পৃথিবীতে বহু ধরনের ব্যবসা প্রচলন রয়েছে। প্রতিটি দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে ব্যবসা। এমন হাজারো ব্যবসা আইডিয়া মধ্যে উৎপাদনমুখী ব্যবসা গুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। ক্ষুদ্র উৎপাদনমুখী ব্যবসা হোক কিংবা বৃহৎ পরিসরের উৎপাদনমুখী ব্যবসা, এটি অনেক বেশি লাভজনক হয়।
এছাড়া উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির চালিকাকে আরও গতিশীল করার জন্য উৎপাদনমুখী ব্যবসা প্রসার ঘটানো অতীব জরুরী। ব্যক্তিগত কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে এবং দেশের উন্নয়ন সাধনের জন্য আমরা চাইলে একটি উৎপাদনমুখী ব্যবসা শুরু করতে পারি। প্রাথমিকভাবে আমরা ক্ষুদ্র পরিসরেই শুরু করতে পারি।
এ সম্পর্কে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের জন্য কিভাবে অল্প পুঁজিতে, অল্প লোকবল নিয়ে একটি ক্ষুদ্র উৎপাদনমুখী ব্যবসা শুরু করা যায় সেই সম্পর্কেই আজকের আলোচনা। তাই সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ে নিতে পারেন।
উৎপাদনমুখী ব্যবসায় আইডিয়া
(১) জৈব সার তৈরির ব্যবসা
আমাদের দেশ একটি কৃষি নির্ভর দেশ। এদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। আর এই বিশাল সংখ্যক কৃষি সমাজের কৃষি কাজের জন্য জৈব সারের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই বিশাল বাজারে আপনিও চাইলে আপনার একটি অবস্থান তৈরি করতে পারবেন।
নিজের বাড়ির বর্জ্য এবং আশেপাশের বাড়ি থেকে বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ করে এই জৈব সার তৈরি করা যায়। স্থানীয় বাজার এবং বিভিন্ন লোকের কাছে এই সার গুলো বিক্রি করা যাবে। বর্তমানে অনেক উদ্যোক্তাকেই বস্তা ভর্তি করে জৈব সার বিক্রি করতে দেখা যায়। আর এই উৎপাদনমুখী ব্যবসাটিতে ব্যাপক সম্ভাবনাও রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ২০২৫ সালে শুরু করার জন্য সেরা কয়েকটি বড় ব্যবসার আইডিয়া।
(২) কাঠের জিনিসপত্র তৈরি ব্যবসা
আমাদের দেশে বর্তমানে ননস্টিক কড়াইয়ের বা পাত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই ধরনের পাত্র গুলোর জন্য সাধারণত কাঠের তৈরি হাতা খুন্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট গুলোতেও এই হাতা গুলোর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
বিভিন্ন কিচেন সামগ্রীর দোকানে খেয়াল করলে এই পণ্যগুলো নজরে পড়ে। তাই আমরা যে কেউ চাইলে এই ধরনের পণ্যগুলো তৈরি করে ব্যবসা করতে পারি। এটি একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা আইডিয়া এবং স্বল্প পুজিতে অল্প কিছু জনশক্তি নিয়েই এই ব্যবসাটি শুরু করা সম্ভব।
(৩) নুডুলস তৈরির ব্যবসা
ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নুডুলস তৈরির ব্যবসাটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মধ্যম পরিমাণের পুঁজি থাকলেই আপনিও এই উৎপাদনমুখী লাভজনক ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন।
মাত্র ২ ধরনের যন্ত্রের সাহায্যে এই নুডুলস তৈরি ব্যবসা দিয়ে শুরু করা যাবে। প্রথমটি হচ্ছে সেমি অটোমেটিক মেশিনের সাহায্যে নুডুলস তৈরি করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে অটোমেটিক মেশিনের সাহায্যে নুডুলস তৈরি করা। এই ব্যবসাটি শুরু করার আগে অভিজ্ঞ লোকের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত। অথবা, আপনি ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করেও এই ব্যবসাটি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের মেশিন আমদানিকারক রয়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করলে, তারা আপনাকে এই ব্যবসা সম্পর্কিত সম্ভাবনাময় সবগুলো পথ বলে দিতে চেষ্টা করবে। এই ব্যবসাতে প্রথমে অল্প পরিসরে শুরু করে পরবর্তীতে ব্যবসাটি আরো সম্প্রসারনের সুযোগও রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ সাপ্লাই ব্যবসা কী? বাংলাদেশে সাপ্লাই ব্যবসা করার নিয়ম।
(৪) মরিচ-হলুদের পাউডার তৈরির ব্যবসা
বর্তমান সময়ে বাড়িতে মসলা বাটার চেয়ে বরং বাজার থেকে রেডিমেড কিনে এনে রান্না করতে আমরা বেশি পছন্দ করি। সেই হিসেবে বাজারে গুড়া-হলুদ মরিচের চাহিদা ব্যাপক৷ আপনি চাইলে বাড়িতে বসেই এই সকল উপাদান নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন।
এই ধরনের ব্যবসাতে হলুদ-মরিচ লোকাল মার্কেট থেকে কিনে সেটাকে গুড়া করে বাড়িতে বসে প্যাকেট করতে পারেন। তারপর আপনার এলাকায় যত মুদি দোকান রয়েছে, সেগুলোতে সাপ্লাই দিবেন পাশাপাশি গ্রামের বা এলাকার আশেপাশের লোকদের মাঝেও এগুলো বিক্রি করা যায়।
(৫) কাগজ তৈরির ব্যবসা
বহুকাল আগে থেকেই এই পৃথিবীতে কাগজের চাহিদা ব্যাপক৷ হয়তোবা ভবিষ্যতেও কাগজের চাহিদা কমবে না। চাহিদা যেমনই হোক, কাগজ তৈরি ব্যবসা খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেযে বর্তমানে কাগজের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তাই অধিক পরিমান মূলধন থাকলে আপনিও এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
প্রাথমিকভাবে কাগজ তৈরির মেশিন এবং কাঁচামাল মিলিয়ে দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করলেই ব্যবসাটি শুরু করা যায়। এখন বাজারে সাধারণত এ-টু, এ-থ্রি এবং এ-ফোর মাপের কাগজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, তাই শুরুর দিকে এগুলো নিয়েই ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। এছাড়াও এ ব্যবসার সাথে খাতা তৈরির ব্যবসাও সংযুক্ত করা যায়।
(৬) কাগজের ব্যাগ তৈরির ব্যবসা
আমাদের দেশের শপিংমল গুলোতে কাগজের ব্যাগের চাহিদা ব্যাপক। আর ঘর থেকে বের হলেই প্রচুর কাপড়ের দোকান রয়েছে এছাড়াও অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কাগজের ব্যাগ এর প্রয়োজন হয়। তাই মাঝারি আকারের মূলধন থাকলে আপনি বাড়িতে বসে বসেই কাগজের ব্যাগ তৈরির ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
এছাড়াও বর্তমানে খবরের কাগজের ব্যাগ তৈরি করেও অনেকেই অর্থ উপার্জন করছেন। আবার হালকা পিচ বোর্ডের বাক্সও তৈরি করতে পারেন আপনার ব্যবসাতে। সেগুলো মিষ্টির দোকান থেকে শুরু করে শাড়ির দোকান ও ফলের দোকানে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই ধরনের ব্যবসা মাত্র কয়েক হাজার টাকা পুঁজি নিয়েই শুরু করতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ লাভজনক ৭টি ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া।
(৭) মোবাইল ফোনের এক্সেসরিজ তৈরির ব্যবসা
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। তাই মোবাইল ফোনের এক্সেসরিজের চাহিদাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আপনি বিভিন্ন ধরনের এক্সেসরিজ তৈরি করে ব্যবসা করতে পারেন।
স্মার্টফোনের এক্সেসরিজ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত যেটি সেটি হলো গ্লাস প্রটেক্টর এবং ব্যাক কভার। এই দুইটি জিনিস উৎপাদন করেও আপনি এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য খুব বেশি পুঁজিরও প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট মেশিন কিনেই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
(৮) ঘরে বসে বিস্কুট তৈরির ব্যবসা
বাজারে বহু ধরনের বিস্কুটের প্রচলন রয়েছে। তবে আপনি যদি ঘরে বসে বিস্কুট তৈরি করে সেটা মানুষের মাঝে সাড়া ফেলতে পারেন, তাহলে এই ব্যবসাটি করে ভালো পরিমাণ উপার্জন করতে পারবেন। এছাড়াও ঘরে তৈরি বিস্কুটের চাহিদাও ব্যাপক৷ কেননা আমরা বাইরে যে খাবার গুলো খেয়ে থাকি সেগুলো অনেক সময় স্বাস্থ্যসম্মত হয় না।
বিস্কুট এর স্বাদ ভালো হলে চায়ের দোকান বা মুদি দোকান গুলোতে সহজেই বিক্রি করা সম্ভব৷ এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি ওভেন এবং কিছু কাঁচামাল। এই ধরনের ব্যবসাটি মাত্র ৩০ হাজার টাকা দিয়েই শুরু করা সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ সেরা ৬টি ২ লাখ টাকায় লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া।
(৯) আটা ময়দা তৈরি ব্যবসা
আটা ময়দা তৈরির ব্যবসা হচ্ছে খুবই সহজ এবং কম পুজির ব্যবসা। আটা পিশার একটা মেশিন কিনেই এই ব্যবসাটি শুরু করা যায়। এখানে তেমন একটা মূলধনেরও প্রয়োজন হয় না।
বাড়িতে কাঁচামাল দিয়ে আটা/ ময়দা তৈরি করে, সেগুলোকে বিভিন্ন সাইজের ব্যাগের মধ্যে ভর্তি করে অথবা প্যাকেট করে আপনার এলাকায় মুদি দোকান গুলোতে সাপ্লাই করতে পারবেন। এছাড়াও বড় বড় বস্তা ভর্তি করেও বিভিন্ন দোকানে সাপ্লাই দেওয়া যাবে।
শেষকথা
উপরোক্ত আলোচনা থেকে লাভজনক কয়েকটি উৎপাদনমুখী ব্যবসায় আইডিয়া সম্পর্কে জানতে পারলেন। তবে একটি আর্টিকেলে কোন একটি ব্যবসা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ও বিস্তারিত তথ্য জানানো সম্ভব হয়ে ওঠেনা। সেক্ষেত্রে আপনার যদি কোন একটি ব্যবসা পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে সেই ব্যবসাটি শুরু করার আগে অবশ্যই প্রথমে কয়েক মাস বিভিন্নভাবে তথ্য ও ব্যবস্থাপনা জেনে নিবেন।