয়ার পাশাপাশি বিতর সালাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ওয়াজিব নামাজ। বিতর সালাতে (Dua Kunut) পাঠ করতে হয়। তবে যারা এ দোয়াটি পড়তে পারে না, তাদের জন্য এটির বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ থাকছে এই পোস্টে।

নামাজের মাঝে আল্লাহর সাথে নিজের চাহিদার কথা তুলে ধরার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম (Dua Kunut)। দোয়াটি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ, কখন পড়তে হয়, দোয়া কুনুত এর ফজিলত, মুখস্ত করার সহজ পদ্ধতি, দোয়াটির বাংলা ছবি থাকছে প্রাণ প্রিয় মুসলিম ভাইদের জন্য।

দোয়া কুনুত কি

দোয়া কুনুত হচ্ছে অন্যান্য সকল দোয়ার মতো এটিও একটি দোয়া। যা বিতরের নামাজের তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার ও অন্য সূরা পড়ার পর তাকবিরের সাথে যে দোয়া পাঠ করা হয় তাকেই দোয়া কুনুত। হানাফি মাজহাব এর মতে বিতর নামাজে দোয়া কুনুত পড়া ওয়াজিব।

দোয়া কুনুত (আরবী)

اللّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِيْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ، اللّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّيْ وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعٰى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشٰى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ

দোয়া কুনুত বাংলা ছবি
দোয়া কুনুত বাংলা ছবি

দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্না-নাস্তাঈনুকা, ওয়া নাস্তাগফিরুকা, ওয়া নু’মিনুবিকা, ওয়া নীতাওয়াক্কালু আলাইকা, ওয়া নুছনী আলাইকাল খায়রা। ওয়া নাকুরুকা, ওয়ালা-নাকফুরুকা, ওয়ানাখলা উ ওয়া নারুকু মাইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়ালাকা নুছাল্লী, ওয়া ইলায়কা নাস্’আ ওয়া নাফিদু ওয়া নারজু রামাতাকা ওয়া নাখ্শা ‘আজাবাক ইন্না ’আজাবাকা বিল কুফ্ফারি মূলহিক ।

দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ
দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ

দোয়া কুনুত বাংলা অর্থসহ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট সাহায্য এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি, তোমাকে বিশ্বাস করি ও তোমার উপর ভরসা রাখি তোমার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি, তোমাকে অস্বীকার করিনা, তোমার যারা নাফরমানি করে তাদেরকে আমরা পরিত্যাগ করি। হে আল্লাহ! আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত-দাসত্ব করি, তোমার জন্যই নামাজ পড়ি এবং সিজদায় অবনত হই। আমরা তোমার রহমতের আশা পোষণ করি এবং তোমার আজাবকে ভয় করি, অবশ্যই তোমার আজাব কাফেরদের জন্য ন্যস্ত।

দোয়া কুনুত বাংলা ছবি

দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ মুখস্ত করার ক্ষেত্রে বই প্রয়োজন হয়। দেখে দেখে এ দোয়াটি পড়া যেমন ফজিলতপূর্ণ তেমনি অতি দ্রুত মুখস্ত হয়। তবে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে বই পাওয়া যায়না। এছাড়াও মোবাইলে সেভ করে রাখতে, যারা দোয়াটি না পারে তাদের সাথে শেয়ার করতে দোয়াটির আরবি ও বাংলা অর্থসহ ছবি খুঁজে থাকে। তাই আপনাদের জন্য এই দোয়ার বাংলা অর্থসহ ছবি নিচে দেওয়া হলো:-

দোয়া কুনুত ডাউনলোড pdf

দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ ছবি বা পিডিএফ ফাইল আকার ডাউনলোড করার প্রয়োজন হয়। নিয়মিত করার জন্য ও মুখস্ত করার জন্য এখান থেকে দোয়াটি লিখিত pdf ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন- দোয়া কুনুত ডাউনলোড pdf

কখন পড়তে হয় দোয়াটি

প্রতিদিন এশার সালাতের পর বিতর সালাতের শেষ রাকাতে রুকুতে যাওয়ার আগে বা রুকু থেকে উঠে দুই হাত তুলে অথবা বেঁধে দোয়াটি পাঠ করতে হয়।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর সালাতের শেষ রাকাতে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে বা রুকু থেকে ওঠার পর হাত তুলে এ দোয়া পাঠ করতেন। তবে বর্তমানে সাধারণত রুকুতে যাওয়ার পূর্বে আমরা এই দোয়া পাঠ করে থাকি। বিভিন্ন ইসলামিক রাষ্ট্রে দুই হাত তুলে মোনাজাতের ভঙ্গিতে দোয়া কুনুত পাঠ করা হলেও, বাংলাদেশ অধিকাংশ মুসল্লিরাই হাত বেঁধে পাঠ করেন।

বিতর নামাজের দোয়া কুনুত

বিতর সালাতে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) মাঝে মাঝে দুয়া কুনুত পাঠ করতেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) গভীর রাতে তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের পর বিতর সালাত আদায় করতেন। তখন সুবিধা ও সময় অনুযায়ী এক/ তিন/ পাঁচ/ সাত/ এগারো রাকাত পর্যন্ত বিতর সালাত আদায় করতেন। বিতর সালাতের সর্বশেষ রাকাতে দোয়া কুনুত পড়তেন।

দোয়া কুনুত হলো নামাজের মধ্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ও বিভিন্ন দোয়া করার নামান্তর। বিতর সালাতে এ দোয়টি পড়া ওয়াজিব। এটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিতর সালাতে পড়তেন। কিন্তু আমরা অনেকেই দোয়াটি পরিপূর্ণভাবে পারিনা।

আরো পড়ুন: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার নিয়ম

এক্ষেত্রে হাদিসে এসেছে, যদি কোনো ব্যক্তি এ দোয়টি না পেরে থাকে, তাহলে সে যেন খুব দ্রুত উক্ত দোয়াটি শিখে নেয়। এজন্য দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ শিখতে পারেন।

তবে যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত দোয়া পড়তে না পারে বা মুখস্ত না থাকে, তাহলে দোয়া সম্পর্কিত যেকোন একটি দোয়া পড়লেই ওয়াজিব আদায় করা হয়ে যাবে।

দোয়া কুনুত এর ফজিলত

দোয়া কুনুত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। প্রত্যেক মুসল্লিরই বিতর নামাজে এই দোয়া পড়তে হয়। এত ওয়াজিব পালন করার সওয়াব পাওয়া যায়। পাশাপাশি এর আরও বেশ কিছু ফজিলত রয়েছে। যেমন-

  • মহান আল্লাহ তায়ালা নামাজের অভ্যন্তরিন দোয়া কবুল করেন। দোয়াটির মাধ্যমে আমরা নামাজের অভ্যন্তরে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া চাইতে পারি।
  • যখন বান্দা মন থেকে আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবেসে নামাজে দাড়িয়ে দোয়াটি পড়ে তখন দয়ালু মহান আল্লাহ তা কবুল করে নেন।
  • দোয়া কুনুত নির্ধারিত ও সীমাবদ্ধ দোয়া নয়, তাই আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনের কথা ব্যক্ত করা যায়।
  • মুসলিমদের উপর তখন কোনো বিপদ আসতো তখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দোয়াটি পড়তেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৬৯৬৫)
    তাই বিতর সালাতে দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ বুঝে পড়া অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ।

দোয়া কুনুত মুখস্ত করার সহজ পদ্ধতি

বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলমানদের দেশ হলেও অনেকেই ইসলাম সম্পর্কে উদাসীন। আমাদের মাঝে অনেকেই এই দোয়া পড়তে পারেনা বা শিখতে পারছেনা। কেউ কেউ অনেক চেষ্টার পরও মুখস্ত করতে পারছেনা।

তবে আপনার মাঝে যদি ইসলামিক ভালোবাসা জাগ্রত থাকে, তাহলে একাগ্রতার সাথে চেষ্টা করলে দোয়া করুন মুখস্ত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করুন-

  • আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একাগ্র মনে চেষ্টা করুন।
  • এটি এর আরবি পড়তে না পারলে বাংলা দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ পড়ুন।
  • একসাথে সম্পূর্ণ মুখস্থ করতে না পারলে, তিনটি ভাগ নির্ধারণ করুন।
  • একবারে একটি অংশ করে মুখস্ত করুন।
  • দ্বিতীয় অংশ সম্পন্ন হলে প্রথমটির সাথে এবং তৃতীয় অংশ সম্পন্ন হলে প্রথম দুইটির সাথে মিলিয়ে পড়ুন।
  • বারবার পড়ার পাশাপাশি, প্রতিদিন বিতর নামাজে পড়ার চেষ্টা করুন। এতে দ্রুতই আয়ত্তে আনতে পারবেন।
  • অনবরত পড়ার পরও মুখস্ত না হলে, কিছুটা বিরতি দিয়ে আবার চেষ্টা করুন।

দোয়া কুনুত ও অন্যান্য যেকোনো দোয়া, সূরা মুখস্তের জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন।

শেষকথা

এ দোয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ফজিলত পূর্ণ একটি ওয়াজিব আমল। তাই দোয়া কুনুত কি উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ মুখস্ত করা সকলের জন্যই অপরিহার্য।

About Juyel Ahmed Liton

সুপ্রিয় “প্রোবাংলা” কমিউনিটি, ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ ছিলো এবং হয়তো সেই আকর্ষণটা অন্য দশ জনের থেকে একটু বেশি। ওয়েবসাইট, টাইপিং, আর্টিকেল লেখাসহ টেকনোলজি সবই আমার প্রিয়। জীবনে টেকনোলজি আমাকে যতটা ইম্প্রেস করেছে ততোটা অন্যকিছু কখনো করতে পারেনি। আর এই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ থেকেই লেখালেখির শুরু.....

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *