জীবন বীমা বা লাইফ ইন্সুরেন্স করার অনেক ফায়দা রয়েছে। এই বীমা করার ফলে আপনি ও আপনার পরিবার অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ বা দৈব দুর্ঘটনা সামাল দেওয়ার জন্য পূর্ব থেকেই প্রস্তুত হতে পারবেন। জীবন বীমা করার কিছু সুবিধা ও কারণ উল্লেখ করছি।
জীবনের নানাবিধ ঝুঁকি থেকে চিন্তামুক্ত থাকা যায়
মানব জীবন সর্বদা প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়। মানুষের জীবনযাত্রার পথে প্রতিনিয়ত ভয়, শঙ্কা, দুর্ঘটনা আছে এবং থাকবে। এই সকল বিপদ কখনোই পূর্বাভাস দিয়ে আসে না। জীবনের মসৃণ পথও হঠাৎ করে খাড়া ঢালে রূপান্তরিত হয়।
এই সকল বিপদ আপদদের সম্মুখীন হওয়ার জন্য একটি মজবুত খুঁটি প্রয়োজন। আর সেই খুঁটির কাজ করে জীবন বীমা। এই বীমা আপনি এবং আপনার পরিবারের উপর থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক সংকটকে দূর করার জন্য উত্তম ভূমিকা রাখে। আপনার অবর্তমানে এটাই আপনার পরিবারের সহায় হয়ে দাঁড়ায়। বট বৃক্ষের মতো আপনার পরিবারকে আগলে রাখে।
আপনার মৃত্যু পরবর্তী সময়ে আপনার পরিবারের সহায়ক
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা জগতের প্রতি উদাসীন। লালসা মুক্ত জীবন যাপন করতে পছন্দ করি। যাদের কথা হচ্ছে, মৃত্যুর পর এই টাকা দিয়ে কী হবে?
তাদের কথারও একটি গুরুত্ব রয়েছে। কেননা মৃত্যুর পর টাকা মৃত ব্যক্তির কোনো কাজেই আসে না। কিন্তু একথাও সত্য যে, টাকা জীবিত লোকেদের চরম প্রয়োজন এবং আপনার পরিবার তখনও জীবিত। আপনার মৃত্যুর পর আপনার পরিবারের কে হাল ধরবে? হঠাৎ এই ধাক্কা কীভাবে সামলাবে?
আপনি কি চাইবেন আপনি আপনার পরিবারকে একদম অসহায় হিসেবে জগতে ছেড়ে যেতে? এইজন্য উচিত মৃত্যুর আগে পরিবারের জন্য কিছু একটা করা। কোন একটি বড় অংকের মূলধন রেখে যাওয়া। যেটা দিয়ে অন্তত আপনার মৃত্যুকালীন ধাক্কাটা সামনে উঠতে পারে এবং এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পেতে পারে।
এছাড়া যাদের বয়স হয়ে গেছে। তাদের তো সব সময় মৃত্যু ভয় থাকেই। মৃত বয়সে দুর্ঘটনা ঘটার প্রবণতা খুব বেশি। তখন মানুষের আয়-রোজগারও কম থাকে। তাই মৃত বয়সের কথা চিন্তা করে হলেও জীবন করা উচিত।
বীমা করে টাকা রাখলে ভালো অংকের সুদ পাওয়া যায়
জীবন বীমায় যে শুধু আপনার মৃত্যুর পরই টাকা ভাবে আপনার পরিবারে এমনটা কিন্তু নয়। আপনার জীবিত অবস্থায় যদি বীমার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় তাহলে আপনি মোট প্রিমিয়ার এর সাথে উচ্চহারের সুদ পাবেন। অন্তত উচ্চ সুদের জন্য হলেও আপনার জীবন বীমা করা উচিত।
বীমার টাকায় রাজস্ব খুব কম দিতে হয়
আপনি যদি জীবন বীমা করেন তাহলে এটা থেকে সুদ সমেত প্রাপ্ত মূলধনে রাজস্ব খুব কম দিতে হয়। এছাড়া আপনি যদি কোনো প্রকার লোন নিয়ে থাকেন, তাহলে সেখানেও রাজস্ব আদায়ে বড় অংকের ছাড় পাবেন। এছাড়া আজকাল কালো টাকার ধারক বাহকেরা লোন নিয়ে কিন্তু তাদের বাড়ি এবং গাড়ি ক্রয় করে। এর ফলে রাষ্ট্রীয় আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে খুব সহজেই শাস্তি থেকে মুক্ত হয়ে যায়।
প্রয়োজনে লোন গ্রহন করতে পারবেন
আপনি আপনার জীবনের সঞ্চয় গুলো বীমা কোম্পানিতে রাখছেন। হঠাৎ আপনার জরুরী অর্থ সংকট তৈরি হলো। তখন আপনি বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সুদে ওপর ঋণ নিতে পারবেন। তবে সে ঋণের পরিমাণ নির্ভর করবে আপনার কত মূলধন রয়েছে তার ওপর। অর্থাৎ আপনার টাকা আপনাকেই ঋণ দেবে এবং সেই সাথে আপনার কাছ থেকে সুদও নেবে। এতে করে আপনার আর্থিক সংকট দূর হবে।
বীমা সম্পর্কে আরো জানুন: বাংলাদেশের বীমা কোম্পানিগুলোর তালিকা
সুদীর্ঘ মেয়াদের সঞ্চয়ের জন্য জীবন বীমা
আমরা প্রতিনিয়ত শরীরের রক্তকে পানি করে অর্থ উপার্জন করি। কিন্তু সব সময় তো আয় এক থাকে না। জীবনের কোন মুহূর্তে কোন দুর্যোগ আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে তা কিন্তু আমরা জানি না। সেই দুর্যোগকে সামাল দিতে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়।
যদি আমাদের কাছে সেই অর্থ না থাকে তাহলে দুর্যোগ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেই অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জীবন বীমা করা অতীব প্রয়োজন। দৈব ঝামেলা থেকে পরিত্রানের জন্য জীবন বীমা খুবই কার্যকরী একটি ব্যবস্থা। কেননা টাকা হাতে রাখলে খরচ হয়ে যায়। তাই এটাকে নিরাপদে রাখতে অন্যের কাছে আমানত রাখা উচিত। আর এই আমানত রক্ষা করে জীবন বীমা।
জীবনের গোধূলি লগ্নে জীবন বীমার প্রয়োজনীয়তা
আপনি আপনার জীবন যৌবন ব্যয় করলেন উপার্জন করতে। কিন্তু একটু সময় আসবে যখন আপনার শরীর আর পরিশ্রম করতে পারবে না। ক্লান্ত হয়ে বসে পড়বেন ঘরে। তখন আপনার জীবিকা কীভাবে চলবে?
অনেক সময় দেখা যায় ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে সন্তানেরা মা-বাবাকে দেখভাল করে না। তখন তো আপনি নিরুপায় ও অপরাগ। সেই দিনটির কথা চিন্তা করে হলেও আপনার জীবন বীমা বা লাইফ ইন্সুরেন্স করা উচিত।