বিসমিল্লাহ’র বিশ্বাস: পাহাড়ে ঘেরা একটি অঞ্চল। যাকে কোহেস্তান বলে চেনে সবাই। সেইখানে এক রাখাল থাকতো। যে কয়েক জোড়া ভেড়া পালতো। সে যেই উপত্যকায় থাকতো, সেখানে কোনো ঘাস ছিলো না।
সেই উপত্যকার মধ্য দিয়ে একটি সরু খরস্রোতা পাহাড়ি নদী বয়ে গেছে। ওই নদীর ওপারে অনেক ঘাস। তাই ঘাস খাওয়াতে প্রতিদিন ভেড়া সমেত নৌকা দিয়ে এই নদী পার হতে হয়। প্রতিবার পার হতে দুই আনা করে মাঝিকে দিতে হয়। বেচারা রাখাল গরিব মানুষ। প্রতিদিন এতগুলো পয়সা খরচ হয়ে যায়।
এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য সে তাঁর এলাকার এক মোল্লার কাছে যায়। মোল্লাকে সে সব কথা খুলে বলে। মোল্লা তখন মক্তবে পাঠদান করতে ব্যস্ত ছিলো। তাই মোল্লা বিরক্ত হয়ে বললো, “বিসমিল্লাহ্ বলে নদী পার হয়ে যা। আল্লাহ্ সব সামলে নেবে।”
কয়েকদিন পর সন্ধ্যা বেলা এই মোল্লার চল্লিশা খাওয়ার দাওয়াত ছিলো নদীর ওই পাড়ের এক বাড়িতে। সেদিন কী এক অজানা কারণে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মাঝি নৌকা নিয়ে তার বাড়িতে চলে যায়। মোল্লা নদীর পারে দাঁড়িয়ে ভাবছে, কীভাবে সে এখন নদী পাড়ি দেবে। এত বড় এক দাওয়াতে উপস্থিত না হলে অনেক কিছুই সে হারাবে। সেখানে কতই না সুস্বাদু খাবার রয়েছে।
এমন সময় সেই রাখাল দূর থেকে দেখতে পেলো মোল্লাকে। রাখাল মোল্লার কাছে এসে বিনীত ভাবে সালাম করে বললো, “মৌলভী সাহেব, এখানে কী করছেন?”
মোল্লা উত্তর দিলো, “দেখছিস না ব্যাটা, মাঝি নৌকা নিয়ে চলে গেছে। নদীর ওই পারে চল্লিশার দাওয়াত আমার। এখন যাব কীভাবে?”
রাখাল অবাক হয়ে মোল্লাকে বললো, “কী বলছেন মৌলভী সাহেব! আপনিই না সেদিন শিখিয়ে দিলেন কীভাবে নদী পার হতে হয়। আপনিও সেভাবে পার হন।”
আরো গল্প পড়ুন এখানে
এরপর রাখাল ‘বিসমিল্লাহ্’ বলে নদীর উপর দিয়ে হেঁটে যেতে শুরু করলো। কিন্তু রাখালের পা এই খরস্রোতা নদীর পানি ভিজাতে পারলো না। মাঝ নদী থেকে রাখাল মৌলভী সাহেবকে ডাক দিলো নদী পার হয়ে আসতে।
মোল্লা এটা দেখে চোখের অশ্রু ছেড়ে দিয়ে বললো, “তুই যেই বিশ্বাস নিয়ে ‘বিসমিল্লাহ্’ বলেছিস, ইশ! আমার হৃদয়ে যদি এক ফোঁটা সেই বিশ্বাস থাকতো।”
লেখক: হৃদয় মৃধা