কিভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফ্রান্স যাবেন

কিভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফ্রান্স যাবেন?

কিভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফ্রান্স যাবেন? ইউরোপ শত শত বৎসরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যপূর্ণ একটি মহাদেশ। তন্মধ্যে ইউরোপ শুধুমাত্র ইতিহাসেই স্বয়ংসম্পন্ন নয় বর্তমান বিশ্বে অর্থনীতিতে উন্নত মহাদেশ হিসাবেও পরিচিত। বেশ কয়েকটি যুদ্ধের কারণে ইউরোপের এ বিপ্লব ঘটেছে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সবথেকে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

এরপর এ মহাদেশ আর কোন বড় ধরনের বাধার মুখোমুখি হয় নি। ইউরোপ বর্তমান স্থানে আসার মূল কারণ হচ্ছে তাদের আধুনিক প্রযুক্তি, শিল্প বিপ্লব, কৃষি বিপ্লব এ সকল কিছু এই ইউরোপ থেকেই শুরু হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় উন্নত বিশ্বের আরেক নাম ইউরোপ। আজকে আমরা এ মহাদেশের অন্যতম একটি উন্নত দেশ ফ্রান্স নিয়ে আলোচনা করব। সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন ফ্রান্স।

এই লেখা পড়লে আপনি আরো জানতে পারবেন – কিভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফ্রান্স যাবেন? কেবলমাত্র মধ্যপ্রাচ্য নয় আপনি এই লেখাটি পড়লে জানতে পারবেন- কিভাবে আরব আমিরাত থেকে ফ্রান্স যাবেন? কিভাবে বাহরাইন থেকে ফ্রান্স যাবেন? কিভাবে কাতার থেকে ফ্রান্স যাবেন? কিভাবে ওমান থেকে ফ্রান্স যাবেন? কিভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফ্রান্স যাবেন?

কে না চায় উন্নত জীবন যাপন করতে! তাই বিশ্বের সকল দেশের মতো মধ্যপ্রাচ্য থেকে মানুষ ফ্রান্স যেতে চায়। মানুষ সঠিক সকল কিছু জানার পূর্বে বেরিয়ে পড়ে অজানা এক স্বপ্ন পূরণে লক্ষ্যে। এতে অনেক হন সফল আর বেশিরভাগ মানুষ হন ক্ষতিগ্রস্ত।

আপনি যদি বৈধ কোন পরিকল্পনা করেন, তবে অবশ্যই সৌদিআরব থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পর নিয়ম অনুসারে বসবাস করতে পারবেন।

কিভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফ্রান্স যাবেন

কিভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফ্রান্স যাবেন ?

আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফ্রান্স যাওয়ার বৈধ ৩টি উপায় সম্পর্কে। তাছাড়াও যারা ইতিপূর্বে ফ্রান্সে আছেন অবৈধ ভাবে আপনারা বৈধ হবেন কিভাবে তা নিয়েও আলোচনা করব।

বৈধ ভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফ্রান্স হলে আপনি নিচের ৩ টি উপায়ে অনুসরণ করতে হবে।
১. টুরিস্ট ভিসা
২. ওয়ার্ক ভিসা ও
৩. স্টুডেন্ট ভিসা

১. টুরিস্ট ভিসাঃ যেকোন দেশে ভ্রমনের জন্য অনুমতি দিয়ে যে ভিসা প্রদান করা হয় তাকেই টুরিস্ট ভিসা বলে। যখনই টুরিস্ট ভিসার অনুমোদন পাবেন, ঐ দেশে ৯০ দিন অথবা ৩ মাস বৈধ ভাবে থাকতে পারবেন। এমনও হতে পারে আপনি টুরিস্ট ভিসা সরাসরি ফ্রান্সের নাও পেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি পোল্যান্ড যেতে পারেন, পরবর্তীতে পোল্যান্ড হতে ফ্রান্স যেতে পারবেন।

২. ওয়ার্ক ভিসাঃ কাজ করার উদ্দেশ্যে যে কোন দেশ যদি আপনাকে ভিসা প্রদান করে থাকে এ ভিসাকে ওয়ার্ক ভিসা বলে। ওয়ার্ক ভিসা বৈধভাবে কোন দেশে থাকার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তাদের দেশে কাজের জন্য অন্য দেশ হতে শ্রমিককে এই ওয়ার্ক ভিসার মাধ্যমে নিয়ে থাকে। আপনি এরকম কোন ওয়ার্ক ভিসা পেয়ে থাকলে বৈধ ভাবে সেই দেশে যেতে পারবেন। উল্লেখ্য যে, মধ্যপ্রাচ্য বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফ্রান্সে যাবার জন্য সরাসরি কোন প্রকার ওয়ার্ক ভিসা ফ্রান্স প্রদান করে না।

আপনি যেকোন ভাবে ইউরোপের যেকোন দেশে চাকরি পেলে সেই দেশে চলে যাবেন। তারপর সেই দেশ হতে ফ্রান্সে খুব সহজে যেতে পারবেন।

৩. স্টুডেন্ট ভিসাঃ পড়ালেখার জন্য যদি কোন দেশে যেতে আগ্রহী হোন তাহলে সে দেশ যদি ভিসা প্রদান করে থাকে, এটিকে বলে স্টুডেন্ট ভিসা। আরেকটু বুঝিয়ে বলি- আপনি উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে যদি ফ্রান্সের যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা বৃত্তি প্রাপ্তির মাধ্যমে পড়ালেখার সুযোগ পেয়ে যান। এই স্টুডেন্ট ভিসায় ফ্রান্সে আপনি বৈধ ভাবে যেতে পারবেন।

সতর্কতাঃ

বৈধভাবে ফ্রান্স যেতে, আপনাকে অবশ্যই কিছু সতর্ক থাকা প্রয়োজন। যেমন-

  • ১. উপরে উল্লেখিত ৩টি পদ্ধতি ব্যতীত অন্য কোন পদ্ধতিতে ফ্রান্স যাবার চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • ২. অন্য কাউকে টাকার বিনিময়ে কাজ করাবেন না।
  • ৩. কেবলমাত্র ফ্রান্সে যাবেন সেই চিন্তা মাথা থেকে এখনই সরান। আপনি যদি ফ্রান্স ছাড়া অন্য কোন দেশে সুযোগ পেয়ে যান তাহলে অবশ্যই সেখানে চলে যাবেন। ঐ দেশ থেকে পরবর্তীতে ফ্রান্স যেতে পারেন।

ফ্রান্স যাবার পরে কি করবেন?

উপরে যে ৩ টি বৈধ পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা আলোচনা করেছি, এর মধ্যে যে কোন একটির মাধ্যমে ফ্রান্স যেতে পারেন আপনার প্রাথমিক ধাপ শেষ। এবার আপনি কি করবেন?

টুরিস্ট ভিসা বা স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমে ফ্রান্স গেলে আপনি আপাতত ৯০ দিনে ভিসা পেলেন। এখন প্রথম কাজ হবে ফ্রান্সে একটি চাকরিতে যোগদান করা।

ফ্রান্সে স্থায়ী হতে চাকরি খুজবেন না দালাল ধরবেন?

অনেকে প্রচুর পরিমাণের টাকা খরচ করেন শুধুমাত্র দালাল চক্রকে দিয়ে স্থায়ী বসবাসের সুবিধা নিতে। তবে এতে লাভ তো হবেই না বরং ক্ষতির সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। এছাড়া দালালের মাধ্যমে কাজ করানো সম্পূর্ণ অবৈধ। এতে সময় এবং টাকা উভয়টি নষ্ট হয়।

তাই বলব আপনার দালালের পিছনে না দৌড়ে আপনি একটি চাকরি যোগাড় করুন। হোক সেটা ফুল টাইম অথবা পার্ট টাইম চাকরি। এতে আপনার সকল কাজ বৈধ পদ্ধতি সম্পন্ন হবে। টাকাও লাগবে না অথচ চাকরি করার কারণে মাসে মাসে আপনি আরও টাকা পাবে। তাছাড়া আপনার সকল কাগজপত্র আপনার পক্ষে থাকবে।

আরো দেখুনঃ আজকের সোনার দাম কত 2022

কিভাবে temporary residence card পাবেন?

আপনি ফ্রান্সে যাওয়ার পর যে বাসায় অবস্থান করবেন, সেই বাসার রেজিঃ নং এবং লিখিত একটি ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবে। এই ডকুমেন্টটি বাসার মালিকের নিকট হতে সংগ্রহ করতে হবে। তবে খেয়াল রাখার বিষয় হলো বাসাটি ভাড়া নেওয়ার তারিখ এবং ভাড়া সংক্রান্ত তথ্য বিস্তারিত যেন উল্লেখ থাকে।

ধরে নিলাম, আপনার একটি চাকরি আছে এবং থাকার জন্য একটি বাসাও আছে। এবার ঐ ডুকমেন্টটি নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ইমিগ্রেশন কার্যালয়ে যাবে এবং চাকরির Appointment Letter ও ডকুমেন্টটি দাখিল করবেন। ইন্টারন্যাশনাল ইমিগ্রেশন কার্যালয় একটি ট্যাক্য নং প্রদান করবে। এই নাম্বারটি আপনার ডিজিটাল পরিচিতি নম্বর হিসেবে কাজ করবে। খুব যত্ন সহকারে এটি সংগ্রহ করবেন। আপনার পরবর্তী সকল কার্যক্রম যেমন- আয়, ব্যয় ও ট্যাক্স এই নাম্বারের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।

আপনি এখন ট্যাক্স নাম্বারটিও সংগ্রহ করেছেন। এবার আপনি সকল ডকুমেন্ট নিয়ে ভিসা অফিসে যাবেন। সেখান থেকে Appointment নিতে হবে, এটি সরাসরি অনেক সম্ভব হয় না। এতে আপনি অনলাইনের মাধ্যমে Appointment নিতে হবে। এপয়েন্টমেন্ট নিতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। এর মধ্যে যদি আপনার টুরিষ্ট ভিসার মেয়াদ শেষের দিকে চলে যায়। তাহলে চাকরির Appointment দেখিয়ে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে হবে।

ইতিমধ্যে যদি আপনি ভিসা অফিসের এপয়েন্টমেন্টটি পেয়ে যান তাহলে নির্ধারিত সময়ে ভিসা অফিস সকল কাগজপত্র নিয়ে যাবেন এবং দাখিল করবেন। ভিসা অফিস আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্টের জন্য পরবর্তীতে আসার জন্য নির্দিষ্ট একটি তারিখ বলে দিবে। ফ্রান্সের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ডেট দিবে। কোন দেশে ৬মাস আবার কোন কোন দেশে ৭ থেকে ৮ মাসেরও বেশি সময় লাগতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ফ্রান্সের বাসার ঠিকানায় চিঠি দেবে অথবা অনলাইনে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।

এরপর Temporary Residence Card ভিসা অফিসের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন। এই কার্ডটি পাওয়ার পর আপনি অস্থায়ীভাবে নাগরিক হিসাবে গণ্য হবেন। কার্ডটি অর্জনের পর আপনি চাইলে বাংলাদেশসহ যেকোন দেশে যেতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ আজকের টাকার রেট (বিভিন্ন দেশের)

কিভাবে ফ্রান্সে permanent residence পাবেন ?

Temporary Residence Card পাবার পরপরই আপনি ফ্রান্সের একজন নাগরিক। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নিয়ম মোতাবেক Temporary Residence Card পাবার পর থেকে সেই দেশে ৫, ৭, ৮ বা ১০ বছর থাকতে হবে। তারপর আপনি Permanent Resident এর জন্য আবেদন করার জন্য উপযোগী হবেন। এই Permanent Resident অনুমোদন হওয়ার মাধ্যমে আপনি ফ্রান্সের একজন স্থায়ী নাগরিক হতে পারবেন।

কিভাবে আপনি ফ্রান্সে বৈধ হবেন?

অবৈধভাবে কোন দেশেই প্রবেশ করা উচিত নয়, এতে আপনার নিজের জীবন হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ তার সাথে নষ্ট হবে নিজের দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক মহলে। সে যাইহোক, ধরে নিলাম কোন না কোন উপায়ে আপনি ফ্রান্সে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। তাহলে আপনার কি উচিত অথবা কিভাবে বৈধ হবেন?

প্রথমত আপনাকে ফ্রান্সের শরণার্থী শিবিরে যেতে হবে এবং তাদেরকে আপনার সমস্যার কথাগুলো খুলে বলতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার সমস্যাটি সম্পর্কে এমন ভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে তারা মনে করে যে, আপনার সমস্যাটি খুবই গুরুতর। অথবা আপনি বাধ্য হয়ে তাদের শরণার্থ হয়েছেন। এটা হতে পারে রাজনৈতিক, সামাজিক, অমানবিক অথবা ধর্মীয় কোন বিষয়।

আপনার সমস্যাটি সম্পর্কে যখনই তারা অবগত হবে, প্রথম অবস্থায় আপনার ডকুমেন্টগুলো দেখবে এবং তারাই আপনার থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা এই ক্যাম্পেই করে দিবে। এভাবেই আপনাকে শরণার্থী শিবিরে অনেক দিন থাকতে হতে পারে। শরণার্থী শিবিরে থাকাকালীন অবস্থায় temporary residence এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। temporary residence কার্ডটি পাবার পর উপরে উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী ৫-১০ বছরের জন্য ফ্রান্সের অস্থায়ী সিটিজেন হতে পারবেন।

কিভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফ্রান্স যাবেন এই লেখাটি বুঝতে কোন সমস্যা হলে নিচে থাকা কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো আপনার উত্তর দেয়ার জন্য।

নিরাপদ ও শুভ হোক আপনার ফ্রান্স যাত্রা।

[প্রিয় পাঠক, প্রোবাংলা অনলাইনে প্রবাস বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাসে আপনার কমিউনিটির নানান খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন info@probangla.com এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]

About Juyel Ahmed Liton

সুপ্রিয় “প্রোবাংলা” কমিউনিটি, ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ ছিলো এবং হয়তো সেই আকর্ষণটা অন্য দশ জনের থেকে একটু বেশি। ওয়েবসাইট, টাইপিং, আর্টিকেল লেখাসহ টেকনোলজি সবই আমার প্রিয়। জীবনে টেকনোলজি আমাকে যতটা ইম্প্রেস করেছে ততোটা অন্যকিছু কখনো করতে পারেনি। আর এই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ থেকেই লেখালেখির শুরু.....

One comment

  1. all good i like farns

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *