বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস এর তাৎপর্য, ইতিহাস ও উদযাপন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোর মধ্যে একটি। আমাদের স্বাধীনতার বীজ বপন হয়েছিল এই দিনেই। প্রতিবছর শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে এই দিনটি দেশব্যাপী উদযাপিত হয়। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকেরই এই দিবসটা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা একটি নাগরিক দায়িত্ব। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য, সংক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক পটভূমি, এই দিনের গুরুত্ব এবং বাঙালিদের মাঝে এই দিনটি উদযাপন করার বিস্তৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকছে এই লেখাতে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস

বাংলাদেশের জন্য স্বাধীনতা দিবস আমাদের ত্যাগ ও মুক্তিসংগ্রামের গৌরবময় একটি দিন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চে বাঙালির মুক্তির সমস্ত আকাঙ্ক্ষা সমন্বিত হয়েছিল। এই দিনে সমস্ত জাতি যেন একই অঙ্গীকারে শপথ নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। এই দিনটি আমাদের আত্মপরিচয়ের গৌরবোজ্জ্বল দিন। এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশের নিপীড়িত সাধারণ মানুষ মুক্তির নতুন দিশা অর্জন করেছিল। এই দিনটি এদেশের মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সােচ্চার হতে যুগে যুগে প্রেরণা জোগায়। তাই প্রতিবছর বাংলার মানুষকে নতুন প্রেরনায় উজ্জীবিত করতে এই দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়।

মহান স্বাধীনতা দিবস

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামপূর্ব ইতিহাস 

আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। কিন্তু এই বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশে রূপান্তর করতে এবং স্বাধীনতা দিবসের গৌরব লাভের পেছনে বাঙালি জাতির দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ইতিহাস জড়িত রয়েছে। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে (বর্তমানে বাংলাদেশ) দীর্ঘ সময় ধরে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইতালি সকল দিক দিয়েই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীরা শোষণ করেছিল। প্রায় দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত বাঙালিরা তাদের অধিকার আরো এর জন্য সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে, রক্ত ঝরিয়েছে দ্বারে দ্বারে।

দীর্ঘদিনের এই সংগ্রাম চলে আসছিল ব্রিটিশ আমল থেকেই। কিন্তু তখন সমগ্র ভারতবর্ষ সেই শোষনের শিকার হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে, ১৯৪৭ সালে মুসলিম লীগের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সমগ্র ভারতবর্ষ ভারত ও পাকিস্তান এই দুই অংশে বিভক্ত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে তৎকালীন সময়ে পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে ভারত থেকে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। বর্তমানের এই স্বাধীন বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের একটি উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মৌলিক প্রত্যাশা ছিল তারা পশ্চিম পাকিস্তানের অত্যাচার, সব ধরনের দমন নিপীড়ন, অন্যায়, অনৈতিক শাষন ও শোষন থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের সেই শোষণ ও বঞ্চণার অবসান ঘটেনি। 

স্বাধীনতা একটি শব্দ শব্দ হলেও তা কখনোই একক কোনো দিবস বা কার্যের মাধ্যমে অর্জিত হয় না। একে অর্জন করতে, একে পেতে হলে অনেক ত্যাগ অনেক আত্মহুতি অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাও একদিনে আসে নি। কিংবা একক কোনো প্রচেষ্টার বিনিময়ে অর্জিত হয়নি। বিভিন্ন সময়ে ঘটা বিভিন্ন দমন নিপীড়ন ও শোষণ বঞ্চনার প্রস্ফুট বিস্ফোরণের ফল হল আজকের স্বাধীনতা। পাকিস্তান রাষ্ট্রের সূচনা থেকেই পাকিস্তানি শাসকচক্র এই অঞ্চলে তাদের তাবেদারদের মাধ্যমে অত্যাচারের স্টিমরোলার চালাতো। শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল এই বাংলাদেশের মানুষ। তখন এদেশের মানুষের সামনে উন্মোচিত হয়ে পড়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্রের মুখোশ। তখন থেকেই বাঙালির মনে সঞ্চায়িত হতে থাকে স্বাধীনতার চেতনা। 

পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ভাষা, সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক অবস্থান সবকিছুই ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের গঠন প্রক্রিয়ার বিপক্ষে। তাই পশ্চিম পাকিস্তানিরা পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির শুরু থেকেই আঘাত করতে থাকে আমাদের ভাষার ওপর। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীরা উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে জোর করে ঘোষণা করে। ফলে প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এদেশের আপামর জনসাধারণ ও ছাত্র সমাজ। ১৯৪৭ সাল থেকে একটু একটু করে ভাষার জন্যে সঞ্চারিত হওয়া আন্দোলন আস্তে আস্তে বেগবান হয়ে ১৯৫২ সালে চূড়ান্ত রূপ নেয়।

আপামর জনসাধারণ ও ছাত্র সমাজের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে এদেশের মানুষ তাদের মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছিল। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ প্রোথিত হয়েছিল। এই চেতনার মূলে ছিলেন মৃত্যুঞ্জয়ী ভাষা শহিদেরা। 

এর পর থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের পশ্চাতে রয়েছে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১১ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ইত্যাদি। এর সব গুলোই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনেরই অংশ। স্বৈরাচারী পাকিস্তান শাসক বারবার চেষ্টা করেও এদেশের মানুষকে দমন করতে পারে নি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগ -কে ভোট দিয়ে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার পরেও সরকার গঠন করতে দেয়নি পাকিস্তানি শাসকচক্র। 

তারা গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাশীল হয়নি। স্বৈরাচারী পাকিস্তান শাসকচক্র ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাঙালির আশা আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিসাৎ করেছিল। ফলে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল তারা। তখন এদেশের মানুষ একিভূত হয়ে অপেক্ষা করছিল কোন এক চূড়ান্ত মুহূর্তের। অবশেষে, সর্বশেষ ধাপের মত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের ঘুমন্ত নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচারে হামলা চালাল, নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের উপর চালাতে থাকে একের পর এক বিভীষিকাময় হত্যাযজ্ঞ। বাংলার মানুষের জীবনে আসল নতুন এক অধ্যায়।

২৫ মার্চ কালরাতের গনহত্যা 

২৫ শে মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিনগুলোর একটি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীরা বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের উপর যে হত্যার জন্য চালিয়েছিল তার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। অপারেশন সার্চলাইটের সেই গণহত্যার রাতটি বাংলাদেশে কালরাত এবং গণহত্যা দিবস হিসেবে পরিচিত। ২৫ মার্চের সেই রাতে ঢাকাবাসী নিরীহ বাঙালি সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। তখন ভয়ংকর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী। হিংস্র শ্বাপদের মতো জলপাই রঙের ট্যাংকগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ-ইপিআর ব্যারাকের দিকে ধেয়ে যেতে থাকে। রচিত হয় এক কুখ্যাত ইতিহাস।

সেদিন রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে জিপ-ট্রাক বোঝাই করে নরঘাতক কাপুরুষ পাকিস্তানের সৈন্যরা ট্যাঙ্কসহ আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল শহরজুড়ে। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে ওঠে আধুনিক রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার। মুহুর্মুহু গুলিতে বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ত তাণ্ডবে তখন মত্ত ছিল পাকিস্তানি বাহিনী। হঠাৎ করে বাঙালি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢলে পড়তে থাকে মৃত্যুর কোলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেত, ইপিআর সদর দফতরসহ বিভিন্ন স্থানে তখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লাশের পর লাশ। মধ্যরাতের ঢাকা তখন লাশের শহরে পরিণত হয়েছিল। 

সে রাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে থাকা গণমাধ্যমও রেহাই পায়নি জল্লাদ ইয়াহিয়ার পরিকল্পনা থেকে। মর্টার শেল ছুড়ে কিংবা অগ্নিসংযোগে একের পর এক দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ ও জাতীয় প্রেস ক্লাব ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে পাকিস্তানি বাহিনীরা। বাঙালির মুক্তির কামনা, প্রচেষ্টা ও আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করে দিতেই সেদিন এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করা হয়েছিল। এই গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাষকদের আদেশে পরিচালিত, যা ১৯৭০ এর নভেম্বরে সংঘটিত অপারেশন ব্লিটজ এর পরবর্তি অনুষঙ্গ।

২৫ মার্চের সেই রাতে কত বাঙালিকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে প্রাণ দিতে হয়েছিল এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল যে, কেবল ২৫ মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় একলাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। একইভাবে, পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল যে, ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল। বাংলাদেশের কিছু পত্রিকায় তার সংখ্যা ৭,০০০ উল্লেখ করা হয়েছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে যখন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালানো হয় এবং বিভিন্ন স্থানে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়, তখন বাঙালিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়। তখন থেকেই যুদ্ধের জন্য নিজেকে এবং নিজের মনকে প্রস্তুত করতে থাকেন অনেকে বাঙালি বীর।

সে রাতের প্রথম প্রহরে ১:১৫ টার দিকে একদল সৈন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে গুলি ছুড়তে ছুড়তে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে বাড়ির টেলিফোন লাইন কেটে দেয়। তারপর বাঙালিদের জন-মানুষের নেতা‌ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। কিন্তু তার আগেই, ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর বা ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন ইপিআর-এর বেতারের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে গিয়েছিল। 

এই বেতার সংকেত ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে পৌঁছে যায় চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দফতরে। ২৬শে মার্চ বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম সহ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েক’জন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ. হান্নান প্রথম শেখ মুজিব এর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি মাইকিং করে প্রচার করেন। পরে ২৭শে মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন:

“এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।”

২৭শে মার্চে ঘোষণা করার সময় মেজর জিয়াউর রহমান বলেন: “আমি মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমাণ্ডার-ইন-চিফ, শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম ও আইনসিদ্ধ সরকার গঠন করেছি যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমি সকল দেশের সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।” 

১৯৭১ সালে ২৭ মার্চের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাবার পর আপামর বাঙালি জনতা পশ্চিম পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে নিজেদের মুক্তির আন্দোলনে, মহান মুক্তিযুদ্ধে। ফলস্বরূপ দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। তাই বঙ্গবন্ধুর সেই স্বাধীনতার ঘোষণার ভিত্তিতেই ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়।

বাঙালির জীবনে স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য

১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চের সেই স্বাধীনতা দিবস বাঙালি জাতির জীবনে অপরিহার্য তাৎপর্য বহন করে। এই দিনটি একদিকে বহন করে হারানোর কষ্ট অন্যদিকে প্রাপ্তির আনন্দ। এটি বাঙালির জীবনে বয়ে আনে আনন্দ-বেদনার অম্ল-মধুর মিশ্র অনুভূতি। এই দিনেই সেই সংগ্রামের সূচনা হয়, যেই সংগ্রামে বাংলার মানুষ সর্বস্ব হারিয়েও স্বাধীনতা প্রাপ্তির অপার আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। হয়তো সেই ২৬শে মার্চের প্রথম পহরে দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের মধ্য দিয়েই, সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছিল বাঙালিরা। তার বদৌলতেই আজ আমরা নিজেদেরকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক বলতে পারি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

স্বাধীন বাংলার স্বাধীনতা দিবস বেশ বর্ণাঢ্য ভাবে উদযাপন করা হয়। এই দিনে সমগ্র দেশজুড়ে মানুষের মনে স্বাধীনতার আনন্দের পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ মানুষকে হারানোর বেদনাও ছোঁয়া দেয়। এই দিনে উদযাপন শুরু হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে। তারপর ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা করা হয় প্রসাশনিকভাবে। এই দিনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। 

স্বাধীনতা দিবস
স্বাধীনতা দিবস

আরও পড়ুন: ২১শে ফেব্রুয়ারি | আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

দিবসটি উপলক্ষে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের প্রধান প্রধান সড়কসমূহে জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন রঙের পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। জাতীয় স্টেডিয়ামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের সমাবেশ, কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে ও শরীরচর্চা প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই দিনটি উদযাপন করা হয় এবং সরকারি ছুটি থাকে। বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় দেশব্যাপী।

শেষকথা

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস এবং বাঙালি জাতির সূচনার বিস্তারিত তথ্য জানা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সেই ইতিহাস আমাদের সকলের মনেই নতুন করে দেশপ্রেম জাগ্রত করে।

About Juyel Ahmed Liton

সুপ্রিয় “প্রোবাংলা” কমিউনিটি, ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ ছিলো এবং হয়তো সেই আকর্ষণটা অন্য দশ জনের থেকে একটু বেশি। ওয়েবসাইট, টাইপিং, আর্টিকেল লেখাসহ টেকনোলজি সবই আমার প্রিয়। জীবনে টেকনোলজি আমাকে যতটা ইম্প্রেস করেছে ততোটা অন্যকিছু কখনো করতে পারেনি। আর এই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ থেকেই লেখালেখির শুরু.....

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *