এফিলিয়েট মার্কেটিং কি। এফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম করার উপায়

আপনি একজন এফিলিয়েট মার্কেটার হয়ে ইনকাম করতে চান? জেনে নিন এফিলিয়েট মার্কেটিং কি এবং ইনকাম করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।

সমগ্র বিশ্বই এখন অনলাইন ভিত্তিক। প্রচার প্রচারণার কাজে পূর্ব থেকেই অনলাইন সিস্টেমকে জোর দেওয়া হতো। আধুনিক যুগে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অনন্য চাহিদাসম্পন্ন হয়ে উঠেছে এফিলিয়েট মার্কেটিং। শুধু প্রচারই নয় বিক্রয়ের প্রতিনিধিত্ব করে একজন মার্কেটার। তবে আমরা অনেকেই জানিনা এফিলিয়েট মার্কেটিং কি।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি এবং কিভাবে একজন এফিলিয়েট মার্কেটার হয়ে ইনকাম করতে পারবেন সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য নিয়েই আজকের আলোচনা।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি

এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো এক প্রকার অনলাইন মার্কেটিং। নির্দিষ্ট কমিশনের উদ্দেশ্যে পণ্য উৎপাদনকারী থেকে পন্য বা সেবার এফিলিয়েট লিংকের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে প্রচার করে ক্রয় করতে উৎসাহিত করাই এফিলিয়েট মার্কেটিং।

এফিলিয়েট মার্কেটিং এ জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার, ফেসবুক পেজ/গ্রুপ, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, ওয়েবসাইট, ইমেইল ইত্যাদি ব্যবহার করে মার্কেটিং করা হয়। নির্দিষ্ট এফিলিয়েট লিংক এর দ্বারা ট্র্যাক করে বিক্রয় কর্মীকে তার কমিশন বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি ও ইনকাম

এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে

যেকোন মার্কেটিংয়ের প্রাথমিক পর্যায়ে হলো পণ্য উৎপাদন। একইভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিংয়েও প্রোডাক্ট উৎপাদনকারী থেকে এফিলিয়েট প্রোগ্রাম তৈরি হয়। উৎপাদনকারী তার পণ্য বিক্রি করা কিংবা বিক্রয় বাড়াতে সেই পন্যের উপর এফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু করে।

এফিলিয়েট প্রোগ্রামে সাধারণ চারটি পক্ষ যুক্ত থাকে। যথা-

  • সেলার/ বিক্রেতা: সেলার হলেন পণ্য উৎপাদনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। মূলত হেলালি এফিলিয়েট প্রোগ্রামের পরিচালক।
  • এফিলিয়েট মার্কেটার: এফিলিয়েট মার্কেটার সেলারের উৎপাদিত পণ্য প্রচার/প্রমোট করে থাকে। সাধারণত কমিশনের উদ্দেশ্যে সেলার প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় বৃদ্ধিতে মার্কেটার নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। বিভিন্ন অনলাইন ও অফলাইন মাধ্যমে এফিলিয়েট মার্কেটার প্রোডাক্ট প্রমোট করে।
  • এফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্ক: সেলার ও এফিলিয়েট মার্কেটারের মধ্যে সমন্বয় ও যোগাযোগ স্থাপন করতেই এফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্ক কাজ করে। এটি কোন বাধ্যতামূলক পক্ষ নয়। তবে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এই ধরনের নেটওয়ার্ক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
  • কনজ্যুমার/ ক্রেতা: এখানে যিনি এফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে প্রোডাক্ট ক্রয় করেন, তারা কনজ্যুমার। এরা নির্দিষ্ট এফিলিয়েট মার্কেটারের লিংক থেকে পন্য ক্রয় করবেন। এবং সেই পণ্যের লভ্যাংশ থেকে এফিলিয়েট মার্কেটার কমিশন পাবেন।

উপরোক্ত পক্ষের ধারাবাহিকতা থেকেই বোঝা যায় এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে।

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর প্রকারভেদ

এফিলিয়েট মার্কেটিংকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা

  1. Unattached Affiliate Marketing
  2. Related Affiliate Marketing
  3. Involved Affiliate Marketing

নিচে এগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়া হলো:

