অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম ২০২৪

“এম আর পি পাসপোর্ট থেকে অইলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম ২০২৪ | প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও কিভাবে অনলাইনে আবেদন করবেন বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আজকের লেখাটি।”

মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অর্থাৎ এম আর পি পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন করতে অনেক সময় নিত। সেই তুলনায় ই পাসপোর্ট খুবই দ্রুত ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারে। তাই এখন বিশ্বের সকল দেশ ই পাসপোর্ট এর দিকে ঝুঁকছে। অনেকে আছেন যারা এম আর পি পাসপোর্টকে ই পাসপোর্টে রিনিউ করতে চান তাদের জন্য “অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম ২০২৪” এই আর্টিকেলটি পড়ুন।

২০২০ সাল থেকেই বাংলাদেশে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। ই পাসপোর্টে রয়েছে ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোচিপ। যার মধ্যে পাসপোর্টধারী ব্যাক্তির সকল তথ্য সংরক্ষণ হয়ে থাকে।

ই পাসপোর্ট এর সাহায্যে ইমিগ্রেশনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই গেইটের মাধ্যমে পাসপোর্ট চেকিং ছাড়াই প্রবেশ করা যায়। এর জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় না।

ই পাসপোর্টে এর সুবিধা সমূহঃ ভ্রমণকারীরা ই পাসপোর্ট এর সাহায্যে সহজ ও দ্রুত ভ্রমণ করতে পারবে। মোটামুটি এখন সকল দেশের বিমানবন্দরে ই-গেট সেবা চালু আছে। এর ফলে বিমানবন্দরগুলোতে ভিসা চেকিং এর জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হয় না। খুব দ্রুত ইমিগ্রেশন শেষ হয়ে যায়।

যখন কোনো ভ্রমণকারী ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করে ভ্রমণ করবে, প্রশাসন চাইলে সাথে সাথে কেন্দ্রীয় তথ্যাগারের (পাবলিক কি ডাইরেক্টরি-পিকেডি) সাথে কন্টাক করে ভ্রমণকারীর সম্পর্কে তথ্য জানতে পারবে।

এছাড়া ই-গেটের নির্দিষ্ট একটি স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে সেখানকার ক্যামেরা ছবি তুলে নেয়। সাথে থাকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিরীক্ষার ব্যবস্থা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ভ্রমণকারীর ইমিগ্রেশন শেষ হতে দেরি হবে না।

যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে লালবাতি জ্বলে উঠে। তখন সেখানের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ভ্রমণকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। যদি কারো বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকে। যেমন সন্ত্রাসী, দেশদ্রোহী কেউ থাকলে মুহূর্তেই সে ধরা পড়ে যাবে।

এটা পরিচালনা করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও)। ইন্টারপোল ছাড়াও বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এসকল তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারবে। এটায় অনেক নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকার ফলে এই ধরণের পাসপোর্ট জালিয়াতি করা দুঃসাধ্য। তাই ই পাসপোর্টের এত ব্যাপক চাহিদা।

অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম ২০২৪

বাংলাদেশের সকল জেলার পাসপোর্ট অফিসগুলোতে ই পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রম চালু আছে‌। তাই আপনি খুব সহজেই নিজ জেলা থেকেই এমআরপি পাসপোর্ট নবায়নপূর্বক ই পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। আপনি চাইলে নিজেই অনলাইনে বাংলাদেশি পাসপোর্ট রিনিউ করার ফরম পুরণ করে ই পাসপোর্ট রিনিউ করতে পারবেন।

ই পাসপোর্ট রিনিউ করার ক্ষেত্রে পূর্বের এমআরপি পাসপোর্ট এর তথ্যগুলোই সাবমিট করতে হবে। যদি কোনো তথ্যের অমিল দেখা দেয় তাহলে ই পাসপোর্ট নাও পেতে পারেন।

অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়মাবলী

ই পাসপোর্ট রিনিউ করার ক্ষেত্রে নতুন করে ই পাসপোর্ট তৈরি করার নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হবে। কিভাবে নতুন করে ই পাসপোর্ট তৈরি করতে হয় তা জানতে এই লিংকে প্রবেশ করুন ই পাসপোর্ট তৈরির নিয়ম

সর্বপ্রথম আপনাকে www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। এরপর আপনাকে শুধুমাত্র আইডি ডকুমেন্টস (ID Documents) অপশন থেকে আপনার পূর্ববর্তী এমআরপি পাসপোর্ট (MRP Passport) অপশনটি সিলেক্ট করবেন এবং যে সকল তথ্য চাইবে তা পূরণ করবেন।

অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়মাবলী
অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়মাবলী

চিত্রে যেভাবে দেখানো হয়েছে সেই ভাবে সিলেক্ট করবেন।

১ম ধাপ: ID Documents অপশন আসলে পরে “Yes, I have a Machine Readable Passport (MRP)” এই অপশনটি নির্বাচন করতে হবে।

২য় ধাপ: “What is the reason for your passport request?” এইখানে Arrow চিহ্নে ক্লিক করে আপনার পাসপোর্ট রিনিউ করার কারণ নির্বাচন করতে হবে।

অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার কারণ
অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার কারণ

চিত্রে দেখানো কারণগুলো থেকে আপনার রিনিউ করার কারণ নির্বাচন করুন। নিচে দেখা হলো কোন শব্দের কী অর্থ।

  1. EXPIRED- যদি পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়ে থাকে।
  2. LOST/ STOLEN- যদি হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে গিয়ে থাকে।
  3. DATA CHANGE- তথ্য পরিবর্তনের জন্য।
  4. UNUSABLE- যদি পাসপোর্ট নষ্ট বা ছিড়ে গেলে।
  5. OTHER- অন্যান্য কারণ।

৩য় ধাপ: এরপর আপনি আপনার এমআরপি পাসপোর্ট নম্বরটি লিখুন।

৪র্থ ধাপ: আপনার পাসপোর্ট প্রদানের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ লিখুন।

এরপরে ধাপগুলো নতুন ই পাসপোর্ট যেভাবে করতে হয় সেভাবে পার করতে হবে। নতুন ই পাসপোর্ট কীভাবে করতে হয় তা আমাদের ওয়েবসাইটে বিস্তারিতভাবে আর্টিকেল লেখা আছে। চাইলে সেখানে গিয়ে দেখতে পারেন।

অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ ফরম পূরণের পর অন্যান্য কার্যক্রম

সঠিকভাবে সংশোধিত পাসপোর্ট হাতে পেতে, অনলাইনে আবেদন ফরম পূরনের পর নিচের কার্যক্রম গুলো ধারাবাহিকভাবে করতে হবেঃ

  • অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ আবেদন সাবমিট।
  • এ-চালান এর মাধ্যমে পাসপোর্ট রিনিউ ফি পরিশোধ।
  • পাসপোর্ট রিনিউয়ের জন্য লিখিত আবেদন পূরণ।
  • পাসপোর্টের কোন তথ্য পরিবর্তন করলে, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে বা পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্টের তথ্য সংশোধনের অঙ্গীকারনামা সংগ্রহ করে যথাযথভাবে পূরণ ও স্বাক্ষর করে আবেদনের জন্য প্রস্তুতকরন।
  • পূর্ববর্তী পাসপোর্টের কপিসহ পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে পাসপোর্টের কোন তথ্য পরিবর্তন করলে, আবেদনের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, পাসপোর্টের তথ্য সংশোধন ফরম, পাসপোর্ট সংশোধনী অঙ্গীকারনামা ইত্যাদি কাগজপত্র একত্রে জমা দিতে হবে।
  • তারপর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তা যাচাই-বাছাই করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিবে এবং পাসপোর্ট হাই কমিশনে পাঠানো হবে।
  • সবকিছু সঠিক থাকলে খুব শীঘ্রই নবায়ন করা নতুন পাসপোর্টটি পাসপোর্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  1. আবেদনপত্রের সারাংশের প্রিন্ট কপি (অ্যাপয়েন্টমেন্ট সহ)
  2. সনাক্তকরণ ডকুমেন্টের প্রিন্ট কপি (জাতীয় পরিচয় পত্র/ অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ)
  3. ই চালান/ মানি অর্ডার/ ব্যাংক সার্টিফাইড চেক।
  4. পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এবং ডাটা পেজের প্রিন্ট কপি।
  5. সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে GO/NOC (যদি থাকে)

পাসপোর্ট রিনিউ করার ফি ২০২৪

পাসপোর্ট রিনিউ করার ফি নতুন ই পাসপোর্ট করার ফি এর সমমূল্য।

∆ ৫ বছরের মেয়াদী ৪৮ পাতার ই পাসপাের্ট

নিয়মিত (রেগুলার) ১৫-২১ দিন ৮,০২৫ টাকা।
জরুরী (এক্সপ্রেস) ৭-১০ দিন ৬,৩২৫ টাকা।
অতি জরুরি (সুপার এক্সপ্রেস) ২ দিন ৮,৬২৫ টাকা।

∆ ৫ বছরের মেয়াদী ৬৪ পাতার ই পাসপাের্ট

নিয়মিত (রেগুলার) ১৫-২১ দিন ৬,৩২৫ টাকা
জরুরি (এক্সপ্রেস) ৭-১০ দিন ৮,৩২৫ টাকা।
অতি জরুরি (সুপার এক্সপ্রেস) ২ দিন ১২,০৭৫ টাকা

∆ ১০ বছরের মেয়াদী ৪৮ পাতার ই পাসপাের্ট

নিয়মিত (রেগুলার) ১৫-২১ দিন ৫,৭৫০ টাকা।
জরুরী (এক্সপ্রেস) ৭-১০ দিন ৮,০৫০ টাকা।
অতি জরুরি (সুপার এক্সপ্রেস) ২ দিন ১০,৩৫০ টাকা।

∆ ১০ বছরের মেয়াদী ৬৪ পাতার ই পাসপাের্ট

নিয়মিত (রেগুলার) ১৫-২১ দিন ৮,০৫০ টাকা।
জরুরি (এক্সপ্রেস) ৭-১০ দিন ১০,৩৫০ টাকা।
অতি জরুরি (সুপার এক্সপ্রেস) ২ দিন ১৩,৮০০ টাকা

পাসপোর্ট রিনিউ ফরম জমা দেয়ার নিদের্শনা

  1. অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ আবেদন করার পর, আবেদনের কপি A4 সাইজ কাগজে উভয় পৃষ্ঠায় প্রিন্ট করতে হবে।
  2. ই পাসপোর্ট রিনিউ ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।
  3. প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলোর ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে।
  4. হারানো পাসপোর্ট রিনিউ করতে হলে মূল জিডির কপি সাবমিট করতে হবে।
  5. পাসপোর্ট রিনিউ করার ক্ষেত্রে মূল আম আর পি পাসপোর্ট প্রদর্শন করতে হবে।

পাসপোর্ট রিনিউ করার সময় কি কি তথ্য পরিবর্তন করা যায়?

সাধারণত পাসপোর্টে ব্যক্তির পরিচয়বাচক তথ্যগুলো পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে সংশোধনের আবেদন করে উপযুক্ত ডকুমেন্টস থাকলে নিম্নোক্ত তথ্যগুলো পরিবর্তন করা যায়ঃ

  • জন্ম তারিখ;
  • নিজের নাম বাংলায়;
  • নিজের নাম ইংরেজিতে;
  • পিতার নাম (ভোটার আইডি কার্ড আনুসারে);
  • মাতার নাম (ভোটার আইডি কার্ড আনুসারে);
  • পেশা;
  • অন্যান্য তথ্যাদি।

পূর্বের পাসপোর্টে ভূল তথ্য লিপিবদ্ধ হয়ে থাকলে, সেটা সহজেই পরিবর্তনযোগ্য। তবে আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা পেতে অবশ্যই উপযুক্ত প্রমাণাদি জমা দিতে হবে।

পাসপোর্ট রিনিউ সংক্রান্ত কিছু সাধারণ প্রশ্ন | ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম ২০২৪

পাসপোর্ট রিনিউ ফি কত?

পাসপোর্ট রিনিউ করার কোনো ফি নেই। কেননা পাসপোর্ট রিনিউ করা মানে নতুন করে আবার পাসপোর্ট করা। তাই নতুন ই পাসপোর্ট তৈরি করতে গেলে যত টাকা ফি দেওয়া লাগে তত টাকায় রিনিউ করতে খরচ হবে।

পাসপোর্ট রিনিউ করতে কত দিন লাগে?

রেগুলার বা সাধারণ ডেলিভারির ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে।

কিভাবে পাসপোর্ট রিনিউ করব?

নতুন ই পাসপোর্ট যেভাবে আবেদন করা লাগে ঠিক সেভাবেই পুরাতন পাসপোর্টকে রিনিউ করতে হয়। তবে রিনিউ করার ক্ষেত্রে পুরাতন পাসপোর্ট এর তথ্যগুলো হুবহু উল্লেখ্য করতে হবে।

কত দিন আগে বাংলাদেশি পাসপোর্ট রিনিউ করা যাবে?

রিনিউ করার জন্য কোনো বাধা ধরা নিয়ম নেই। যেহেতু পাসপোর্ট নতুন করে আসতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে তাই মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে থেকেই রিনিউ আবেদন করা উচিত।

শেষ কথা:

“অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম ২০২৪” এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারলেন কিভাবে অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ নিয়ম। আশা করি এখন আপনারা ঘরে বসে অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ করতে পারবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top