৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া

লাভজনক ৭টি ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া

আপনার কাছে যদি ৫০ হাজার টাকা মূলধন থাকে এবং ব্যবসায়িক/ উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা থাকে, তাহলে জেনে নিন লাভজনক ১০টি ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে।

বাংলাদেশে এমন অনেক ব্যবসা রয়েছে যেখানে ৮-১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে মাসিক ৩০ হাজার টাকা ইনকাম করা কঠিন হয়। আমার কিছু কিছু ব্যবসা রয়েছে যেখানে আপনি ৫০-৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেও মাসে ৩০-৫০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন। 

বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকার যুবকের সংখ্যা অনেক। এক্ষেত্রে মূলধনের অভাবে অনেকেই ব্যবসা করতে পারে না। কিন্তু ব্যবসায়িক মানসিকতা থাকলে মাত্র ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করেও আপনি ভালো ইনকাম করতে পারবেন। এমনি কয়েকটি ব্যবসায় আইডিয়া এই আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন।

৭টি ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা

(১) অন ডিমান্ড টি-শার্ট প্রিন্টিং ব্যবসা

অন ডিমান্ড টি শার্ট প্রিন্টিং ব্যবসাকে একটি ডিজিটাল ব্যবসা উদ্যোগ বলা যায়। এ ধরনের ব্যবসাতে আপনি একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও কাজ করতে পারেন। আবার চাইলে নিজেই প্রিন্টিং ব্যবসা করতে পারেন।

অন ডিমান্ড টি শার্ট প্রিন্টিং ব্যবসা হলো- বিভিন্ন মাধ্যম হতে বিভিন্ন টি শার্ট ডিজাইনের অর্ডার নেওয়া, তারপর সেগুলো টি-শার্ট প্রিন্টিং এর দোকান থেকে প্রিন্ট করে বিক্রি করা। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে আপনি নির্দিষ্ট সাইজের কোয়ালিটির টি-শার্ট সংগ্রহ করতে হবে। তারপর সেই টি-শার্টের যেই প্রিন্ট করতে চান সেগুলো দিয়ে প্রিন্টিং এর দোকানে সার্ভিস চার্জ দিয়ে প্রিন্ট করাতে হবে। 

এরপর কাস্টমারের কাছে বাড়তি দামে সেগুলো বিক্রি করা যাবে। এই ব্যবসায় আপনি যদি ১২০ টাকার টি-শার্ট নিয়ে ৫০/৮০ টাকা দিয়ে প্রিন্টিং করান, তাহলে সেই টি-শার্টটি ৩০০-৩৫০ টাকা বিক্রি করা সম্ভব। এভাবে সঠিক বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়াতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আধুনিক সময়ে বাড়তি অর্থ বিনিয়োগ ছাড়াই একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে নিজের দোকান বানিয়ে এমন ব্যবসা করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ বর্তমান সময়ের সেরা ৭টি স্টক মালের ব্যবসা আইডিয়া

(২) সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল এর ব্যবসা 

৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া

প্রাপ্ত বয়স্ক অনেক বেকার যুবক এই ধরনের ব্যবসা করে ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে এ ধরনের ব্যবসার প্রচলন হয়েছে অনেক আগেই। এ ধরনের ব্যবসাতে আপনি সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারেন Bikroy.com এর মতো মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে। 

অনেক ব্যক্তি তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বিক্রয় করার জন্য Bikroy.com অ্যাপে পোস্ট করে থাকে। মোবাইল সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা থাকলে, আপনি সেই পোস্টগুলো থেকে বাছাই করে কম দামে ভালো মানের ফোনগুলো কিনে নিতে পারেন। তারপর সেগুলো প্রয়োজন মতো সার্ভিসিং করিয়ে নিতে পারেন। অথবা, সার্ভিসিং ছাড়াই কিছুটা বাড়তি নামে আবার পোস্ট করতে পারেন।

এভাবে অনেক ব্যক্তি দিনে কয়েকটি করেও মোবাইল বিক্রি করতে পারে। আবার অনেকেই হকারদের কাছ থেকে অল্প দামে পুরাতন নষ্ট মোবাইল ক্রয় করে সেগুলো সার্ভিসিং করিয়ে সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল হিসেবে বিক্রি করে। মোবাইল সার্ভিসিং সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকলে খুব অল্প টাকা বিনিয়োগ করেই এই ব্যবসায় লাভবান হওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ সেরা ৬টি ২ লাখ টাকায় লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া

(৩) নার্সারির ব্যবসা

৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নার্সারির ব্যবসাটি হবে অত্যন্ত সহজ এবং লাভজনক ব্যবসা। বিশেষ করে আপনি যদি গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন এবং আপনার বাড়ির পাশে কিছুটা জায়গা খালি থাকে তাহলে এই ব্যবসাটি আপনার জন্য আরও সুবিধাজনক হবে।

এই ব্যবসা শুরুর জন্য আপনাকে প্রাথমিকভাবে বীজ থেকে চারা উৎপাদন, গাছের কলম করে চারা উৎপাদন, উন্নত জাত ও মানের চারা তালিকা এবং সেগুলোর চাহিদা সম্পর্কে জানতে হবে। বর্তমানে বিভিন্ন বিদেশি জাতের ফল গাছ অনেক বেশি চাহিদা সম্পন্ন। 

আপনি চাহিদা সম্পন্ন গাছের বীজ থেকে কিংবা কলম করে চারা উৎপাদন করবেন। আপনি ফলজ গাছের পাশাপাশি কাঠ উৎপাদনকারী গাছেরও চারা উৎপাদন করতে পারেন। 

নার্সারির চারা করতে:

  • প্রথমে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গাছের বীজ সংগ্রহ করতে হবে। 
  • একটি আলো-বাতাস পূর্ণ স্থানে বীজ বপনের জন্য বেড তৈরি করতে হবে।
  • বীজ বপন, জমি/ মাটি তৈরি, ও চারা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনে সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে হবে।
  • প্রতিটি চারা আলাদা আলাদা ছোট পলিথিন ব্যাগে বপন করতে হবে।

চারা নির্দিষ্ট বয়সের হলে, সেগুলোকে আশেপাশের বিভিন্ন বাজারে বাজারজাতকরণ করতে হবে। অথবা আপনি চাইলে ভ্যান গাড়ির মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ করেও চারা বিক্রি করতে পারবেন। এ ধরনের ব্যবসা একবার সফলভাবে পরিচালনা করতে থাকলে প্রতিমাসে ২০/৩০/৪০ হাজার টাকার মতো ইনকাম করা সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ ৭টি ১ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়া ২০২৪

(৪) কোয়েল পাখি পালন

খুবই অল্প টাকায় লাভজনক খামার ব্যবসা করার জন্য কোয়েল পাখি পালন অত্যন্ত উপযোগী। এমনকি “৫ ফুট × ৫ ফুট” জায়গাতেও এই ব্যবসাটি সফলভাবে শুরু করতে পারবেন।

প্রাথমিকভাবে একদম অল্প টাকা বিনিয়োগ করে ২০/৫০/১০০ টি কোয়েল পাখি পালন শুরু করতে পারেন। তারপর কোয়েল পাখির মাংস উৎপাদন করে বিক্রি ও পাখির ডিম বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়েই আপনার খামারের সম্প্রসারণ করতে পারবেন।

কোয়েল পাখি পালন শুরু করতে: 

  • একটি ছোট/ মাঝারী পরিসরের খাচা তৈরি করতে হবে।
  • পাখির খাদ্য দ্রব্য সংগ্রহ করতে হবে।
  • এই পাখি পালন পদ্ধতি ও ভ্যাকসিনেশন সম্পর্কে জানতে হবে। 
  • প্রাথমিকভাবে ২০/৫০ টি কোয়েল পাখি একটি বিশ্বস্ত খামার থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। তারপর পর্যবেক্ষণ করে পরিমাণ বাড়াবেন।

কোয়েল পাখি ৬-৭ মাস বয়স থেকে ডিম দেয়। তারপর, কোয়েল প্রতিদিন একটি করে এবং বছরে প্রায় ২৫০-৩০০ টি পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। প্রতি পিস ডিম ৩-৪ টাকা। আবার ডিম উপাদানের অনুপযোগী হয়ে গেলে, সেই পাখি গুলোর মাংস ৫০-৮০ টাকা/ পিস দরে বিক্রি করা যাবে। 

এভাবে আপনি ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা করে গড় হিসেবে মাসিক ২০-২৫ হাজার টাকা ইনকাম করা সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ অনলাইন আয় করার সহজ উপায় জেনে নিন

(৫) মোবাইল সার্ভিসিং ব্যবসা

মোবাইল সার্ভিসিং ব্যবসা বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তেই অত্যন্ত জনপ্রিয়। অন্যান্য অল্প পুঁজির ব্যবসার তুলনায় এই ব্যবসাতে লাভের হার কয়েক গুণ বেশি। 

প্রাথমিকভাবে মাত্র ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসার জন্য পুঁজি নিয়েই আপনি এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। এই ব্যবসাতে আপনার প্রধান বিনিয়োগ হবে মোবাইল সার্ভিসিং কোর্স করায়। এক্ষেত্রে আপনার ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হতে পারে। তারপর আপনার এলাকার একটি বাজারে খুবই ছোট পরিসরের একটি দোকান ভাড়া নিলেই হবে। 

সেই দোকানে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও প্রথম অবস্থায় মোবাইলের ছোট কিছু পার্টস নিতে পারেন। এছাড়াও একটি টেবিলের প্রয়োজন হবে। কাস্টমারদের ভালো সার্ভিস দিতে পারলে, ১ থেকে ২ মাসের মধ্যেই আপনার ব্যবসাটি সম্প্রসারিত করতে পারবেন।

(৬) কম্পিউটার বা ল্যাপটপ সার্ভিসিং ব্যবসা

৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া ২০২৪

মোবাইল সার্ভিসিং ব্যবসার মতোই এই ব্যবসাটিও বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। 

তাই শুধুমাত্র শহরাঞ্চলেই নয় বরং গ্রামাঞ্চলেও কম্পিউটার বা ল্যাপটপ সার্ভিসিং এর ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক হবে। এক্ষেত্রে মোবাইল সার্ভিসিং এর মতোই প্রাথমিকভাবে আপনাকে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ সার্ভিসিং এর কোর্স করতে হবে। ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড ও নিউমার্কেট সংলগ্ন এলাকায় এ ধরনের কোর্স করতে পারবেন। 

কোর্স সম্পন্ন করার পর ছোট পরিসরের একটি দোকান ভাড়া নিয়েই আপনার সার্ভিসিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে আশেপাশের এলাকায় যত বেশি প্রচার-প্রচারণা করবেন কাস্টমার পাওয়ার সম্ভাবনা ততোই বেশি হবে। উন্নত এলাকায় এধরনের ব্যবসা করতে পারলে, ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করে প্রতিমাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা বা তার বেশি উপার্জন করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায় ২০২৪

(৭) জুসবার এর ব্যবসা 

স্ট্রীটফুডের ব্যবসা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম টাকায় যে সকল আইটেম নিয়ে ব্যবসা করা যায়, তার মধ্যে একটি হলো জোস আইটেম। প্রাথমিক অবস্থায় শুধুমাত্র একটি টেবিল, একটি মিক্সার গ্রাইন্ডার, কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন ফল, বরফ, ওয়াটার পিউরিফায়ার এবং জুস সার্ভ করার জন্য গ্লাস ও অন্যান্য সরঞ্জাম থাকলেই হবে। 

ইউটিউব থেকে আপনি নিজে নিজেই বিভিন্ন ধরনের জুস বানানোর পদ্ধতি জেনে নিতে পারবেন। তারপর আপনার এলাকায় সবচেয়ে লোকালয়ে পণ্য স্থানে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। গ্রীষ্মকালীন সময়ে এ ধরনের ব্যবসা থেকে ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করে, প্রতিমাসে ৫০-৬০ হাজারেরও বেশি টাকা ইনকাম করা সম্ভব।

শেষকথা

উপরোক্ত ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া গুলো থেকে কোন একটি ব্যবসা শুরু করতে চাইলে সে সম্পর্কে কয়েকদিন বিচার বিশ্লেষণ করে বিস্তারিত জেনে নিবেন।

About Sajjad Hossain

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *