সবচেয়ে দামী বিলাসবহুল গাড়ি: চাকা মানুষ্য সভ্যতার অসাধারণ একটি আবিষ্কার। এটার উন্নতির ধারাবাহিকতায় মানবসভ্যতা অপ্রতিরোধ্য বেগে এগিয়ে চলছে। একটা সময় ছিলো যখন পশুকে কাজে লাগিয়ে চাকার সাহায্যে মানুষজন যাতায়াত করতো। কিন্তু এখন যন্ত্রশক্তিকে কাজে লাগিয়ে পূ্র্বাপেক্ষা বহুগুণ গতিতে যাতায়াত করতে পারছে মানুষ।
এই চাকা আবিষ্কারের মাধ্যমেই গাড়ির আবিষ্কার হয়েছে। গাড়ি কিন্তু সবসময় মানুষের বিলাসিতার চেয়ে প্রয়োজনীয় বস্তু হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে এই যুগে প্রয়োজনের চেয়ে বিলাসিতায় পিছিয়ে নেই গাড়ি। আজ আমরা probangla-তে বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়িগুলো সম্পর্কে জানবো।
১. Pagani Zonda HP Barchetta
এই গাড়িটি ইটালির নামকরা এক কোম্পানির গাড়ি। এটার রয়েছে ৭.৩ লিটার মার্সিডিজ বেঞ্জ v12 ইঞ্জিন। এর ফলে এর ইঞ্জিনে ৭৮৯ হর্সপাওয়ার শক্তি উৎপন্ন হয়। এটা ২০০ মাইল বা ৩২১.৮ কি. মি. ঘন্টা বেগে চলতে পারে। এটা একটি স্পোর্টস কার। তবুও এটা বিলাসীতায় অনন্য। এই গাড়ির কোনো ছাদ নেই। এর সাইলেন্সার থেকে আগ্নিশিখা বের হয়। এর ডিজাইন দেখলে মনে হয় যেন হলিউড মুভির এলিয়েনদের গাড়ি। এর রয়েছে দুইটি মাত্র সিট। এই গাড়িটি ২০১৭ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। এই গাড়ির একটি ইউনিট ক্রয় করেছেন Jonathan hui এটার দাম প্রায় ১৭.৫ মিলিয়ন ডলার।
আরো পড়ুন: শিক্ষার্থীদের জন্য চমৎকার কয়েকটি গেজেট
২. Bugatti La Vaiture noire
এই গাড়ি 8 litter কোয়ার্ড টার্বো চার্জারের w16 ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিন ১৫০০ হর্সপাওয়ার শক্তি উৎপন্ন করে। যার ফলে গাড়িটি ২৬০.৯ মাইল বা ৪২০ কি. মি. ঘন্টা গতিতে চলতে পারে। এই গাড়ির ডিজাইন marvel কমিকসের সুপারহিরোদের গাড়ির মতো। মাত্র তিন সেকেন্ডে ৬০ কিলোমিটার ঘণ্টা গতি উৎপন্ন করতে পারে। কালো রঙের এই গাড়িটি ২০১৯ সালে মাত্র একটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটা ক্রয় করেছে ফুটবল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এটার জন্য রোনালদোকে গুনতে হয়েছে প্রায় ১৩.৪ ডলার।
৩.Aston Martin valkyrie AMR Pro
একটিও ব্রিটিশ কোম্পানির স্পোর্ট কার। এটা ৬.৫ লিটার v12 ইঞ্জিন। ১১৪৫ হর্সপাওয়ার সম্পন্ন এই ইঞ্জিন ঘণ্টায় ২৫০ মাইল বা ৪০২ কি. মি. যেতে পারে। এটা একটি বেস্ট কোয়ালিটির স্পোর্টস কার। ২০২১ সালে এই মডেলের মাত্র ২৫ টি গাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এই মডেলের দুই সিটের সবুজ রঙের একটি স্পোর্টিং কার কিনেছেন স্কটল্যান্ডের রেসিং ড্রাইভার Dayton Coulthard এটার মূল্য ৯.১৫ মিলিয়ন ডলার।
৪. Rolls Royce Sweptail
এটা খুবই বিখ্যাত ব্রিটিশ কোম্পানি রোলস রয়েসের গাড়ি। এটা খুবই জনপ্রিয় বিলাসী গাড়ি প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ড। রাজকীয় ঐতিহ্য বজায় রেখে এটার ডিজাইন করা হয়েছে। এই গাড়ির সিট কভার সম্পূর্ণ চামড়ার। দামি কাঠ দিয়ে এটার ড্যাশবোর্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। শ্যাম্পেনের বোতল রাখার ছোট্ট একটি ফ্রিজও এটার মধ্যে আছে। কাঁচ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এর ছাদ। এর দরজায় আছে ছাতা রাখার ব্যবস্থা।
এর রয়েছে ৬.৭৫ লিটার v12 ইঞ্জিন। যেটা ৪৫৩ হর্সপাওয়ার শক্তি উৎপাদন করে। ১৫০ মাইল বা ২১৪.৪ কি. মি. প্রতি ঘন্টায় এটা চলতে পারে। কালো রঙেয়ের এই গাড়িটি একটিই নির্মাণ করা হয়েছে। এটা ক্রয় করেছে হংকং এর Sam li
এটার জন্য ১২.৪ মিলিয়ন ডলার গুনতে হয়েছে।
৫. Maybach Exelero
এটায় আছে ৫.৯ লিটার ডবল টার্বোচার্জারের v12 ইঞ্জিন। ৬৯০ হর্সপাওয়ার শক্তি সম্পন্ন এই গাড়িটি ২১৭ মাইল বা ৩৫৯ কি. মি. ঘণ্টায় চলতে পারে। ২০০৫ সালে এটা একটি মাত্র পিস নির্মাণ করা হয়। এটার সামনের অংশ পেছনের অংশ চেয়ে লম্বা। ত্রিশ বা চল্লিশের দশকের গাড়ির মতো এর ডিজাইন। তবে এটা খুবই আধুনিক। এর দরজা খুব মোটা এবং এর দুই সিট রয়েছে। কালো রঙের এই গাড়িটি ক্রয় করেছেন র্যাপ সঙ্গীত শিল্পী Birdman
তখন এটার মূল্য ছিল ৮ মিলিয়ন ডলার।
আরো দেখুন: টাকা ছাড়াই কীভাবে ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করবেন?
৬. Bugatti Divo
একটি ফ্রান্সের ব্রান্ডের গাড়ি। এটা ৮ লিটার w16 ইঞ্জিন ও চারটি টার্বোচার্জার সম্পন্ন। ১৫২১ হর্সপাওয়ার শক্তিতে ২৩৬ মাইল বা ৩৮০ কি. মি. ঘন্টায় গতিতে চলতে পারে। এটার দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন মানুষকে আকৃষ্ট করে। এটা দেখতে সাইন্স ফিকশন মুভির গাড়ির মতো। মাত্র ৪০ পিস তৈরি করা হয়েছে। সবগুলোই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে একটি গাড়ি কিনেছেন কাতারের আমির খলিফা বিন হামাল বিন খলিফা আল থানি
এটা কেনার জন্য গুনতে হয়েছে ৫.৮ মিলিয়ন ডলার।
৭. Lamborghini veneno Roadster
এটা ইটালিয়ান কম্পানির গাড়ি। এই ল্যাম্বরগিনি কোম্পানির নাম কে না জানে! এর ৬.৫ লিটার v12 ইঞ্জিনে ৭৫০ হর্সপাওয়ার শক্তি উৎপন্ন হয়। এটা ঘন্টায় ২২০.৫ মাইল বা ৩৫৫ কি. মি. গতিতে দৌড়াতে পারে।
২০১৩ সালে এটি মাত্র পাঁচ পিস নির্মিত হয়। এর মডেলের একটি গাড়ি কিনেছে ভারতের এক বড় ব্যবসায়ী কৃশ সিং।
এটার মূল্য ৪.৫ মিলিয়ন ডলার।
৮. Koenigsegg CCXR Trevita
এই গাড়ির নির্মাণ করেছে একটি সুইডিশ কোম্পানি। ৪.৮ লিটার v8 ইঞ্জিন, যা ১০১৮ হর্সপাওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন। এটা ২৫৪ মাইল বা ৪১০ কি. মি. প্রতি ঘণ্টা গতিতে চলতে পারে। ২০১০ সালে এই মডেলের তিনটি গাড়ি বানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু পরে মাত্র দুইটি গাড়ি নির্মাণ করা হয়। এর দরজাদুটো উপর দিকে খোলে। এর ছাদ সম্পূর্ণ ভাজ করে পেছনদিকে রাখা যায়। এর দুইটি সিট। সিলভার রঙের এই গাড়িটির একটি ক্রয় করেছে আমেরিকান বক্সার Floyd Mayweather
অন্যটি কিনেছে Hans Thomas Gross. উনি একজন উদ্যোক্তা এবং Running ball নামক ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা। এটার দাম ৪.৪৫ মিলিয়ন ডলার।
৯. Bugatti centodieci
Bugatti কম্পানি তাদের ১১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই Bugatti centodieci মডেলের গাড়ি নির্মাণ করে। ৮ লিটার w16 ইঞ্জিনে ১৫৭৮ হর্সপাওয়ার শক্তি উৎপন্ন হয়। এই গাড়ি ঘণ্টায় ২৪০ মাইল বা ৩৮০ কি. মি. বেগে চলতে পারে। ২০২২ সালে এটা নির্মাণকাজ শেষ হয়। মাত্র ১০ ইউনিট গাড়ি কোম্পানিটি বাজারে আনে। এর মাত্র দুইটি সিট। এর মডেলের একটি গাড়ি ক্রয় করেছে ফুটবল তারকা ক্রিশ্চানো রোনালদো।
এটার মূল্য ৪.৯ মিলিয়ন ডলার।
১০. Rolls Royce Boat Tail
এই গাড়িটি Rolls Royce এর সবচেয়ে দামি গাড়ি। ২০২১ সালে প্রস্তুত করা হয়। এটা নৌকা আকৃতিতে ডিজাইন করা হয়েছে। Rolls Royce এর একটি গাড়ি তৈরিতে সাধারনত অর্ধবছর সময় লাগলেও এটা প্রস্তুত করতে চার বছর লেগেছে। Rolls Royce কম্পানি এই মডেলের তিনটি গাড়ি নির্মাণ করতে চেয়েছে। এরমধ্যে একটি তৈরি হয়েছে।
এটা চার সিটের এবং সিটগুলো খুবই আরামদায়ক। এটা গাঢ় নীল রঙের। পেছনে ডিকিতে ফ্রিজ আছে এর। ডিকিটা খুললে মনে হবে যেন প্রজাপতির ডানা মেলেছে। ডিকিটা এমনভাবে ডিজাইনকৃত যেটা নাস্তার টেবিলের মতো ব্যবহার করা যায়।
সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত ঘড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান House of Bovet এর দুটি ঘড়ি আছে এই গাড়ির মধ্যে। এক মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঘড়িদুটির মূল্য।
এতে রয়েছে ৬.৭৫ লিটার ডবল টার্বো চার্জারের V12 ইঞ্জিন। যা ৫৬৩ হর্স পাওয়ার শক্তি উৎপন্ন করে। এই গাড়ি ২৫০ কিলোমিটার ঘণ্টায় গতি চলতে পারে।
এই গাড়িটির মূল্য ২৮ মিলিয়ন ডলার। যা আজ অবধি সবচেয়ে দামি গাড়ি। এটা ক্রয় করেছে বিখ্যাত সংগীত তারকা Beyonce এবং Jay-Z দম্পতি।
বাংলাদেশে কি পৃথিবীর দামি গাড়ি গুলো চালানো সম্ভব?
পৃথিবীর অধিকাংশ দামি গাড়িগুলো বাংলাদেশে চালানোর জন্য দেশে উপযুক্ত রাস্তাঘাট ও আর্থসামাজিক পরিবেশ নেই। বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট এবড়ো-থেবড়ো ও কাদামাটি পূর্ণ। এ সকল এলাকায় উচ্চমূল্যের গাড়ি চালানো বিপদজনক। তাছাড়া রাস্তায় একটু পরপরই বিভিন্ন মাপের ও উচ্চতার আইল্যান্ড দেখা যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি গাড়িগুলোর বডি পার্টস মাটির খুবই কাছাকাছি অবস্থানে থাকে। এদের চাকা গুলো তুলনামূলক ছোট হয় এবং গাড়ির আকৃতিও খুবই নিচু হয়। তাই বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে সে সকল গাড়ি চালানো সম্ভব হবে না।
তদুপরি, বাংলাদেশ অত্যন্ত জনবহুল একটি দেশ এবং এদেশের অবকাঠামোগত অবস্থা তেমন উন্নত নয়। ফলে অধিক গতিসম্পন্ন গাড়ি দেশের রাস্তাঘাটে চালানো মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বিশ্বের দামি গাড়িগুলো মূলত উচ্চ CC ও গতিসম্পন্ন হয়। তাই বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে ধরনের গাড়ি চলাফলের জন্য আইনিভাবে রোড পারমিট দেওয়া হয় না।
গাড়িগুলো সম্পর্কে বাস্তব কিছু কথা
এই গাড়িগুলো সাধারণত বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। এগুলো খুবই সীমিত সংখ্যায় নির্মাণ করা হয়। এগুলোর ক্রেতাগণ আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে রাখে। এর মধ্যে এমন কিছু গাড়ি আছে যেটা মাত্র একটিই তৈরি করা হয়েছে। এইজন্যই এই গাড়িগুলো এত দামী।
এগুলোর দামও সুনির্দিষ্ট নয়। এগুলোর প্রকৃত দাম একমাত্র ক্রেতারাই জানে। আমরা শুধু কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দাম এখানে প্রকাশ করেছি।
এখানে যেই সকল দামি গাড়ির কথা বলা হয়েছে, সেগুলো প্রয়োজনের চেয়ে বিলাসী বেশি। এই গাড়িগুলো আমাদের দেশের রাস্তায় চলাচলের উপযোগী নয়। এই গাড়িগুলোর যন্ত্রাংশ কোথাও পাওয়া যায় না। এগুলোর ইউনিক পার্টসগুলো একমাত্র প্রস্তুতকৃত কোম্পানিতেই থাকে। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ খুবই ব্যয়বহুল। এই গাড়িগুলো যাতায়াতে ব্যবহারের চেয়ে লোক দেখানোর কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়।
এই গাড়িগুলো যতই দামি ও বিলাসবহুল হোক না কেন, ভাঙা রাস্তা বা অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য টয়োটার প্রাডো গাড়িই ভালো। বিলাসী গাড়িগুলোর তুলনায় টয়োটার গাড়ি সস্তা ও যন্ত্রাংশ সহজলভ্য ও অধিক ব্যবহারযোগ্য।