ফুলের দোকানের ব্যবসা করার নিয়ম

লাভজনকভাবে ফুলের দোকানের ব্যবসা করার গাইডলাইন

ফুল এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা আমরা প্রায় সকলেই পছন্দ করি। আমাদের পারিপার্শ্বিক নানান অনুষ্ঠান-আয়োজনে, গৃহ সাজসজ্জায়, কিংবা কাউকে উপহার দিতে আমরা ফুল ব্যবহার করে থাকি। আর বিভিন্ন ফুলের দোকানের ব্যবসা থেকে আমরা সেই ফুল সংগ্রহ করে থাকি।

বর্তমান সময়ে ফুলের ব্যবসা অন্যতম লাভজনক একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। আমাদের বেকারত্ব ঘুচাতে, অল্প পুজি বিনিয়োগ করে এই ব্যবসাটি শুরু করা যায়। তাই উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য এই আর্টিকেলে লাভজনকভাবে ফুলের দোকানের ব্যবসা করার গাইডলাইন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ফুলের দোকানের বাজার সম্ভাবনা

ফুলের দোকান হলো এমন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যেখানে সারা বছরব্যাপী কমবেশি কাস্টমারের চাহিদা থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন বিয়ে, নানান সামাজিক আয়োজন-অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক বিভিন্ন সভায় এবং বিভিন্ন দিবসে ফুলের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। 

তাছাড়া ঘর সাজসজ্জা জন্য অনেক সৌখিন মানুষ ফুল কিনে থাকে। প্রিয়জনের মন জয় করার জন্যও ফুল কিনে থাকে অনেকেই। তাই বলা যায় সারা বছরব্যাপী ফুলের দোকানের বাজার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবসার জন্য ভালো ও উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হবে। 

আরও পড়ুনঃ সেরা ৬টি ২ লাখ টাকায় লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া

ফুলের ব্যবসার জন্য স্থান নির্বাচন

ফুলের দোকানের ব্যবসা করার জন্য সবচেয়ে বেশি যে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে, সেটি হল ব্যবসার উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা। কারণ না ভেবেচিন্তে যেকোন স্থানে এ ধরনের ব্যবসা দিলে, ব্যবসায় লস হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

কারণ সকল এলাকার মানুষের জীবনমান বা দৈনন্দিন চাহিদা একইরকম থাকে না। যেহেতু ফুল একটি সৌখিন উপাদান, তাই যেখানে সৌখিনতা প্রকাশ করা হয় সেখানেই এই ব্যবসাটি সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। সাধারণত শহরে ফুলের ব্যবসা ভালো চলে।

এক্ষেত্রে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের পাশে, ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত স্থানে, বাজারের কেন্দ্রে, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্র ইত্যাদি স্থানে ফুলের দোকান দেওয়া যায়। কারণ এসকল স্থানে ফুলের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং সব সময় এ সকল স্থানগুলোতে অনেক লোকের সমাগম হয়।

ব্যবসা শুরু করলে ফুলের দোকানের সামনে দোকানের নাম দিয়ে একটি সাইনবোর্ড দিতে হবে। তাহলে সহজেই তা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। 

আরও পড়ুনঃ মৌমাছি পালন বা মৌমাছি চাষের ব্যবসা করার নিয়ম

ফুলের ব্যবসার জন্য মূলধন

লাভজনক ভাবে ফুলের ব্যবসা করার পদ্ধতি

আপনি যদি ভাসমান ভাবে একটি টং দোকানে ফুলের দোকান দিতে চান তাহলেও লাভজনকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। তবে যদি স্থায়ীভাবে কোন একটি স্থানে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করতে চান তাহলেও করতে পারবেন। দুটি বিষয়ে নির্ভর করে আপনার মূলধনের পরিমাণের উপর। 

দোকান ভাড়া ছাড়াও ফুলের দোকান দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় স্থায়ী উপকরণ কিনতে ৫-১০ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। প্রাথমিকভাবে ফুল সাজানোর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে ২-৩ হাজার টাকার মত বিনিয়োগ করতে হতে পারে। এছাড়াও, প্রতিদিন কিংবা প্রতি সপ্তাহে নতুনভাবে ফুল সংগ্রহ করার জন্য ফুলের দাম বিনিয়োগ করতে হবে বিভিন্ন বাগানে।

খেয়াল রাখবেন, দোকান ঘর ভাড়া নিতে চাইলে দোকান ঘরের পজিশন ও ভাড়া বাবদ আরও কিছু টাকার প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগতভাবে অল্প কিছু টাকা পুঁজি থাকলেই ব্যবসার জন্য যথেষ্ট হবে। পর্যাপ্ত পুঁজি না থাকলে বিভিন্ন নিকটস্থ আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে নিতে পারেন। তবে কোনো সুদী ব্যাংক থেকে ঋণ না নেওয়াই ভালো।

আরও পড়ুনঃ লাভজনক ৭টি ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া

ফুলের ব্যবসা করার জন্য প্রশিক্ষণ

ফুলের দোকান দেওয়ার জন্য তেমন কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। তবে অভিজ্ঞ কারোও সাথে যোগাযোগ করে ফুলের ব্যবসা সংক্রান্ত খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া ভালো। যেমন- ফুল কোথা থেকে কম মূল্যে সংগ্রহ করা যাবে, কিভাবে দীর্ঘক্ষণ ফুল সতেজ রাখা যাবে ইত্যাদি বিষয়ে জেনার হওয়া উচিত।

