চ্যাট জিপিটি - Chat gpt

চ্যাট জিপিটি কী? | কিভাবে Chat GPT ব্যবহার করবেন?

আজকে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি চ্যাট জিপিটি কী এবং কিভাবে Chat GPT ব্যবহার করবেন তা সম্পর্কে। কেমন হবে ভাবুন তো একবার, যদি এমন এক প্লাটফর্ম চলে আসে যেখানে আপনি যেকোনো বিষয়ের মৌলিক লেখা পেয়ে যাবেন। যেমন ধরুন মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, গল্প, কবিতা, ব্যবসায়িক ইমেইল লেখা ইত্যাদি। শুধু লেখাই নয় কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং করে দেবে আপনার। না, আমি এটা কোনো ভবিষ্যতের গল্প কাহিনী বলছি না। আমি বলছি আমেরিকার তৈরি এক আর্টি অফিসিয়াল রিসার্চ কোম্পানি Chat GPT -র কথা।

চ্যাট জিপিটি কী?

চ্যাট জিপিটি এমন এক প্রযুক্তি যা মানুষের ভাষা বুঝতে পারে, জবাব দিতে পারে। এই অবিশ্বাস্য প্রযুক্তিটি আমেরিকার মেডিকেল বিভাগের কঠিন সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। সবগুলো প্রশ্ন পাস করে উঠেছে। এটা এতটাই জনপ্রিয় যে, দুই মাসে একশত মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার হয়ে গেছে। যেখানে tiktok এর লেগেছিল নয় মাস, ইনস্টাগ্রামের লেগেছিল ৩০ মাস।

ব্যবহারকারীর সংখ্যার পাশাপাশি এটা নিয়ে আলোচনা ও বিস্ময়ের শেষ নেই মানুষের মধ্যে। সবাই উঠে পড়ে লেগেছে এটাকে জানার জন্য। কিভাবে সম্ভব এত আধুনিক, এত বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রযুক্তি আবিষ্কার করা। আদৌ কি এটা নিজে থেকে এ সকল সৃজনশীল কর্মকাণ্ড করে থাকে। নাকি অন্য কেউ এটাকে পরিচালনা করছে। এটাকে অন্য কেউ পরিচালনা করছে না। মানুষের দেওয়া অলগারিদম প্রোগ্রাম ব্যবহার করে একুশ শতকের নতুন মাইলফলক – ChatGPT প্রশ্নের জবাব দিয়ে থাকে।

Chat GPT কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? | কে এর প্রতিষ্ঠাতা?

২০১৯ সালে microsoft কম্পানি Chat GPT এর ওপর অনেক টাকা বিনিয়োগ করে। এরা এখন বিভিন্ন প্রজেক্টে একত্রে কাজ করছে। Open AI অতি অদ্ভুত ধরনের কাজ করতে জানে। তাদের DALL-E-2 নামক একটি ফিচার রয়েছে। যা নিজে থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে পারে। আপনি যেমন ধরনের চিত্র আশা করেন সেটা লিখুন।

এরপর কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট আপনার চাহিদা মোতাবেক ছবি এনে হাজির করবে। এটা এত নিখুঁতভাবে ছবি ডিজাইন করে যে অনেকে শংকিত হয়ে পড়ছে। কেননা এভাবে চলতে থাকলে তো গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের কদর কমে যাবে। অসংখ্য মানুষ চাকরি থেকে বঞ্চিত হবে।

এছাড়া এটার মাধ্যমে অনায়াসে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। চাইলে যে কেউ যেকোনো বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করতে পারবে। এর ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধাশূন্য হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

কিভাবে Chat GPT ব্যবহার করতে হয়?

প্রাথমিকভাবে এটা ব্যবহার করা সবার জন্য উন্মুক্ত। Chat.openai.com নামক ওয়েবসাইটে গিয়ে সাইন আপ করুন। এরপর লগইন করে এই সেবা উপভোগ করুন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি, মাইক্রোসফটের bing সার্চ ইঞ্জিন ছাড়া অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিনে এটা এত সহজে কাজ করে না। তাই আপনি bing সার্চ ইঞ্জিন থেকে এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। অতি চমৎকার এক অভিজ্ঞতা অর্জন হবে আপনার।

চ্যাট জিপিটি দিয়ে যেসব কাজ করা যায়

মানুষের তৈরি বিজ্ঞান ধর্মী আবিষ্কার গুলোর মধ্যে চ্যাট জিপিটি অত্যন্ত বৈপ্লবিক প্রভাব বিস্তারকারী একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। চ্যাট জিপিটিকে বর্তমান সময়ের দক্ষ মানুষজন বহু কাজে ব্যবহার করতে পারে এবং এর সুবিধাও রয়েছে অনেক। চ্যাট জিপিটি কিছু ব্যবহারের নিচে তুলে ধরা হলো:

  • চ্যাট জিপিটি মানুষের মতো বোঝার এবং অনুধাবন ও বিশ্লেষণ করার খুবই উপযুক্ত দক্ষতা অর্জন করেছে। তাই মানুষ নির্ভর অধিকাংশ কর্মকাণ্ডে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা যায়।
  • এটি মানুষের সাথে কথা বলার মত চ্যাটিং করতে পারে।
  • শিক্ষাক্ষেত্রে চ্যাট জিপিটি ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যে কোন বিষয়বস্তুর উপর খুবই অল্প সময়ে বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য তথ্য দিতে পারবে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
  • চ্যাট জিপিটির সাথে পূর্ব কোন কথোপকথন হয়ে থাকলে, এটি তার স্মৃতি ধরে রাখতে পারে এবং চাহিদা অনুযায়ী পূর্ববর্তী প্রম্পট বা ফর্ম গুলো অনুসরণ করে আউটপুট দিতে পারে।
  • চ্যাট জিপিটি থেকে খুবই দ্রুত অজানা ও ঐতিহাসিক তথ্যের উত্তর পাওয়া যায়।
  • এর মাধ্যমে যেকোন লেখার মান উন্নতকরন ও গ্রামটিক্যালি ইরোরগুলো ঠিক করা যায়।
  • এটি পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষায় উত্তর দিতে পারে। তবে ইংরেজি ছাড়া অন্যান্য ভাষার ক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
  • চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করে অন্যান্য AI tool গুলোর জন্য প্রম্পট তৈরি করা যায়। সেই prompt অন্যান্য টুলগুলোতে ব্যবহার করলে কাঙ্খিত আউটপুট পাওয়া যায়।
  • চ্যাট জিপিটি আপনার ডিজিটাল সহকারী (Digital Assistant) হিসেবে কাজ করবে।
  • চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করে একজন প্রোগ্রামার বিভিন্ন কোড বা সংকেত সহজেই লিখিয়ে নিতে পারবে।
  • চ্যাট জিপিটির সঙ্গে যেকোনো লেখা বা টেক্সটভিত্তিক গেম খেলা যায়। 

এছাড়াও চ্যাট জিপিটির আরো বহু ব্যবহারিক বিস্তৃতি রয়েছে। প্রতিনিয়ত এটিকে আরো উন্নত করতে আপডেট করে যাচ্ছে -এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান Open AI।

Google বনাম Chat GPT (google vs chatgpt)

চ্যাট জিপিটি নিঃসন্দেহে একটি বিপ্লব নিয়ে এসেছে। যা গুগলকে টেক্কা দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। গুগল হল আলফাবেট নামক বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের একটি কোম্পানি। google কে ইন্টারনেট জগতের বাদশাহ্ বলা হয়। কেননা ইন্টারনেটে মোট অনুসন্ধানের 90 শতাংশ অনুসন্ধান গুগল সার্চ ইঞ্জিনে হয়। অপরদিকে বিং যা মাইক্রোসফটের একটি সার্চ ইঞ্জিন। এটাতে মাত্র ৮% সার্চ হয়।

তাহলে গুগল কেন এত শংকিত?

  • ১.২ প্রিলিয়ন ডলার সমমূল্যের কোম্পানি গুগল কেন এতটা ভীত সন্ত্রস্ত?
  • Bing আর Chat GPT এর ভবিষ্যৎ ঐক্য কি গুগলকে হারিয়ে দেবে?

google যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এর কাজ ছিল গ্রাহককে তার অনুসন্ধানকৃত তথ্যের ওয়েবসাইট গুলোকে সামনে আনা। লক্ষ লক্ষ ওয়েবসাইট থেকে গ্রাহকের অনুসন্ধানকৃত শব্দকে সম্মুখে হাজির করাটা নিঃসন্দেহে কঠিন একটি কাজ। কিন্তু এটা অতি অল্প সময়ের মধ্যে google সম্পন্ন করতে পেরেছে। সময়ের সাথে সাথে google জিমেইল, গুগল ড্রাইভ, মোবাইল সফটওয়্যার সহ বিভিন্ন অ্যাপস বাজারে আনে।

গুগলের প্রধান উপার্জন হলো বিজ্ঞাপন প্রচার করা। আপনি কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে সেখানে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন নজরে আসবে। google এই বিজ্ঞাপন প্রচার করেই বছরে কোটি কোটি ডলার ইনকাম করে। প্রতিদিন google এ ৮.৫ বিলিয়ন সার্চ হয়। অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন ৪০% গ্রাহক তার সার্চ করা বিষয় খুঁজে পায় না। তাই তারা Chat GPT এর দিকে ঝুঁকে যেতে পারে।

Chat GPT কেন এত বিশেষ?

আমরা যখন google এ কোন বিষয় সার্চ করি তখন বিভিন্ন ওয়েবসাইট সামনে আসে। সে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে এর ভিতর থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু Chat GPT থাকলে এত পরিশ্রম করতে হবে না। চ্যাট জিপিটি লক্ষ লক্ষ ওয়েবসাইট থেকে তথ্য বাছাই করে, বিশ্লেষণ করে আপনার সামনে উপস্থিত করবে। এতে আপনার সময়ের সাশ্রয় হবে। এছাড়া আপনার চাহিদা মাফিক ছবি আপনি বানিয়ে নিতে পারবেন।

যদিও গুগলে ছবি সার্চ করার অপশন রয়েছে কিন্তু গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ছবি সরবরাহ করতে পারে না। গুগল সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে সর্বকালের সেরা। কিন্তু বলা যায় না আর কতদিন সে এই স্থানে থাকতে পারে।

পরিশেষে কিছু কথা:

এখনো bing ও Chat GPT যৌথভাবে সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করেনি। ওদিকে গুগলও বসে নেই। গুগল ও তৈরি করে ফেলেছে তাদের নিজস্ব আর্টি অফিসিয়ালি চ্যাট বার্ড। google assistant এমনই এক প্রযুক্তি। যদিও এর অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। গুগলের পাশাপাশি আরও কয়েকটি কোম্পানি এ ধরনের চ্যাট বার্ড তৈরি করেছে। যেমন অ্যাপলের Siri, অ্যামাজনের Alexa এটা শুধুমাত্র গ্রাহকের নির্ধারিত কিছু সেবাগুলো প্রদান করে থাকে।

দেখা যাক ভবিষ্যতে কী আসতে যাচ্ছে মানব সভ্যতায়। স্টিফেন হকিং ভবিষ্যৎবাণী করে গিয়েছে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট সম্পর্কে। তার ধারণা একসময় পৃথিবীর রাজত্ব করবে এই রোবটিক্স প্রযুক্তি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top