শবে বরাত ২০২৪ – শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে: শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত হচ্ছে হিজরী শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে মুসলিমদের পালিত গুরুত্বপূর্ন রাত। উপমহাদেশে এই রাত্রটিকে শবে বরাত বলা হয়। এটা দুইটি ফার্সি শব্দ মিলে গঠিত হয়েছে। শব শব্দের অর্থ রাত এবং বরাত শব্দের অর্থ হলো ভাগ্য, বণ্টন, নির্ধারিত, সৌভাগ্য। অর্থাৎ শবে বরাত শব্দের অর্থ সৌভাগ্যের রাত।
কিছু মুসলিমদের বিশ্বাস, এই রাত্রে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের বিশেষ ক্ষমা ঘোষণা করেন। জগতের নানান প্রান্তের অগণিত মুসলমান অনেক ইবাদাতের মধ্য দিয়ে শবে বরাত পালন করে থাকে। অনেক এলাকায়, এই রাত্রে নিজেদের মৃত আত্মীয়-স্বজন ও পূর্বপুরুষদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও ইবাদতের আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
তবে শিয়া সম্প্রদায়েরা একটু ভিন্ন। তাদের মধ্যে বারো ইমামে বিশ্বাসী শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই তারিখে মুহাম্মদ আল-মাহদি বা ইমাম মাহদীর জন্মদিন মিলাদ বা জন্মদিন পালন করে থাকে। শবে বরাতের রাত্রকে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।
- আফগানিস্তান ও ইরানে এটাকে নিম শা’বান বলা হয়। এর অর্থ শা’বান মাসের অর্ধেক।
- এ্যরাবিক ভাষীগণ এটাকে নিসফ্ শা’বান বলে থাকে।
- মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মালয় ভাষীগণ এটাকে নিসফু শা’বান বলে নামকরণ করেছেন।
- তুরস্কের তুর্কি ভাষীগণ এটাকে বলেন বিরাত কান্দিলি।
- ভারতীয় উপমহাদেশে শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত বলে সম্বোধন করা হয়।
কাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এই শবে বরাত
শবে বরাত ফার্সি শব্দ। এছাড়া এই শব্দের ব্যবহার এ্যরাবিক ভাষায় নাই। কিন্তু শা’বান মাসের অনেক গুরুত্ব আছে। পাক-ভারত, বাংলাদেশ, , লেবানন, , আজারবাইজান, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, ইরান, তাজিকিস্তান আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাকিস্তান- এই সকল দেশে শবে বরাত পালন করা হয়ে থাকে।
সাধারণ আরবগণ এই দিনটিকে গুরুত্ব দেয় না এবং পালন করে না। তাদের মত হচ্ছে, এইরাত্রে বিশেষ কোনো ইবাদাত ইসলামে নেই। তবে আরব দেশগুলোতে উপমহাদেশীয় দ্বারা প্রভাবিত আরবেরা ও শিয়াগণ এই শবে বরাত পালন করে থাকেন।
আরো পড়ুন: শবে মেরাজ কত তারিখে
ইরানে বারো ইমামে বিশ্বাসী শিয়াগণ, শিয়া মতাদর্শ মোতাবেক দ্বাদশ ইমাম মাহদির জন্মদিন হিসেবে এই দিন পালন করে। এই রাত্রে ইরানের অলিগলি আলোকসজ্জা করা হয়। মাহফিলের প্রোগ্রাম করা হয়। ইরাকেও এমনটা হয়। এই দিনে বাচ্চা হোক বা বৃদ্ধ, প্রতিবেশীর বাসায় গেলে তাদেরকে মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
ইন্দোনেশিয়ায় কিছু স্থানে ধর্মীয় জলসার আয়োজন করা হয়। সেখানে মুসলিমগণ ধর্মীয় নেতার বয়ান শোনে ও সবাই মিলে জিকির-আজকার করে। তবে ইন্দোনেশিয়াযতে এই প্রথা খুব কমই পালন হতে দেখা যায়।
বাংলাদেশে শবে বরাত
আমাদের দেশে শবে বরাত অনেক গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয়। ১৪ শা’বানের দিন সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়লেই শবে বরাতের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এদিন সন্ধ্যা রাত্রে মুসলিমরা গোসল করে পাক পবিত্র হয়। ২০২৪ সালের শবে বরাত ৭ মার্চ দিবাগত রাত, মঙ্গলবার ও ৮ মার্চ দিন।
মুসলিম রমণীরা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য প্রস্তুত করে। এর মধ্যে প্রধান খাবার হচ্ছে হালুয়া ও রুটি। এই সময় বিভিন্ন ধরনের হালুয়া তৈরি করা হয়। এছাড়া থাকে মাংস, পোলাও, সেমাই, ফিরনি, জর্দা।
প্রস্তুতকৃত খাদ্য একে অন্যের বাসায় উপহারস্বরূপ পাঠায়। এই রাত্রে বাচ্চারা খুব আনন্দ উৎসব করে। তারা বাবা, দাদা বা বন্ধুদের সাথে দলবেঁধে মসজিদে যায়। মসজিদে ইমামগণ অনেক ধর্মীয় আলোচনা করে। সারা বিশ্বের মানুষের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করা হয়। সারারাত্র মুসলিমগণ নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ও জিকিরে কাটায়।
ঘরের রমনীরাও এই রাত্রে অনেক ইবাদত বন্দেগী করে। এইমাত্র এবাদতের পাশাপাশি এক আনন্দ উৎসবে পরিণত হয়। গরিব দুঃখীদের ঘরে খাদ্যের আমদানি ঘটে। তবে আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে এই আনন্দের মাত্রা আরেকটু বেশি ছিলো। সেই সময় বাচ্চারা আতশবাজি, পটকা ফোটাতো। তাঁরা বাতি জ্বালাতো। আগরবাতির গন্ধে ঘর মম করতো। কিন্তু ধর্মীয় নেতাদের অনুরোধে এগুলো এখন বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এখনো ঢাকা শহরে যুবকেরা ভ্যান গাড়ি ভাড়া করে সারারাত এক মসজিদ থেকে আরেক মসজিদ ভ্রমণে বের হয়।
পবিত্র শবে বরাত মুসলিমদের নিকট অন্য একটি কারণেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আরবি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী শবে বরাতের ১৫ দিন পরেই আসে রমজান মাস। রমজান মাস মুসলিমদেরকে অনেক আবেগময় একটি মাস। এই মাসে প্রভুর নিকটবর্তী হওয়া যায়। তাই মুসলিমগণ শবে বরাতকে রমজানের আগমনী বার্তা হিসেবে সাদরে গ্রহণ করে।