“বেদনায় আমার অশ্রু বর্ষণের পর
তোমার হাসি লাগে রংধনুর মতো।
উজ্জ্বল সকালে তোমার নিঃশ্বাস
লাগে সুগন্ধিময় সমীরের মতো।”
-শাহ সূফি
রংধনু, আমাদের অতি পরিচিত এক প্রাকৃতিক নিদর্শন। নীল আকাশে বিশাল ধনুকের মতো বাঁকা সাত রঙের সমাহার দেখে কে না মুগ্ধ হয়! এটাকে রামধনু, ইন্দ্রধনু যে নামেই ডাকা হোক না কেন; এটা দেখে হয়তো আপনি জীবনে একবার হলেও বিস্মিত হয়েছেন। কৌতুহল জেগেছে মনের ভিতর, কীভাবে এই রংধন সৃষ্টি হয়?
আসুন আজ তা জানার চেষ্টা করি।
আমরা জানি বৃষ্টি শেষ হবার পরই মাঝে মাঝে আকাশের রংধনু দেখা যায়। তবে একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখবেন যে, রংধনু সব সময় সূর্যের বিপরীত দিকে দেখা যায়। অর্থাৎ আপনার পিঠ যদি সূর্যের দিকে থাকে তবেই রংধনু দেখতে পাবেন।
বৃষ্টি শেষ হবার পরও জলের কিছু কণা আকাশে উড়তে থাকে। ওই জলের কণা তখন প্রাকৃতিক প্রিজমের মতো কাজ করে। ওই জলের কণার মধ্য দিয়ে সূর্যালোক অতিক্রম করে এবং আলোর প্রতিসরণ ঘটায়। আলোর এই প্রতিসরণের ফলে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে এবং সাত রঙয়ের আলো দেখতে পাই।
প্রিজম কী?
প্রিজম হচ্ছে একটি আকৃতির নাম। সহজ ভাষায় এটা এমন এক ঘনবস্তু যার ভূমিতল ত্রিভুজ ও তিনটি পার্শ্বতল আয়তাকার। এটা কাঁচ বা প্লাস্টিক দিয়েও তৈরি করা যেতে পারে। আইজ্যাক নিউটন প্রিজমের মাধ্যমে আলোর সাতটি রঙ আবিষ্কার করেন।
আচ্ছা, রংধনুর এই সাত রঙ এলো কোথা থেকে?
সূর্যের আলো হচ্ছে সাতটি রঙের সমাহার। সাতটি রঙের আলো একসাথে মিশে তৈরি হয় সাদা রংয়ের আলো। একটি পরীক্ষার মাধ্যমে এটা প্রমাণ করা যাবে। কোনো একটি গোল ডিস্কে রংধনুর সাতটি রঙ সমান অনুপাতে চিত্রের মতো করে রঙিন করতে হবে। এরপর এটাকে অনেক গতিতে ঘোরালে এর সব রঙ একাকার হয়ে সাদা দেখাবে। ইউটিউবে এই পরীক্ষার অনেক ভিডিও আছে। চাইলে যে কেউ সার্চ করে দেখতে পারে।
কিন্তু এই সাতটি রঙ সারিবদ্ধ ভাবে থাকে কেন?
সাতটি রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য এক নয়। এরা ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। প্রিজম বা জলকণার মধ্য দিয়ে যখন এই আলো অতিক্রম করে, তখন প্রতিটি রঙ ভিন্ন ভিন্ন কোণে বাঁকা হয়ে যায়। লাল রঙের আলো ৪২° কোণে বাঁকা হয় এবং বেগুনি ৪০° কোণে। অন্যান্য রঙগুলো ৪০°-৪২° এর মধ্যেই থাকে। এই জন্যই বেগুনি আলো নিচে থাকে এবং লাল আলো উপরে।
শুধু কি সূর্যের আলোতেই রংধনু হয়?
শুধু সূর্যের আলোতেই নয়। চাঁদের আলোতেও রংধনু হয়। তবে মজার ব্যাপার হলো চাঁদের কোনো নিজস্ব আলো নেই। চাঁদের আলোটাও সূর্য থেকে ধার করা।
রংধনু কত প্রকার?
রংধনু অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। তবে আমরা হঠাৎ হঠাৎ যমজ রংধনু দেখতে পাই। এটা হওয়ার কারণ হলো, একটি জলকণায় আলোর বিচ্ছুরণের পর ওই বিচ্ছুরিত আলোটি আবার কোনো জলকণার মধ্য দিয়ে গমন করলে দ্বিতীয়বার আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে। কিন্তু তখন সেটা ভিন্ন কোণে বাঁকা হয়ে যায় এবং রঙগুলোর ধারাবাহিকতা উল্টো দেখায়। সাধারণত রংধনুতে যেখানে লাল রঙ উপরে এবং বেগুনি নিচে থাকে। সেখানে যমজ রংধনুতে লাল নিচে এবং বেগুনি উপরে হয়।
আরো পড়ুন: এক ঘন্টা কেন ৬০ মিনিটে হয়? কেন ১০০ মিনিটে নয়?
এক রঙের রংধনু
এটা সাধারণত সূর্যাস্তের সময় দেখা যায়। সূর্যাস্তের সময় সূর্যের গাঢ় লাল আলোকরশ্মি যখন জলকণা ভেদ করে এবং আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে, তখন সেটা শুধু লাল রঙেরই রংধনু সৃষ্টি করে। কেননা সূর্যের ওই লাল রঙের মাঝে শুধু লাল রঙটাই অবশিষ্ট থাকে।
এছাড়া ঝর্ণা, কুয়াশা এগুলোর মধ্যেও রংধনু সৃষ্টি হতে দেখা যায়।