নিম পাতা (Neem leaves) কিংবা নিম গাছের সাথে আমরা সকলেই কম-বেশি পরিচিত। গ্রাম হোক কিংবা শহর, সর্বত্রই সুস্থ থাকার জন্য নিম পাতার উপকারিতা রয়েছে ব্যাপক।
দৈনন্দিন প্রয়োজনে নিয়ম মেনে ব্যবহারের জন্য, নিম পাতার পরিচিতি, গুনাগুণ, নিম পাতার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিকগুলো জেনে নিন এই লেখা থেকে।
নিম পাতা ও নিম গাছ
নিম হচ্ছে একটি ঔষুধী গুণাগুণ সম্পন্ন আমাদের পরিচিত একটি গাছ। এটি চির হরিত ও বহু বর্ষজীবি বৃক্ষ। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে প্রায় ৫ হাজার বছর বা তারও আগে থেকে এই গাছটি ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই গাছের ছাল, পাতা, বীজ এবং এর সবকিছুই কাজে লাগে ও ঔষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
এতে ১৩০ টি ওষুধী গুণাগুণ রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দৃষ্টিতে নিম গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য তারা এ গাছকে “একুশ শতকের বৃক্ষ” বলে ঘোষণা দিয়েছেন। নিমের অনেক উপকারিতা রয়েছে এবং এর পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে।
নিম পাতার উপকারিতা
আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে নিমপাতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিমপাতার উপকারিতা সম্পর্কে নিচে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলোঃ
১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিমপাতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি রক্ত নালীকে প্রসারিত করে রক্ত সংবহন উন্নত করে। ডায়াবেটিসের রোগীরা দ্রুত ভালো ফল পেতে প্রতিদিন সকালে কচি নিম পাতার রস খালি পেটে পান করতে পারেন। অন্যভাবে ৫টি গোলমরিচ ও ১০টি নিমপাতা বেটে প্রয়োজনে পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে তা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
২. ওজন কমায়
নিম ফুলের মাধ্যমে আমাদের ওজন কমানো সম্ভব। কারণ নিম ফুল মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে শরীরের চর্বি গুলো ক্ষয় করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে আমাদের পেটের চর্বি গুলো নিরাময় করতে সাহায্য করে। একমুঠো নিম ফুল চূর্ণ করে এর সাথে ১/২ চামচ লেবুর রস ও ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণটি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে আমাদের ওজন হ্রাস পাবে।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রপাটিজ। এগুলো আমাদের শরীরে প্রবেশ করার পর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এর ফলে আমরা বিভিন্ন রকম রোগে সংক্রমণ হওয়া থেকে রক্ষা পাই।
৪. চর্মরোগ নিরাময়ে
ত্বকের যে সকল স্থানে বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগ হয় যেমন একজিমা, ব্রণ, ফোঁড়া ও চুলকানি সহ ইত্যাদি সমস্যা হয়। সেসকল স্থানগুলোতে পাতা বা ফুল বেটে লাগালে তা ভালো হয়ে যায়। আবার নিমপাতা সিদ্ধ করা পানি দিয়ে গোসল করলেও নিম পাতার উপকারিতা পাওয়া যায়।
৫. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়
ত্বকের যত্নে নিমের ভূমিকা অনেক। এছাড়াও এটি ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। নিম পাতার সাথে কাঁচা হলুদ পেস্ট করে নিয়মিত লাগালে স্কিন টোন ঠিক হয় ও ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়। এই পাতার চেয়ে হলুদের পরিমাণ কম হবে। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত খালি পেটে নিমের পাতা খেলে রক্তের ক্ষতিকর উপাদানগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এছাড়াও টক্সিক উপাদান গুলো বেরিয়ে যায়। ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বেড়ে যায় এবং যেকোনো ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
৬. উঁকুন দূর করে
নিম ব্যবহার করে উকুনের সমস্যা দূর করা যায়। নিমের পেস্ট তৈরি করে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করে দিন তারপর মাথা শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন এবং উকুনের চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ান। সপ্তাহে ২-৩ বার এবং ২ মাস নিয়মিত এভাবে ব্যবহার করুন। নিয়মিত এভাবে করার ফলে আপনার মাথার উকুন দূর হবে।
৭. বাতের ব্যথা নিরাময়ে
নিম বাতের রোগীদের জন্য অনেক উপকারী একটি ভেষজ উপাদান। বাতের ব্যথায় নিমের তেলের ম্যাসাজ অনেক কার্যকরী। নিমপাতা, নিমের বীজ ও বাকল বাতের ব্যথা সারাতে ওষুধ হিসেবে কাজ করে। বাতের ব্যথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানের ব্যাথা নিরাময়ে নিমের তেল বা নিম পাতার উপকারিতা রয়েছে।
৮. জন্ডিস নিরাময়ে
জন্ডিসের রোগীরা প্রতিদিন সকালে নিমপাতার রস ও মধু মিশিয়ে খালি পেটে খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ২৫-৩০ ফোঁটা নিমপাতার রস ও একটু মধুর সাথে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে জন্ডিস থেকে আরোগ্য পাওয়া যাবে। নিয়মিত এক সপ্তাহ এভাবে খেলে জন্ডিস থেকে আরোগ্য লাভ করা যাবে।
আরও পড়ুন: শরীরের ওজন কমানোর সহজ উপায়
৯. রক্ত পরিষ্কার করে
নিমপাতার রস রক্ত পরিষ্কার করে। এটি রক্তের দূষিত পদার্থ গুলোকে বের করে দিয়ে রক্তপ্রবাহ ঠিক রেখে হার্টকে স্বাভাবিক রাখে।
১০. চুলের যত্নে
উজ্জ্বল,সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন চুল পেতে নিমপাতার অবদান অপরিসীম। চুলের জন্য নিমপাতার ব্যবহার অদ্বিতীয়। এই পাতা ব্যবহারের ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয়, চুল লম্বা ও ঘন হয়, চুলের খুশকি দূর হয় এবং চুল পরা বন্ধ হয়।
নিমপাতার অপকারিতা
নিম পাতার উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। সেগুলো হলোঃ
- গর্ভবতী মায়েদের নিম পাতা খাওয়া উচিত না কারণ এতে গর্ভপাত হতে পারে।
- দিনে সর্বোচ্চ দুটি নিমপাতার বেশি খেলে সমস্যা হবে।
- যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা এই পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- নিম এলার্জি নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয় তবে বেশি মাত্রায় ব্যবহার করলে এলার্জি সমস্যা বাড়তে পারে।
শেষকথা
স্বাস্থ্য সচেতন হিসেবে দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে নিম পাতা ব্যবহার করা যায়। বিশেষ কিছু অবস্থা ছাড়া সর্বক্ষেত্রে নিম পাতার উপকারিতা রয়েছে। তবে নিম পাতা সেবনের ফলে যাদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তারা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন।