গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা-প্রেগন্যান্সি খাদ্য তালিকা নিয়েই আজকের আলোচনা। প্রতিটি শিশুর সবথেকে আশ্রয়স্থলের নাম হচ্ছে তার মা। এই মায়ের স্নেহ এবং ভালোবাসায় শিশুটি পৃথিবীতে বেড়ে ওঠে। কিন্তু মা যখন সন্তান গর্ভে ধারণ করেন, তখন মায়ের শরীরের বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরী। যত্নের কথা বলতে গেলেই প্রথমে খাবার তালিকা নিয়ে বলতে হবে। কেননা চর্বিযুক্ত খাবার যেমন সন্তান এবং মায়ের জন্য ক্ষতিকর ঠিক তেমনি পুষ্টিহীনতায়ও রয়েছে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি।
একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক সন্তান জন্ম দেয়ার মূল শর্ত হচ্ছে, হবু মায়ের পরিচর্যা করা। গর্ভধারণের ১ম ধাপ অর্থাৎ প্রথম তিন মাসে হবু মায়ের শারীরিক নানাবিধ পরিবর্তন হয়ে থাকে। যার ধরুণ খাবারের অনীহা, বমি বমি ভাব দেখা দেয়, অনেক ক্ষেত্রে ওজনও কমে যাওয়াসহ রক্ত শূণ্যতা দেখা ও দিতে পারে। এর জন্য গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় থাকতে হবে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার। আজকের এই তথ্য সমৃদ্ধ লেখাটিতে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় কি কি রাখবেন এবং কি কি রাখবেন না তা নিয়ে আলোচনা করবো।
আরো দেখুন: সিলেটের হাসপাতাল-ক্লিনিকের নাম ও ফোন নাম্বার (ঠিকানা সহ)
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় যা রাখবেন
প্রেগনেন্সি পরীক্ষায় যখন ফলাফল পজেটিভ পাওয়া যাবে, তখন গর্ভধারণের দুই সপ্তাহের বেশি সময়কাল অতিবাহিত করবেন। এ সময় আপনি স্বাস্থ্যকর, পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া শুরু করুন এবং জাঙ্ক ফুড, তামাক বা অ্যালকোহল, ড্রাগস থেকে বিরত থাকতে হবে। গর্ভধারণের শুরু থেকেই খাদ্য তালিকায় অধিক পরিমাণে ফল ও সবজি রাখা প্রয়োজন। সুন্দর ও সুস্থ গর্ভধারণসহ সুস্থ স্বাভাবিক নবজাতক উপহার দিতে গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় যে সকল খাবার রাখা অতিব জরুরী, তা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:
গর্ভাবস্তায় খাদ্য তালিকার দৈনিক রুটিন
সকাল ৮:৩০ | ৩টি পাতলা রুটি, সবজি/ডাল, ১টি ডিম, ১ কাপ চা (চিনি ছাড়া) |
সকাল ১০:৩০ | হালকা নাস্তা, মৌসুমী ফল যেকোন ২টি বা টক জাতীয় ফল বেশি করে খাবেন (পেয়ারা, আমড়া, জাম্বুরা, কলা-ছোট হলে ১টি, বড় হলে অর্ধেক) |
দুপুর ১:৩০ | ভাত ২ কাপ, সবজি বা সালাদ ইচ্ছামত, মাছ বা মাংস ১ পিস এবং ১ কাপ ডাল |
বিকাল ৫:০০ | হালকা নাস্তা, অনেক সবজি দিয়ে নুডুলস, ছোলা, বাসায় বানানো ছানা পনির খেতে পারেন, মিষ্টি ছাড়া বিস্কুট খাবেন সবজির মধ্যে আলু ও মিষ্টি কুমড়া বাদ) |
রাত ৯:৩০ | দুপুরের মত খাবেন (সম্ভব হলে রাতের বেলায়ও রুটি খাবেন) |
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে | ১ গ্লাস দুঘ ও ২টি বিস্কুট খাবেন। |
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা বিস্তারিত
১। দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার
দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার বলতে আমরা যা জানি দই, দুধ ও শক্ত চীজ বা পনির ইত্যাদি। এসকল খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর অ্যাট ও ফোলিক অ্যাসিড থাকে। তাই এসব খাবার গর্ভবর্তী মায়ের খাদ্য তালিকায় রাখা জরুরী। এ সকল খাদ্যের মধ্যে টক দই খুবই উপকারী। যা সকল বয়সের মানুষ এটি খেতে পারেন। যাদের পেটের সমস্যা অথবা গ্যাসটিকের সমস্যা রয়েছে তারা দুধ খাওয়াতে সমস্যা হতে পারে।
২। ডিম ও হাঁস-মুরগির গোস্ত
গর্ভধারণের পর ডিম ও হাঁস-মুরগির মাংস পরিমাণমত খেতে হবে। ডিম ও হাঁস-মুরগির গোস্ত থেকে প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি২, বি৫, বি১২, ডি, ই ও কে পাওয়া যায়। তাছাড়াও ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্কের মতো উপাদান সমৃদ্ধ এ সকল খাবার। গর্ভধারণে এ সকল খাবার ভ্রুণের সুস্থতা নিশ্চিত করে থাকে।
৩। ফোলেট খাবার
যে সকল খাবারে ফোলিক অ্যাসিডের সম্পূরক রয়েছে এগুলোকে ফোলেট খাবার বলা হয়। গাঢ় সবুজ শাকসবজিকে সাধারণত ফোলিক অ্যাসিডের পরিমাণ একটু বেশিই থাকে। যেমন- পালংশাক, মটরশুটি, মুসুর ডাল, বাঁধাকপি, শতমূলী, লেবুরর্গীয় ফল, বীনস, আভোকাডো, ভেন্ডি বা ঢ্যাঁড়শ এবং ছোট বাঁধাকপি ইত্যাদি। এ সকল শাক-সবজি প্রচুর পরিমাণে ফোলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। তাই শিশুর স্নায়ূতন্ত্রের যথাযথ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং মেরুদন্ডের কোষ বিকশিত হয়।
৪। ফল
ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ থাকে সকল ফলে। গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্র ফল অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ খাবার। তরমুজ, পেয়ারা, কমলালেবু, মিষ্টি আলু, আভোকাডো, ডালিম, কলা, আপেল জাতীয় ফলগুলো গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় রাখতে পারেন।
৫। হোল গ্রেইন বা শস্যদানা
বার্লি, ডালিয়া, বাদামী চাল, পাস্তা, বাজরা, মিরেট, ওটামিল ইত্যাদি হোল গ্রেইন বা শস্যদানা তালিকাভুক্ত খাবার। এ সকল খাবারে বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট, ডায়েটযোগ্য ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি- কমপ্লেক্স, সেনেনিয়ামের মত খনিজ পাওয়া যায়। এতে শিশুর স্বাস্থ্য বৃদ্ধি এবং উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।
৬। বিভিন্ন বীজ ও বাদাম
একজন গর্ভবতী মা ও সুস্থ শিশুর জন্য বিভিন্ন প্রকার বীজ ও বাদামের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন, ফ্ল্যাভোনিয়েডস, প্রোটিন, খনিজ ও ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। তাই অবশ্যই গর্ভধারণের শুরুর দিকে এ সমস্থ খাদ্য আপনার খাবার তালিকায় রাখবেন।
৭। রঙিন সবজি
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় প্রচুর রঙিন সবজি থাকাটা খুবই প্রয়োজন। এতে শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে। মিষ্টিআলু, টমেটো, ক্যাপসিকাম, গাজর, পালংশাক, কুমড়ো, ব্রোকেলি, বাঁধাকপি, ভুট্টা, সজনে ডাটা ও বেগন গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
৮। মাংস
আমিষ জাতীয় খাদ্যের মধ্যে মাংস অন্যতম কারণ মাংসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, প্রোটিন, লোহ এবং জিঙ্ক থাকে। তবে চর্বি যুক্ত মাংস এড়িয়ে চলতে হবে, চর্বিযুক্ত মাংস খেলে আপনার উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই খাদ্য তালিকায় চর্বি ছাড়া মাংস রাখুন। এতে আপনার এবং সন্তান উভয়ের জন্য ভালো হবে। তাছাড়া আধাসিদ্ধ মাংস সম্পূর্ণ ভাবে বর্জন করতে হবে।
৯। মাছ
আমিষের চাহিদা পূরণে গর্ভকালীন সময়ে মাছ হতে পারে একটি সেরা উৎস। মাছে রয়েছে উচ্চ মানের প্রোটিন ও কম পরিমাণে ফ্যাট। তাছাড়া ভিটামিন বি২, ওমেগা-৩ ফ্যার্টি অ্যাসিড, ভিটামিন ডি, ই, পটাশিয়াম, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস জাতীয় প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ বিদ্যমান। তাই গর্ভবতী মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য মাছ একটি গুরুত্বপূণ খাদ্য উপাদান।
গর্ভাবস্থায় যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা প্রয়োজন
গর্ভাবস্থায় সকল প্রকার খাওয়াটা যেমন জরুরী তেমনি কিছু খাবার থেকে বিরত থাকাটাও উচিত। কারণ মা ও শিশুর জন্য কিছু খাবার ক্ষতির কারণও হতে পারে। গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার এড়িয়ে চলা উচিত নিম্নে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১। নরম চীজ বা পনির
সাধারণত যেসব নরম চীজ জাতীয় খাবার মূলত সেগুলো দুধ থেকে তৈরি হয় না। তাই এতে ব্যাকটেরিয়া থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, বিধায় চীজ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ কররে বিষক্রিয়া তৈরি হতে পারে। এজন্য গর্ভবতী মায়ের জন্য নরম চীজ জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে।
২। প্রক্রিয়াজাত করা খাবার
জুস, কেক, বিস্কুট, কনডেন্সড মিল্ক, মাইক্রোওয়েব প্রস্তুতকৃত খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেট করা খাবারগুলো মা এবং শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিসাধন করতে হবে। তাই এ সময় উচিত এ ধরণের কাবার গুলো পরিত্যাগ করা।
৩। সামুদ্রিক খাবার
সামুদিক মাছ বা খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণটুকু বেশিই থাকে। গর্ভাবস্থায় এসব খাবার গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, এলার্জি অথবা হৃদরোগের কারণ হতে পারে। তাই ভ্রুণের মস্তিষ্কের ক্ষতিসহ শিশুর বিকাশে বিলম্ব হওয়াটা স্বাভাবিক। এজন্য এ জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকুন।
৪। পেঁপে তারকারি বা সবজি
পেঁপে তরকারি বা সবজি গর্ভবতী মায়ের জন্য বিপদজনক একটি কারণ। কাঁচা ও আধা-পাকা পেঁপেতে ল্যাটেক্স সমৃদ্ধ হয়, যা খেলে গর্ভাশয়ের সংকোচন, অকাল প্রসব এবং গর্ভপাত হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিন অথবা এ খাবার থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
৫। আনারস ফল
আনারস ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ব্রোমেলাইন পদার্থ, যা সার্ভিক্সকে নরম করে তুলে। সার্ভিক্স নরম হয়ে গেলে অকাল প্রসব ঘটতে পারে।
৬। কাঁচা বা আধা সিদ্ধ গোস্ত
গর্ভবতী মায়ের জন্য কাঁচা বা আধাসিদ্ধ গোস্ত সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে। কারণ কাঁচা বা আধা সিদ্ধ গোস্তে ব্যাকটেরিয়া, লিষ্টারিয়া, সালমেনেলা, দ্বারা দূষিত হয়ে থাকে। এসব খাবার গ্রহণ করলে বিভিন্ন রকমের রোগ সৃষ্টির কারণ হতে পারে। যা গর্ভজাত শিশুর বিকাশকে আক্রান্ত করতে পারে।
৭। ক্যাফেইন
মূলত ক্যাফেইন একটি এলকালয়েড, যা কফির উদ্দীপক উপাদান। গর্ভাবস্থায় ক্যাফেইন জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে অনিদ্রা, স্নায়বিক দুর্বলতা সৃষ্টি হতে পারে। ক্যাফেইন পাকস্থলী হতে রক্তে প্যারাসিটামলের শোষণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই গর্ভকালীন সময়ে ক্যাফেইন জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়।
৮। জাঙ্ক ফুড
মূলত জাঙ্ক ফুড তৈলাক্ত ও শুষ্ক জাতীয় খাবার, যা কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়। এতে ব্যবহৃত চর্বি, লবণ, কার্বনেট ইত্যাদি দ্রব্যাদি স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক। তাই গর্ভকালীন সময়ে এসব খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত।
৯। চিনিযুক্ত খাবার
অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি বা চিনিযুক্ত খাবার খেলে অধিক মাত্রায় ওজন বেড়ে যেতে পারে। এমনকি গর্ভকালীন সময়ে ডায়বেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি বা চিনিযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকুন।
১০। মাদক
অ্যালকোহল জাতীয় যেকোন ধরণের পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এতে ভ্রুণের বিকাশে বিপদজনক ও জন্মগত ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তারুণ্যতা ধরে রাখতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া টিপস
১১। কামরাঙ্গা
কামরাঙ্গা এনজাইমে ভরপুর যা ভ্রুণের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়ের জন্য সবসময় কামরাঙ্গা এড়িয়ে চলা উচিৎ।
১২। অতিরিক্ত লবণ
লবণ একটি খনিজ পদার্থ। লবণ যেমন উপকারী উপাদান তেমনি কাঁচা লবণের অপকারিতাও কম নয়। লবণ অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি, রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ও স্নায়ুতন্ত্রের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই মাতৃত্বকালীন সময়ে অতিরিক্ত লবণ অথবা কাঁচা লবণ খাওয়া কোনভাবেই উচিত হবে না।
ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভের লক্ষণ
নিম্ললিখিত ইতিহাস থাকলে বুঝতে হবে যে মায়ের গর্ভ ঝুঁকিপূর্ণ এবং তাহলে মায়ের মৃত্যুও ঘটতে পারে
ক) বয়সঃ ২০ বৎসরের কম অথবা ৩৫ বৎসর বা তার বেশী।
খ) সন্তান জন্মসংখ্যাঃ শূণ্য অথবা পাঁচ বা তার বেশী।
গ) পূর্ববতী সন্তান জন্মের ব্যবধানঃ ২ বৎসরের কম সময়
ঘ) উচ্চতাঃ ১৪৫ সেন্টিমিটারের কম (৪ ফুট ১০ ইঞ্চি)
জেনে নিন – উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের আদর্শ ওজন কত হওয়া উচিত
ঙ) অতীত গর্ভকালীণ ইতিহাসঃ
- রক্তপাত (প্রসবপূর্ব অথবা প্রসবাত্তোর)।
- দীর্ঘায়িত প্রসব (২৪ ঘন্টার বেশী সময় ধরে প্রসব বেদনা)।
- বাধাপ্রাপ্ত প্রসব (যেখানে বিশেষ প্রসব সহযোগিতা বা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়েছে)।
- অতীতে যে কোন ধরনের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব করানো।
- জরায়ুর ভেতর গর্ভফুল থাকা এবং মৃত সন্তান প্রসব করা ।
- ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নবজাতক মারা যাওয়া।
- পা বা সমস্ত শরীর বেশী রকম ফোলা
- খিচুনী সহ বারবার অজ্ঞান হওয়া।
- অতীতে প্রসবোর ফিসটুলা রিপেয়ার (ভি.ভি.এফ বা আর.ভি.এফ)।
- জমজ সন্তান।
- ভ্রুণের অস্বাভাবিক অবস্থান।
গর্ভাবস্তায় করণীয় (সাধারণ উপদেশ)
প্রথম ৩ মাস ও শেষ ৩ মাস
- ঝুকিপূর্ণ ভ্রমণ করবেন না।
- ভারী কাজ করবেন না।
- স্বামীর সাথে সহবাস নিষেধ।
- প্রতিদিন রাত্রে ৮-১০ ঘন্টা ও দিনে ২-৩ ঘন্টা বিছানায় থেকে বিশ্রাম নিবেন।
- টিলা পোষাক পরবেন ও হাই হিল জুতা পরবেন না।
- বাম/ডান কাত হয়ে শোবেন।
- ধনুষ্টংকার এর টিকা নিবেন (গর্ভাবস্থায় ৪-৮ মাসের মধ্যে ১মাস পরপর ২টা)।
- বাচ্চার নড়াচড়া খেয়াল রাখতে হবে (১২ ঘন্টায় কমপক্ষে ১০ বার)।
- রক্তপাত বা সাদাস্রাব হলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানান।
- বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য নিয়মিত স্তন পরিষ্কার রাখতে হবে এবং পরীক্ষা করতে হবে।
- হাম, বসন্ত, যক্ষা, করোনা ইত্যাদি সংক্রামক রোগীর কাছে যাবেন না।
- নিয়মিত চেকআপ করাবেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলবেন (ডাক্তারের পরামর্শ কোন ঔষধ খাবেন না)।
- রক্তের গ্রুপ জেনে প্রয়োজনে রক্ত দিতে পারেন এমন লোক প্রস্তুত রাখবেন।
- যেকোনো জরুরী অবস্থার জন্য হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন।
- টিটেনাস (TT) টিকার ডোজ দেয়া থাকলে আর দিতে হেবে না।
নিম্নবর্ণিত যেকোন সমস্যার সম্মুখীন হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন
গর্ভকালীন সময়: জ্বর, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, পাতলা পায়খানা, চোখে ঝাপসা দেখা, অতিরিক্ত বমি, শরীর ও চোখ হলুদ (জন্ডিস) হওয়া, তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা, রক্তক্ষরণ, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, হাত বা মুখ হঠাৎ ফুলে যাওয়া, নিম্নাঙ্গে ইনফেকশন, চুলকানি বা জ্বালাপোড়া করা, বাচ্চার অস্বাভাবিক নড়াচড়া (১২ ঘন্টায় ১০ বারের কম অথবা ঘন্টায় ৪ বারের অধিক), জরায়ুতে চাপ অনুভব করা।
প্রসব পূর্ববতী: সারা শরীর পানি আসা, মাথা ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, খিচুনী হওয়া।
প্রসব পরবর্তী: অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া, খিচুনী হওয়া।
মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের স্বার্থে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকাটি অনুসরণ করে চলা উচিত বলে মনে করছি আমরা। আশা করছি আলোচনা আপনার মাতৃত্বকালীন সময়ে উপকারে আসবে। একটি সুস্থ শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত তাই মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হোন।