MS Word কী ? মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা এমএস ওয়ার্ড একটি ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়ার। যার মাধ্যমে যেকোন ধরনের কম্পোজ টাইপ, প্রজেক্ট, ড্রয়িং, ছোটখাট ডিজাইনের কাজ, প্রোফাইল তৈরির কাজ, দলিল লেখা, প্রশ্নপত্র টাইপ, অফিশিয়াল কাজসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট তৈরি এবং প্রিন্ট দেওয়াসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা যায়। সংক্ষেপে এটিকে MS Word বলা হয়। বর্তমানে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ওয়ার্ড ফাইল এডিটর।
MS Word কী ?
মার্কিন যুক্তরাষ্টে মাইক্রোসফট কর্পোরেশন কোম্পানী অবস্থিত। মাইক্রোসফট কর্পোরেশন কর্তৃক এই সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে। তাই মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা Microsoft Word অথবা MS Word বলা হয়। MS Word জেনিক্স সিস্টেমের জন্য মাল্টি টুল ওয়ার্ড নাম নিয়ে ১৯৮৩ সালে বাজারে আসে।
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা MS Word কি?
বর্তমানে ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড একটি অন্যতম প্রোগ্রাম। এর মাধ্যমে ওয়ার্ড প্রসেসিং এর কাজ করা হয়, অর্থাৎ যে প্রোগ্রামের মাধ্যমে সুন্দর উপস্থাপনায় ওয়ার্ডের কাজ করা হয় তাকে MS Word বলে। বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। কোন নির্দিষ্ট কাজের জন্য এমএস ওয়ার্ড প্রোগ্রাম দরকার অন্য প্রোগ্রাম দিয়ে সেই কাজ সুন্দরভাবে করা সম্ভব হয় না। যেমন সুন্দরভাবে চিঠিপত্র লেখার জন্য এমএস ওয়ার্ড প্রোগ্রাম অতি উত্তম প্রোগ্রাম, যা অন্য প্রোগ্রাম দ্বারা সুন্দরভাবে লেখা সম্ভব নয়।
MS Word কি কাজে ব্যবহার করা হয়?
MS Word কী তা আমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছি। MS Word ব্যবহার করে সহজেই ডকুমেন্ট তৈরি করা,ডকুমেন্ট Save বা সংরক্ষণ করা, বানান ও ব্যাকরণ জনিত ভুল সংশোধন করা, লেখা ছোট-বড় করা প্রভৃতি কাজ করা যায়। এবার আমরা মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের সাহায্যে যে সকল কাজ সম্পন্ন করা যায় তার বিস্তারিত জেনে নিব। MS Word এর সাহায্যে যে সকল কাজ করা যায় তা নিম্নরূপ-
- আবেদনপত্র/দরখাস্ত/চিটিপত্র টাইপ এবং প্রিন্ট করা যায়।
- যেকোন প্রকারের ডকুমেন্ট অথবা টেক্সট টাইপ করা যায়।
- স্কুল-কলেজের প্রশ্নপত্র টাইপ এবং প্রিন্টের কাজ করা যায়।
- দলিল টাইপ করা যায়।
- শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট টাইপ করা যায়।
- শিক্ষকরা ক্লাস তৈরি করতে পারবেন।
- সীমিত আকারে ডিজাইনের কাজ করা সম্ভব।
- প্রয়োজনীয় প্রজেক্ট ফাইল এবং প্রোফাইল তৈরি করা যায়।
- ড্র, ড্রয়িং, ডায়াগ্রামসহ টেবিলের কাজ করা যায়।
মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের প্রাথমিক ধারণা (চালু করা)
প্রথমে কম্পিউটারের নিচের দিকে যে উইন্ডোজ আইকন বা স্টার্ট মেনুতে ক্লিক করুন। এবার আপনার সামনে একটি মেনু লিস্ট আকারে ওপেন হবে সেখান থেকে আপনার কাঙ্খিত এমএস ওয়ার্ড প্রোগ্রামটি ওপেন করুন। কিছুক্ষণের মধ্যে আপনি দেখতে পাবেন একটি সাদা পেজ নিয়ে মাইক্রোসফট অ্যাপ্লিকেশনটি ওপেন হয়েছে। লক্ষ্য করুন যে, ওপেনকৃত পেজটিতে একটি কালো দাগ জ্বলছে এবং নিভছে তাকে কার্সর বলে। এবার আপনি কীবোর্ড থেকে যা লিখবেন তা এই কার্সরের অবস্থানকৃত স্থান থেকে লেখাটি শুরু হবে।
Documents পরিচিতি:
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা এমএস ওয়ার্ড বন্ধ করার নিয়ম
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কয়েকটি নিয়মে বন্ধ করা যায়, যেমন-
- File মেনু থেকে Close ক্লিক।
- File মেনু থেকে Exit ক্লিক।
- Title bar হতে Close ক্লিক করে।
তবে কোন কাজ করার পর যদি আপনি ডকুমেন্ট বন্ধ করতে চান তাহলে নিম্নের ডায়ালগ বক্সটি আসবে।
এখন ফাইলটি সেভ করে বের হতে চাইলে Yes, সেভ না করে বের হতে চাইলে NO বাটনে ক্লিক করে বের হতে হবে।
লেখা Select করা
এমএস ওয়ার্ডে কোন লেখাকে সিলেক্ট করতে চান তাহলে মাউস এবং কিবোর্ড দুটো দিয়েই সিলেক্ট করা যায়।
মাউস এর সাহায্যে
যে লেখা সিলেক্ট করবেন ঐ লেখার যে কোন পাশে মাউস পয়েন্টার দিয়ে লেখার ডানে অথবা বামে ড্র্যাগ করে লেখাগুলো নির্বাচন করা যাবে।
কী-বোর্ডের মাধ্যমে
যে শব্দ সিলেক্ট করবেন সেই শব্দের পাশে কার্সর রেখে Shift + Arrow কী চেপে ডানে অথবা বামে সিলেক্ট করা যাবে। সম্পূর্ণ ডকুমেন্ট সিলেক্ট করতে চাইলে কী বোর্ড থেকে Ctrl + A চাপতে হবে। আবার সিলেক্ট করা লেখা সিলেক্ট বাতিল করতে চাইলে মাউস দিয়ে ডকুমেন্টের যেকোনো স্থানে ক্লিক অথবা কিবোর্ডের Arrow Key চাপ দিলেই সিলেক্ট বাতিল হবে।
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর কিছু কিবোর্ড শর্টকাট
এমএস ওয়ার্ড এ কাজ দ্রুত করার একটি পদ্ধতির নাম হচ্ছে কিবোর্ড শর্টকাট কমান্ড। যার মাধ্যমে খুব দ্রুত অনেক কমান্ডের কাজ করা যায়। নিম্নে কিছু শর্টকাট কমান্ড সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
কমান্ড | কাজ |
Ctrl+A | Select All |
Ctrl+B | Bold |
Ctrl+C | Copy |
Ctrl+D | Font |
Ctrl+E | Center |
Ctrl+F | Find |
Ctrl+G | Goto |
Ctrl+H | Replace |
Ctrl+I | Italic |
Ctrl+J | justify |
Ctrl+K | Hyperlink |
Ctrl+L | Left |
Ctrl+M | Tabs |
Ctrl+N | New |
Ctrl+O | Open |
Ctrl+P | |
Ctrl+R | Right |
Ctrl+S | Save |
Ctrl+U | Underline |
Ctrl+V | Paste |
Ctrl+W | Quit |
Ctrl+X | Cut |
Ctrl+Y | Redo |
Ctrl+Z | Undo |
আরো- সকল কীবোর্ড শর্টকাট – All Keyboard Shortcuts
নিচের লাইনে যাওয়া
ইতি পূর্বে আমরা জানলাম ”MS Word” কী সম্পর্কে। এবার জানতে পারবো MS Word এ যেকোন কিছু লেখার সময় কার্সর ডান দিকে যাবে। লিখতে লিখতে যখননি লাইন পরিপূর্ণ হয়ে যাবে তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিচের লাইনে চলে যাবে কার্সরটি। তবে একটু লিখে যদি নিচে যাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনি কি বোর্ডের Enter বাটনে চাপ দিন।
লেখার মাঝে টাইপ করা
এটা কিবোর্ড বা মাউস দ্বারা আপনি আপনার লেখাটির মাঝে টাইপ করতে পারবেন। কিবোর্ড দিয়ে এই কাজটি সম্পন্ন করতে চাইলে আপনি কিবোর্ডের Arrow কী গুলো ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া কিবোর্ড ব্যবহার করে কার্সর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়ার পদ্ধতিগুলোর শর্টকাট সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
কার্সর নেওয়ার জায়গা | Command |
এক অক্ষর বামে | Left Arrow |
এক অক্ষর ডানে | Right Arrow |
এক লাইন উপরে | Up Arrow |
এক লাইন নিচে | Down Arrow |
এক শব্দ বামে | Ctrl + Left Arrow |
এক শব্দ ডানে | Ctrl + Right Arrow |
লাইনের শুরুতে | Home Key |
লাইনের শেষে | End Key |
বর্তমান প্যারার শুরুতে | Ctrl + Up Arrow |
বর্তমান প্যারার শেষে | Ctrl+ Down Arrow |
এক স্ক্রিন উপরে | Page Up Key |
এক স্ক্রিন নিচে | Page Down Key |
স্ক্রিনের শুরুতে যেতে | Ctrl+ Page Down |
স্ক্রিনের শেষে যেতে | Ctrl+ Page Up |
ডকুমেন্টের শুরুতে | Ctrl + Home |
ডকুমেন্টের শেষে | Ctrl + End |
ডকুমেন্টের লেখা ডিলিট করা ( Delete text )
যেকোন কাজ করলে কিছু না কিছু ভুল হবে সেটা স্বাভাবিক। তাই MS Word এর কোন ডকুমেন্টে ভুল হলে তা ডিলিট করতে চাইলে নিচের দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করে ডিলিট করতে পারেন।
- Backspace Key
- Delete Key
Backspace Key: লেখার শেষের দিক থেকে ডিলিট করতে চাইলে এই Backspace Key ব্যবহার করতে হবে। এতে একটি একটি অক্ষর আপনি ডিলিট করতে পারবেন। তবে যদি ডিলিট করার পূর্বে আপনি কিছু অংশ সিলেক্ট করে নিয়ে, এই Backspace Key চাপলেই সিলেক্টকৃত অংশটুকু ডিলিট হয়ে যাবে।
Delete Key: এটির মাধ্যমে আপনি লেখার ডানদিক থেকে ডিলিট করতে পারবেন।
ডিলিট করা বা মুছা লেখা অংশ ফিরিয়ে আনা ( Undo Deleted )
কোন লেখা ভুলবশত ডিলিট করে ফেলেছেন তা আবার ফিরিয়ে আনতে চাইলে কী বোর্ড থেকে Ctrl + Z চাপতে হবে।
ফাইল সেভ করা
কোন কিছু লেখা শেষ হলে তা সেভ করে রাখার জন্য File মেনু থেকে Save এ ক্লিক করলে Save As ডায়ালগ বক্স আসবে। তারপর File Name বক্সে যে কোন একটি নাম দিয়ে ডকুমেন্টটি Save করতে পূনরায় Save বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ফাইল ওপেন করার নিয়ম
পূর্বে Save করা কোন ফাইল Open করতে চাইলে File মেনু থেকে Open এ ক্লিক করতে হবে। তারপর Computer সিলেক্ট করে Browse এ ক্লিক করতে হবে। তারপর নিচের Open ডায়ালগ বক্সটি আসবে।
এবার ফাইলের তালিকা থেকে আপনার কাঙ্খিত ফাইলটি সিলেক্ট করে Open বাটনে ক্লিক করলে ডকুমেন্ট Open হবে।
MS Word -এর সুবিধা সমূহ
মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ডের মাধ্যমে বহুমুখী সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। অন্যান্য যত ওয়ার্ড ফাইল এডিটর বিদ্যমান রয়েছে তন্মধ্যে MS Word সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং উপযুক্ত। MS Word -এর অসংখ্য সুবিধাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সুবিধা হল:
- MS Word -এর ইন্টারফেসটি অত্যন্ত ইউজার ফ্রেন্ডলি। যেকোনো প্রকার ফরমেটিং ও লেখালেখির কাজে এটি খুব দ্রুতই ব্যবহার করা যায়।
- MS Word -এর ফরম্যাটিং টুলস, যেমন- ওয়ার্ড টেক্সট, ইমেজ, টেবিল ও অন্যান্য ফরম্যাটিং অপশনগুলো ব্যবহারকারীদের সময়োপযোগী একটি ফরম্যাট দেয়।
- এই ওয়ার্ড ফাইল এডিটরটিতে বিভিন্ন ধরণের ফাইলের জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় টেমপ্লেট অফার করে। ফলে জীবনবৃত্তান্ত, চিঠি, প্রতিবেদন এবং আরও অনেক কিছু প্রফেশনালি তৈরি করা যায় কম সময়ে।
- দলগত কোন প্রজেক্টে ব্যবহার করা যায়।
- MS Word -এ লেখা কোন ফাইলের অন্তর্নির্মিত বানান এবং ব্যাকরণ পরীক্ষা ও কারেকশনের মাধ্যমে লেখার শুদ্ধতা বজায় রাখা যায়।
- এর সাহায্যে Excel ও PowerPoint -এর মতো অন্যান্য মাইক্রোসফ্ট অফিস স্যুট অ্যাপের সাথে নির্বিঘ্নে সংযোগ স্থাপন করে সহজে ডেটা স্থানান্তর এবং ফাইল লিঙ্ক করা যায়।
- কোন একটি ফাইল এডিট করার পর পুনরায় ব্যবহারকারীদের পূর্ববর্তী সংস্করণগুলো ফিরে পেতে Version History বা File History ব্যবহার করে সহযেই তা ফিরে পাওয়া যায়।
- উইন্ডোজ, ম্যাকওএস এবং মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহার করা যায়।
- এই ওয়ার্ড ফাইল এডিটরটিতে অসংখ্য শর্টকার্ট key, পছন্দ অনুযায়ী সেটিংস ও থিম কাস্টমাইজেশন করা যায়।
এছাড়াও আরও সুবিধা বহন করে এই সফটওয়্যার টি।
আশাকরি MS Word কী, মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের প্রাথমিক ধারণা পেয়েছেন। আজ MS Word কি লেখাটি এ পর্যন্ত শেষ করছি।