পর্দাশীল নারী

আফগানিস্তানের একটি ছোটগল্প

এই গল্পটা আমি অনেকদিন আগে একজনের কাছ থেকে শুনেছিলাম। আফগানিস্তানের একটি মফস্বলে একটি ভবঘুরে বেকার ছেলে ছিলো। যার কাজই ছিলো গাঁজা সেবন করা। কিন্তু তার কণ্ঠ অনেক সুন্দর ছিলো। মাঝে মাঝে কিছু কবিতাও রচনা করতো।

সে যেই পথের কিনারে বসে প্রতিদিন গাঁজা পান করতো, সেই পথ দিয়ে একটি পর্দাদার মেয়ে চলাচল করতো। একদিন এই ছেলেটি ওই মেয়েটিকে ডাক দিয়ে বললো, “হে পর্দার মেয়ে, তোর পর্দাদারীর কসম! একটিবার তুই তোর নাকাব সরা। একটিবার তো তোর দর্শন দে। একটিবার তো তোর রূপের আগুনে আমার হৃদয়টাকে জ্বালিয়ে দে।” মেয়েটি তার কথার কোনো পাত্তা দিতো না। ভয়ে দ্রুত চলে যেতো।

আরো গল্প পড়ুন এখানে 

এমন করে ৩-৪ দিন ধরে মেয়েটিকে এভাবে উত্তক্ত করছিলো ছেলেটি। একদিন মেয়েটি এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু আজ কেউ তাকে ডাক দেয়নি। কেউ তার নাকাব সরাতে বলেনি। কেউ তার রূপের আগুনে ঝলসে যেতে চায়নি।

সে একজন মুরুব্বীকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘এখানে যে গাঁজাখোর ছেলেটা থাকতো সে কোথায়?’

মুরুব্বী বললো, ‘ওই ছেলেটি তো ড্রোন হামলায় মারা গিয়েছে।’

তৎকালে আমেরিকা শান্তি কায়েম করতে আফগানিস্তানের সর্বত্র ড্রোন হামলা করে নারী ও শিশুদের পাশাপাশি যুবকদেরকেও মারতো।

মেয়েটি মুরুব্বীকে জিজ্ঞাসা করলো, ছেলেটির কবর কোথায়? মুরুবি কবরটি দেখিয়ে দিলেন।

মেয়েটি কবরের সামনে গিয়ে তার নাকাব সরিয়ে ফেললো এবং বললো, ‘হে আমার অচেনা আশিক! দেখ এসেছি আমি তোর মাজারে। আমি আমার নাকাব সরিয়েছি, প্রাণ ভরে দেখে নে আমায়।’

তখন ওই ছেলেটির কবর থেকে আওয়াজ আসলো, ‘হে খোদা! এটা তোর কেমন ইনসাফ? আজকে আমি পর্দার মাঝে আর সে বে-নাকাব।’

লেখক: হৃদয় মৃধা

About Juyel Ahmed Liton

সুপ্রিয় “প্রোবাংলা” কমিউনিটি, ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ ছিলো এবং হয়তো সেই আকর্ষণটা অন্য দশ জনের থেকে একটু বেশি। ওয়েবসাইট, টাইপিং, আর্টিকেল লেখাসহ টেকনোলজি সবই আমার প্রিয়। জীবনে টেকনোলজি আমাকে যতটা ইম্প্রেস করেছে ততোটা অন্যকিছু কখনো করতে পারেনি। আর এই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ থেকেই লেখালেখির শুরু.....

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *