পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। তাই অন্যান্য ক্ষেত্রের মতোই ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও এসেছে আধুনিকতা। এখন অতীতের মতো সাধারণ পদ্ধতিতে ব্যবসায় করে খুব বেশি লাভবান হওয়া কঠিন। তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক কিছু ব্যবসায় শুরু করা যায়।
যে সকল উদ্যোক্তারা ছোট কিংবা মাঝারি পরিমাণের মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন, তাদের সুবিধার জন্যই এই আর্টিকেলে সেরা ৫টি লাভজনক আধুনিক ব্যবসা আইডিয়া তুলে ধরা হলো।
৫টি আধুনিক ব্যবসা আইডিয়া
(১) পোষা প্রাণীর দোকান
আপনি যদি পোষা প্রানী পছন্দ করে থাকেন কিংবা বিভিন্ন প্রানীর প্রতি আপনার যদি ভালোলাগা তজাকে, তাহলে এই ব্যবসাটি আপনার জন্য। আপনি আপনার এলাকায় একটি পোষা প্রানীর দোকান খুলতে পারেন। এই ধরনের ব্যবসায় আপনার মানসিক তৃপ্তির পাশাপাশি আশেপাশের মানুষদের মাঝে পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তুলবে।
এই ধরনের ব্যবসার মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে মুনাফা অর্জনের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। আপনাকে শুধু স্থানীয় বাজারচাহিদা বুঝে ভালো জাতের পোষা প্রানী নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে। আপনি চাইলে বিভিন্ন পাখি, বিড়াল ইত্যাদি নিয়ে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এটি গ্রামীণ এলাকা বা ছোট শহরের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসায়িক ধারণা।
ব্যবসাটি শুরু করার জন্য আপনার স্থানীয় বাজারচাহিদার পাশাপাশি প্রানীর রক্ষনাবেক্ষন ও যত্ন সম্পর্কে ভালো ধারনা থাকতে হবে। তারপর আপনার অর্থনৈতিক অবয়াথার উপর ভিত্তি করে বাজেট নির্ধারন করে ব্যবসাতে বিনিয়োগ করতে হবে। শুধু এই ব্যবসাতেই নয়। বরং প্রতিটি ব্যবসায় সফলতার অন্যতম উপাদান হলো পূর্ব-পরিকল্পনা। তাই ব্যবসাফি কিভাবে পরিচালনা করবেন, সে সম্পর্কিত বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করে নিতে হবে।
এই ধরনের ব্যবসাতে, ব্যবসার পণ্য, পরিধি ও স্থানীয় চাহিদা উপর ভিত্তি করে ১-৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন। এর পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার অর্থনৈতিক অবস্থা ও ব্যবসায়িক ধারনার উপর। আর মুনাফার ক্ষেত্রে মাসিক প্রায় ২০-৩০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ লাভজনক কয়েকটি উৎপাদনমুখী ব্যবসায় আইডিয়া।
(২) প্রত্নতাত্ত্বিক/ ঐতিহাসিক পণ্যের দোকান
একটি প্রত্নতাত্ত্বিক বা ঐতিহাসিক পণ্যের দোকানের চাহিদা বর্তমান সময়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এই ব্যবসাটি শুরু করতে বিপুল পরিমান মূলধনের প্রয়োজন হবে, তবে একবার এই ধরনের ব্যবসা চলমান করতে পারলে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করা যাবে প্রতি মাসেই।
আপনার যদি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বস্তু বা জিনিস সংগ্রহ করার আগ্রহ থাকে, তাহলে আপনি এই উদ্ভাবনী ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসাটি লাভজনক হওয়ার পাশাপাশি মানুষকে ঐতিহ্যগত অনুভূতির সাথে সংযুক্ত করতে এবং তাদের প্রতিটি যুগের ইতিহাসের সাথে সংযুক্ত রাখতেও সহায়তা করে।
এই ব্যবসাতে আপনাকে বেশ কিছু পুরানো সরঞ্জাম ও নিদর্শন অনুসন্ধান করে দোকানে সজ্জিত করতে হবে। এছাড়াও আপনি এই ব্যবসার মাধ্যমে আকর্ষণীয় এবং ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জিনিসপত্র নিজে সংগ্রহ করেও আবার সরবরাহ করতে পারেন। এই ধরনের পণ্যের বাজারমূল্য অন্যান্য পণ্যের তূলনায় অনেক বেশি থাকে। কারন মানুষ এগুলো ক্রয় করে শৌখিনতা প্রকাশ করতে।
সরাসরি দোকানে বিক্রি করার পাশাপাশি আপনি অনলাইনে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে এবং নিজস্ব ওয়েবসাইট খুলেও ব্যবসা সম্প্রসারন করতে পারবেন। এই ধরনের ব্যবসার খরচ বা প্রাথমিক বিনিয়োগের পরিমান নির্ভর করবে আপনার দোকানের আকারের উপর এবং আপনি কি ধরনের পণ্য বিক্রি করতে চান, সেগুলোর উপর। এই সকল ব্যবসা থেকে পণ্যে বিনিয়োগকৃত অর্থের তূলনায় ৩০% বেশি মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ সাপ্লাই ব্যবসা কী? বাংলাদেশে সাপ্লাই ব্যবসা করার নিয়ম।
(৩) বইয়ের দোকান
আপনি যদি গ্রামীণ এলাকার জন্য একটি একচেটিয়া ছোট ব্যবসার ধারণা খুঁজছেন, তাহলে সবচেয়ে সুবিধাজনক হবে আপনি আপনার এলাকায় একটি বইয়ের দোকান খোলা। সকল গ্রামীণ শিশু এবং ছাত্রদের জন্যই বইয়ের দোকান একটি অপরিহার্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে করে। আপনার বইয়ের দোকানে বিভিন্ন ধরনের বই, যেমন- একাডেমিক বই, গল্পের বই, উপন্যাস, কল্পবিজ্ঞান ইত্যাদি বইগুলো রাখতে পারেন।
বুকশপ খোলার আগে, আপনাকে আপনার বাজেট অনুযায়ী একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। তারপর ব্যবসার পারিপার্শ্বিক অবস্থার গবেষণা এবং প্রবণতা বুঝতে হবে। তাছাড়া বইয়ের দোকান খোলার জন্য আপনার বইয়ের প্রতি আবেগ এবং কিছু আন্তঃব্যক্তিগত ও পাশাপাশি সাংগঠনিক দক্ষতাও থাকা জরুরী।
এই ব্যবসাটি শুরু করার আগে অবশ্যই বিভিন্ন শ্রেণীর বইয়ের বাজারমূল্য এবং চাহিদা জেনে নিতে হবে। তারপর ব্যবসার জন্য একটি উপযুক্ত স্থান বাছাই করতে হবে। মূলত যেকোন ব্যবসা শুরু করার জন্যই আপনাকে একটি উপযুক্ত স্থান চিহ্নিত করতে হবে। কারন অঞ্চলভেদে মানু্ষের চাহিদায় ব্যাপক ভিন্নতা থাকে। এবিষয়ে পর্যবেক্ষন না করলে আপনি প্রত্যাশিত আয় অর্জন করতে পারবেন না এবং ব্যবসাটি টিকিয়ে রাখতে কষ্ট হবে। তাছাড়া সঠিক স্থান বাছাই করতে পারলে ব্যবসায়িক খরচও কম লাগতে পারে।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আপনি যদি একটি ছোট আকারের বইয়ের দোকান খুলতে চান তবে আপনাকে প্রায় ১.৫-২.৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। আর এধরনের একটি ব্যবসা থেকে মাসে ২৫-৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা যায়।
আরও পড়ুনঃ ২০২৫ সালে শুরু করার জন্য সেরা কয়েকটি বড় ব্যবসার আইডিয়া।
(৪) আইসক্রিমের দোকান
আইসক্রিম পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। আইসক্রিম শপ হলো শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সের মানুষের জন্যই সবচেয়ে পছন্দের দোকানগুলোর মধ্যে একটি। গ্রামীণ এলাকায়, আপনি স্বল্প বিনিয়োগে সহজেই একটি আইসক্রিমের দোকান খুলতে পারেন। তবে বিনিয়োগ কম হলে এই ধরনের ব্যবসা থেকে আপনি ভালো পরিমান ও উল্লেখযোগ্য মুনাফা অর্জন করতে পারবেন।
আইসক্রিমের দোকান খোলার আগে আপনাকে আপনার এলাকার আবহাওয়া এবং অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে বিশ্লেষণমূলক চিন্তা-ভাবনা করে নিতে হবে। তারপর সুস্বাদু আইসক্রিম বানানো শিখতে হবে। আপনার আইসক্রিমের স্বাদ ভালো হলে খুব সহজেই বেশি বেশি গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারবেন।
এই ব্যবসাটি শুরু করার আগে আপনাকে আপনার পেশা সম্পর্কে উৎসাহী থাকতে হবে। নিজের পেশার প্রতি যত বেশি ভালোলাগা কাজ করবে, সেই কাজে সফল হওয়ার সম্ভয়াবনা ততই বেশি। বুঝেশুনে শুরু করতে পারলেই এই ব্যবসাটি অল্প পুজিতে অধিক লাভের ব্যবসা হয়ে উঠবে।
প্রাথমিকভাবে ব্যবসাটি শুরু করতে আপনাকে আইসক্রিম শপ ব্যবসার স্টার্টআপ খরচ করতে হবে প্রায় ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা। এই ধরনের ব্যবসায় পুজির তূলনায় মাসিক আয়ের পরিমান থাকে ৩০% থেকে ৪০% পর্যন্ত।
আরও পড়ুনঃ লাভজনক ৭টি ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া।
(৫) কর্মসংস্থান সংস্থা ব্যবসা
গ্রামাঞ্চলে সঠিক জ্ঞানের অভাবে বহু মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তারা বুঝতে পারছে না কোন পেশা তাদের জন্য উপযুক্ত হবে। এক্ষেত্রে আপনি তাদের গাইড করার জন্য একটি পরামর্শমূলক ব্যবসা বা এজেন্সি শুরু করতে পারেন। আপনার ব্যবসার লক্ষ্য হবে তারা কীভাবে স্বাধীন পেশায় হতে পারে এবং যে কোনও ব্যবসা শুরু করার উপায় সম্পর্কে কিছু জ্ঞান প্রদান করা।
এই ব্যবসার আইডিয়াটি শুধুমাত্র আপনার জন্যই লাভজনক নয়, অন্যান্য গ্রামীণ মানুষের জন্যও সহায়ক হবে। এই ব্যবসার মাধ্যমে, আপনি সেই সমস্ত লোকদের সহযোগিতা করতে পারবেন, যারা বেকার এবং যারা চাকরি খুঁজছে।
এ ধরনের ব্যবসার জন্যও চাহিদা সম্পন্ন অঞ্চল খুজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হলো, আপনাকে এই ব্যবসা শুরু করার সঠিক উপায় জানতে হবে। অন্যথায়, আপনি সফল হতে পারবেন না। পাশাপাশি আপনাকে বিভিন্ন চাকরি সম্পর্কিত বিষয়ে বিভিন্ন প্রান্তের কোম্পানি ও ব্রোকারদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।
এধরনের ব্যবসা শুরু করতে তেমন পুজির দরকার হয়না। কিন্তুয়াপনি যদি কোন অফিস বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুতে চান, তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে একটি ভালো পরিমান টাকা স্থায়ী বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যবসার লাভ নির্ভর করবে আপনার পরিষেবার উপর এবং স্থানীয় বাজার চাহিদার উপর। বিশেষ করে একটি শিক্ষিত সমাজের অন্তর্ভুক্ত স্থানে এমন ব্যবসা দিতে পারলে বেশি লাভজনক হবে।