আপনার কাছে যদি অধিক পরিমাণ বুঝে থাকে এবং বড় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান, তাহলে এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার জন্য উপযুক্ত ও পছন্দের ব্যবসাটি বাছাই করে নিতে পারেন।
অনেকেই অধিক পরিমাণ মূলধন নিয়ে বড় ব্যবসা শুরু করতে চায়। আর যেই ব্যবসা ঝুঁকি যতো বেশি সেই ব্যবসায় লাভও তত বেশি। তাই ঝুঁকি নিয়ে বড় একটি ব্যবসা শুরু করে সফলতা অর্জন করতে পারলে অনেক বেশি লাভবান হতে পারবেন। তবে ব্যবসা শুরুর আগে বিনিয়োগের উপযুক্ত মাধ্যম জেনে নেওয়া উচিত।
তাই এই আর্টিকেলে ২০২৫ সালে শুরু করার জন্য সেরা কয়েকটি বড় ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
সেরা কয়েকটি বড় ব্যবসার আইডিয়া
(১) হ্যাচারি ব্যবসার আইডিয়া
হ্যাচারি হলো এক ধরনের কৃত্তিম জলাশয়, যেখানে মাছ লালন পালন করা হয়। এটি এক ধরনের মাছের খামার। এখানে মাছ ডিম পাড়া থেকে শুরু করে, ডিম ফুটানো, রেনু পোনা, ধানী পোনা ইত্যাদি প্রক্রিয়াকরন করা হয়ে থাকে৷ মাছের প্রজননও করানো হয় হ্যাচারিতে।
এই হ্যাচারি ব্যবসাটি খুব লাভজনক একটি বড় ব্যবসার আইডিয়া। কারন, প্রাকৃতিকভাবে মাছের পোনা ঠিকমত পাওয়া যায় না। আর তাছাড়া সব মাছের পোনাও সব সময় পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে হ্যাচারিতে এক সাথে সব ধরনের পোনা পাওয়া যায়। তাই, একটু প্রশিক্ষন নিয়ে বেকার যুবকরা যদি এই হ্যাচারি ব্যবসা শুরু করতে পারে, তাহলে অল্প দিনেই সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।
মাছের হ্যাচারির জন্য সুবিধাজনক একটি স্থান বাছাই করে, এই ব্যবসা শুরু করা যায়৷ এই ব্যবসা শুরু করার জন্য ট্রেনিং নেওয়াটা জরুরী। তাই সম্ভব হলে সম্পর্কে অনলাইনে বা অফলাইনে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিবেন।
আরও পড়ুনঃ সাপ্লাই ব্যবসা কী? বাংলাদেশে সাপ্লাই ব্যবসা করার নিয়ম।
(২) জুয়েলারি ব্যবসা
প্রাচীনকাল থেকেই অলংকারের প্রতি নারীর আকর্ষণ বেশি। তাই এই জুয়েলারি ব্যবসার আইডিয়াটি হতে পারে আপনার জন্য অনেক লাভজনক। সোনার গয়না, বা গোল্ড প্লেটেড গয়না, ইমিটেশন গয়না অথবা বিভিন্ন ধরনের মেটালিক গয়না নিয়েও ব্যবসা শুরু করা যাবে।
জুয়েলারি ব্যবসা শুরু করার আগে বিভিন্ন কারখানা বা দোকান ঘুরে ঘুরে দেখে আইডিয়া নিতে হবে। এক্ষেত্রে নিজস্ব একটি উৎপাদন কারখানা স্থাপন করতে পারলে খুবই ভালো হবে। সেক্ষেত্রে গয়নার মান নিয়েও কোন সংশয় থাকবে না। পণ্য সরাসরি নিজের তত্ত্বাবধানে তৈরি করে বাজারজাত করতে পারলে এই ব্যবসার অনেক বেশি লাভ করা সম্ভব৷
(৩) শুটকি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবসা
দেশে শুটকি মাছের চাহিদা অনেক এবং শুটকির দামও বেশি। শুটকি মাছ কম বেশি সবাই পছন্দ করে থাকেন। তাই, শুটকি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ হতে পারে একটি লাভজনক ব্যবসা।
নদ-নদী, খাল-বিল থেকে যেসব মাছ ধরা পড়ে তার সবগুলো বিক্রি করা সম্ভব হয়না। কিছু মাছ থেকে যায়৷ সেগুলো রোদে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করা যায়৷ পচনশীল নয় বলে, অনেক দিন সংরক্ষণ ও করা যায়। তবে, এ ব্যবসা করার জন্য উপযোগী স্থান হচ্ছে যেখানে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে৷ দেশের বাইরে ও শুটকি মাছের চাহিদা আছে৷ তাই, এই ব্যবসায় লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা অনেক৷
(৪) সৌর বিদ্যুৎ ব্যবসা
দিন দিন বিদ্যুৎ এর চাহিদা বাড়ছে৷ কিন্তু অনবায়নযোগ্য সম্পদ হওয়ার কারণে চাহিদার তুলনায় এর উৎপাদন খুবই কম। তাছাড়া বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করাও জরুরী। এই অবস্থায় সৌর বিদ্যুৎ হতে পারে একটি সম্ভাবনাময় উৎস।
প্রাথমিকভাবে আশেপাশের সাধারণ জনগণের মাঝে সোলার সিস্টেম সম্পর্কে সবাইকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। তারপর সোলার প্যানেল সহ বিভিন্ন ধরনের সোলার পণ্য গুলো ক্রয় করতে তাদের উৎসাহিত করবেন।
আরও পড়ুনঃ লাভজনক ৭টি ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া।
(৫) কমিউনিটি সেন্টার ব্যবসা
কমিউনিটি সেন্টার ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক। আজকাল মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনে একটি মানসম্মত কমিউনিটি সেন্টার খুঁজে এবং তার উপর সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকে৷ সেন্টার গুলোও তাদের কাজ খুব সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে থাকে৷ তাই এই ব্যবসা দিন দিন লাভজনক হচ্ছে।
এই ব্যবসাটি শুরু করার আগে স্থান বাছাই করতে হবে। সুন্দর খোলামেলা একটি স্থান বাছাই করতে হবে৷ সেন্টারের সামনে যেন ফাঁকা জায়গা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
(৬) প্লাস্টিক ব্যবসা
আজকাল মানুষ কাচ, মেলামাইন এগুলোর পাশাপাশি প্লাস্টিকের প্রতিও আকর্ষিত হচ্ছে৷ বাসাবাড়িতে ছোট একটা কৌটা থেকে শুরু করে চেয়ার টেবিলসহ অনেকে প্লাস্টিকের তৈরি ডাইনিং টেবিলও ব্যবহার করছে।
প্লাস্টিকের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছেই। তাই প্লাস্টিকের ব্যবসা হতে পারে একটি আকর্ষণীয় ও লাভজনক ব্যবসা। এটি একটি উৎপাদনমুখি ব্যবসা। বড় ব্যবসার আইডিয়া হিসাবে এই ব্যবসায় মূলধনের পরিমানও বেশি লাগবে।
(৭) ফ্রোজেন ফুডের ব্যবসা
বর্তমানে ফ্রোজেন ফুডের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ব্যস্ত মানুষের কষ্ট এখন অনেকটাই লাঘব করে দিয়েছে এই হিমায়িত খাদ্য। ফ্রোজেন ফুডের তালিকায় এখন প্রায় সব কিছুই আছে। সংরক্ষণ করে রাখা যায় বলে এগুলো মানুষের পছন্দের তালিকায় শীর্ষেই থাকবে। তাই হিমায়িত খাদ্য ব্যবসা হতে পারে একটি লাভজনক বড় ব্যবসার আইডিয়া।
দিন দিন এই সব খাবারের মান ও স্বাদ ও উন্নত হচ্ছে। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে এই ব্যবসায় উন্নতি সম্ভব খুব দ্রুত৷
আরও পড়ুনঃ সেরা ৬টি ২ লাখ টাকায় লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া।
(৮) আইসিটি ব্যবসা
দিন দিন সব কিছু উন্নত হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তথ্যের ভূমিকা অপরিসীম। কম্পিউটার, ইন্টারনেট ছাড়া আমরা এখন আমাদের জীবন ভাবতেই পারি না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবসা হবে একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। আপনি যদি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য এটি আরো বেশি উপযুক্ত ব্যবসা হবে।
শুরুতে অল্প পরিসরে সুন্দর অফিস কক্ষ ও হাই কনফিগারেশনের কম্পিউটার দিয়ে শুরু করতে পারবেন৷ পরবর্তীতে কাজের পরিসর বাড়লে, দক্ষ আইসিটি কর্মী নিয়োগ করতে পারবেন। বিভিন্ন সফটওয়্যার তৈরির জন্যও দক্ষ ও সৃজনশীল সফটওয়্যার কর্মী নিয়োগ দিতে হবে।
(৯) ইট, বালু, রড, সিমেন্টের ব্যবসা
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নগরায়ণ বাড়ছে, বাড়ছে নতুন নতুন ভবনের সংখ্যাও। বহুতল ভবনে সুসজ্জিত থাকে শহরের চারপাশ। শহরায়নের এই যুগে রড, সিমেন্টের ব্যবসা হতে পারে আপনার জন্য লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া।
ব্যস্ততম কোন সড়কের পাশে বা জনবহুল কোন স্থানে এই ব্যবসার জন্য স্থান নির্বাচন করে দোকান ভাড়া করতে হবে। এই ধরনের দোকানের সামনে কিছু ফাঁকা স্থান রাখা ভালো। ভবন তৈরি করতে মানুষের রড, সিমেন্ট লাগবেই। তাই সততার সাথে কাজ করে গেলে এই ব্যবসায় খুব দ্রুত উন্নতি সম্ভব৷
(১০) ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্যবসা
বর্তমানে ইলেকট্রিক জিনিসের চাহিদা আগের থেকে অনেক বুদ্ধি পাচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সবক্ষেত্রেই ইলেকট্রিক জিনিসপত্রের ব্যবহার। জীবনকে সহজ করে তুলতে ইলেকট্রিক সরঞ্জামের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। তাই এই ব্যবসায় অল্প দিনেই উন্নতি সম্ভব৷
এই ব্যবসা শুরু করতে হলে একটি সুবিধাজনক স্থান বাছাই করতে হবে। তাছাড়া কাস্টমারের চাহিদা বুঝতে হবে। তারপর বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স পণ্য যেমন- টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ, ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার মেশিন ইত্যাদি দিয়ে দোকান সাজাতে হবে৷
আরও পড়ুনঃ লাভজনকভাবে ফুলের দোকানের ব্যবসা করার গাইডলাইন।
(১১) রেশম চাষ ও রেশমি সুতা
রেশম পোকার গুটি থেকে তৈরি হয় রেশমি সুতা। রেশম সুতা দিয়ে বেনারসি, কাতান সহ দামি দামি শাড়ি তৈরি হয়। এগুলো অভিজাত শ্রেণীর মানুষের অন্যতম পছন্দের বস্ত্র। বাংলাদেশের সরকার এই রেশম শিল্পকে উন্নত করতে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড স্থাপন করেছে।
বাজারে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় রেশমের প্রাপ্যতা স্বল্প। তাই রেশম চাষে এগিয়ে এসে এ শিল্পকে যেমন সমৃদ্ধ করা যাবে।
(১২) কৃষি প্রযুক্তির ব্যবসা
বাংলাদেশ মূলত কৃষি প্রধান দেশ। এদেশে তাই কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারও দিন দিন বাড়ছে৷ এখন মানুষ সেচ দেওয়ার জন্য সেচ পাম্প ব্যবহার করে। লাঙল ছেড়ে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ব্যবহার করছে। অনেক শিক্ষিত তরুণেরাও এখন সরাসরি কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে। তাই কৃষি প্রযুক্তির ব্যবসার আইডিয়া হতে পারে একটি লাভজনক ব্যবসা।
আরও পড়ুনঃ লাভজনকভাবে কবুতর পালন পদ্ধতি।
(১৩) টাইলস ব্যবসা
ঘরের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে বা ভবনকে অন্য রকম সৌন্দর্য দান করতে সুন্দর ডিজাইনের টাইলসের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এখন প্রায় সকলেই বাসা বাড়ি তৈরিতে বা রাস্তা তৈরিতে টাইলস ব্যবহার করে থাকে৷ শহরে ও গ্রামে এর ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। তাই টাইলস ব্যবসা হবে একটি অন্যতম লাভজনক ব্যবসা।
শেষকথা
এই আর্টিকেলে উল্লেখিত কোন ব্যবসার আইডিয়া আপনার পছন্দ হলে, সেই ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গভীরভাবে জেনে নিয়ে তারপর ব্যবসা শুরু করবেন।