সাপ্লাই বা সরবরাহকারী ব্যবসা বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা আইডিয়া। তবে অনেকেই এই ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানে না।
তাই আপনাদের জন্য এই আর্টিকেলে- সাপ্লাই ব্যবসা কি? কিভাবে সাপ্লাইয়ের ব্যবসা শুরু করা যায়? এবং সাপ্লাই ব্যবসা করতে কত টাকা মূলধনের প্রয়োজন হবে, ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
বাংলাদেশে সাপ্লাই ব্যবসা
সাপ্লাই ব্যবসা আমাদের বাংলাদেশের অত্যন্ত লাভজনক এবং জনপ্রিয় একটি ব্যবসা হয়ে দাড়িয়েছে। এই ব্যবসা করে অসংখ্য মানুষ সাবলম্বী হয়েছে ইতিমধ্যেই। বর্তমানে এমন অনেক ব্যবাসায়ী রয়েছেন, যারা শুধুমাত্র বিভিন্ন নির্মাণাধীন বাড়ি, সেতু, ব্রিজ কিংবা রাস্তাঘাটের রড, সিমেন্ট, বালু, ইট ইত্যাদি জিনিসপত্র সাপ্লাই দিয়েই লক্ষ লক্ষ টাকা লাভের ব্যবসা করছেন।
অন্যদিকে, অনেকেই আবার গার্মেন্টস এক্সেসরিজ যেমন: সুতা, ট্যাগ, বোতাম, লেবেল, জিপারসহ বিভিন্ন পণ্যের সাপ্লাই ব্যবসা করে ভালো সফলতা অর্জন করছে। এভাবে আমাদের বাংলাদেশের অনেকেই অনেক ধরনের পণ্য সামগ্রী নিয়ে সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করে বেশ সফলতা অর্জন করছে প্রতিনিয়তই।
আরও পড়ুনঃ লাভজনক ৭টি ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া।
সাপ্লাই ব্যবসা কী?
উৎপাদনমূলক বা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মোতাবেক পণ্য সামগ্রী ও কাঁচামাল সরবরাহ করাকেই সাপ্লাই ব্যবসা বলে। আবার অনেকের কাছে এটা সরবরাহকারী ব্যবসা হিসেবেও পরিচিত। যেকোনো ছোট থেকে শুরু করে বড় ধরনের পণ্যদ্রব্য ও কাঁচামাল সামগ্রী নিয়ে সাপ্লাই ব্যবসা করা সম্ভব।
কিভাবে সাপ্লাই ব্যবসা শুরু করা যায়?
আপনি যেকোনো সরকারি কোম্পানি অথবা বেসরকারি ও প্রাইভেট কোম্পানিগুলোতে যেকোনো পণ্য সামগ্রী সাপ্লাই দিতে পারবেন। সরকারি কোম্পানিগুলোতে পণ্য সামগ্রী অথবা কাঁচামাল সাপ্লাই দিতে হলে আপনাকে কিছু নিয়ম নীতিমালা মানতে হবে।
আবার বেসরকারি প্রাইভেট কোম্পানি গুলোতে যেকোনো জিনিস সাপ্লাই দিতে হলে আপনাকে সাপ্লাইয়ার লিস্টে বা সরবরাহকারি হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে হবে। আবার কিছু সাপ্লাই ব্যবসা আছে যেগুলো করতে এই ধরনের কোনো কাগজপত্রই প্রয়োজন হবে না।
সাধারণত সাপ্লাইয়ার হতে হলে আপনার মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ ৪টি ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হবে। এগুলো হলোঃ
- আপনার একটি ট্রেড লাইসেন্স লাগবে। ট্রেড লাইসেন্সে উল্লেখ থাকবে যে আপনি একজন সরবরাহকারী।
- একটি TIN Certificate.
- একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
- ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নাম্বার।
এই কাগজগুলো থাকলে আপনি একজন সাপ্লাইয়ার হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং যেকোন কোম্পানির সাথে সাপ্লাই ব্যবসা করতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ সেরা ৬টি ২ লাখ টাকায় লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া।
সাপ্লাই ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন
যেকোন ব্যবসায়ের জন্য মাল ক্রয় থেকে শুরু করে সকল কাগজপত্র এবং নিজস্ব গোডাউন অফিস সবকিছুর জন্য টাকার প্রয়োজন পড়ে। তাই আপনি যে ব্যবসায় শুরু করেন না কেন আপনার অবশ্যই মূলধন বা পুজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে।
অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় সাপ্লাই ব্যবসায় তুলনামূলক একটু বেশি মূলধনের প্রয়োজন হয়। কারণ সাপ্লাই ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে পণ্যদ্রব্য বা কাঁচামাল সামগ্রী ক্রয় করতে হয়। আপনি যত বেশি মূলধন বিনিয়োগ করতে পারবেন ততবেশি সাপ্লাইয়ের ব্যবসা থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
বিভিন্ন প্রকার সাপ্লাই ব্যবসা
নিচে বাংলাদেশে করার উপযুক্ত কয়েকটি সাপ্লাই ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
(১) গার্মেন্টস এক্সোসরিজ সাপ্লাই
আমরা সকলেই জানি আমাদের বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে সবার প্রথমে রয়েছে গার্মেন্টস শিল্প। এই গার্মেন্টস শিল্পের প্রসার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে এখানেই তৈরি হচ্ছে নানামুখী কর্মসংস্থান। তাই আপনি চাইলে গার্মেন্টসের এক্সোসরিজ সাপ্লাই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
গার্মেন্টসের জন্য যেসব এক্সোসরিজগুলো প্রয়োজন হয়, সেগুলো হলোঃ
- বোতাম।
- লেবেল।
- সুতা।
- ট্যাগ।
- জিপার।
এরকম আরও বিভিন্ন ধরনের ছোটখাট সরঞ্জাম।
আপনি যদি গার্মেন্টস এর চাহিদা অনুযায়ী এগুলো সরবরাহ করতে পারেন তাহলে ভালো পরিমান আয় করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আপনি অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে আমাদের বাংলাদেশে যে সকল ছোট ছোট গার্মেন্টস শিল্পগুলো রয়েছে তাদেরকে এই ধরনের মালগুলো সাপ্লাই করবেন। পরবর্তীতে বড় বড় গার্মেন্টসগুলোতে আপনি সাপ্লাই করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ লাভজনকভাবে ফুলের দোকানের ব্যবসা করার গাইডলাইন।
(২) উপহার সামগ্রী সাপ্লাইয়ের ব্যবসা
আমাদের দেশে প্রতিবছর ছোট-বড় প্রায় সব কোম্পানিগুলোই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। কোম্পানি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ইউনিভার্সিটি গুলোও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে৷
এই সকল অনুষ্ঠানে পুরস্কার হিসেবে সবাইকে বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়৷ আপনি চাইলে এসকল উপহারসামগ্রীর সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করতে পারেন। এতে করে এই ধরনের ছোট বড় কোম্পানি অথবা বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি ও মাদ্রাসাগুলোতে সাপ্লাই দিতে পারবেন৷
আপনি পাইকারি বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের নতুন উপহার ও ভালো মানের উপহার ক্রয় করে এনে তা পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশি দামে বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবেন।
(৩) প্রজেক্টে কাঁচামাল সাপ্লাই ব্যবসা
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির কাজে কাঁচামালের ব্যবহার অনেক বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন মানুষ তাদের প্রয়োজনে মার্কেট, বিল্ডিং, স্কুল-কলেজ, ও মাদ্রাসা নির্মাণ করে থাকেন। আপনি চাইলে নির্মাণাধীন কাঁচা মালের সাপ্লাই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। যেমনঃ রড, সিমেন্ট, ইট, বালু, পাথর ইত্যাদি।
এছাড়া আমাদের আশেপাশে আরও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বড় বড় বিল্ডিংসহ বিভিন্ন নির্মাণাধীন প্রজেক্ট রয়েছে। আপনি যদি ভালো পরিমাণের মূলধন বিনিয়োগ করতে পারেন তাহলে আপনি এই কোম্পানিগুলোর নির্মাণাধীন কাজে কাঁচামালগুলো সাপ্লাই করতে পারবেন। এই ধরনের সাপ্লাই ব্যবসা অনেক বেশি লাভজনক হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ লাভজনকভাবে কবুতর পালন পদ্ধতি।
(৪) টি-শার্ট সাপ্লাই ব্যবসা
আপনি যদি বিভিন্ন প্রাইভেট অথবা সরকারি স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি গুলোকে টার্গেট করে টি-শার্টের সাপ্লাই ব্যবসা করতে পারেন, তাহলেও আপনি সেখান থেকে একটি ভালো পরিমান অর্থ ইনকাম করতে পারবেন।
প্রতিবছর আমাদের দেশে হাজার হাজার স্টুডেন্টরা তাদের গ্রেজুয়েশন এবং বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষার আগে তারা নানান ধরনের বিদায়ী প্রোগ্রামের আয়োজন করে থাকে। এসময় তারা সবাই মিলে স্কুলের নাম এবং তাদের কত তম ব্যাচের নাম সেটি উল্লেখ করে টি-শার্ট তৈরি করে থাকে বিভিন্ন সাপ্লাইয়ারদের কাছ থেকে।
এর পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিবছরতাদের বনভোজন আয়োজন করার সময় সকল কর্মচারীর জন্য প্রতিষ্টানের লোগো সম্বলিত একটি টি-শার্ট তৈরী করে থাকে। আর এই টি-শার্টগুলো তারা সংগ্রহ করে বিভিন্ন সাপ্লাইয়ারদের কাছ থেকে। তাই টি-শার্টের সাপ্লাই ব্যবসাটির কেমন চাহিদা রয়েছে, সে সম্পর্কে সহজেই বুঝা যায়। বুঝে শুনে পরিচালনা করতে পারলে এই ব্যবসাতে সফলতা সম্ভব।
(৫) খাতা-কলমের সাপ্লাই ব্যবসা
খাতা-কলমের চাহিদা রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি, দোকান ইত্যাদি সর্বত্রই। তাই আপনি চাইলে খাতা, ডায়েরি এবং দামি দামি কলমের সাপ্লাই করে অনেক টাকা আয় করতে পারবেন। আর এই ব্যবসাটি করতে আপনার খুব বেশি মূলধনের প্রয়োজন হবেনা।
তবে ব্যবসা শুরুর আগে স্থানীয় বাজার চাহিদা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ লাভজনকভাবে কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি।
সাপ্লাই ব্যবসায়ে আয় বা মুনাফা কেমন?
সাপ্লাই ব্যবসায় লাভের নির্দিষ্ট সীমা নেই। এটি পুরোপুরি নির্ভর করে আপনার ব্যবসার পরিধির উপর। আপনি যদি কোনো সরকারি বা বেসরকারি কোম্পানিগুলো থেকে প্রতিমাসে ২/৩ টি করে অর্ডার পেয়ে থাকেন। তাহলে আপনি মাস শেষে অনায়াসে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আপনি যদি ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকার একটি অর্ডার পেয়ে থাকেন দেখা যাবে আপনি সেখান থেকে প্রায় ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবেন। আপনি যদি নিজে পণ্য উৎপাদন না করেন তাহলে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে সাপ্লাই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন।
প্রথমদিকে আপনাকে নিজের থেকে বিভিন্ন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে কাজ নিতে হবে। যখন আপনি কাজগুলো সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিবেন তখন পরবর্তীতে কোম্পানিগুলো কাজ দেওয়ার জন্য আপনাকে খুঁজবে৷ সাপ্লাই ব্যবসা করে আপনি অনায়াসে প্রতিমাসে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারবেন।
এভাবে আপনার বিনিয়োগ ও প্রচার প্রচারনা যত বেশি হবে, লাভের সম্ভাবনাও ততই বেশি হবে।