এক ভিসায় ঘুরে আসুন ইউরোপের ২৬ টি দেশ! কি, শুনতে অবাক লাগছে? অবাক লাগলেও সত্যি যে, কেবল সেনজেন ভিসার (Schengen Visa) মাধ্যমেই ৯০ দিনের জন্য বেড়ানো বা ব্যবসা সংক্রান্ত প্রয়োজনে ঘুরে আসতে পারবেন ইউরোপ। তবে, এর জন্য আপনার জানতে হবে সেনজেন মানে কি, সেনজেন ভিসা পেতে করণীয় ও প্রাসঙ্গিক সকল বিষয় সম্পর্কে।
নজরকাড়া স্থাপনা আর সৌন্দর্যে ভরপুর ইউরোপের দেশ গুলোতে ভ্রমণের ইচ্ছা কার নেই? তবে ইচ্ছে থাকলেও সেনজেন ভিসা পাওয়ার জটিল প্রক্রিয়ার কথা ভেবে অনেকে ভিসার আবেদন করতে দ্বিধায় থাকেন। কিন্তু ভিসার জন্য আবেদন করার সময় সঠিক তথ্য ও সামান্য সর্তকতা-ই মিলিয়ে দিতে পারে সেনজেন ভিসা। তাই সেনজেন ভিসার সম্পর্কে সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো আমাদের সাথে জেনে নিন।
[lwptoc]
সেনজেন ভিসা কি
ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীন যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যাবস্থাকে সহজ করার জন্য ১৯৮৫ সালে লুক্সেমবার্গের সেনজেন শহরে একটি চুক্তি সাক্ষর করে। মোট ২৬ টি দেশ এই চুক্তিতে অংশগ্রহণ করেন৷ মূলত এই চুক্তির ধারাবাহিকতাতেই তৈরী হয়েছে সেনজেন এলাকা আর সেনজেন ভিসা। অর্থাৎ সেনজেন চুক্তির আওতাভুক্ত দেশগুলোকেই বলা হয় সেনজেন আবাসস্থল। আর তাদের প্রদানকৃত এই ভিসাকে বলা হয় সেনজেন ভিসা (Schengen Visa)।
সেনজেন দেশের তালিকা
বলতে গেলে ইউরোপের অধিকাংশ এলাকাই এখন সেনজেন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আর সে সব দেশগুলো সবই স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। তাই সেনজেন ভিসা পেতে করনীয় কি তা জানার আগে জেনে নিন সেনজেন কান্ট্রি লিস্ট –
- অস্ট্রিয়া
- ইতালি
- আইসল্যান্ড
- এস্তোনিয়া
- চেক রিপাবলিক
- গ্রিস
- জার্মানি
- নেদারল্যান্ড
- ডেনমার্ক
- নরওয়ে
- পর্তুগাল
- পোল্যান্ড
- ফ্রান্স
- বেলজিয়াম
- ফিনল্যান্ড
- মাল্টা
- লাতভিয়া
- লুক্সেমবার্গ
- লিথুয়ানিয়া
- স্লোভাকিয়া
- স্পেন
- স্লোভেনিয়া
- সুইডেন
- সুইজারল্যান্ড
- হাঙ্গেরি
বাংলাদেশিরাও এই দেশগুলোতে বেড়ানো বা ব্যবসার প্রয়োজনে সেনজেন ভিসা নিয়ে যেতে পারেবেন। আপনি সেনজেন ভিসা নিয়ে মোট ৯০ দিন ইউরোপে অবস্থান করতে পারবেন। এবং এই ভিসার মেয়াদ থাকবে পুরো ছয় মাস। আর মজার বিষয় হল, সেনজেন ভিসার মেয়াদ থাকাকালীন সময়ে এই একই ভিসা ব্যবহার করে বারবার সেনজেন আওতাভুক্ত দেশগুলোতে প্রবেশ করতে পারবেন। কিন্তু সর্বোচ্চ ৯০ দিনের বেশি আবার অবস্থান করা যাবে না। এছড়া পর্তুগাল টুরিস্ট ভিসা নিয়ে বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে কাজ করার অনুমতিও পেতে পারেন। তবে প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল।
নন সেনজেন দেশের তালিকা
সেনজেন ভিসা দিয়ে কিন্তু আপনি নন সেনজেন বেশ কিছু দেশেও ঘুরে আসতে পারবেন। তাও কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই। তাই নন সেনজেন দেশ গুলো সম্পর্কেও জেনে নিন। তুরস্ক,, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, ম্যাসিডোনিয়া, বসনিয়া, আলবেনিয়া, কসোভো, জর্জিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, স্ভালবার্ড (নরওয়ের দ্বীপ) – এসব মনোমুগ্ধকর দেশগুলোও ঘুরে আসতে পারেন এক সেনজেন ভিসা দিয়ে।
সেনজেন ভিসা পেতে করণীয়
সেনজেন ভিসা পাওয়াটা কিছুটা কষ্টসাধ্য। তবে খানিটকা কষ্ট হলেও সুবিধাও কিন্তু কম নয়। সেনজোন ভিসা কিভাবে পাওয়া যায়- এই প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকে হাজির হয়েছি। আপনাদের সুবিধার্থে সেনজেন ভিসা পেতে করনীয় কাজ গুলো স্টেপ বাই স্টেপ তুলে ধরা হল-
দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ:
প্রথমে, আমাদের দেশে ইউরোপের যেসব দেশের দূতাবাস রয়েছে সেসব জায়গায় যোগাযোগ করতে হবে।
এক্ষেত্রে,
- ফ্রান্সের এন্ডোরা ও ওভারসীজ টেরিটরি মনাকো
- বুরকিনা ফাসো
- ডি জিবুতি
- গ্যাবন
- মধ্য আফ্রিকা
- আইভরি কোস্ট
- সেনেগাল
- মৌরিতানিয়া
- টগো
এসকল দেশ গুলোয় যেতে চাইলে, ফ্রান্সের দূতাবাসের মাধ্যমে ভিসার আবেদন করতে হবে। আর চেক রিপাবলিকের ভিসা পেতে চাইলে দিল্লীতে থাকা চেক রিপাবলিকের হাই কমিশনের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
জার্মানি ভ্রমণ করতে চাইলে জার্মান দূতাবাসে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে।
- ইতালি,
- গ্রিস ও
- মাল্টা
এই তিন দেশে যাওয়ার জন্য যোগাযোগ করতে হবে ইতালি দূতাবাসে।
- সুইডেন,
- ডেনমার্ক,
- ফিনল্যান্ড
- আইসল্যান্ড,,
- নরওয়ে,
- লুক্সেমবার্গ
- বেলজিয়াম,
- পোল্যান্ড,
- নেদারল্যান্ড
- লাটাভিয়া,
- এবং স্লোভেনিয়া
এই সব গুলো দেশের জন্য, আমাদের দেশ থেকে সুইডেন দূতাবাসে সরাসরি গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে।
সেনজেন ভিসার আবেদন
সেনজেন ভিসা আবেদন করার জন্য আবেদন ফর্ম টি সতর্কতার সাথে পূরন করতে হবে। দুই পাশের প্রতিটি ঘর পূরণ করতে হবে। এই ফর্মে কোনো ঘর ফাঁকা থাকলে অথবা তথ্যে ভুল থাকা যাবে না। এমন হলে ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করা হবে না। আবেদন ফরমের একটি কপি জমা দিতে হবে। আর ফর্মে অবশ্যই তারিখ ও স্বাক্ষর থাকতে হবে।
আবেদন ফরমের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র :
ফার্মের জন্য সাম্প্রতিক তোলা দুই কপি ছবি দরকার হবে । ছবিগুলো সাদা ব্যকগ্রাউন্ডে তুলতে হবে। চোখে কালারফুল চশমা অথবা মাথায় টুপি জাতীয় কোনো কিছু ব্যবহার করা যাবে না। আর ছবি টি স্পষ্ট হতে হবে। আর আপনার পুরো মুখমণ্ডল ছবিতে আসতে হবে।
এছাড়াও ছয় মাসের মেয়াদ আছে নিজের এমন পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। পাসপোর্টের সব ডাটার পরিষ্কার ফটোকপি এটাচ করতে হবে।
২৬ টি সেনজেন দেশে প্রযোজ্য আর কমপক্ষে ৩০ হাজার ইউরো মূল্য মানের স্বাস্থ্য বীমা থাকতে হবে। একে বলা হয় সেনজেন ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স।
আর জমা দেয়া কাগজ গুলোর মূলকপির সাথে একটি করে ফটোকপি যুক্ত করতে হবে। বাংলায় লেখা কাগজ থাকলে সেটার ইংরেজি কিংবা জার্মান অনুবাদ যুক্ত করতে হবে।
সেনজেন ভিসার জন্য কি কি জমা দিতে হয়
আপনি কি কাজে ইউরোপ ভ্রমণ করছেন তার ওপরে নির্ভর করে আপনার এক্সট্রা কি কাগজপত্র দরকার হবে। আলাদা আলাদা করে সেগুলো তুলে ধরা হল –
বিজনেস ভিসা নিতে যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন:
আপনার কাঙ্ক্ষিত দেশের কোম্পানির পক্ষ থেকে একটি ইনভিটেশন লেটার লাগবে।
আর আপনি আপনার দেশের যে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ভ্রমণে যাচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠান থেকেও ভ্রমণের কারণ ব্যাখ্যা করে একটি চিঠি জমা দিতে হবে।
আপনার ট্রেড লাইসেন্স:
বাংলাদেশে বা বাইরে ব্যাবসায়িক লেনদেনের তথ্য ( ম্যারেজ বা বার্থ সার্টিফিকেট এবং সন্তান সন্ততির তথ্য (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
বন্ধুবান্ধব / পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতে যেসব কাগজপত্র লাগবে :
আপনি যার সাথে দেখা করতে যাবেন তার নিজ স্বাক্ষরিত গ্যারান্টি ফর্ম, তার ম্যারেজ সার্টিফিকেট, গ্রীণ কার্ড, বার্থ সার্টিফিকেট এবং হোটেল বুকিং (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
- এছাড়াও লাস্ট তিনমাসের ব্যক্তিগত হিসাব বিবরণী
- আপনার রিলেটিভের সাথে আপনার সম্পর্কের প্রমাণপত্র।
- এবং ফ্লাইটের রিজার্ভেশনের একটি কপি।
ভ্রমণ ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র / সেনজেন ভিসার জন্য কি কি জমা দিতে হয়
- হোটেল বুকিং কনফার্মেশন( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
- আপনি কোথায় কোথাশ ভ্রমণ করতে চান তার বিস্তারিত।
- ম্যারেজ সার্টিফিকেট,
- বার্থ সার্টিফিকেট এবং
- সন্তান সন্ততির তথ্য (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- কমপক্ষে লাস্ট তিন মাসের ব্যক্তিগত হিসাব বিবরণী।
এয়ারপোর্ট ট্রানজিট ভিসার ক্ষেত্রে দরকারী কাগজপত্র:
সেনজেন এলাকা ছেড়ে আসার পর, আপনি যে দেশে যাচ্ছেন সেই দেশের ভিসা ও ফ্লাইট রিজার্ভেশন প্রয়োজন হবে।
সেনজেন ভিসা ইন্টার ভিউ
সর্বশেষ সেনজেন দেশগুলোর দূতাবাস থেকে আবেদনকারীর সাথে একটি ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। এই ইন্টারভিউটা খুবই আত্মবিশ্বাসের সাথে সম্পন্ন করতে হয়। জার্মান,ইংরেজি বা অন্য কোন ভাষায় দক্ষতা থাকলে ভিসা পাওয়া বেশ সুবিধাজনক।
সেনজেন ভিসা সম্পর্কে সব তো জানা হয়ে গেল! এখন নিশ্চয়ই ইউরোপে টুরিস্ট ভিসায় ঘুরে আসতে মন চাচ্ছে?
আশা করি, আমাদের আজকের আর্টিকেল অনুসরণ করে, সেনজেন ভিসা পেতে করণীয় কাজ গুলো সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন। আর ঘুরে আসতে পারবেন নান্দনিক স্থাপনা ও বিষ্ময়ের রাজত্ব ইউরোপীয় দেশ গুলিতে।
[প্রিয় পাঠক, প্রোবাংলা অনলাইনে প্রবাস বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাসে আপনার কমিউনিটির নানান খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন info@probangla.com এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]