ইংরেজি নববর্ষ ২০২৩-Happy New Year 2023: প্রথমেই বলে রাখি, আমরা যেটাকে ইংরেজি নববর্ষ বলি এটা আদতে ইংরেজি নববর্ষ নয়। এটা হচ্ছে খ্রিস্টীয় নববর্ষ। যিশু অর্থাৎ ঈসা (আ.) এর জন্মবর্ষকে কেন্দ্র করে এই ক্যালেন্ডারের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে এটা প্রথমে এমন ছিল না। ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি প্রাচীন জুলিয়ান ক্যালেন্ডারটির সংস্কার করেন। উনার এই সংস্কারের ফলে যে নতুন ক্যালেন্ডার তৈরি হয় তাকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার বলে। যেহেতু এটা যিশুখ্রিস্টের জন্মের সাথে সম্পৃক্ত তাই এটাকে খ্রিস্টাব্দ বলা হয়।
আমাদের দেশে খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডার এর আগমন:- নবীজি (স.) যেদিন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে আসলেন, সেই দিন থেকে হিজরির প্রথম সন হিসেবে ধরা হয়। এটা অবশ্য ওমর (রা.) এর কল্যাণে হয়েছে।
২০১ খ্রিষ্টাব্দে ইখতিয়ারুদ্দীন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী বঙ্গ দখলের মাধ্যমে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং তখন থেকেই রাষ্ট্রীয় কাজকর্মে হিজরি সন বাংলায় প্রচলিত হয়।
সুলতানী আমলে হোক, বা মুঘল আমল; রাষ্ট্রীয় কাজে, লেনদেনে, সর্বস্থলে হিজরি সন ব্যবহৃত হতো। তবে মুঘল সম্রাট আকবর ঋতুর সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি সৌর সনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। তখন থেকে রাজস্ব বা ফসলি সনের প্রবর্তন করা হয়।
হিজরি সন চাঁদের হিসেবে হয় বিধায় ঋতুর সাথে এর কোনো মিল থাকে না। তাই ফসলের খাজনা আদায় অনেক ঝামেলা সৃষ্টি হতো। সম্রাট আকবরের নির্দেশে এই সন প্রবর্তিত হয় এবং এটা এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, এটাকে বাংলার মানুষ বাংলা সন হিসেবে গ্রহণ করে।
আরো পড়ুন: হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০২৪ | Happy New Year 2024
কিন্তু ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন সংঘটিত পলাশীর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলায় পরাধীনতা নেমে আসে এবং খ্রিস্টীয় সন প্রতিষ্ঠা হতে শুরু করে। যেহেতু এটা ইংরেজদের মাধ্যমে এসেছে তাই এটাকে ইংরেজি সন বলা হয়।
যদিও গ্রাম-বাংলার কৃষকসমাজ খ্রিস্টীয় সনকে গ্রহণ করেনি। তারা বঙ্গীয় সনকেই আঁকড়ে ধরে রেখেছে। যদিও কৃষি কাজে বা লেনদেনের ক্ষেত্রে হিজরি সনের প্রয়োগ নেই। কিন্তু মুসলিমদের ধর্মীয় উপাসনা হিজরি সনকে কেন্দ্র করেই চলছে।
অন্যান্য দেশের নববর্ষ পালন:- ইরানে নববর্ষকে বলে নওরোজ। তাদের আলাদা একটি ক্যালেন্ডার রয়েছে। কারণ অবশ্য খুব ধুমধাম করে পালন করে। বিশ্বের মোটামুটি সব দেশেই বহু অর্থ অপচয় করে এই উৎসব পালন হয়ে থাকে।
আমাদের দেশেও বঙ্গীয় নববর্ষ অনেক ধুমধাম করে পালন করা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে বাংলা নববর্ষ গ্রাম এবং শহরে উভয় জায়গাতেই পালন হয়। শহরে মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে; গ্রামে হালখাতার মাধ্যমে।
আমাদের গ্রামবাংলায় বঙ্গীয় নববর্ষ যতটা উৎসব মুখর পরিবেশে পালন করা হয়, খ্রিস্টীয় নববর্ষ সেখানে পালন হয় না বললেই চলে। তবে কিছু উপজাতি আছে যারা খ্রিস্টীয় নববর্ষ পালন করে।
আমাদের দেশের শহর অঞ্চলে বিশেষ করে ঢাকাতে ইংরেজি নববর্ষ পালন করা হয়। এদিন খুব আনন্দ-ফুর্তি করা হয়, তবে সেটা শুধুমাত্র ধনীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তারা ৩১শে ডিসেম্বর রাত বারোটা অবধি অপেক্ষা করে। এরপর বারোটা ১ বাজার সাথে সাথে তাদের পৈশাচিক উল্লাস শুরু হয়ে যায়।
লক্ষ লক্ষ টাকার আতশবাজি-পটকা ফুটিয়ে তারা তাদের আনন্দ জাহির করে। কিন্তু তাদেরই নিচের তলায় থাকা গরিব-দুঃখী মানুষেরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় যখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, তখনই তাদের পটকার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। গতবছর তো একটি শিশু ভয়ংকর শব্দ শুনে হার্ট অ্যাটাক করে মারাও গিয়েছিল। কিন্তু এক পয়সাওয়ালা বলে, ‘যখন পটকা ফোটানো হচ্ছিল তখন কেন বাচ্চার কানে তুলা দিয়ে রাখা হয়নি?’
এই রাত্রটিকে থার্টি ফাস্ট নাইট বলা হয়। এত আনন্দের মুহূর্ত মদ ছাড়া কি চলে? লক্ষ লক্ষ টাকার মদ দিয়ে গলা ভেজায় পয়সাওয়ালারা। আর ওদিকে দুধের শিশু দুধ না পেয়ে তৃষ্ণানায় কাতরাতে থাকে। অর্থ অপচয় ও ব্যভিচারের মেলা জমে বিভিন্ন মধ্যশালা ও হোটেলে। এগুলোকে দেখেও না থাকার ভান করে থাকে আমাদের মিডিয়া। বরঞ্চ আমাদের মিডিয়া এগুলোকে আরো উৎসাহিত করে।
কেমন হওয়া উচিত নববর্ষ?
ইংরেজি নববর্ষ ২০২৩-Happy New Year 2023: একটি নতুন বছরে পদার্পণ করা মানে একটি বছর পার করে আসা। গত বছরের ভুলগুলো যেন আগামীতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। দেশকে ভালোবেসে সততার সাথে কাজ করে যেতে হবে আমাদের। প্রতিটা মুহূর্তকে দামি মনে করা। পৈশাচিক আনন্দ বাদ দিয়ে দরিদ্রদেরকে কীভাবে আনন্দ দেওয়া যায় সেটার চিন্তা করা।
এবার আমাদের কঠোরভাবে প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আগত বছরটাকে আমরা গত বছর থেকেও সুন্দর করে সাজাবো।