Unattached Affiliate Marketing

এ ধরনের এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে একজন মার্কেটার – সেলারের প্রোডাক্টের সাথে সংযুক্ত থাকে না। প্রোডাক্ট সম্পর্কে ক্রেতাদের সাথে সংযুক্ত হওয়ারও অনুমতি থাকে না। ফলে প্রোডাক্ট সম্পর্কে ক্রেতাদের কোন সুপারিশ বা পরামর্শ দিতে পারেন। তবে এফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে প্রোডাক্ট প্রমোট করে।

Related Affiliate Marketing

এ ধরনের এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে একজন মার্কেটার পণ্য ও ক্রেতার সাথে সংযুক্ত থাকে। প্রোডাক্ট সম্পর্কে ক্রেতাদের পরামর্শ দিয়ে বিক্রয় বৃদ্ধি করতে পারে। এক্ষেত্রে ক্রেতাদের সাথে সংযুক্ত হওয়ার অনুমতি থাকে। তবে একজন মার্কেটার সেই পণ্য ব্যবহার করেছেন এমন দাবি করতে পারে না।

Involved Affiliate Marketing

এ ধরনের এফিলিয়েট মার্কেটিং কিছু প্রোডাক্ট, একজন মার্কেটার, এফিলিয়েট প্রোগ্রামের মাঝে গভীর সংযোগ নিয়ে তৈরি হয়। মার্কেটারগন প্রোডাক্ট প্রমোট করার সময় সেই পণ্যটি ব্যবহার করেছেন বলে দাবি করেন। তাদের মন্তব্য (Review) সম্পর্কে আস্থা অর্জন করে একজন ক্রেতা পন্য ক্রয় করে।

এফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোডাক্টের ধরন। এফিলিয়েট মার্কেটিং নিশ

এফিলিয়েট প্রোডাক্টের নিশ বা ক্যাটাগরিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  • ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট।
  • ডিজিটাল প্রোডাক্ট।
  • লীড জেনারেশন।

ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট

যে প্রোডাক্টের বাস্তবিক রূপ, গঠন, আকার আকৃতি আছে সেগুলোই ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট। পণ্য ক্রেতা বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য এ ধরনের প্রোডাক্ট ক্রয় করেন। যেমন: সাপ্লিমেন্ট, বিউটি প্রোডাক্ট, ফ্যাশন প্রোডাক্ট, হার্ডওয়ার/ এক্সেসরিজ, ইলেকট্রিক্যাল প্রোডাক্ট ইত্যাদি।

ডিজিটাল প্রোডাক্ট

এ ধরণের এফিলিয়েট মার্কেটিং কিছু এমন প্রোডাক্ট নিয়ে তৈরি যার কোন বাস্তবিক রূপ থাকেনা। প্রোডাক্ট এর কোন গঠন, আকার আকৃতি কিংবা ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার নেই। তবে বিভিন্ন ভার্চুয়াল প্রয়োজনে একজন ক্রেতা এ ধরনের প্রোডাক্ট ক্রয় করেন। যেমন: ওয়েবসাইট থিম, ই-বুক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানিক কোর্স, ডোমেইন, হোস্টিং ইত্যাদি।

লীড জেনারেশন

বর্তমানে আধুনিক এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে এটি একটি জনপ্রিয় প্রোডাক্ট। এ ধরনের মার্কেটিংয়ে ক্রেতাকে অর্থ খরচ করে কোন পণ্য ক্রয় করতে হয় না। তবে সেলারের কাঙ্ক্ষিত কাজ সম্পন্ন হলেই আপনি কমিশন পেয়ে যাবেন।

যেমন: ইমেইল সাবস্ক্রিপশন, অ্যাপস ডাউনলোড/ইনস্টল, ওয়েবসাইটে সাইনআপ, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস সাইনআপ, চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ইত্যাদি। এটি অনলাইনে উপার্জনের অন্যতম বড় মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের অ্যাফিকেট মার্কেটিং কে সিপিএ মার্কেটিং নামেও অভিহিত করা হয়।

এফিলিয়েট মার্কেটাররা কিভাবে ইনকাম করে। এফিলিয়েট মার্কেটারদের আয়

এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে পেমেন্ট করে তা প্রোডাক্টের ধরন ভেদে ভিন্ন। শুধুমাত্র পন্য বিক্রয় করে কমিশন পাওয়া যায়, এমন নয়। বিভিন্ন মডেলে মার্কেটাররা আয় করে থাকেন। বর্তমানে মার্কেটিংয়ে ইনকাম করার সেরা ৫ টি মডেল হলো:

  1. Pay Per Sale (PPS)
  2. Pay Per Lead (PPL)
  3. Pay Per Click (PPC)
  4. Pay Per Action (PPA)
  5. Pay Per Install (PPI)

Pay Per Sale: পৃথিবীর অধিকাংশ মার্কেটাররা এই মডেলের আওতায় ইনকাম করে থাকে। এক্ষেত্রে কোন ক্রেতা একজন মার্কেটরের এফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে কোন পণ্য ক্রয় করবে। তখন মার্কেটের বিক্রয়ের একটি অংশ কমিশন হিসেবে পাবে। বিক্রয় হলেই ইনকাম হবে।

Pay Per Lead: এক্ষেত্রে একজন এফিলিয়েট মার্কেটারের লিংক থেকে যখন লিড জেনারেশন হয়, তখন কমিশন পায়। এফিলিয়েট লিংক থেকে ইমেইল সাবস্ক্রিপশন, অ্যাপস ডাউনলোড/ইনস্টল, ওয়েবসাইটে সাইনআপ, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস সাইনআপ ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন হয়। মূলত গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ করতে তার তথ্য সংগ্রহ করাই লীড।

Pay Per Click: এ ধরনের এফিলিয়েট মার্কেটিং কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ড ইমেজ তৈরি করার জন্য চালু হয়। একজন এফিলিয়েট মার্কেটারের সেই কোম্পানির/ প্রোডাক্ট এর লিংক প্রমোট করতে হয়। সেই লিংকে যত বেশি ক্লিক হবে সে অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়। এটি এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে সহজ পন্থা এবং ইনকামও কম।

Pay Per Action: Action মানে হল কার্যসম্পাদন। যখন কোন এফিলিয়েট মার্কেটারের প্রভাবে কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সুবিধা সংঘটিত হয় তাহলে মার্কেটার নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পায়।

Pay Per Install: বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপস, গেমস নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এ ধরনের এফিলিয়েট মডেলের পেমেন্ট করে। মার্কেটার এফিলিয়েট লিংকের সাহায্যে কোন গেম অথবা অ্যাপস প্রমোট করে। কোন ব্যবহারকারী সেই লিংক থেকে অ্যাপস ইনস্টল করলে মার্কেটার কমিশন পায়।

উপরোক্ত পেমেন্ট মডেলগুলো ছাড়াও এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের আরো বিভিন্ন পেমেন্ট মডেল রয়েছে।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো। এফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম করার উপায়

এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার জন্য মার্কেটিং সম্পর্কে আপনার প্রাথমিক ধারণা থাকা আবশ্যক। তারপর নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে পারেন:

ধাপ ১: ট্রাফিক সোর্স তৈরি

কোন বিক্রির জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ক্রেতা। এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে ক্রেতাদেরকে বা ভিজিটরকে ট্রাফিক সোর্স বলা হয়। ইনকাম করার জন্য শুরুতেই আপনার ভালো পরিমাণ ফলোয়ার/ ট্রাফিক সোর্স তৈরি করুন। যেমন- ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেজ, ব্লগ, ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সার একাউন্ট ইত্যাদি।

ধাপ ২: প্রোডাক্ট নিশ নির্বাচন

আপনার ট্রাফিক সোর্স অনুযায়ী ক্রেতাদের চাহিদা অনুধাবন করুন। এক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখুন-

  • গ্রাহকের বয়স কত।
  • গ্রাহকের অধিকাংশ কোন লিঙ্গের।
  • গ্রাহকদের কি ধরনের প্রোডাক্ট পছন্দ।
  • আপনার গ্রাহকের বাজেট কেমন।
  • কোন দেশের নাগরিক।
  • প্রোডাক্ট ক্যাটাগরি নিয়ে অন্যান্য মার্কেটারদের প্রতিযোগিতা কেমন ইত্যাদি।

সঠিক সময়ে সঠিক গ্রাহকের কাছে উপযুক্ত পণ্যটি প্রচার করতে হবে।

ধাপ ৩: এফিলিয়েট একাউন্ট তৈরি

প্রথমে এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে ধারণা নিন। ভালো অন্য সরবরাহকারী বিশ্বস্ত এফিলিয়েট প্রোগ্রাম বাছাই করুন। সেখানে একজন এফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে একাউন্ট তৈরি করুন।

ধাপ ৪: এফিলিয়েট লিংক সংগ্রহ

নির্দিষ্ট এফিলিয়েট প্রোগ্রামের সাইট থেকে আপনাকে ইউনিক লিংক দেওয়া হবে। প্রোডাক্ট ভিত্তিক এ ধরনের লিংক সংগ্রহ করুন।

ধাপ ৫: প্রোডাক্ট প্রমোট

এবার আপনার ট্রাফিক সোর্সের কাছে সেই দিন ব্যবহার করে প্রোডাক্ট প্রমোট করুন। আপনার ট্রাফিক সোর্স যত বেশি প্রসারিত হবে বিক্রয় এবং ইনকামের সম্ভাবনা ততই বেশি।

এফিলিয়েট মার্কেটিং করার মাধ্যম

এফিলিয়েট মার্কেটিং করে সফল হওয়ার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে বিশাল ট্রাফিক সোর্স। আপনার পন্যের লিংক যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে বিক্রয়ও তত বেশি বাড়বে। এজন্য এফিলিয়েট মার্কেটিং এর একাধিক মাধ্যম অনুসরণ করতে পারেন।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি কি মাধ্যমে করা যায় তা নিচে তুলে ধরা হলো:

স্যোশাল মিডিয়া মার্কেটিং। Social Media Marketing (SMM)

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রচলিত মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। এই মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ট্রাফিক পাওয়া সম্ভব। ফেসবুকের সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২৯৬ কোটি। প্রতিমাসে প্রায় ১৬.৮ বিলিয়ন ভিজিট হয়।

বিশেষ করে ফেসবুকে আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট এর রিভিউ, অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ও এফিলিয়েট লিংক পেয়ে থাকি। এছাড়া টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, পিন্টারেস্ট ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রোডাক্ট প্রমোশন করতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ফ্যান ফলোয়ারকে কাজে লাগিয়ে মার্কেটিং করাকে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংও বলা হয়।

ওয়েবসাইটে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। Website Affiliate Marketing

ফ্রি বা পেইড ডোমেইন-হোস্টিং নিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করে ভিজিটরের কাছে প্রোডাক্ট প্রমোশন করতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের মতই এটিও অনেক বেশি জনপ্রিয়। আপনার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন প্রকার প্রোডাক্টের রিভিউ আর্টিকেল লিখতে হবে। সেই প্রোডাক্টের ভালো-খারাপ দিক উল্লেখ করে, প্রোডাক্ট ক্রয়ের জন্য ক্রেতাকে এফিলিয়েট লিংক দিতে হবে পোষ্টের মধ্যেই।

চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতা সেই লিংকে ক্লিক করে সেলারের/ ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে পণ্য ক্রয় করবে। এক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই Search Engine Optimization (SEO) সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। তবেই আপনার আর্টিকেল র‍্যাংক করবে এবং ভিজিটরদের কাছে পণ্যের এফিলিয়েট লিংক পৌঁছাবে।

ইউটিউব অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। YouTube Affiliate Marketing

ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যমে প্রোডাক্টের রিভিউ দিয়ে এফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করতে পারেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব।এখানে আপনার একটি চ্যানেল খুলে তাতে ভালো পরিমাণ সাবস্ক্রাইবার তৈরি করার চেষ্টা করুন।

ইউটিউবে কোয়ালিটি ফুল ভিডিও তৈরি করুন যাতে ক্রেতা আকৃষ্ট হয়। গুগল এডসেন্স থেকে এবং এফিলিয়েট মার্কেটিং কিছু পন্য বিক্রয় করেও ইনকাম করতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন এর মাধ্যমে মার্কেটিং। Affiliate Advertising

সাধারণত উচ্চ মূল্যের পণ্যের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন ব্যবহার করা হয়। অধিক মূল্যের পণ্যের এফিলিয়েট মার্কেটিং করলে তার ভিডিও অ্যাডভার্টাইজমেন্ট তৈরি করুন। কিংবা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।

সেই বিজ্ঞাপনের সাথে আপনার এফিলিয়েট লিংক যুক্ত করে বিক্রি করতে পারেন। ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল কিংবা অন্যান্য মাধ্যমেও বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারেন।

ইমেইল মার্কেটিং। Email Marketing

এটি এফিলিয়েট মার্কেটিং এর আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম। সাধারণত কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট ব্রান্ড ইমেজ তৈরি করতে, কনজ্যুমারদের কাছে সরাসরি প্রোডাক্টের লিংক পৌঁছাতে, লীড জেনারেশন করতে এই মাধ্যম ব্যবহৃত হয়। এর জন্য টার্গেটেড গ্রাহকদের মেইল এড্রেস সংগ্রহ করুন। তারপর প্রোডাক্ট এর বিস্তারিত সহ ইমেইল পাঠাতে হয়।

টেক্সট মেসেজ মার্কেটিং। Text Message Marketing

টেক্সট মেসেজ মার্কেটিংয়ের প্রচলন অন্যান্য মাধ্যমগুলো থেকে তুলনামূলক কম। এই মাধ্যমে বিভিন্ন অফার ও প্রোডাক্ট প্রমোট করা হয়। টার্গেটেড কাস্টমারের মোবাইল নাম্বারে প্রোডাক্টের লিংক সহ মেসেজ পাঠাতে পারেন।

এজন্য সিম অপারেটর কোম্পানির কিংবা বিভিন্ন মাধ্যমে নাম্বারের ডাটা সংগ্রহ করতে পারেন।

উপরোক্ত মাধ্যম গুলোতে এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করবেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে শুরু করতে হবে।

লাভজনক ও বিখ্যাত এফিলিয়েট প্রোগ্রাম

বর্তমানে অনেক অনেক ই কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে। বিশ্বের বহু বিখ্যাত এফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। সেখান থেকে সবচেয়ে লাভজনক এবং বাংলাদেশীদের জন্য উপযুক্ত এফিলিয়েট প্রোগ্রাম নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো:

Amazon Affiliate Programme

আমাজন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এফিলিয়েট প্রোগ্রাম পরিচালনা করে থাকে। এর বিস্তৃতি সমস্ত বিশ্বজুড়ে। পৃথিবীতে এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের প্রায় ৪৫ ভাগই আমাজন কে ঘিরে। বর্তমানে আমাজন এর মার্কেট ভ্যালু বা Net Worth – $১৩৫৬.৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমাজনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রতিমাসে ২.২ থেকে ২.৫ বিলিয়ন ভিজিটর আসে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ এটি পৃথিবী জুড়েই সবচেয়ে বেশি ভিজিটরের এফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্ক হয়ে দাড়িয়েছে। ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট, ডিজিটাল প্রোডাক্ট, লীড জেনারেশন ইত্যাদি সকল প্রকার এফিলিয়েট প্রোডাক্ট রয়েছে আমাজনে।

আমাজন এফিলিয়েট প্রোগ্রামে একজন মার্কেটার হিসেবে যুক্ত হতে Amazon Associates অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। একজন এফিলিয়েট পার্টনার আমাজনের পন্যের জন্য আলাদা আলাদা লিংক জেনারেট করতে পারবে। সেই লিংক আপনার ট্রাফিক সোর্সের কাছে ইমেজ, এড কিংবা সরাসরি টেক্সট এর মাধ্যমেও প্রমোট করা যাবে।

আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং কি পরিমান কমিশন দেয় তা বিক্রয়ের উপর নির্ভর করে। আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটারদের ১-২০ % পর্যন্ত কমিশন দিয়ে থাকে। আমেরিকায় একজন আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটার বছরে ৫৫-৬০ হাজার মার্কিন ডলার আয় করে।আমাজনের প্রোডাক্ট সেলিংয়ের পাশাপাশি অফার প্রমোট, Amazon Bounty Programme, লীড জেনারেশন ইত্যাদি সকল প্রকার কাজই করতে পারবেন।

Alibaba Affiliate Programme

আলিবাবা পৃথিবীর আরেকটি বিখ্যাত এফিলিয়েট প্রোগ্রাম পরিচালনা করে। বিশ্বের বৃহৎ ই-কমার্স সাইট গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। প্রতিমাসে আলিবাবা গ্রুপের মালিকানাধীন অনলাইন স্টোরে ৯১৭.২ মিলিয়ন ভিজিট হয়।

আলিবাবাতে এফিলিয়েট পার্টনার হিসেবে যুক্ত হয়ে সকল প্রকার প্রোডাক্ট সেল করতে পারবেন। প্রোডাক্ট ভেদে আলিবাবাতে ১% -২০% পর্যন্ত কমিশন পাওয়া সম্ভব।

Daraz Affiliate Programme

দারাজ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ই-কমার্স সাইট। প্রতিমাসে দারাজে ১৭,২৫৮,০০০ বা তারও বেশি ভিজিটর আসে। বর্তমানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দারাজের শাখা মিলিয়ে ১৭ মিলিয়নেরও বেশি প্রোডাক্ট রয়েছে।

বাংলাদেশের অনলাইন প্লাটফর্মে কেনাবেচার জন্য এটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। প্রোডাক্টের ডেলিভারি দেওয়া, প্যাকেজিং করা সবকিছুই দারাজ নিজ দায়িত্বে পরিচালনা করবে। বর্তমানে দারাজে এফিলিয়েট পার্টনার নেওয়া সীমিত করা হয়েছে। তবে সঠিকভাবে আবেদন করতে পারলে আপনিও একজন এফিলিয়েট পার্টনার হতে পারেন। প্রোডাক্ট অনুযায়ী ৮-১২% পর্যন্ত কমিশন দেওয়া হয়।

দারাজে এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করবেন, প্রথমেই সে সম্পর্কে ধারণা নিয়ে শুরু করতে হবে।

10 Minute School Affiliate Programme

10 Minute School বর্তমানে বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় কোর্স বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠান। আপনি টেন মিনিট স্কুলের কোর্স প্রমোট করে স্টুডেন্ট আনতে পারলেই নির্দিষ্ট কমিশন পাবেন।

ডিজিটাল প্রোডাক্ট নিয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য এটি উপযুক্ত।

Food panda Affiliate Programme

ফুডপান্ডা সাধারণত বিভিন্ন খাবার আইটেম নিয়ে কাজ করে। ২০১২ সালের মার্চ মাসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় জার্মানির বার্লিনে জ্যাকব এঞ্জেলের দ্বারা। চীন ও অন্যান্য দেশসহ এশিয়ার ১২ টি দেশে এর কার্যক্রম চালু রয়েছে। বর্তমানে ফুডপাণ্ডার Net Worth- $45-$50 মিলিয়ন।

বিভিন্ন খাবারের আইটেম নিয়ে ফেসবুকে প্রমোট করে তাৎক্ষণিক সেল করতে পারবেন। খাবারের হোম ডেলিভারি সহ অন্যান্য কাজ কোম্পানি নিজেই পরিচালনা করবে। ফুডপান্ডায় এফিলিয়েট মার্কেটিং কিরকম পেমেন্ট করে তা প্রোডাক্ট অনুযায়ী ভিন্ন।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি হালাল?

এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো দেশি-বিদেশি নানা কোম্পানির পন্য মার্কেটিং, ড্রপশিপিং এবং সিপিএ-এর মাধ্যমে আয় করার সুযোগ। কোন একটি ই-কমার্স সাইটে এফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে যুক্ত হয়ে তার পন্য বিক্রি করে লভ্যাংশ অর্জন করাই মূলত এফিলিয়েট মার্কেটিং। এক্ষেত্রে এটি একপ্রকার রিসেলিং পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে। কোম্পানির পণ্য নিজের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অথবা নিজে অ্যাড দিয়ে বা প্রমোট করে বিক্রি করা হয় এবং বিক্রীত প্রতিটি পণ্যের থেকে একটি নির্দিষ্ট কমিশন যিনি বিক্রি করে দিয়েছেন, তাকে প্রদান করা হয়।

এভাবে পন্য বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হালাল হবে। তবে শর্ত হলো সেই পন্যটি অবশ্যই হালাল হতে হবে। হালাল পন্য বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ হালাল এবং হারাম পন্য বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম বলে গন্য হবে। তাছাড়া এফিলিয়েট এর ছলে ধোকা দিয়ে, কাউকে ভুল/ মিথ্যা তথ্য দিয়ে পন্য বিক্রি করা বা MLM (Multi Level Marketing) করা হারাম বা নাজায়েজ।

হজরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, যদি কেউ বলে যে, তুমি এ কাপড়টি বিক্রি করে দাও। এতো এতো এর উপর যা বেশী হয় তা তোমার, এতে কোন দোষ নেই। একইভাবে, ইবনু সীরীন (রহ.) বলেন, যদি কেউ বলে যে, এটা এত দামে বিক্রি করে দাও, লাভ যা হবে, তা তোমার/ তা তোমার ও আমার মধ্যে সমান হারে ভাগ হবে, তবে এতে কোন দোষ নেই। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “মুসলিমগণ তাদের পরস্পরের শর্তানুযায়ী কাজ করবে।” (সহীহ বুখারী: ১/৩০৩)

এফিলিয়েট মার্কেটিং করে কত টাকা ইনকাম করা যায়

এফিলিয়েট মার্কেটার হয়ে কত টাকা আয় করবেন তা একাধিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন-

  • কোন নিশের প্রোডাক্ট সেল করবেন।
  • প্রোডাক্টের মূল্য।
  • কমিশনের পরিমাণ।
  • আপনার ট্রাফিকের পরিমাণ।
  • যে প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট সেল করবেন তার মার্কেট ভ্যালু।
  • আপনার মার্কেটিং স্ট্রাটেজির উপর অভিজ্ঞতা।

একজন দক্ষ বাংলাদেশি এফিলিয়েট মার্কেটার প্রতিমাসে ৫০,০০০ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করে। তাই প্রথমে দক্ষতা অর্জন করে তারপর ইনকামের উপর লক্ষ্য করুন।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শিখবো

মার্কেটিং করে ইনকাম করা বর্তমানে অনেকেরই আগ্রহের বিষয়। তবে এ বিষয়ে দক্ষতা ছাড়া প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন। প্রাথমিকভাবে মার্কেটিং করে ইনকাম করার জন্য ইউটিউব কিংবা ওয়েবসাইট থেকে ধারনা নিতে পারেন।

ইউটিউবে এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বিভিন্ন প্রফেশনাল অনেক ভিডিও কোর্স পাবলিশ করে রেখেছেন। সেগুলো দেখেই একজন এক্সপার্ট হওয়া সম্ভব।

তবে আপনি চাইলে বিভিন্ন পেইড কোর্সে যুক্ত হয়েও এফিলিয়েট মার্কেটিং শিখতে পারবেন।

FAQ’s

কোন ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে এফিলিয়েট মার্কেটিং করা যায়?
বিশ্বের সেরা কয়েকটি ইন্টারন্যাশনাল এফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস হলো:- Amazon, CJ, Clickbank, Shareasale, Alibaba, Envato ইত্যাদি।

বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো এফিলিয়েট সাইট কোনটি?
বাংলাদেশের সেরা কয়েকটি এফিলিয়েট সাইট রয়েছে। এগুলো হলো: Daraz, BDShop, Sohoj Affiliates, Shopno Bari, Sohozsell, Bohubrihi online course, Sopzbd, foodpanda ইত্যাদি।

এফিলিয়েট মার্কেটিং শেষকথা

এফিলিয়েট মার্কেটিংকে প্যাসিভ ইনকাম সোর্স বানাতে পারেন। কিংবা এক্সপার্ট হয়ে নিজের প্রফেশন বানিয়েও বড় অংকের টাকা উপার্জন করা সম্ভব। বিনা পুঁজিতে কিংবা স্বল্প পুঁজিতে এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে পারবেন। এফিলিয়েট মার্কেটিং কি এবং এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিয়ে নিজেই হয়ে উঠুন একজন এফিলিয়েট মার্কেটার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top