পহেলা ফাল্গুন

পহেলা ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ – বসন্তের আগমন

পহেলা ফাল্গুন ১৪৩১: মাঘ মাস চলে যাচ্ছে। শীতের ঘন কুয়াশা ভেদ করে সূর্য রশ্মির মতো ঋতুরাজ বসন্তের আগমন হচ্ছে। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম মাস ফাল্গুন। ফুলে ফুলে বাংলার জমিনকে সাজাতে আসছে বসন্ত।

উর্দু কবি আব্দুস সামাদ বলেন,
“দিল কি নাতা তোড় কে যাব তু গায়ি
দিল লুভানে বাদ-এ নও-বাহার আয়ি”

‘হৃদয় সম্পর্ক ছেদ করে যখন তুমি গেলে
হৃদয়কে মানাতে নব-বসন্তের পবন এলে’

আমাদের কবিগুরু রবি ঠাকুর ঋতুরাজকে দেখে বলেন বলেন,
“আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে
কোরো না বিড়ম্বিত তারে।
আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,
আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো,
এই সংগীত-মুখরিত গগনে
তব গন্ধ তরঙ্গিয়া তুলিয়ো।
এই বাহির ভুবনে দিশা হারায়ে
দিয়ো ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে।

অতি নিবিড় বেদনা বনমাঝে রে
আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে–
দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া
আজি ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে।
মোর পরানে দখিন বায়ু লাগিছে,
কারে দ্বারে দ্বারে কর হানি মাগিছে,
এই সৌরভবিহ্বল রজনী
কার চরণে ধরণীতলে জাগিছে।
ওগো সুন্দর, বল্লভ, কান্ত,
তব গম্ভীর আহ্বান কারে।”

ষড়ঋতুর এই বঙ্গদেশে বসন্ত এক নতুন রূপে হাজির হয়। এই সময় না থাকে শীত না থাকে গরম। আম্রকাননে মুকুল সুরভিত হয়। মঞ্জুরীর মম গন্ধে, মৌমাছির গুনগুন শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলার জমিন। এই সময়টায় আকাশ থাকে মেঘ মুক্ত। গাঢ় নীল আসমান দেখে মনে হয় কেউ যেন নীল শাড়ি দিয়ে আকাশটা ঢেকে দিয়েছে। ভোরের রবি কিরণ যখন ঘাসের ওপর জমে থাকা শিশির বিন্দুর ওপর গিয়ে পড়ে, দেখে মনে হয় যেন মুক্তা ঝলমল করছে। বসন্তের বাতাস লেগে যেন ফুল গাছগুলো তরুণ হয়ে ওঠে। রঙ বেরঙের ফুল ফোঁটে।

বাংলার এই কোমল, স্নিগ্ধ সৌন্দর্য দেখার জন্যই হয়তো জীবনানন্দ দাশ আবারো ফিরে আসতে চেয়েছে। এই সময়টায় ঝিঁঝিঁ পোকার আনন্দ উৎসব শুরু হয়। সব তো সুরে অনবরত সে চেঁচামেচি করে যায়। অপরদিকে কোকিল বিরহী প্রেমিকের মতো আকুল কণ্ঠে জানি না কাকে ডাকতে থাকে। কোকিলের মায়াময় কুহু ডাক প্রতিটা হৃদয়বানের অন্তর কাঁপিয়ে দেয়। এই মাস যেন প্রেম বয়ে নিয়ে আসে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top