শব ই মেরাজ ২০২৩

শব ই মেরাজ ২০২৪ – শবে মেরাজ কত তারিখে

শব শব্দটি ফার্সি। এটার অর্থ রাত।মেরাজ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বারোহণ। ফার্সি শব্দ গঠনে ‘শবে মেরাজ’ শব্দের অর্থ মেরাজের রাত্র। ইসলামে পরিভাষায় শবে মেরাজ হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত অবস্থায়, সশরীরে, সজ্ঞানে জিবরাইল (আ.) ও মিকাইলের (আ.) এর সাথে বিশেষ বাহন বোরাকে করে মসজিদুল হারাম (কাবা) থেকে মসজিদুল আকসা এবং সেখান থেকে প্রথম আসমান, সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে সপ্তম আসমান এবং সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে একা রফরফ বাহনযোগে আরশে আজিম পর্যন্ত ভ্রমণ; আরো সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ ও জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন শেষে জগতে ফিরে আসাকে মেরাজ বলে।

শব ই মেরাজ ২০২৪

কুরআনে আল্লাহ বলেন: ‘তিনি পবিত্র (আল্লাহ) যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রিভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি। যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি। নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা- বনি ইসরাইল)।

মেরাজের ঘটনা ঘটেছিল নবুওয়াতের ১১তম বছরের ২৭ রজব। সেই সময় নবীজির বয়স ৫১ বছর। মেরাজ হয়েছিল সশরীরে জাগ্রত অবস্থায়। এর অকাঠ্য প্রমাণ হচ্ছে কাফেরগণ এটা অবিশ্বাস করেছিল। যদি রুহানিভাবে বা স্বপ্নে এটা হতো, তাহলে তাদের অবিশ্বাস করার কোনো কারণ ছিল না। কেননা স্বপ্নে তো মানুষ বহু জায়গাতেই যেতে পারে।

মেরাজের ঘটনা সুরা নাজম ও সুরা ইসরায় বিবৃত হয়েছে। হাদিসের প্রধান বইগুলোতে মেরাজের ঘটনাটি নির্ভরযোগ্য ও বিশুদ্ধ সূত্রে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘শপথ নক্ষত্রের যখন তা বিলীন হয়। তোমাদের সাথী (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিপথগামী হননি এবং বিভ্রান্ত হননি। আর তিনি নিজে থেকে কোনো কথা বলেন না। (বরং তিনি যা বলেন) তা প্রদত্ত ওহি (ভিন্ন অন্য কিছু) নয়। তাকে শিখিয়েছেন মহাশক্তিশালী (জিবরাইল আ.)। সে (জিবরাইল আ.) পাখাবিশিষ্ট, সে স্থিত হয়েছে দূর ঊর্ধ্বে। অতঃপর নিকটবর্তী হলো, পরে নির্দেশ করলো। তারপর হলো দুই ধনুকের প্রান্তবর্তী বা আরও নিকট। পুনরায় তিনি ওহি করলেন তাঁর বান্দার প্রতি যা তিনি ওহি করেছেন। ভুল করেনি অন্তর যা দেখেছে।

তোমরা কি সন্দেহ করছ তাকে, যা তিনি দেখেছেন সে বিষয়ে। আর অবশ্যই দেখেছেন তিনি তাকে দ্বিতীয় অবতরণ স্থলে; সিদরাতুল মুনতাহার কাছে; তার নিকটেই জান্নাতুল মাওয়া। যখন ঢেকে গেল সিদরা যা ঢেকেছে; না দৃষ্টিভ্রম হয়েছে আর না তিনি বিভ্রান্ত হয়েছেন; অবশ্যই তিনি দেখেছেন তাঁর রবের বড় বড় নিদর্শনসমূহ।’ (সুরা- নাজম, আয়াত: ১-১৮)।

মেরাজের সফরে যাঁদের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে:

  • প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.),
  • দ্বিতীয় আসমানে হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.)
  • তৃতীয় আসমানে হজরত ইউসুফ (আ.)
  • চতুর্থ আসমানে হজরত ইদ্রিস (আ.)
  • পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.)
  • ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আ.)
  • সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (আ.)

অতঃপর বর্ণিত নবীগণের সাথে সালাম ও কুশল বিনিময় করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মামুর গেলেন। সেখানে প্রত্যহ ৭০ হাজার ফেরেশতা আসে ও ইবাদত করে চলে যায়; তাঁরা আর দ্বিতীয়বার এখানে ইবাদত করার সুযোগ পায় না। তারপর সিদরাতুল মুনতাহার নিকক গেলেন। সেখানে চারটি নদী দেখলেন। দুইটি প্রকাশ্য ও দুইটি অপ্রকাশ্য। অপ্রকাশ্য দুইটি নদী জান্নাতের আর প্রকাশ্য নদী দুইটি হলো জগতের নীল ও ফোরাত। অতঃপর বায়তুল মামুরে পৌঁছালে এক পেয়ালা শারাব, এক পেয়ালা দুধ ও এক পেয়ালা মধু পেশ করা হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুধ পান করলেন। কেননা এটাই নবীজির ফিতরাত অর্থাৎ ইসলাম।

মেরাজের মহান আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির জন্য নবীজীকে যে সকল উপদেশ দিয়েছেন:

  • আল্লাহ ব্যতীত কারও ইবাদত করবে না।
  • পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে।
  • নিকট আত্মীয়দের হক আদায় করবে।
  • মিসকিন ও পথসন্তানদের (হক আদায় করবে)।
  • অপচয় করবে না; অপচয়কারী শয়তানের ভাই।
  • কৃপণতা করবে না।
  • সন্তান হত্যা করবে না।
  • ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হবে না।
  • মানুষ হত্যা করবে না। (বর্তমানে মানুষ হত্যা করার নব পদ্ধতি হচ্ছে ভ্রুণ হত্যা)
  • এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করবে না।
  • ওয়াদা পূর্ণ করবে।
  • মাপে সঠিক দেবে।
  • যে বিষয়ে সম‌্যক জ্ঞান নেই সেটা করবে না।
  • পৃথিবীতে দম্ভের সাথে চলবে না।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাত-জাহান্নামও পরিদর্শন করেন।

আরো পড়ুন: আজকের তারিখ আরবি বাংলা ইংরেজি ২০২২

কোন পাপে কী শাস্তি:

  • নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিভিন্ন গুনাহের শাস্তি দেখানো হলো।
  • বেনামাজির শাস্তি- বড় বড় পাথর দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হচ্ছে এবং আঘাতে মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। পুনরায় ভালো হচ্ছে এবং আবার আঘাত করা হচ্ছে।
  • জাকাত না দেওয়ার শাস্তি- তাদের সামনে ও পেছনে পাওনাদারেরা থাকবে। তারা পশুর মতো ঘুরবে-ফিরবে এবং ময়লা-আবর্জনা ও পুঁজ এবং কাঁটাযুক্ত বিষাক্ত ফল খাবে। জাহান্নামের উত্তপ্ত পাথর ভক্ষণ করবে।
  • চোগলখোরের শাস্তি- তাদের দেহ থেকে মাংশ কেটে তাদের খাওয়ানো হচ্ছে আর বলা হচ্ছে, যেইভাবে তোমার ভাইয়ের মাংস খেতে, সেইভাবে এটা ভক্ষণ করো।
  • গিবতকারীদের শাস্তি- অগ্নিময় লোহার নখ দিয়ে তারা নিজেদের চেহারা ও বুক ছিন্নভিন্ন করছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে জিবরাইল! (আ.) এরা কারা?’ জিবরাঈল বললেন, ‘এরা হলো সেইসব লোক যারা পশ্চাতে মানুষের মাংস খেত (আড়ালে সমালোচনা করত)।
  • সুদখোরদের শাস্তি- তাদের বড় বড় পেট। যার ফলে তারা তাদের অবস্থান থেকে নড়াচড়া করতে পারছে না। তাদের সঙ্গে রয়েছে ফেরাউনের দল। তাদেরকে আগুনে জ্বালানো হচ্ছে।
  • ব্যভিচারিনীর শাস্তি- যে নারী ব্যভিচার করেছে এবং ভ্রূণ বা সন্তান হত্যা করেছে, তাদেরকে পায়ে আংটা লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে; তারা চিৎকার করছে।
  • ব্যভিচারী পুরুষের শাস্তি- ব্যভিচারী পুরুষদের সামনে একটি উত্তম পাত্রে তাজা ভুনা মাংস এবং অন্যটিতে নোংরা পাত্রে পচা মাংস। তারা উত্তম পাত্রের তাজা সুস্বাদু মাংস বাদ দিয়ে নোংরা পাত্রের পচা মাংস ভক্ষণ করছে।
  • রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে জিবরাইল! (আ.) এরা কারা?’ জিবরাইল বললেন, ‘এরা হলো ওই সব পুরুষ যারা বৈধ স্ত্রী রেখে অন্য নারীর সাথে কামনা চরিতার্থ করেছে এবং ওই সবক নারী যারা বৈধ স্বামী রেখে ভিন্নপুরুষগামিনী হয়েছে।
  • আমানত আত্মসাৎকারীর শাস্তি- এরা বিশাল লাকড়ির বোঝা একত্র করেছে, যা সে ওঠাতে পারছে না; কিন্তু আরও লাকড়ি তাতে বৃদ্ধি করছে।
  • রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে জিবরাইল! (আ.) এটা কী?’ জিবরাইল বললেন, ‘এ হলো আপনার উম্মতের সে ব্যক্তি যে মানুষের আমানত ফেরত দেয়নি; বরং আরও অধিক গ্রহণ করেছে।
  • অশ্লীল কথা বলা ও ফিতনা সৃষ্টিকারীদের শাস্তি- তাদের জিহ্বা ও ঠোঁট অগ্নিময় লোহার কাঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছে। আবার তা আগের মতো হয়ে যাচ্ছে এবং আবার কাটা হচ্ছে; এভাবেই চলতে থাকছে।
  • দাম্ভিক লোকদের শাস্তি- ছোট্ট একটি পাথর হতে বিশাল এক ষাঁড় বের হলো; পুনরায় ওই ষাঁড় সে পাথরের ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছিল; কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছিল না।
  • রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে জিবরাইল! (আ.) এটা কী?’ জিবরাল বললেন, ‘এটা হলো সেইসব লোক, যারা দাম্ভিকতাপূর্ণ কথা বলে লজ্জিত হয়, পরে আর তা ফিরিয়ে নিতে পারে না।’
  • এতিমের সম্পদ আত্মসাৎকারীর শাস্তি- তাদের দুই ঠোঁট যেন উটের ঠোঁটের মতো। তাদের মুখে আগুনের জ্বলন্ত কয়লা ঢোকানো হচ্ছে এবং তা তাদের পায়ুপথ দিয়ে বের হচ্ছে।
  • মাদক গ্রহণকারীদের শাস্তি- তারা জাহান্নামিদের শরীর থেকে নির্গত বিষাক্ত-নোংরা পুঁজ পান করছে।
  • রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘মালিক’ নামক জাহান্নামের রক্ষী ফেরেশতাকে দেখলেন। সে মলিন মুখ, হাসি নেই। কারণ জাহান্নাম সৃষ্টির পর থেকে সে কখনো হাসেনি।

শবে মেরাজ কত তারিখে ২০২৪

ইসলামী হিজরী বৎসরের সপ্তম মাসে অর্থাৎ রজব মাসের ২৭ তম রাতে শব ই মেরাজ উদযাপন করে। এই রাত লায়লাতুল মেরাজ নামেও পরিচিত। শব-ই-মেরাজ আল্লাহর সাথে নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর যাত্রাকে স্মরণ করতে উদযাপিত হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top