প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। প্রতিটা প্রয়োজনে কোনো না কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছেই। হোক সেটা চিকিৎসা ক্ষেত্রে কিংবা বিনোদন জগতে। জীবনকে সহজ করে তোলার জন্য প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন যেন থেমে নেই। প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো ডিভাইস সামনে আসছে। যেগুলো মানুষকে উপকার করার পাশাপাশি বিস্মিত করে তুলছে। আজ এমনই তিনটি গেজেট নিয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। এগুলো জানতে probangla-র সঙ্গে থাকুন।
১. Wuanap
কেমন খুব কম মানুষই আছে যারা সাঁতার কাটতে পছন্দ করেন না। আমরা বেশিরভাগ মানুষই সাঁতার কাটতে খুব পছন্দ করি। এর জন্য আমরা সুইমিং পুল কিংবা পুকুরে যাই। আমরা যারা সাঁতার জানি তাদের জন্য তো সাঁতার কাটা কোনো সমস্যার বিষয় নয়। কিন্তু যারা এখনো সাঁতার শিখতে পারেননি, তবে মনের মাঝে আছে সাঁতার শেখা অদম্য স্পৃহা। তাদেরকে হয়তো দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তবে এখানে ভাববার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। সাঁতার শিখতে গিয়ে অনেক সময় আমরা প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে যাই। হাত পা অবশ হয়ে যেতে শুরু করে। তখন আমরা ডুবতে থাকি। যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের এই সম্ভাবনা অনেক বেশি। তারা খুব সহজে ক্লান্ত হয়ে যায়।
এছাড়া আপনি যদি সমুদ্রে অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া সাঁতার কাটতে থাকেন, তখন ক্লান্ত হয়ে ডুবে যেতে পারেন।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য বাজারে এসেছে Wuanap এটা গলায় বেল্টের মতো পরিধান করতে হবে। এটাতে আছে উন্নত প্রযুক্তির একটি সেন্সর। এই সেন্সর আপনার শারীরিক অবস্থা প্রতি মুহূর্ত মনিটর করতে থাকে। আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি, হার্টবিট, পানিতে আপনার অবস্থান।
আপনি যদি পানিতে ডুব দেন তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর নোটিফিকেশন হিসেবে ভাইব্রেট করবে। আপনি যদি সুস্থ থাকেন এবং ক্লান্ত না হন তাহলে তখন আপনার গলায় থাকা ওই বেল্টের একটি বোতামে চাপ দিতে হবে। তাহলে ভাইব্রেট করা বন্ধ হয়ে যাবে। যদি আপনি সেখানে চাপ না দেন তাহলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বেল্ট বাতাসে ভর্তি হতে থাকবে। এবং আপনাকে পানির উপরে ভাসিয়ে তুলবে। এটার মাধ্যমে আপনি অন্তত মাথা ভাসিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারবেন।
প্রবাল দ্বীপে স্কুবা ডাইভারদের অনেক গভীরে যেতে হয়। পানির অনেক গভীরে যদি হঠাৎ অক্সিজেন শেষ হয়ে যায় তাহলে পানির উপরে ওঠার জন্য অনেক হাত পা নাড়তে হয়। এত গভীরে থাকার ফলে এবং কাঁধে ভারী সিলিন্ডার থাকার তা অনেক কষ্টসাধ্য। কিন্তু এই ডিভাইস থাকলে আপনি খুব সহজেই পানির উপর ভাসতে পারবেন।
এছাড়া এর মধ্যে এমন একটি বাটন আছে যেটাই প্রেস করলে সাথে সাথে এটাতে বাতাস ভর্তি হওয়া শুরু হয়ে যায় এবং এটা লাইফ জ্যাকেটের মতো আপনাকে ভাসিয়ে রাখবে।
২. Travel Mug Z
যারা ড্রাইভিং করেন নিয়মিত তারা নিশ্চয়ই জানেন গাড়ি চালাতে চালাতে একসময় ক্লান্তি ভর করে। বিশেষ করে লং ড্রাইভে গেলে তো কথাই নেই। তখন ক্লান্তি দূর করার জন্য ক্যাফেইন যুক্ত খাবার যেমন চা, কফি পান করার খুবই প্রয়োজন বোধ হয়। কিন্তু গাড়ি ড্রাইভিং করা অবস্থায় সেগুলো পান করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা হঠাৎ ব্রেক করতে হলে কিংবা রাস্তা উঁচু-নিচু থাকার ফলে গরম চা বা কফি আপনার শরীরে পড়তে পারে। যাতে আরো একটি নতুন দুর্ঘটনার জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়া চা বা কফির মগ পাশে রেখে দিলে সেটা গাড়ির ঝাঁকুনিতে পড়ে যেতে পারে। ড্রাইভারদের এই সমস্যা নিরসনের জন্য এসেছে এই Travel Mug Z এটা এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, এটা থেকে কোনো তরল বাইরে ছিটকে বের হবে না। এটায় ইউএসবি পোর্ট আছে। যার মাধ্যমে এটাকে চার্জ করতে পারেন। এটা খুবই আধুনিক প্রযুক্তির। এটার মধ্যে আছে ওয়ারলেস চার্জিং প্রযুক্তি। সিটের পাশে ওয়ারলেস চার্জারের ওপর এটা বসিয়ে রাখলে অটোমেটিক এটা চার্জ হবে।
এমনকি এটা স্মার্টফোন দ্বারাও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। স্মার্টফোনের মাধ্যমে আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী কফির তাপমাত্রা নির্ধারণ করে দিতে পারেন। এই মগ আপনার নিধারণ করা তাপমাত্রাতেই কফি রেখে দেবে। এতে করে গরম কফি মুখে দেওয়ায় মুখ পোড়ার আশঙ্কা থাকবে না।
মোবাইল এর মাধ্যমে যদি আপনি এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না চান, তাহলে এর মাঝে আছে একটি টাচস্ক্রিন। সেটা দিয়েও আপনি এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
আরো পড়ুন : কাজে আসার মতো তিনটি গেজেট
৩. Infinite Batteries
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দেওয়াল ঘড়ি বা বাচ্চাদের বিভিন্ন খেলনার ব্যবহার হয়ে থাকে। এগুলো প্রতিনিয়ত ব্যবহারে ফলে ব্যাটারির চার্জ এক সময় ফুরিয়ে যায়। তখন আবার নতুন ব্যাটারি কিনতে হয়। আমাদের প্রয়োজনের ব্যাপারটা ভিন্ন, কিন্তু বাচ্চাদের খেলনার ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে গেলে খুব তাড়াতাড়ি ব্যাটারি কিনে দিতে হয়। নচেৎ বাচ্চারা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। ছোট ছোট রিমোট কন্ট্রোল গাড়িতেও তিন থেকে চারটি ব্যাটারি দরকার পড়ে। এছাড়া রিমোটে তো ব্যাটারি লাগেই।
ঘন ঘন ব্যাটারি কেনার হাত থেকে রেহাই দিতে বাজারে এসেছে Infinite Batteries এটা রিচার্জেবল পেন্সিল ব্যাটারি। চার্জ ফুরিয়ে গেলে আর কোনো চিন্তা নয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই চার্জ করে আবার ব্যবহার করতে পারবেন।
এমন ধরনের ব্যাটারি অবশ্য বাজারে অনেক আগে থেকেই আছে। কিন্তু এটার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। এই ধরনের ব্যাটারিগুলো চার্জ দেওয়ার জন্য আলাদা এক ধরনের এডাপ্টার বা চার্জারের প্রয়োজন পড়তো। কিন্তু এই infinite Batteries চার্জ করতে গেলে আলাদা কোনো চার্জার কেনার প্রয়োজন নেই। আপনার মোবাইলের চার্জার দিয়ে এটাকে সরাসরি চার্জ করতে পারবেন। এটা চার্জ হতেও বেশি একটা সময় নেয় না।