কাঁচা পেঁপের উপকারিতা 

কাঁচা পেঁপের উপকারিতা ও অপকারিতা

পেঁপে আমাদের খুবই পরিচিত একটি সবজি। এটা শাখা-হীন একটি গাছ। পাতাগুলো অনেক বড় বড় এবং এর কাণ্ড ফাঁপা। পেঁপে গাছের পাতা জন্ডিস রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

গ্রামাঞ্চলে বাড়ির আঙিনায় পেঁপে গাছ হয়ে থাকে। এটা যে অত্যন্ত পুষ্টিগুণে ভরা। কাঁচা অবস্থায় এটাকে সবজির মতো রান্না করে খাওয়া হয়। অবশ্য কাঁচাও খাওয়া যায়। পেটে গেলে ফল হিসেবে খাওয়া হয়। 

পেঁপে রোগীদের জন্য উৎকৃষ্ট একটি সবজি। কেননা এটা খুব সহজেই হজম হয়ে যায়। বাংলাদেশে ব্যবহার অনেক। কিন্তু আপনারা জেনে অবাক হবেন পেঁপের আদিনিবাস বাংলাদেশে নয়। এটা এসেছে মধ্য আমেরিকা তথা মেক্সিকো ও এর আশেপাশের অঞ্চল থেকে।

আজকে ‘কাঁচা পেঁপের উপকারিতা’ আর্টিকেলে আপনাদের জন্য কাঁচা পেঁপের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হবে।

কাঁচা পেঁপের পুষ্টিমান

পেঁপে অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল। যদি এটাকে কাঁচা অবস্থা সবজি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। কাঁচা পেঁপের পুষ্টিমান নিচে উল্লেখ করা হলো। 

১০০ গ্রাম কাঁচা পেঁপের মধ্যে থাকা পুষ্টিমান—

  • ভিটামিন সি ৬০-৯০ মিলিগ্রাম 
  • ভিটামিন এ ২৭ মিলিগ্রাম 
  • ভিটামিন বি৯ ৩৭ মাইক্রোগ্রাম 
  • ক্যালসিয়াম ২৬ মিলিগ্রাম 
  • ম্যাগনেসিয়াম ২১ মিলিগ্রাম 
  • পটাশিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম 
  • আইরন ০.২৪ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম ৩ মিলিগ্রাম 
  • ফাইবার ১.৭ গ্রাম
  • প্রোটিন ০.৬ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট ১০.৪২ গ্রাম 
  • ফ্যাট সামান্য 

তবে এখানে আপনাদের জন্য পাকা পেঁপেরও পুষ্টিমান উল্লেখ করা হলো।

১০০ গ্রাম পাকা পেঁপের মধ্যে থাকা পুষ্টিমান—

  • আমিষ ০.৬ গ্রাম
  • স্নেহ০.১ গ্রাম
  • খনিজ পদার্থ ০.৫ গ্রাম
  • ফাইবার০.৮ গ্রাম
  • শর্করা৭.২ গ্রাম
  • ভিটামিন সি৫৭ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম৬.০ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম৬৯ মিলিগ্রাম
  • আয়রন০.৫ মিলিগ্রাম
  • খাদ্যশক্তি ৩২ কিলোক্যালরি

কাঁচা পেঁপের উপকারিতা 

কাঁচা পেঁপের উপকারিতা 

সকলেই জানে কাঁচা পেঁপে অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি বা ফল। এটা খুবই সহজলভ্য এবং বাড়ির আঙ্গিনায় চাষাবাদ করা যায়। এছাড়া এটা বাজারে অন্যান্য সবজির চাইতে কিছুটা সস্তা। গাছে এটা কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। যদি কাঁচা অবস্থায় না পারা হয় তাহলে পেকে গেলে সেটা ফল হয়ে যায়। শরীরের দূষিত পদার্থ দূর করতে কাঁচা পেঁপের জুড়ি নেই। তাই অনেকে বলে, শরীরের ভেতর স্বাস্থ্যবান হলে সেটা বাহির থেকেও বোঝা যায় অর্থাৎ মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।

আরও পড়ুন: পান পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা 

তাই আজ ‘কাঁচা পেঁপের উপকারিতা’ আর্টিকেলে কাঁচা পেঁপের উপকারিতাগুলো উল্লেখ্য করা হলো।

ওজন কমাতে কাঁচা পেঁপে:     কাঁচা পেতে রয়েছে একটি বিশেষ উপাদান যা চর্বি ভেঙে ফেলে। ফলে সেটা শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। কাঁচা পেঁপে খেলে শক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া এটা রক্তের শর্করার পরিমাণ কম করে ফেলে। এতে করে ডায়াবেটিস রোগীর খুব উপকার সাধিত হয়।  

পেট পরিষ্কার করতে কাঁচা পেঁপে:    কাঁচা পেঁপে পেটের অভ্যন্তরীণ ময়লা পরিষ্কার করে সাহায্য করে। এটা কষ্ট কাঠিন্য দূর করে। এছাড়া এটার মধ্যে বিশেষ কিছু উপাদান রয়েছে যা পেটের ক্ষতিকর জীবাণু মারতে সাহায্য করে।

পুষ্টির উৎস:     কাঁচা পেঁপেতে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা গাজর ও টমেটো থেকেও বেশি। তাই কাছে পেঁপে তরকারি অথবা সালাদ হিসেবে খেলে দৈনিক পুষ্টি চাহিদার অনেকটা পূরণ হবে।

ত্বকের যত্নে কাঁচা পেঁপে:      ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখতে কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন। এটা রক্তের দূষিত পদার্থ দূর করে। ফলে ব্রণ বা ফুসকুড়ির মতো সমস্যা হতে পরিত্রান পাবেন। কাঁচা পেঁপের কষ ক্ষতস্থানে ব্যবহার করলে দ্রুত রক্ত পড়া বন্ধ হয়। এছাড়া এটার কষে রয়েছে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে।

পেঁপের অপকারিতা 

পেঁপে এমন একটি ফল— যেটা খুবই সহজলভ্য ও সস্তা। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, খনিজ, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এর ফলে পেঁপে ওজন কমাতে এবং শরীরকে রোগ থেকে দূরে রাখতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

জেনে নিন: মাশরুম এর উপকারিতা ও অপকারিতা 

পেঁপে খাওয়ার ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও রক্তচাপ ইত্যাদি সমস্যা দূর হয়। পেঁপে স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো, তবে কিছু মানুষের জন্য এটি হানিকারক হতে পারে। তাই জেনে নিন কাদের জন্য পেঁপে ক্ষতিকর ও অপকারী। 

গর্ভবতী মহিলা:     গর্ভবতী মহিলাদের জন্য পেঁপে খাওয়া ঠিক না। পেঁপেতে আছে এমন একটি উপাদান যা গর্ভবতী নারীর জরায়ু সংকোচন করে ফেলে। ফলে সন্তান জন্ম দিতে খুবই কষ্ট হয়। তবে পরিমিত পরিমাণে খেলে তেমন একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

হৃদস্পন্দন অনিয়মিত:    পেঁপে হার্টের রোগীদের জন্য অনেক ভালো। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যাদের হৃদস্পন্দন অনিয়ত। তাদের জন্য কিছুটা সমস্যার কারণ পেঁপে। কেননা পেঁপেতে এমন একটি উপাদান আছে যা হৃদস্পন্দন অনিয়মিত রোগীদের রোগ আরো বৃদ্ধি করে। অতএব এমন ধরনের রোগীদের উচিত ডাক্তারের পরামর্শ ক্রমে পেপে খাওয়া।

অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তি:    সাধারণ এলার্জিতে পেঁপে খেলে কোনো সমস্যা হয় না। তবে একটি বিশেষ এলার্জি আছে যেটা মানুষের হলে পেঁপে খেলে এলার্জির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তাই কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পেঁপে খাওয়াটা কষ্টকর সাব্যস্ত হয়।

কিডনিতে পাথর রয়েছে:    যাদের কিডনিতে পাথর রয়েছে তাদের পেঁপে না খাওয়াটাই উচিত। কেননা পেঁপের মধ্যে একটি বিশেষ এনজাইম আছে যেটা কিডনিতে পাথর তৈরি করতে অথবা পাথরের আকার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

যাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া আছে:   পেঁপে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ভালো। কেননা পেঁপে রক্তের মধ্যে থাকা শর্করা কমাতে সাহায্য করে। তবে কিছু মানুষ আছে যাদের রক্তে এমনিতে শর্করার পরিমাণ খুব কম। ফলে তাদের দেহ শক্তি উৎপাদন করতে পারে না। এমন সব মানুষদের জন্য পেঁপে ক্ষতিকর। কেননা পেঁপে ওই সকল মানুষদের শরীরে থাকা সামান্য শর্করাও নষ্ট করে দিতে পারে।

কাঁচা পেঁপে রেসিপি 

কাঁচা পেঁপে দিয়ে খুব সুস্বাদু কিছু খাবার তৈরি করা যায়। বাঙালিরা কাঁচা পেঁপের তরকারি বিভিন্ন শাক সবজির সাথে রান্না করে খায়। মাছ অথবা মুরগির মাংসের সাথেও কাঁচা পেঁপে খাওয়া হয়। তবে আজ আপনাদের জন্য একটু ব্যতিক্রম কয়েকটা রেসিপির কথা উল্লেখ করব। যেগুলো ঘরে রান্না করে দেখতে পারেন। 

পেঁপে ভর্তা:    খুব সহজেই আপনি পেঁপে ভর্তা বানাতে পারবেন। এটার জন্য তেমন একটি খরচের প্রয়োজন নেই। খোসা ছাড়িয়ে পেঁপে পানিতে সিদ্ধ করে নেবেন। সেদ্ধ করার সময় দুই চিমটি লবণ দেবেন। এতে সিদ্ধ হয়ে গেলে চামচ দিয়ে এটাকে ম্যাশ করে নেবেন। এরপর এতে সামান্য পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি, স্বাদমতো লবণ দিয়ে মাখিয়ে নেবেন। সাথে খাঁটি সরিষার তেল সামান্য পরিমাণে দিলে অমৃত হবে খেতে। 

আরও জানুন: আপেল এর উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঁচা পেঁপের জেলি:     বাজার থেকে আমরা প্রায় সময় বিভিন্ন কোম্পানির জেলি ক্রয় করে থাকি। কিন্তু একটি বারও কি আমরা প্রশ্ন করি, এই জেলি কি আসলেই ফল থেকে তৈরি? আপনি যদি ওই সকল কোম্পানির জেলির বয়ামে লেখা উপাদান সমূহ দেখেন, তাহলে দেখবেন সেখানে ফল নিই। বরঞ্চ আছে ফলের কৃত্রিম ফ্লেভার, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক। কিন্তু আমরা টাকা দিয়ে এ সকল ক্ষতিকর রাসায়নিকগুলো ক্রয় করে খাচ্ছি। বাচ্চাদের কেউ খেতে দিচ্ছি। ওরে নানাবিধ রোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

তাই আপনাদের জন্য খুব সহজে কাঁচা পেঁপের জেলি তৈরি করার রেসিপি এখানে উল্লেখ্য করছি।

কুচি কুচি করে কাটা কাঁচা পেঁপে পানিতে সিদ্ধ করে নিন। এরপর এটা সিদ্ধ হয়ে গেলে পানি ঝরিয়ে নিয়ে বেলেন্ডার অথবা পাটায় বেটে নিন।

সিদ্ধ কাঁচা পেঁপে বাটা একটি কড়াই বা ফ্রাই প্যানে নিয়ে এতে চিনি মিশানো শুরু করুন। যদি এক কাপ পেঁপে পাতা নেন তাহলে সমপরিমাণ চিনি দিতে হবে। চাইলে চিনি কমবেশি করতে পারেন। মনে রাখবেন, প্রাকৃতিক প্রিজারভেটি হচ্ছে চিনি। 

এরপর এক চামচ কনফ্লাওয়ার সামান্য পানিতে গুলিয়ে কড়াইতে ঢেলে দিন। এরপর ভালোভাবে নাড়তে থাকুন। যখন দেখবেন ঘন হয়ে আসছে তখন নামিয়ে ফেলুন। একটি কাঁচের ভরে ফ্রিজে ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে রুটির সাথে খেতে পারেন। অনেকে জেলি তৈরিতে ফুড কালার ব্যবহার করে। আপনার মন চাইলে আপনিও ফুড কালার ব্যবহার করতে পারেন। 

কাঁচা পেঁপের হালুয়া:     মিষ্টান্নের জন্য বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের অনেক সুনাম রয়েছে। হালুয়া মিষ্টান্নের মধ্যে অন্যতম একটি পদ। হালুয়া বিভিন্ন জিনিস দিয়েই তৈরি করা হয়। সুজি, বুট, বেসন। আপনারা কি জানেন কাঁচা পেঁপে দিয়েও খুব সুন্দর হালুয়া তৈরি করা যায়?

কাঁচা পেঁপে দিয়ে হালুয়া তৈরি করতে হলে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে তাহলে খুব সহজেই হালুয়া তৈরি করতে পারবেন। 

প্রথমে খোসা ছাড়িয়ে কাঁচা পেঁপে সিদ্ধ করুন। সিদ্ধ করার সময় পানিতে এক চিমটি লবণ ব্যবহার করুন। 

ভালোভাবে সিদ্ধ হওয়া হালুয়া পানি ঝরিয়ে রাখুন। এরপর একটি কড়াইতে সামান্য ঘি ঢেলে একটি তেজপাতা, একটি দারচিনি ও দুটি এলাচ সামান্য তেলে নিন। এরপর এতে সিদ্ধ হওয়া কাঁচা পেঁপে ঢেলে দিন। কিছুক্ষণ উচ্চ আঁচে নাড়তে থাকুন। যখন দেখবেন পানি মোটামুটি শুকিয়ে গেছে তখন একটু একটু করে চিনি দিতে থাকুন। যদি দুই কাপ পেঁপে দিয়ে থাকেন তাহলে এক কাপ চিনি দেবেন। চিনি ভালোভাবে গলে গিয়ে কাঁচা পেঁপের সাথে মিশে গেলে এটাতে কাজুবাদাম কুচি মিশিয়ে নামিয়ে ফেলুন। কিছুটা ঠান্ডা হয়ে এলে আপনার পছন্দমত আকৃতি দিয়ে নরমাল ফ্রিজে রেখে দিন। কিছুক্ষণ রেখে দিলে এটা জমে যাবে এবং খেতে দারুন হবে।

About Juyel Ahmed Liton

সুপ্রিয় “প্রোবাংলা” কমিউনিটি, ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ ছিলো এবং হয়তো সেই আকর্ষণটা অন্য দশ জনের থেকে একটু বেশি। ওয়েবসাইট, টাইপিং, আর্টিকেল লেখাসহ টেকনোলজি সবই আমার প্রিয়। জীবনে টেকনোলজি আমাকে যতটা ইম্প্রেস করেছে ততোটা অন্যকিছু কখনো করতে পারেনি। আর এই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ থেকেই লেখালেখির শুরু.....

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *