বিশ্ব ভালবাসা দিবস

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস – ভ্যালেন্টাইন ডে

১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে। এই দিন সারা বিশ্বে উদযাপিত হয় ভালবাসা দিবস। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বময় ছড়িয়ে যায় উন্মাদনা। অত্যাধুনিক ফ্যাশনের পণ্যে ছেয়ে যাবে শপিং-মল । রেস্তোরাঁগুলো সাজবে নতুন সাজে। পার্কগুলোকে সাজানো হবে যুবক-যুবতীর চাহিদা মোতাবেক।

সারা দিন হৈ-চৈ, উন্মাদনা চলবে। প্রেমিক তরুণ-তরুণীদের চোখে-মুখে থাকবে যৌন উত্তেজনা। একযোগে রাজপথে নেমে একে অপরের জন্য ছড়িয়ে দেবে খাহেশাতের রঙ। যুবক-যুবতীদের এহেন দৃশ্য দেখে শয়তানও নিশ্চয় লজ্জিত হবে। আর এগুলো হবে সব সভ্যতার নামে, সংস্কৃতির নামে।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে বাংলার সাধারণ মানুষেরাও এই পাপাচারের উৎসবে মেতে উঠবে। অশ্লীলতাকে সভ্যতার চাদর পরিয়ে সাদরে গ্রহণ করবে। জঘন্য বস্তুকে সৌন্দর্যের মোড়কে পেঁচিয়ে উপস্থাপন করবে। এইদিন আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ গঙ্গার জলে ডুবে মরবে।

এই দিবসটি বাঙালির কোনো উৎসব নয়। ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়- খ্রিস্টের জন্মপূর্ব চতুর্থ শতকে রোমান পৌত্তলিকদের সমাজে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচলিত ছিলো। জমির বরকতের জন্য তারা একটি দেবতাকে বিশ্বাস করতো।

তারা এই দেবতার উদ্দেশ্যে একটি উৎসব করতো। এই উৎসবের কর্মসূচি ছিলো, তরুণীদের নামে লটারি করা হত। লটারিতে যেই তরুণী যেই যুবকের ভাগে আসে, আগামী বছর এই দিন না আসা পর্যন্ত সেই তরুণীটিকে যুবক ভোগ করতো। অর্থাৎ যুবতীদের বণ্টন করা হত লটারির মাধ্যমে। এছাড়া পশু বলি দেওয়া হতো দেবতার উদ্দেশ্যে।

আর এই অনুষ্ঠানটি পালিত হতো ১৪ ফেব্রুয়ারি। এরপরে খ্রিস্টধর্মের আবির্ভাব ঘটে। খ্রিস্টধর্ম ছিলো আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। ঈসা (আ.) এর ধর্ম। কাজেই এই ধরণের অশ্লীলতাকে খ্রিস্টানধর্ম কখনোই সমর্থন করতে পারে না। খৃষ্টান ধর্মগুরুগণ এই প্রথা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধাচরণ করলো। কিন্তু এই রীতিকে বন্ধ করতে পারলো না। তখন তারা এই প্রথাটিকে বিশুদ্ধ করার প্রচেষ্টা করলো। রেওয়াজ ঠিকই থাকবে, তবে একে একটু বিশুদ্ধ করা হবে। কিন্তু কীভাবে করবে বিশুদ্ধ?

আগে উৎসবটি ছিলো দেবতার জন্য। এখন হবে পাদ্রীর জন্য। তরুণীরর নামে লটারি বন্ধ হলো। পাদ্রীর নামে লটারি চালু হলো। অর্থাৎ যেই যুবকের ভাগে যেই পাদ্রীর নাম আসে, সেই যুবক পাদ্রীর সংস্পর্শে এক বছর কাটাবে। যাতে পাদ্রীর সাথে থাকার ফলে যুবকদের চরিত্র ভালো হয়। ৪৭৬ সনে পোপ জেলিয়াস বললেন। দিবসের নাম পরিবর্তন করে তাদের এক যাযক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এর নামে নাম রাখা হলো।

valentine day | ভ্যালেন্টাইন ডে সম্পর্কে আরেকটি ইতিহাস জনপ্রিয়:

খ্রিস্টানদের ইতিহাসে ভ্যালেন্টাইন নামে অনেক ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। এদের মধ্যে দুইজন অনেক বিখ্যাত।

একজন ভ্যালেন্টাইন নামক যাযককে রোমান রাজা কারাবন্দি করেছিলো। জনশ্রুতি আছে যে ভ্যালেন্টাইন কারাগারের প্রহরীর কন্যার প্রণয়ে লিপ্ত হন। মৃত্যুর মৃত্যুর আগে তার জন্য একটি চিঠিও লিখে যান। এই জন্যই সে খ্রিস্টান সমাজে প্রেমিকদের যাজক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। খৃষ্টানরা ১৪ ফেব্রয়ারী ভ্যালেন্টাইন এর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে আর এই দিনটির নাম রাখা হয় ভ্যালেন্টাইনস ডে।

ভ্যালেন্টাইনস দিবসের ইতিহাস জানার পর বিবেক সম্পন্ন মানুষেরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে এই দিবসের সাথে কুসংস্কার ও পৌত্তলিকতা জড়িত।

সারা বিশ্বে ধুমধাম এর সাথে এই দিবস পালন করা হয়। এই দিবসকে ঘিরে বিভিন্ন পাপ কাজের উৎসব পালিত হয়। পাশ্চাত্য দেশে মানুষের মাঝে ধর্মীয় মূল্যবোধ নেই। তাই তারা ব্যভিচারকে বৈধ মনে করে এবং এটা করে আনন্দ পায়। তাদের ওখানে বিয়ের প্রচলনটা দিন দিন কমে যাচ্ছে। কেননা বিয়ে ছাড়াই যেহেতু যৌন চাহিদা মেটানো যাচ্ছে, তাহলে বিয়ে করার দরকার কী?

তাই তারা ভালোবাসার নামে নারী-পুরুষ একত্রে বসবাস করে। সন্তান উৎপাদন করে। যখন মন চায় তখন আলাদা হয়ে যায়। ওদের ওখানে বিয়েও খুব কম হয়। বিয়ে হলেও কিছুদিনের মধ্যেই ডিভোর্স হয়ে যায়। তাদের সম্পর্কগুলোতে ভালোবাসার বড্ড অভাব। তাই এই ভোগ বিলাসের জগতে নিজেদের মিথ্যে ভালোবাসা প্রকাশের জন্য এই ভালোবাসা দিবসটাকে অনেক আরাম্বর তার সাথে পালন করে।

আরো পড়ুন: ভালোবাসা দিবসের এসএমএস

পশ্চিমারা তো মা-বাবাকে বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। এই দিনটাতে তারা তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে মা-বাবার সাথে দেখা করে। এই হলো তাদের মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব ভালোবাসা।

পশ্চিমারা এই দিবস পালন করলেও আমাদের দেশে এটার প্রচলন ছিলো না। এদেশের কথিত বুদ্ধিজীবীরা সুকৌশলে ব্যভিচারকে পবিত্রতার চাদরে মুড়িয়ে উপস্থাপন করেছে। এরা এদের লেখার জোরে, বক্তব্য-বিবৃতিতে বিশ্ব ভাসবাসা দিবস নামক অশ্লীল দিবস পালনে উৎসাহিত করেছে। এদেরকে আর যাই হোক তবে বুদ্ধিজীবী বলা যায় না। এরা দেশের সংস্কৃতির শত্রু। বাঙালির শত্রু।

প্রাশ্চাত্যে এই দিবসটি কয়েক শতাব্দী ধরে পালিত হলেও, আমাদের দেশে এর বিষবাষ্প ছড়িয়েছে অনেক পরে। আমাদের দেশে এক সাংবাদিক যার নাম শফিক রেহমান। সে ১৯৯৩ সালে যায়যায়দিন পত্রিকার মাধ্যমে দিবসটির আমদানি করে। বাঙালিদেরকে এই দিবসের সাথে মূলত সেই প্রথম পরিচয় করায়। তবে সে একটু বাটপারি করে, দিবসটির আসল নাম ভ্যালেন্টাইনস ডে নাম না দিয়ে এটাকে ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ হিসেবে পরিচয় করায়।

এতে করে দেশের যুবক-যুবতীদের কাছে দিবসটি জনপ্রিয় হয়ে পরে। শফিক রেহমানের বাটপারি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যান্য পত্রিকাগুলোও আরম্ভ করলো দিবসটি নিয়ে আলাদা আয়োজন। পূর্ণ সমর্থন পেলো বুদ্ধিজীবি মহল থেকে।

ভালোবাসা দিবসের প্রতিক্রিয়া: বাঙালি সংস্কৃতি কখনোই ব্যভিচারকে সমর্থন করে না। কিন্তু আজ দেশের প্রত্যেকটি মিডিয়া প্রকাশ্যে ব্যভিচারকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার পাশাপাশি এটাকে উৎসাহিত করছে। নানান ধরনের টিভি নাটক তৈরি হচ্ছে। যেখানে দেখা হচ্ছে নারী পুরুষের অবৈধ মিলন। সেই মিলনে বাঁধা দেওয়ায় পরম সম্মানীয় মা-বাবাকে খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চারাও এগুলো দেখে খুব প্রভাবিত হচ্ছে। তাদের মাঝে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে। আজকাল তো বিশেষ ধরনের পর্দাশীল রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে; যেগুলোতে স্কুলের বাচ্চারা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। পার্কগুলোতে হর-হামেশা রঙলীলা দেখা যায়। না এরা বড়দের কথা মানছে, না মা-বাবার। এর ফলে বিভিন্ন অপরাধও সংঘটিত হচ্ছে। প্রায় সময়ই শোনা যায় অমুক স্থানে লাশ পাওয়া গিয়েছে। তদন্ত করে জানা যায়, হয় প্রেমিকা প্রেমিককে খুন করেছে, নয়তো প্রেমিক প্রেমিকাকে খুন করেছে।

বাঙালি সংস্কৃতির অবক্ষয় রোধ করতে হলে আগে এই দিবসটাকে বয়কট করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা বাঙালি। আমাদের আছে পারিবারিক ঐতিহ্য। আমরা কখনোই এই অবৈধ যুবতীদের বণ্টন করা হত। প্রশ্রয় দিতে পারি না।

About Juyel Ahmed Liton

সুপ্রিয় “প্রোবাংলা” কমিউনিটি, ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ ছিলো এবং হয়তো সেই আকর্ষণটা অন্য দশ জনের থেকে একটু বেশি। ওয়েবসাইট, টাইপিং, আর্টিকেল লেখাসহ টেকনোলজি সবই আমার প্রিয়। জীবনে টেকনোলজি আমাকে যতটা ইম্প্রেস করেছে ততোটা অন্যকিছু কখনো করতে পারেনি। আর এই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ থেকেই লেখালেখির শুরু.....

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *