বর্তমানে বাংলাদেশের বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর শাখা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলোর সাথে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সাধারণত ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলতে ও অর্থ জমা দিতে কিংবা অন্য কোনো কাজের জন্য ব্যাংকে সশরীরে উপস্থিত হতে হয়।
কিন্তু বীমা করলে ইনস্যুরেন্স এজেন্টগণ আপনার বাড়িতে গিয়ে আপনাকে বীমা করার উপকারিতা ও তাদের বীমা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সুবিধা সম্পর্কে অবগত করে আপনাকে বীমা করতে প্রলুব্ধ করবে। ইন্স্যুরেন্স এজেন্টের প্ররোচনায় অনেক নিরীহ মানুষ বীমা করে থাকেন।
সহজ সরল মানুষগণ বীমা করার পর বীমার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে অথবা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে, শর্ত মোতাবেক অর্থ হাতে পাওয়া নিয়ে নানান রকমের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। তাই বীমা করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। বীমা করার আগে কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তা এই আর্টিকেলে উল্লেখ্য করা হলো।
- বীমা করার আগে বীমা কোম্পানির সব শর্তাবলী ভালোভাবে দেখে নিন। শর্তাবলী বুঝতে সমস্যা হলে আপনার পরিচিত শিক্ষিত কাউকে দেখান।
- প্রিমিয়াম বা কিস্তি জমা দেয়ার নিয়ম এবং যদি কখনো প্রিমিয়াম জমা দিতে দেরি হয়ে যায় তবে কী করণীয়, তা ভালোভাবে জেনে নিন।
- বীমার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কত দিন পর বীমা কোম্পানি টাকা প্রদান করে তা জেনে নিন।
- বীমার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর সঠিক সময়ে টাকা ফেরত না পেলে আপনি কী ধরণের আইনি সহায়তা পাবেন তা জানুন।
- সর্বনিম্ন কতগুলো প্রিমিয়াম দিলে মেয়াদ উত্তীর্ণের পর আসল টাকা পাওয়া যাবে, সেটা জিজ্ঞাসা করুন।
- আপনার অবর্তমানে আপনার মনোনীত ব্যক্তিদের কে কি তারা আসলেই টাকা দেবে সে সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। কেননা বীমা গ্রাহক বেঁচে থাকতেই অনেক সময় টাকা দেওয়া নিয়ে গড়িমসি করে। গ্রাহকের মৃত্যুর পর তো তাদের সেই সুযোগ আরো বহু গুনে বেড়ে যায়।
- তাদের শর্তাবলী গুলো ভালোভাবে না খেয়াল করলে পরে পস্তাতে হয়। কেননা তারা এমন কিছু সূক্ষ্ম নিয়ম তৈরি করে যা একবার পড়লে ভালোভাবে বোঝা যায় না।
এতক্ষণ যা কিছু বলছিলাম, এগুলো সব কাগজের বিষয়াদি। অনেক ক্ষেত্রে কাগজের লেখার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল থাকে না। এর জন্য প্রয়োজন বাস্তব অভিজ্ঞতা। আপনি যদি বীমা করতে চান তাহলে একটি ভালো বীমা কোম্পানির সন্ধান করুন।
এরপর সেখানকার বর্তমান সদস্যদের সাথে কথা বলুন যারা বীমা করেছে। তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করুন কেমন ধরনের সুযোগ-সুবিধা এখানে আছে। যদি পারেন ওই সকল মানুষদের সাথে যোগাযোগ করুন যারা বীমার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর টাকা পেয়েছে।
তাদের কাছ থেকে জানুন যে, কতদিন পর টাকা দেয়। কেননা এজেন্টগণ আপনাকে এমন সব লোভনীয় প্রস্তাব দেবে, যার ফলে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। আপনার একটি ভুল সিদ্ধান্ত সারা জীবনের আমানত জলে ডুবিয়ে দিতে পারে। ছোট ছোট কয়েকটি বিষয় আছে যেগুলো আপনারা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন এবং এগুলোর বাস্তবতা যাচাই করবেন।
বীমা সম্পর্কে আরো জানতে : বাংলাদেশের বীমা কোম্পানিগুলোর তালিকা
- যেখানে বীমা করবেন সেই বীমা প্রতিষ্ঠানটি কি বাংলাদেশ সরকার দ্বারা রেজিস্ট্রেশন করা কিনা।
- বীমা প্রতিষ্ঠানটির শাখা আপনার গ্রামের বাড়িতে আছে কিনা। কেননা আপনার এলাকায় যদি এর শাখা না থাকে তাহলে প্রিমিয়াম দিতে অনেক ঝামেলা হবে।
- উক্ত বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ রয়েছে কিনা।
- ইন্টারনেটের কল্যাণে আপনি খুব সহজেই যাচাই-বাছাই করতে পারবেন। ওই কোম্পানির নামে যদি কোনো জালিয়াতির অভিযোগ থাকে কিংবা এই ধরণের কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো খবরে আসবে। ওই বীমা প্রতিষ্ঠানের নাম ইন্টারনেটে সার্চ করুন এবং খবর গুলো দেখুন।
- আপনি কখনোই বীমা কোম্পানির এজেন্টের কথার দ্বারা প্রভাবিত হবেন না। সুস্থ মস্তিষ্কে আপনি আপনার সিদ্ধান্ত নেবেন। কখনোই তাড়াহুড়া করবেন না।
- কখনোই আপনার সাধ্যের বাহিরে আছে এমন প্রিমিয়ামের বীমা করবেন না। কেননা এতে করে এক সময় আপনার প্রিমিয়াম দেওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং বীমা কোম্পানির কাছ থেকে আসল টাকাও ফেরত পাবেন না।