ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম সম্পর্কিত লেখাটি পড়ে আপনি তা সম্পর্কে সকল ধারণা পেয়ে যাবেন। যে যতই গাড়ি চালাতে পারদর্শী হোক না কেন তার যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স (Driving License) না থাকে তবে সে রাস্তায় গাড়ি চালানোর অনুমতি পাবে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে অবৈধ ড্রাইভার সাব্যস্ত করা হবে। যে একজন ভালো ড্রাইভার সে কখনোই ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া রাস্তায় গাড়ি চালাবে না। তাই ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন অতীব জরুরী একটি বিষয় সম্পর্কে আজকের আলোচনা।
“গাড়ি এবং সড়ক যতই ত্রুটিপূর্ণ হোক না কেন; তারা কখনোই একজন খারাপ চালকের ত্রুটিগুলো আড়াল করতে পারে না।” এই উক্তিটি হচ্ছে তুরস্কের জনপ্রিয় লেখক মেহমেত মুরাত ইলদান।
ড্রাইভিং লাইসেন্স কি এবং কেন প্রয়োজন ?
পৃথিবীর সকল দেশেই গাড়ী চালাতে হলে এই ড্রাইভিং লাইসেন্স এর প্রয়োজন হয়। গাড়ি চালকের নিত্যদিনের সঙ্গী হচ্ছে এই ড্রাইভিং লাইসেন্স। যেকোনো সময়ই রাস্তায় ট্রাপিক পুলিশ বা যেকোনো আইন রক্ষাকারী আপনার গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে, তখন প্রথমত যে বিষয় খেয়াল করা হয় সেটি হচ্ছে ড্রাইভিং লাইসেন্স। গাড়ির চালকের পরিচয় ব্যতিতও অনেক সময় নিজের পরিচয় দিতেও এটি ব্যবহার হয়।
অনেকেই আছেন যারা ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে চাচ্ছেন। কেউ পেশা হিসেবে ড্রাইভিং বেছে নিতে চাচ্ছেন। কেউ বা ব্যক্তিগত গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করবেন বলে ভাবছেন। তবে কীভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হয়, তা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।
এখন আর সেই আগের যুগ নেই। লাইনে দাঁড়িয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন ফরম জমা দেওয়ার ঝামেলাও নেই। এখন খুব সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন করা যায়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। অনলাইনে আবেদন করার সহজ ও সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া আজ শিখব প্রো-বাংলায়।
ইন্টারনেটে অনেক ওয়েবসাইট আছে। যেগুলোতে ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন করার পদ্ধতি দেওয়া আছে। কিন্তু সেগুলো পড়লে ঠিকমত বোঝা যায় না কীভাবে কী করতে হবে। তারা এত জটিল করে উপস্থাপন করে যে সাধারণ মানুষ ভয় পেয়ে যায়। তাই আমরা “Driving License Online Application” বা অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স কীভাবে করা যায় তার সহজ পদ্ধতি শিখিয়ে দেবো।
আপনি যদি এই প্রথম গাড়ি চালানো শিখছেন এবং লাইসেন্স করতে চান; তাহলে আপনাকে আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কী ধরনের লাইসেন্স করবেন?
লাইসেন্স দুই প্রকার:
১. পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স।
২. অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স: পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হলে আপনার অবশ্যই ২১ বছর বয়স হতে হবে।
অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স: এর জন্য আপনাকে কমপক্ষে ১৮ বছর বয়সের হতে হবে।
লাইসেন্স করার প্রাথমিক শর্তগুলো কী?
আপনার বয়স লাইসেন্সের ধরন অনুসারে নূন্যতম ১৮ বা ২১ হতে হবে।
জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হবে।
ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণী পাস হতে হবে এবং এর সার্টিফিকেট লাগবে।
এই তিনটি শর্ত যদি পূরণ হয় তাহলে পরবর্তী ধাপে আমরা যাব।
লাইসেন্স করার আগে গাড়ি চালানো শিখতে হবে। কিন্তু লাইসেন্স না থাকলে তো রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হওয়া যাবে না। বের হলে পুলিশ ধরবে এবং মামলা খেতে হবে। তাই ড্রাইভিং শেখার জন্য বাংলাদেশ সরকার একটি লাইসেন্স প্রদান করে। এটাকে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স বলে। এটা সাথে থাকলে কোনো আইনি ঝামেলায় জড়াতে হবে না।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স কীভাবে করতে হয়?
এটা করতে কী কী কাগজপত্র প্রয়োজন?
প্রথমে আপনি আপনার ব্রাউজারে বি.আর.টি-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান। ওয়েবসাইটের ঠিকানা (bsp.brta.gov.bd) সেই ওয়েবসাইটে আপনার জন্ম তারিখ ও জাতীয় পরিচয় পত্রের আইডি নং এডমিট করুন। এরপর অনলাইনেই ফরম পূরণ করুন।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে কী কী কাগজ লাগে?
১. জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
২. ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কর্তৃক দেওয়া সনদ।
৩. বিদ্যুৎ বিলের কাগজ। ( আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানার বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা ভিন্ন হলেও কোনো সমস্যা নেই)
৪. স্কুল সার্টিফিকেট (ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি)
৫. পাসপোর্ট সাইজের ছবি। [ 150 কে.বি (300×300 পিক্সেল)]৬. বি.আর.টি কর্তৃক নির্ধারিত ফি নির্ধারিত ব্যাংকে জমা করতে হবে।
*এছাড়া ফরমে অবশ্যই রক্তের গ্রুপ সংযোজন করতে হবে*
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন ফরম
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন ফরম পূর্ণ করার সাথে সাথেই আপনি লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাবেন।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে?
আপনি যদি ১ নং ক্যাটাগরি অর্থাৎ শুধু গাড়ি অথবা শুধু বাইকের লাইসেন্স করতে চান, তাহলে ৩৪৫/ টাকা লাগবে।
আর যদি ২ নং ক্যাটাগরি অর্থাৎ গাড়ি ও বাইক একত্রে করতে চান, তাহলে ৫১৮/ টাকা লাগবে।
লার্নার বা শিক্ষা শিক্ষানবিশ লাইসেন্স পাওয়ার পর করণীয় কী?
লার্নার লাইসেন্স পাওয়ার পর আপনি খুব ভালো করে গাড়ি চালানো রপ্ত করবেন। যদি আপনি ঠিকমতো গাড়ি চালাতে না শিখেন তাহলে পরে লাইসেন্স করতে পারবেন না।
আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র, স্কুল সার্টিফিকেট, চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সনদ এগুলো পুলিশ দ্বারা ভেরিফিকেশন করে নেবেন।
আপনি কোনো রেজিস্টার্ড ডাক্তারের থেকে ডোপ টেস্ট -এর সার্টিফিকেট সংগ্রহ করবেন।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম
উপরের তথ্য মতে সকল কাগজপত্র সংগ্রহ পর লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কাজ শুরু করে দিতে পারবেন।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করার ধাপসমূহ নিম্নরূপ:
- ধাপ-১: বিআরটিএ অফিস হতে সংগ্রহ করা অথবা অনলাইন থেকে ডাউনলোডকৃত ফরমটির প্রথম পৃষ্ঠা নিজ হাতে পুরণ করুন।
- ধাপ-২: এই ফরমের ২য় পৃষ্ঠাটি একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট হিসেবে দেয়া হয়েছে। এ পৃষ্ঠাটি কোন রেজিস্টার ডাক্তার কর্তৃক পূরণ করান এবং তার স্বাক্ষর নিন।
- ধাপ-৩: ফরমের সঙ্গে নির্ধারিত ব্যাংকে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফি পরিশোধ করে রশিদ, এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্ট এর ফটোকপি এবং বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি সংযুক্ত করুন।
- ধাপ-৪: সব শেষে ফরমটি বিআরটিএ অফিসে জমা দিন।
- ধাপ-৫: পরবর্তীতে বিআরটিএ অফিস কর্তৃক লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করার একটি তারিখ প্রদান করা হবে। তারিখটি ফরম জমা দেওয়া ১/২ দিনে মধ্যে হয়ে থাকে। আপনি নির্ধারিত তারিখে অফিসে উপস্থিত হয়ে রিসিপশন বুথ হতে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফরমটি সংগ্রহ করুন।
- ধাপ-৬: সংগ্রহ করা ফরম ও লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি নির্দিষ্ট অফিসার কর্তৃক সেগুলো স্বাক্ষর করে নিন।
- ধাপ-৭: ফরম ও লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি আবার রিসিপশন বুথে জমা দিন। এই লাইসেন্সটি ব্যবহার করে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। এবং স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদনও করতে পারবেন।
উল্লেখ্য যে, লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর মেয়াদ ৩ মাস। ৩ মাস পর আপনি লাইসেন্সটি ব্যবহার করতে পারবেন না।
ডোপ টেস্ট কী?
যারা নিয়মিত মাদক সেবন করে। যেমন: ইয়াবা, হিরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল, কোকেন কিংবা শারাব পান করে, তাদের শরীরে নেশা জাতীয় পদার্থ জমা হতে থাকে। এই ডোপ টেস্টের মাধ্যমে সেই মাদক ধরা পড়ে। আপনি যদি মাদকাসক্ত হন তবে ডোপ টেস্টের রিপোর্টে তা উল্লেখ্য থাকবে এবং আপনি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। শুধু ড্রাইভিং লাইসেন্স না পাওয়ার ভয়ে মাদক ছাড়বেন না। জীবনকে বাঁচাতে হলেও মাদক গ্রহণ করা বন্ধ করুন।
আপনি যে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন সেটার নিচের লেখাটা একটু খেয়াল করবেন। কবে, কোথায়, কোন কেন্দ্রে যেতে হবে এবং কখন যেতে হবে, তা সেই লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সে লেখা আছে। কী কী কাগজপত্র নিয়ে যেতে হবে সেটাও উল্লেখ আছে।
নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে কী করবেন?
- সেখানে গিয়ে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
- ডোপ টেস্ট এর সার্টিফিকেট আনতে হবে।
- পুলিশ ভেরিফিকেশন বা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন আনতে হবে। অর্থাৎ জাতীয় পরিচয়পত্র, স্কুল সার্টিফিকেট, চেয়ারম্যান সনদ যেগুলো পুলিশ দ্বারা ভেরিফিকেশন করিয়েছেন, তা আনতে হবে।
- পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি।
- লার্নার বা শিক্ষানবিশ লাইসেন্স আনতে হবে।
- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ১৬৭৯/- টাকা এবং অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ২৫৪২/- টাকা বি.আর.টি -এর নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
এই সব কিছু জমা দিলে আপনাকে একটি টোকেন দেবে। সেই টোকেনে বায়োমেট্রিক আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার তারিখ দেওয়া থাকবে।
এছাড়া বি.আর.টি কেন্দ্রে আপনাকে কিছু পরীক্ষা দিতে হবে।
১. লিখিত পরীক্ষা: এই পরীক্ষায় মূলত গাড়ি চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন লিখতে দেয়া হবে।
২. মৌখিক পরীক্ষা: এই পরীক্ষায় রাস্তার বিভিন্ন চিহ্ন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
৩. ব্যবহারিক পরীক্ষা: এই পরীক্ষা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নেওয়া হবে। আপনাকে গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালিয়ে দেখাতে হবে। বিশেষ করে পার্কিং করা, নির্দিষ্ট লাইন বরাবর চলা, আঁকাবাঁকা করে চালানোর দক্ষতা দেখাতে হবে।
আপনি একদম ভয় পাবেন না। কেননা ভয় মানুষকে দুর্বল করে দেয়। আপনি যতই গাড়ি চালাতে পারদর্শী হন না কেন, যদি ঘাবড়ে যান তবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন না। নিজের উপর আস্থা রাখুন এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে পরীক্ষা দিন।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙ্গুলের ছাপ গ্রহণ
স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করার পর আপনাকে যে টোকেন দেওয়া হয়েছে। সেখানে একটি নির্দিষ্ট তারিখ দেওয়া থাকবে। ওই তারিখ অনুসারে টোকেন নিয়ে আসতে হবে এবং আঙ্গুলের ছাপ দিতে হবে। আপনার ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বাক্ষর গ্রহণ করা হবে।
এরপর আপনাকে একটি অস্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে এবং কোন তারিখে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে তার রশিদ দেওয়া হবে।
আপনি এই অস্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালাতে পারবেন।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স
স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স করার শেষ ধাপ
অনেক সময় স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স নির্ধারিত সময়ের আগেই তৈরি হয়ে যায় তখন আপনার মোবাইলে একটি এসএমএস আসবে। আপনি আপনার অস্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং রশিদ বি.আর.টি অফিসে জমা দেবেন। জমা দেওয়ার সাথে সাথেই পেয়ে যাবেন কাঙ্ক্ষিত স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স।
ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ধরন
ড্রাইভিং লাইসেন্স দুই ধরনের হয়ে থাকে।
১. পেশাদার: পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ ৫ বছর। যারা ড্রাইভিং-কে পেশা হিসেবে বেছে নেবেন তারা এই লাইসেন্স করবেন।
২. অপেশাদার: অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ ১০ বছর। এই লাইসেন্স দিয়ে আপনি কখনোই পেশাদার ড্রাইভিং করতে পারবেন না। যদি এই লাইসেন্স দিয়ে চাকরি করা অবস্থায় ধরা পড়েন তাহলে আইনি জটিলতা হতে পারে।
পেশাদার লাইসেন্সের ধরন
পেশাদার লাইসেন্স তিন প্রকারের হয়।
১. হালকা
২. মধ্যম
৩. ভারী
- পেশাদার হালকা লাইসেন্স: আপনি যদি ২৫০০ কেজির কম ওজনের গাড়ি চালানোর চিন্তা করেন তাহলে পেশাদার হালকা লাইসেন্স করবেন।
- পেশাদার মধ্যম লাইসেন্স: আপনি যদি ২৫০০-৬৫০০ কেজি ওজনের গাড়িগুলো চালাতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে হালকা লাইসেন্স করতে হবে এবং সেই লাইসেন্স তিন বছর ব্যবহার করতে হবে।
- পেশাদার ভারী লাইসেন্স: আপনি যদি ৬৫০০ কেজির বেশি ওজনের গাড়িগুলো চালাতে চান তাহলে মধ্যম লাইসেন্স করতে হবে এবং সেই লাইসেন্স ন্যূনতম তিন বছর ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ ৬ বছরের পূর্ণ অভিজ্ঞতা দরকার।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন কীভাবে করবেন?
আমাদের অনেকেই আছি যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কিন্তু সেটার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারা কীভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করবেন?
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন: আপনি যদি পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী হন এবং সেই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হবার ১৫ দিনের মধ্যে লাইসেন্স করতে আবেদন করেন, তাহলে ১৫৬৫/- টাকা লাগবে।
যদি ১৫ দিন পার হয়ে যায়, তাহলে প্রতি বছরের জন্য ২৩০/- টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে।
অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন: আপনার অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে যদি অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স (Driving License) করতে চান, তবে আপনার ২৪২৭/- টাকা লাগবে। যদি ১৫ দিনের বেশি হয়ে যায় তাহলে প্রতি বছরের জন্য ২৩০/- টাকা অতিরিক্ত জমা দিতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে কী কী কাগজপত্র লাগবে?
১. বি.আর.টি কর্তৃক নির্ধারিত ফরম পূরণ।
২. রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক ডোপ টেস্ট সার্টিফিকেট।
৩. জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
৪. শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ।
৫. পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট।
৬. বর্তমানে তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি ও এক কপি স্ট্যাম্প সাইজের ছবি।
৭. নির্ধারিত টাকা জমা দেওয়ার ব্যাংকের রশিদ।
ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক
আপনি চাইলে আপনার হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করে এসএমএস এর মাধ্যমে জানতে পারবেন। প্রথমত আপনার মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয় টাইপ করুন। DL DM123456 (প্রাপ্তি স্বীকার রশিদে উল্লেখকৃত রেফারেন্স নাম্বারটি) তারপর পাঠিয়ে দিন 6969 নাম্বারে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ডাউনলোড
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের পরেও অনেকেরই স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স হতে পেতে দেরি হয়। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ BRTA -এর নতুন নিয়ম অনুযায়ী অনলাইনে ই-পেপার ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করা যায়। মূলত পূর্বে ব্যবহৃত অস্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপিটি ডিজিটালাইজড করে ই-পেপার ড্রাইভিং লাইসেন্স করা হয়েছে।
নতুন ই পেপার ড্রাইভিং লাইসেন্স ডাউনলোড করার জন্য,
- সর্বপ্রথম bsp.brta.gov.bd -এই লিংকে ভিজিট করুন।
- এবার আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং জাতীয় পরিচয় পত্র তথ্যানুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী পূরণ করে এই সরকারি ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করুন।
- একাউন্টে দেওয়া ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে পুনরায় লগইন করুন।
- ভেরিফাইড ইউজার হলে (প্রোফাইল সঠিক তথ্য দিয়ে ভেরিফাই করার পর), একাউন্টে লগইন করার মাধ্যমেই কিউআর কোড সম্বলিত ই-পেপার ড্রাইভিং লাইসেন্স ডাউনলোড হয়ে যাবে।
উপরোক্ত পদ্ধতিতে ডাউনলোড হওয়া ই-পেপার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মতোই প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করা যাবে। শুধুমাত্র এতে একটি মাইক্রোচিপ থাকবে না। কিন্তু লাইসেন্সের পেপারে থাকা QR কোডটি স্ক্যান করে মূল লাইসেন্সের মতোই এর সত্যতা এবং অনলাইনে সাবমিট করার অরিজিনাল লাইসেন্স কিনা, তা যাচাই করা যাবে।
ডুপ্লিকেট লাইসেন্স কীভাবে পাব?
অনেক সময় আমাদের লাইসেন্স হারিয়ে যায়। কিংবা চাপ লেগে ভেঙ্গে যায়। তখন আমাদেরকে ডুপ্লিকেট লাইসেন্স করতে হয়। কিন্তু তার আগে আমাদেরকে দ্রুত থানায় জিডি করতে হবে।
ডুপ্লিকেট লাইসেন্স কীভাবে করব?
১. বি.আর.টি -তে গিয়ে নির্ধারিত ফরম পূরণ করতে হবে।
২. থানায় করা জিডির কপি ও ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স কাগজ।
৩. বর্তমানে তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৪. ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমা দেওয়ার রশিদ। (হাই সিকিউরিটি ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে ৮৭৫/- টাকা)
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন করার ক্ষেত্রে কিছু কথা মাথায় রাখতে হবে। আপনি যখন বি.আর.টি অফিসে যাবেন তখন বিভিন্ন ধরনের মানুষ আপনাকে ঘিরে ধরবে। আপনাকে বিভিন্ন লোভনীয় অফার দেবে। সাবধান সেগুলোতে সাড়া দেবেন না। কেননা তারা আপনার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নকল লাইসেন্স ধরিয়ে দেবে। হয়তো আপনি নকল লাইসেন্স চিনতে পারবেন না। কিন্তু প্রতিটি ট্রাফিক পুলিশের কাছে বিশেষ এক ইলেক্ট্রিক ডিভাইস আছে, যা দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে নকল লাইসেন্স শনাক্ত করা যায়। তখন আপনার বড় ধরনের বিপদ হবে।
অবশ্যই আপনারা ট্রাফিক আইন মেনে চলবেন এবং মাদক থেকে দূরে থাকবেন। আপনাদের যাত্রা শুভ হোক।
সব নিয়ম কানুন ঠিক আছে কিন্তু বাস্তবতা হলো দালালরা ওত পেতে থাকে কিভাবে হয়রানি করা যায়। তাই মানুষ বিরক্ত হয়ে পড়ে দালালদের কাছে ভিড় করে। যাক আপনার লিখা পড়ে সহজেই সব বিষয বুঝা গেল। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