স্ত্রী সহবাসের দোয়া শোনার পর হয়ত আপনি বিচলিত হয়েছেন। তবে, এটা জানা অতীব জরুরী একটি বিষয়। আজকের লেখাটি পড়ে জানতে পারবেন, সহবাসের দোয়া কি? মানুষ সামাজিক জীব। একাকীত্ব জীবনের পরিত্রান, পরিবার স্থাপন, বংশধর রক্ষায় ও মনের চাহিদা পূরনে মানুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পরিচ্ছন্ন জীবন-যাপন, মানসিক ভারসাম্য, উত্তম চরিত্র ঘটন ও জীবনের পবিত্রতা রক্ষার অন্যতম উপায় হলো বিবাহ।
শ্রেষ্ট ধর্ম ইসলাম নারী-পুরুষের মধ্যে সুন্দর ও পবিত্র জীবন যাপনের জন্য বিবাহের নির্দেশনা দিয়েছে। ফলে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন কারনে বিয়ের বিষয়টি কখন ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল ও মুস্তাহাব করে দিয়েছেন। বিবাহের মধ্যমে স্ত্রী সহবাস হালাল হয়ে যায়, যখন কোন ব্যক্তি সহবাস করতে চায় তখন স্ত্রী সহবাসের দোয়া পড়তে হয়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা বিবাহ করো তোমাদের পছন্দের নারীদের থেকে, ২ জন অথবা ৩ জন অথবা ৪ জন। কিন্তু তোমরা যদি আশঙ্কা করো যে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করতে পারবে না, তাহলে মাত্র একজনকে বিবাহ হর।’(সুরা নিসা, আয়াত : ০৩)
আল্লাহ পাক বলেন,
نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ
তোমাদের স্ত্রী তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র স্বরূপ। সুতরাং তোমরা তোমাদের শষ্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার।
বিবাহের মাধ্যমে একজন পুরুষের জন্য তার স্ত্রীকে হালাল করে দেওয়া হয়। তখন তার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসের ইচ্ছে করলে, নিম্নোক্ত দোয়া পড়া তার জন্য সুন্নত।
স্ত্রী সহবাসের দোয়া
সহবাসের সময় যে দোয়া পড়বেন: (আরবি)
بِسْمِ اللَّهِ ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ ، وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
সহবাসের দোয়ার বাংলা উচ্চারন: বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা, ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাজাক্বতানা।
সহবাসের দোয়ার বাংলা অর্থ: আমি আল্লাহ তায়ালার নাম নিয়ে শুরু করছি। হে আল্লাহ তায়ালা! আপনি শয়তানকে আমাদের নিকট থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদেরকে যে (সন্তান) দান করবেন তার থেকেও শয়তানকে দুরে রাখুন।
সহবাসের নিয়ম
এই অনুচ্ছেদে আমরা জানতে চলেছি স্ত্রী সহবাসের নিয়ম সম্পর্কে। মিলনের জন্য কোন নির্দিষ্ট কোন দিন, ক্ষণ বা সময় নেই। মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা এবং মনের চাহিদা থাকলে তা করা যায়। অবশ্য অধিক মিলনের ফলে স্বাস্থ্য হারানো উচিৎ নয়। স্বাস্থ্য-রক্ষার জন্য বিনা স্পর্শ ও যৌন চিন্তায় যখন মনের চাহিদা হয় ঠিক সেই সময়েই করা উচিৎ। বিবাহ বহির্ভূত সকল প্রকার মিলন অবৈধ্য ও গুনাহের কাজ।
স্ত্রী সহবাসের কিছু নিয়ম
- ০১. স্বামী-স্ত্রী উভয়েই পবিত্র হবে।
- ০২. সহবাসের আগে সুগন্ধি ব্যবহার করা। যা আল্লাহর রাসূলের সুন্নত।
- ০৩. “বিসমিল্লাহ” বলে সহবাস শুরু করা মুস্তাহাব। “বিসমিল্লাহ” বলতে ভুলে গেলে, বীর্যপাতের আগে যদি মনে পড়ে, তবে পড়ে নিবেন।
- ০৪. সকল প্রকার দুর্গন্ধযুক্ত জিনিস এড়িয়ে চলুন। উল্লেখ্য, ধূমপান বা অপরিষ্কার হওয়ার কারণে দুর্গন্ধ হয়। এবং এটি কামশক্তি কমায়, আগ্রহের পরিবর্তে দেয় বিতৃষ্ণা।
- ০৫. সহবাসের সময় খেয়াল রাখবেন, কিবলার দিকে যেন মুখ না থাকে।
- ০৬. সম্পূর্ণ উলঙ্গ হওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- ০৭. স্ত্রীকে পূর্ণ তৃপ্তি দেওয়ার আগে বিচ্ছিন্ন না হওয়া।
- ০৮. যদি সহবাসে সন্তান প্রসব করে তাহলে শিশুটি শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করতে, বীর্যপাতের সময় নির্ধারিত দোয়া পড়বেন।