ফুলের দোকান দিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রয়োজন না হলেও ফুল সাজানো শেখার জন্য প্রশিক্ষণ নেয়া জরুরী। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারোও সহকারী হিসেবে কিছুদিন কাজ করলে এ সম্পর্কে আরো উপযুক্ত ও বিস্তারিত ধারণা পাবেন।

ফুলের দোকানের ডেকোরেশন 

ফুলের ব্যবসার জন্য দোকান নির্বাচন করার পর দোকানের সুন্দর ডেকোরেশন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেতে আপনার দোকানে কাঠের শেলফ বা তাকগুলো দেয়াল ঘেঁষে সাজিয়ে নিতে হবে। শেলফ এর উপর মাটি বা কাঁচের ফুলদানিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল সাজিয়ে রাখতে হবে।

বেশ কয়েক রকমের ফুলদানি সাজিয়ে, একেকটি ফুলদানিতে ভিন্ন ভিন্ন রকমের ফুল রাখতে হবে। এছাড়াও বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন বেত ও বাঁশের ঝুড়িতে বেশ কিছু ফুল যেন সাজিয়ে রাখা যায় সে ব্যবস্থাও রাখতে হবে।

দোকানে ফুল দিয়ে ঘর সাজানো, গাড়ি সাজানো বা নানানভাবে ফুল সাজানোর ছবিসহ একটি বই রাখলে ভালো হয়। তাহলে ক্রেতা তা দেখে ঘর বা গাড়ি সাজানোর অর্ডার দিতে পারবে। আর ফুল সাজানোর জন্যও এ কাজে দক্ষ হতে হবে।

এমনভাবে ডেকোরেশন করার চেষ্টা করবেন, যেন আপনার ফুলের দোকানটিকে দোকান মনে না হয়ে একটি ফুলের বাগান মনে হয়। দোকানের সাজসজ্জা যত সুন্দর হবে, কাস্টমার পাওয়ার সম্ভাবনা ততই বাড়বে।

আরও পড়ুনঃ লাভজনকভাবে কবুতর পালন পদ্ধতি

ফুলের দোকান পরিচালনার নিয়ম

ব্যবসা শুরু করার পর পরিচালনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য রাখতে হবে ফুলের কোয়ালিটির উপর। ফুল টাটকা ও সতেজ রাখার জন্য ফুলের উপর মাঝে মাঝে পরিস্কার পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। যে এলাকায় যেসব ফুলের চাহিদা বেশি থাকে সেসব ফুল বেশি রাখতে হবে।

আমাদের দেশের ঢাকার সাভার মুন্সিগঞ্জ, যশোর প্রভৃতি এলাকায় বানিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল উৎপাদন করা করা হয়। এসব এলাকা থেকে ফুল কিনে এনে বিক্রি করা যায়। এছাড়া শহরের বড় বড় ফুলের দোকানগুলো থেকে পাইকারী দামে ফুল কেনা যাবে।

গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা ইত্যাদি ফুল সাধারণত নানান অনুষ্ঠানে ঘর ও গাড়ী সাজানোয় বেশি ব্যবহার করা হয়। তাই এই সব ফুল বেশি পরিমাণে রাখতে হবে। এর পাশাপাশি নতুন ধরণের কিছু ফুল রাখলেও তা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

বর্তমানে শহরাঞ্চলে গ্লাডিওলাস, অর্কিড, দোলনচাঁপা ইত্যাদি ফুলের চাহিদাও বেড়েছে। তাই এই সকল ফুলগুলোও বেশি পরিমাণ রাখতে পারেন। তবে অবশ্যই স্থান ও বাজারচাহিদা বুঝে ফুল রাখতে হবে। যেসকল ফুল সহজেই নষ্ট হয়ে যায় সেগুলো কম পরিমাণে রাখাই ভালো।

সাধারণত দুইভাবে ফুলের দোকানের ব্যবসা থেকে আয় করা যায়। যথা: খুচরা ফুল, ফুল সাজানো ঝুড়ি বা তোড়া বিক্রয় করে তার বিনিময়ে টাকা নেওয়া, এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ক্রেতাদের দিকনির্দেশনা বা পছন্দ অনুযায়ী অনুযায়ী ঘর, বাড়ি বা গাড়ি সাজিয়ে দিয়ে তার বিনিময়ে ফুলের দাম ও মজুরি নেওয়া। উভয়ের দিক থেকেই কাস্টমার টার্গেট করলে আপনি বেশি লাভবান হতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ লাভজনকভাবে কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি

ফুলের ব্যবসায় সাবধানতা

ফুলের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। যেমন: 

  • সব সময় টাটকা ও সতেজ ফুল রাখতে হবে।
  • ফুলের দোকান সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • ফুলে যেন পোকা না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • ক্রেতাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। 
  • বাজার চাহিদা বলছে দোকানে ফুল উঠাতে হবে।

ফুলের দোকানের ব্যবসায় লাভের হিসাব

প্রতিমাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার ফুল কিনে ব্যবসা করলে, সেই পরিমাণ ফুল প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে। এক্ষেত্রে দোকানের যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে আপনার প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হবে। এভাবে আপনার ব্যবসার বিনিয়োগ ও প্রসার যত বেশি হবে বিক্রির পরিমাণ ততই বাড়বে এবং লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।

তবে উপরোক্ত হিসেবে ভিত্তিতে লাভের পরিমাণ না হয়ে কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। যেহেতু স্থায়ী ব্যয়ের সরঞ্জামগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যাবে, তাই পরবর্তীতে শুধুমাত্র ব্যবসার কাঁচামাল/ ফুল কিনেই ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া যাবে। এভাবে ধৈর্য ধারণ করলে লাভের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়বে।

About Sajjad Hossain

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *