মেট্রোরেল সাধারণ জ্ঞান ২০২৪

মেট্রোরেল সাধারণ জ্ঞান ২০২৪: মেট্রোরেল হচ্ছে রাজধানী ঢাকার একটি দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা। ঢাকা শহর বিশ্বের সবচেয়ে ঘন বসতিপূর্ণ শহর গুলোর মধ্যে একটি। আবাসনের তুলনায় রাস্তার সংখ্যা কম হওয়ার কারণে যানজট সবসময় লেগে থাকে। এখানে পরিকল্পনার অভাব রয়েছে ব্যাপক।

এছাড়া রয়েছে ট্রাফিক আইন না মেনে চলার প্রবণতা। যানজটের জন্য সাধারণ মানুষদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়, সময় অপচয় হয়। যাত্রীর ভোগান্তি নিরসনে ২০১৩ সালে শহরে তিনটি মেট্রোরেল লাইন চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

২০১৬ সালে মেট্রো রেলের লাইনের সংখ্যা ৩টি থেকে ৫টিতে উন্নীত করা হয়। প্রাথমিক ভাবে নির্মাণের জন্য উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন ৬-কে বেছে নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ২৬ জুন এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

মেট্রোরেল সাধারণ জ্ঞান

পরিকল্পনাধীন অন্য পাঁচটি মেট্রোরেল লাইন এর বিবরণ:

এমআরটি লাইন-১ (বিমানবন্দর)

২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর এমআরটি-১ লাইনটির নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এমআরটি-১ প্রকল্পনার মধ্যে। আছে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর ও নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত মোট ৩১.২৪ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেল লাইন। এই কাজের মোট ব্যায় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।

এতে জাপান সরকার ঋণ দেবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, বাকি ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে ব্যায় হবে। এমআরটি-১ মেট্রোরেল লাইন বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত (১৬.২১ কি.মি) হবে মাটির নিচ দিয়ে। কুড়িল থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত (১১.৩৬ কি.মি) হবে উড়ালপথে।

নতুন বাজার থেকে কুড়িল পর্যন্ত (৩.৬৫ কি.মি.) আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রানজিশন লাইনসহ মোট ৩১.২৪ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এই মেট্রোরেলের থাকবে ১২টি স্টেশন মাটির নিচে এবং ৭টি থাকবে উড়াল সেতুর ওপর। এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ হলে এটিই হবে দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল।

এমআরটি লাইন-২

গাবতলী থেকে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত ২০৩০ সালের মধ্যে উড়াল ও পাতাল পথে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-২ নির্মাণ করা হবে।

এমআরটি লাইন-৪

কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে ট্রাকের পাশ দিয়ে প্রায় ১৬ কি.মি দীর্ঘ উড়াল মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা শেষ হতে সময় লাগবে প্রায় ২০৩০ সাল ।

এমআরটি লাইন-৫

হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কি.মি লাইন নির্মাণ হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি টাকা দেবে জাপান আর বাকি ১২ হাজার ১২১ কোটি টাকা দেবে রাষ্ট্রীয় তহবিল। এই মেট্রোরেল লাইন মোট ২০ কি.মি। যার মধ্যে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার হবে পাতাল পথে এবং বাকি সাড়ে ৬ কি.মি হবে উড়াল পথে। এই রুটে মোট ১৪টি স্টেশন হবে, যার মধ্যে ৯টি হবে পাতালে আর ৫টি হবে উড়ালপথে।

এমআরটি লাইন-৫ (দক্ষিণ)

গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭.৪০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ১২.৮০ কি.মি হবে পাতাল ও ৪.৬০ কি.মি হবে উড়াল।

এমআরটি-৬

এই রুটের মেট্রো রেল লাইন অর্ধেক নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমানে এটা সচল। এটা ২০.১০ কি.মি দীর্ঘ পথ। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা দেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। যদিও পরবর্তীতে ৫২ শতাংশ খরচ বৃদ্ধি পায়।

আরো পড়ুন: এক নজরে পদ্মা সেতু (সাধারণ জ্ঞান)

প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো রেলে দু’দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ রুটের ১৬টি স্টেশন হবে। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও পর্যন্ত স্টেশনগুলো ধারাবাহিকভাবে চালু হয়ে গিয়েছে।

বাকি আছে বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়, মতিঝিল ও কমলাপুর। ট্রেন চালাতে ঘণ্টায় প্রয়োজন ১৩.৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। যা জাতীয় গ্রিড থেকে নেওয়া হবে। এমআরটি-৬ লাইনের বাকি অংশ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল ২০২৪ সালের শেষ দিকে চালু হতে পারে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে কমলাপুর পর্যন্ত চালু হতে পারে।

মেট্রোরেল উদ্বোধন

প্রবল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপান্তর করতে ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ সালে সরকার মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হয়। ২৯ ডিসেম্বর এটা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

ওই দিন দেখা গিয়েছিল জনসাধারণের মনে কত আনন্দ, উদ্দীপনা। হাজার হাজার মানুষের লম্বা লাইন। ভোরবেলা থেকেই মানুষজন লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। কয়েকজন তো আনন্দে কেঁদে দিয়েছিল। আশা করা যায় ঢাকা শহরে যদি আরো মেট্রোরেল নির্মাণ হয় তাহলে জনগণের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top