- ০৯. মাসিকের সময় যৌন মিলন যাবে না।
- ১০. চন্দ্র মাসের প্রথম এবং পনের তারিখ রাতে মিলিত না হওয়া। ১১. স্ত্রীর জরায়ুর দিকে তাকিয়ে সহবাস না করা।
- ১২. বিদেশ বা বেড়াতে যাওয়ার আগের রাতে স্ত্রীর সাথে সহবাস না করা।
- ১৩. সহবাসের সময় স্ত্রীর সাথে বেশি কথা না বলা।
- ১৪. জোহরের নামাজের পর স্ত্রীর সাথে সহবাস করা থেকে বিরত থাকুন।
- ১৫. ভরা পেটে স্ত্রী সহবাস করবেন না।
- ১৬. উল্টা দিক থেকে স্ত্রী সহবাস করা উচিত নয়।
- ১৭. স্বপ্নদোষ হওয়ার পর গোসল না করে স্ত্রী সহবাস না করা।
কুরআন হাদিস মোতাবেক জীবন পরিচালনা করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম সম্প্রদায়ের সকল বিবাহিত দম্পতিকে পূণর্মিলনের পূর্বে রাসুলের শিখিয়ে দেওয়া দোয়াটি পাঠ করে শয়তানের সম্পূর্ণ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
আরও দোয়া সমূহ পড়ুন: দোয়ার ভান্ডার বা দোয়ায়ে মাসনুন
এই সহবাসে সন্তান জন্ম নিলে ঐ সন্তানকে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু শয়তান কখনো কোন রকম ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না। (মুসলিম ৩৬০৬ নং, বুখারী ১৪১ নং)
সহবাসের দোয়া বাংলায়
বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা, ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাজাক্বতানা।
সহবাসের দোয়া আরবিতে
بِسْمِ اللَّهِ ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ ، وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
মাসিকের সময় স্ত্রী সহবাস
মাসিকের সময় স্ত্রী সহবাস কুরআন-হাদীস উভয়ের আলোকেই নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيَسَۡٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡمَحِيضِۖ قُلۡ هُوَ أَذٗى فَٱعۡتَزِلُواْ ٱلنِّسَآءَ فِي ٱلۡمَحِيضِ وَلَا تَقۡرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطۡهُرۡنَۖ﴾ [البقرة : ٢٢٢]
“তারা আপনাকে মাসিক (পিরিয়ড) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুন, উহা অশুচি। সুতরাং মাসিকের সময় তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের কাছ থেকে দূরে থাক অর্থ্যাৎ সহবাস করা থেকে বিরত থাক এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটে যেও না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২২]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন-
মাসিকের সময়‘স্ত্রী সহবাস ব্যতীত তোমরা তাদের সাথে সব কিছুই কর”
সহবাসের শেষে দোয়া
সহবাস শেষে বীর্যপাতের সময় এই দোয়া পড়বেন: اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي جَعَلَ مِنَ الْمَاءِ بَشَرًا
অর্থঃ প্রশংসা আল্লাহর যিনি পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন।
আরও পড়ুন: দোয়া কুনুত আরবী বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ
পরিশেষে
স্ত্রী সহবাসের দোয়া পাঠ করে স্বামী-স্ত্রীর সহবাসে যদি সন্তান জন্মগ্রহন করে, পরবর্তী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এ সন্তান শয়তানের যাবতীয় প্রভাব থেকে নিরাপদ থাকবে। সহবাসের দোয়া না পড়ে স্বামী-স্ত্রী মিলন করলে শয়তান সে মিলনে অংশগ্রহণ করে এবং স্বামী-স্ত্রীর মনে খারাপ চিন্তা-ভাবনার তৈরি করে। যা বৈবাহিক জীবনের অশান্তি বয়ে আনে। আর সে মিলনে যদি কোনো সন্তান জন্মগ্রহন করে, সে সন্তান ও জীবনে শয়তানের প্রভাব মুক্ত হতে পারে না।
তাই শয়তানের প্রভাবমুক্ত পরিবার গড়তে স্বামী-স্ত্রী মিলনের আগে প্রিয় নবি করিম (সা:) এর শেখানো এ দোয়া পড়া আবশ্যক।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব দম্পতিকে মিলনের আগে প্রিয়নবী (স.)-এর শেখানো সহবাসের দোয়া বা স্ত্রী মিলনের মাধ্যমে শয়তানের যাবতীয় ক্ষতি থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন।
ধন্যবাদ, সুন্দর আলোচনা