রবিরবাজার - Rabirbazar

রবিরবাজার কুটির শিল্প ও ফার্নিচার শিল্পে সমৃদ্ধ

রবিরবাজার – Rabirbazar: একটা সময় মানুষের চাহিদার সবকিছুই ছিল কুটির শিল্পের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ কুটিরশিল্প হারতে বসেছে। এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও কিছুটা ধরে রেখেছে রবিরবাজার এলাকার কুটিরশিল্প প্রেমি মানুষেরা। কিন্তু তারা ভালো নেই। কারণ প্লাস্টিকের সহজলভ্য পণ্য তাদের বাজার ধ্বংস করে দিয়েছে।

জীবন ও জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছেন কুটির শিল্পীরা। কিন্তু ভালো লাগার এই পেশা ছাড়তে পারছেন না তাই রবিরবাজারে এখনো প্রতি হাটবারে বাঁশের তৈরি অনেক ধরনের পণ্য পাওয়া যায়।

রবিরবাজার কুটির শিল্প

কুটির শিল্প ও ফার্নিচার Rabirbazar
কুটির শিল্প ও ফার্নিচার

রবিরবাজার – Rabirbazar (ফার্নিচার) 

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেকে পরিবর্তন করে আধুনিক যুগেও টিকিয়ে রাখতে পেরেছে ফার্নিচার শিল্প। বৃহত্তর সিলেট বিভাগের মধ্যে ফার্নিচার শিল্পসমৃদ্ধ রবিরবাজার। এখানে প্রায় কয়েক শতাধিক ফার্নিচার কারখানা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার ফার্নিচার ব্যবসায়ীরা এখান থেকে রেডি ফার্নিচার নিয়ে পরিচর্যা করে ব্যবসা করছেন। ফার্নিচার শ্রমিক সহজলভ্যতার কারণে এখানে ফার্নিচার পণ্যগুলোর দাম রয়েছে অনেকটাই সীমিত। এজন্য প্রতিদিন ফার্নিচার ক্রয়ের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক সমাগম হয় এই রবিরবাজারে।

প্রাচীন হাটবাজার গুলোর মধ্যে রবিরবাজার অন্যতম। পৃথিমপাশা জমিদার বাড়ির অন্যতম সদস্য মৌলভীর রবি খার নামানুসারে এই বাজারের নামকরণ করা হয় রবিরবাজার। বর্তমানে বাজারটি কুলাউড়া উপজেলার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ব্যাংক-বীমাসহ সবদিকেই সমৃদ্ধ হয়েছে এই রবিরবাজার এলাকা। উত্তরে রবিরবাজার লংলা আধুনিক ডিগ্রী কলেজ এবং দক্ষিনে সদপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়িয়ে গেছে, পূর্বে কর্মধা সড়ক এবং পশ্চিমে বিজলী সড়কের দিকে ক্রমশ বিস্তীর্ণ হচ্ছে এই রবিরবাজারের আয়তন।

রবিরবাজার জামে মসজিদ (রবিরবাজার মসজিদ) 

প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই বাজারে একটি ঐতিহ্যবাহী রবিরবাজার মসজিদ রয়েছে। রবিরবাজার জামে মসজিদ সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে জনপ্রিয়। মানুষের বিভিন্ন ইচ্ছা-আকাঙ্খা এবং চাহিদা পূরণে মান্নত করে রবিরবাজার জামে মসজিদের টাকা-পয়সা সোনা-রূপা সহ অনেকই প্রিয় বস্তু দান করেন এই মসজিদে। জানা যায় তারা এর সুফলও পান। সপ্তাহে দু-দিনে মসজিদের দান বাক্স খোলা হয়। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা আয় হয় রবিরবাজার জামে মসজিদের। রবিরবাজার জামে মসজিদের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে প্রায় ১০ হাজার মুসল্লির একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। রবিরবাজার জামে মসজিদে নামাযের উদ্দেশ্যে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মুসল্লিরা আসেন।

প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই বাজারে একটি ঐতিহ্যবাহী রবিরবাজার মসজিদ রয়েছে। রবিরবাজার জামে মসজিদ সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে জনপ্রিয়।
রবিরবাজার মসজিদ

এক সময় রবিরবাজার দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই লোকসমাগম থাকতো। লোকমুখে শোনা যায় ১৯৭১ সালে কারফিউ জারি করেও রাতের বাজার বন্ধ করা যায়নি রবিরবাজারে। সভ্যতার ক্রমবিকাশে রাতের বাজারের চাহিদা অনেকটাই কমে এসেছে কিন্তু তারপরও রবিরবাজারে গভীর রাত পর্যন্ত লোকসমাগম লক্ষ্য করা যায়।

প্রতিদিন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্য-দ্রব্য পাওয়া গেলেও এখানে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবারে রবিরবাজারে হাট বসার প্রথা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত রয়েছে।

বর্তমানে রবিরবাজার সম্পদ সমৃদ্ধি ও শিক্ষার দিক দিয়েই অনেকটাই অগ্রসর। কিন্তু স্বাস্থ্যখাতে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে এই এলাকার মানুষ। রবিরবাজারে এখনো সরকারি বা প্রাইভেট ভালো মানের কোন হাসপাতাল নেই। প্রাইভেট চেম্বারে কয়েকজন এমবিবিএস ডাক্তার বসলেও তা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরকারি ভালোমানের হাসপাতাল না থাকায় এবং প্রাইভেট চেম্বারে অধিক পরামর্শ ফি আদায় করায় নিম্নআয়ের মানুষেরা সু-চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রবিরবাজার এলাকাবাসীর দাবি এখানে ভালো মানের একটি হাসপাতাল করে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করে দেয়া৷

এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, রবিরবাজার কে উপজেলায় রূপান্তরিত করলে বঞ্চনার বিভিন্ন দিক থেকে রক্ষা পাবে এই এলাকার সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন সহ পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন দিক অবস্থান থেকে অগ্রসর হবে এই এলাকা।

-আবুল হায়দার তরিক

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top