আন্তর্জাতিক নারী দিবস (International Women’s Day- IWD) সমাজে নারীদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে প্রতিবছর ৮ মার্চ বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়৷ মানব সভ্যতার বিকাশে নারীদের অবদান কোন অংশেই কম নয়। বিশ্বে মানুষের প্রতিটি অর্জনের পেছনেই নারীর অনস্বীকার্য ভূমিকা রয়েছে। তবে বহুকাল পূর্ব থেকেই নারীদের মর্যাদা নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবহেলা করা হয়।
শ্রমিক আন্দোলন থেকেনারী দিবসের ধারনা উদ্ভূত হয়ে পরবর্তীতে জাতিসংঘের স্বীকৃত পেয়ে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী উদযাপিত দিনটি উদযাপিত হয়। ২০২৪ সালে ১১৩ তম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হবে। তবে শতবর্ষের বেশি সময় ধরে পালিত এই দিবস সম্পর্কে অনেকেরই ভিন্নমত ও ভূল ধারনা রয়েছে। নারীদের মর্যাদার দেওয়ার নামে অনেকেই তাদের ভোগ্যপণ্য বানাতে চাচ্ছে। তাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস, তাৎপর্য, নারী দিবসের প্রতীক, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, অর্জন, উদযাপন ও এই দিবস সম্পর্কে ভূল ধারনার বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো এই লেখাতে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস | আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য
১৯১৪ সাল থেকে এ দিবসটি বিভিন্ন দেশজুড়ে পালিত হলেও জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে দিনটিকে নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। নারী দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হলো নারী ও পুরুষের সমঅধিকার আদায়। বিশ্বজুড়েই আজও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত, যদিও নারীদের ছাড়া পরিকল্পিত সমাজ কল্পনাই করা যায় না। নারী দিবসের মাধ্যমে জেন্ডার সমতা, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা, নারী-পুরুষের একতা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ ইত্যাদির উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাঁদের কাজের প্রশংসা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে মহিলাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য অর্জনের উৎসব হিসেবেই পালন করা হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস
নারী দিবস সারা বিশ্বজুড়ে প্রায় এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে পালিত হচ্ছে। নারী ক্ষমতায়ন ও নারীদের সম্মান ও সম অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস জড়িত আছে বিশ্ব নারী দিবসটি উদযাপনের পেছনে। ইসলামি খেলাফত কালে নারীদের বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হতো। রাজা-মহারাজার আমল থেকেই নানান নির্যাতন, অবিচার, অত্যাচার ও বেআইনি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো নারীদের প্রতি।
ধারাবাহিক এই কর্মকান্ডে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা এবং নারীদের কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছিলেন। সেই মিছিলে সরকারি আইনি বাহিনীর দমন-পীড়ন চলতে থাকে। তাও দীর্ঘদিন এই বৈষম্য চলতে থাকে। ১৯০৮ সালে কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, বেতন বৃদ্ধি এবং ভোটাধিকারের দাবিতে নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছিল প্রায় ১৫ হাজার নারী।
মূলত সেই আন্দোলনটিতেই আনুষ্ঠানিকভাবে নারী দিবস পালনের বীজ লুকায়িত ছিল। বৃহৎ এই আন্দোলনের প্রায় ১ বছর পর আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি সর্বপ্রথম জাতীয় নারী দিবস ঘোষণা করেছিল। জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী, রাজনীতিবিদ ও কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম স্থপতি ক্লারা জেটকিনের হাত ধরেই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণা প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের “Social Democrats” নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়েছিল।
পরবর্তীতে, ১৯১০ সাকে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি যোগদান করেছিলেন। সম্মেলন চলাকালীন ক্লারা জেটকিন সকলের উদ্দেশ্যে, প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। উপস্থিত সকলেই তার এই প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করেন। তারপর, ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে ৮মার্চ তারিখটি পালিত হবে বলে ঘোষনা করা হয়। নারী অধিকারে নতুন মাত্রা যুক্ত করা এই দিবসটি পালনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা এগিয়ে আসেন।
১৯১১ সালে অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়েছিল। ১৯১৪ সাল থেকে আরও বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস লাভের পূর্ব থেকেই ১৯৭১ সালে নারী দিবস পালন শুরু হয়েছিল। সর্বশেষ এতে বিশেষ মাত্রা যুক্ত হয়েছিল ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে জাতিসংঘ থেকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করার মাধ্যমে। বর্তমানে সারা বিশ্বের সকল দেশে যথাযথ মর্যাদায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। ২০১১ সালে এই দিবসটির শতবর্ষ পূরন হয়েছে।
কেন ৮ মার্চকেই বিশ্ব নারী দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েঁঁছে?
ক্লারা জেটকিন যখন আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণাটি উত্থাপন করেছিলেন, তখন প্রাথমিকভাবে কোন তারিখ নির্ধারিত করা হয়নি। BBC -এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের আগ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে নারী দিবসের তারিখটি নির্দিষ্ট করা যায়নি। ১৯১৭ সালে রুশ নারীরা ‘রুটি এবং শান্তি’-এর দাবিতে তৎকালীন রাশিয়ার সম্রাটের বিরুদ্ধে ধর্মঘট শুরু করেন। ধর্মঘটের ৪ দিনের মাথায় সেই সম্রাট গদি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলো এবং নতুন ও অস্থায়ী সরকার তখন নারীদের আনুষ্ঠানিক ভোটাধিকার দিয়েছিলেন। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নারীদের ধর্মঘট শুরুর এই দিনটি ছিলো ৮ মার্চ। তাই পরবর্তীতে ৮ মার্চকেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্ব নারী দিবসের প্রতীক
International Women’s Day -এর ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতীক হলো বেগুনি, সবুজ এবং সাদা রঙ বিশিষ্ট। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ওয়েবসাইট অনুসারে, রঙ দিয়ে ন্যায়বিচার এবং মর্যাদাকে বোঝানো হয়। সবুজ রঙ হলো আশার প্রতীক এবং সাদা রঙ বিশুদ্ধতার প্রতীক। কিন্তু এই ধারণা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কারন ১৯০৮ সালে যুক্তরাজ্যের মহিলা সামাজিক ও রাজনৈতিক ইউনিয়ন (Women’s Social and Political Union) থেকে উদ্ভূত হয়ে এই রঙগুলোকেই নির্দিষ্ট করেছিল।
এই রংগুলো যেভাবেই নির্ধারিত হোক না কেন, এগুলো দৃঢ়ভাবে নারীর ক্ষমতায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট। দীর্ঘদিন যাবত নারীদের আন্দোলন সংগ্রাম শেষে বেগুনি রং এখন নারীদের প্রতিবাদের এক অনন্য প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই বেগুনি রঙ দিয়ে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিকে বোঝানো হয়, আর নারীরা হবে ঠিক অতিবেগুনি রশ্মির মতো শক্তিশালী। ২০১৮ সাল থেকে বেগুনি রঙ নারী দিবসের থিম কালার হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
নারী দিবসের প্রতিপাদ্য | নারী দিবসের স্লোগান
১৯৯৬ সাল থেকে, এই আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রতিবছর একটি থিম নিয়ে উদযাপিত হচ্ছে। এর সর্বপ্রথম থিম ছিল “অতীত উদযাপন, ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা”। সর্বশেষ ২০২৩ সালে এর থিম ছিল, “ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন।” প্রতিবছর নারীদেরকে উৎসাহিত করার জন্যই ভিন্ন ভিন্ন থিম নিয়ে দিনটি পালিত হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
পৃথিবী বিখ্যাত একটি উক্তি রয়েছে যে-
“বিশ্বাস যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,,,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”
বস্তুত নারীরা হলো পৃথিবীতে মানবসভ্যতার অন্যতম পরাশক্তি এবং পৃথিবীর উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারীদের অবদান কোনো অংশেই কম নয়। সেই মহান নারীদের লিঙ্গ সমতার বার্তা প্রদান করা, লিঙ্গ বৈষম্য রোধ করার জন্য আন্তর্জাতিক নারী দিবসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই দিবসে নারীদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অর্জনকে স্মরণ করানোর জন্য এবং তাঁদের উৎসাহ প্রদান করার জন্য প্রতিবছর নারী দিবস পালন করা একটি বিশেষ অংশ।
বর্তমানে নারীরা প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কিন্তু তারা অধিকার, ক্ষমতা, সম্মান, স্বাস্থ্য উন্নয়ন ইত্যাদি নানা বিষয়ে অনেক বেশি পিছিয়ে পড়ছে। মানসিক সমস্যার প্রাদুর্ভাব পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে বেশি৷ কিন্তু নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তেমনভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
World Health Organisation (WHO) -সংস্থার মতে, প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন নারী কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। তারা হতাশা এবং উদ্বেগজনিত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় বেশি ভুগে থাকেন। এছাড়াও নারীদের গর্ভকালীন বিষন্নতা, মাসিকের আগে ও পরে ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হওয়া, মেনোপজের আগে ও পরে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দেওয়া ইত্যাদি তাদের একান্ত নিজস্ব মানসিক সমস্যা। এমন আরও বহু প্রসঙ্গে সমাজের অধিকাংশরাই তাদের গুরুত্ব দেওয়ার বিপরীতে এড়িয়ে যায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারীর সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যতীত সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
দৈনন্দিন পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোতে নারীর অর্জন অনেক। তবে তা পরিপূর্ণ নয় এবং তা যথেষ্টও বলা যায় না। তাই, নারীর বিরুদ্ধে চলমান বৈষম্য ও সহিংসতা দূর করে এবং সমাজের সব মানুষের মাঝে নিয়মতান্ত্রিক সুযোগ-সুবিধা অর্পন করলে সমাজ আরও এগিয়ে যাবে। তাই নারী সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করতেই প্রতিবছর ৮মার্চ এই দিবস পালন করা হয়। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাঁদের কাজের প্রশংসা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করে নারী দিবসকে মহিলাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য অর্জনের উৎসব হিসেবেই পালন করা হয়। এই দিনটি সমাজের সর্বস্তরের নারীদের সাফল্য ও জয়গান গাওয়ার দিন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অর্জন
১৯০০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নারীবাদী আন্দোলনের ধারাটিকে মোট ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বিশ্ব নারী দিবস সহ সামগ্রিক নারীবাদী আন্দোলনের অর্জন ও পটভূমিভিত্তিক সময়কাল হলো:
- প্রথম ধারা- First Wave Feminism: ১৯০০-১৯৫৯ সাল পর্যন্ত। এই সময়ে মূলত সম্পত্তি ও রাজনীতিতে নারীর সমান অধিকারের দাবি তুলে ধরা হয়েছিলো।
- দ্বিতীয় ধারা- Second Wave Feminism: ১৯৬০ সাল থেকে শুরু। এই সময়ে লিঙ্গ বৈষম্য, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, আইনি বৈষম্য দূরীকরণ এবং নিজের শরীর, যৌনতা ও প্রজনন প্রক্রিয়ায় নারীর মতাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি তুলে ধরা হয়েছিলো।
- তৃতীয় ধারা- Third Wave Feminism: ১৯৯০-২০০০ সাল পর্যন্ত। এই সময়ে নারীবাদী আন্দোলনে নারীর ব্যক্তিসত্তার প্রসঙ্গ উঠে আসে।
- চতুর্থ ধারা- Fourth Wave Feminism: ২০০০ সালের পর থেকে শুরু হয়েছে। লিঙ্গভিত্তিক হয়রানি এবং নারী-বিদ্বেষ বিরোধী জনমত গঠনের প্রচেষ্টায় এই আন্দোলন চলছে এখনো।
এই চারটি ধারার ক্রমবিকাশের মাধ্যমে নারীদেরকে তাদের জীবন ও জীবিকার নানা ক্ষেত্রে নিজের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা আদায়ে লড়াই করতে হয়েছে, যা এখনো চলমান। তাই আমাদের সকলের আন্তরিকতার মাধ্যমে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল পরিসরে নারীদের পরিপূর্ণভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার দিয়ে সামগ্রিক উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন
আন্তর্জাতিক নারী দিবস বিশ্বব্যাপী নারীদের মর্যাদা দান ও ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে পালন করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্থানে এই দিনে সভা, সেমিনার, র্যালি ইত্যাদির মাধ্যমে নারীদের উৎসাহিত করা হয়। বিশ্বের বহু দেশে এই দিনটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবেও নির্ধারিত থাকে। আলবেনিয়া, মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া এবং উজবেকিস্তানের মতো কিছু দেশে, নারী দিবসকে মা দিবসের সাথেও তুলনা করা হয়। চীনে, মহিলা কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে অর্ধ-দিবসের ছুটি দেওয়া হয় এই দিনে।
এই দিনেই, ১৯১৭ সালে ধর্মঘটের ফলস্বরূপ রাশিয়ান নারীরা প্রথম ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছিল। তাই রাশিয়াতে এটি একটি ঐতিহাসিক দিবস হিসেবে পালিত হয়।
নারী দিবস সম্পর্কে নারীবাদীদের ভূল ধারনা
নারী দিবসের নামান্তরে নারীবাদী বা ফেমিনিস্টরা নারীদেরকে মর্যাদা দানের কথা বলে মূলত তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ‘ইজ্জত/ লজ্জা’ উন্মুক্ত করে দিতে চাইছে। নারীদের মর্যাদা মানে শুধু পুরুষের মতো খোলামেলা ঘুরে বেড়ানোতেই নয়। বরং নারী হলো মায়ের জাতি। একজন নারী একজন পূরুষের কাছে সবচেয়ে মর্যাদার সম্পদ।
একটি শিয়াল যেমন চায়, মুরগী গুলো খাচার বাইরে উন্মুক্তভাবে থাকুক৷ তেমনি সমাজের নোংরা মানসিকতার নারীবাদীরা চায়, মেয়েরাও উন্মুক্তভাবে পুরুষের মতো চলাফেরা করুক। এতে শিয়ালের যেমন লাভ, তেমনি নারীদেরকে মূল্যহীন করতে চাওয়া লোকেদেরও লাভ। তাই সকল নারীদের উচিত নিজের সঠিক মর্যাদা অনুধাবন করা।
শেষকথা
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমাজের সব মানুষ যেন স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে বিকশিত হতে পারে, এমন পরিবেশ নিশ্চিত করাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল লক্ষ্য। তাই ইসলামিক দিকনির্দেশনা মেনে নারীদের সামগ্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই সমাজের টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব হবে।