গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা

গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা 

আমাদের দেশে সাধারণত স্বাভাবিক অথবা ঠান্ডা পানি পান করা হয়। কিন্তু শীতকাল আসলেই মানুষজন গরম পানির দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাছাড়া শহর অঞ্চলের মানুষ এমনিতেই পানি ফুটিয়ে পান করে। কিন্তু সেই পানি ঠান্ডা করে তারপর খায়। আমাদের দেশে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ পাওয়া যেতে পারে যারা নিয়মিত গরম পানি পান করে। যদি গরম পানীয়র কথা বলা যায় তাহলে চা-কফি, সুপ এগুলো তো অনেকেই খায়। 

অনেকের আগ্রহ ‘গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা’ জানার। তাই আজ আমরা আমাদের এই আর্টিকেলে গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। এছাড়াও বেঁচে থাকবে গরম পানি খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা।

চায়নার মানুষ কেন সবসময় গরম পানি খায়

যদি আপনারা কেউ চায়নাতে যান তাহলে সেখানে একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন— প্রচন্ড গরমের মধ্যেও মানুষজন খাদ্য গ্রহণের সময় দেখবেন ধোঁয়া উঠা পানি পান করছে। আসলে ওটা হচ্ছে গরম পানি। ওরা শীত হোক বা গরম, সব সময় তারা গরম পানি খাবেই। এটা তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। 

কেন ওরা গরম পানি পান করে: চায়নার ঐতিহ্যগত চিকিৎসাশাস্ত্র মোতাবেক চায়নাদের বিশ্বাস— মানবদেহের অভ্যন্তর খুব গরম। এই গরমকে প্রতিহত করার জন্য গরম পানি খুব কার্যকর। তাই তারা গরম পানি পান করে অভ্যন্তরীণ গরমকে প্রতিহত করে। এটা তাদের একটি বিশ্বাস মাত্র। কিন্তু এর ফলে তাদের দেহে নানান ধরনের উপকার সাধন হয়ে আসছে।

আরও পড়ুন: চিড়া খাবার উপকারিতা ও অপকারিতা 

চায়নার মানুষেরা খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দী থেকে এই পদ্ধতি অবলম্বন করছে। কিন্তু ওই সময় তো আর বর্তমান যুগের মতো এত আগুন জ্বালাবার প্রযুক্তি ছিল না। এত কাঠ খড় পুড়িয়ে সব সময় পানি গরম করা ছিল খুব কষ্টসাধ্য। তাই ওই সময় গরম পানি পান করার ক্ষেত্রে বয়স্ক, গর্ভবতী বা পয়সাওয়ালা মানুষজন অগ্রাধিকার পেতো।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে পানি পান করা উপকারী এটা সকলেই জানে। কিন্তু তখন হালকা গরম পানি পান করা আরো বেশি উপকারী। ফলে খাদ্যের বিপাকক্রিয়া অর্থাৎ হজম করার শক্তি বৃদ্ধি পায়। মানসিকভাবে একটি প্রশান্তি লাভ হয়। 

আপনি যদি নিয়ম মেনে সঠিক উপায় গরম পানি পান করতে পারেন তাহলে সেটা আপনার জন্য হবে অমৃত সমান। তাই আমাদের ‘গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা’ আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ুন।

গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা 

গরম পানি

আপনি গরম পানি খান বা না খান। কিন্তু আপনার জেনে রাখা উচিত গরম পানি খাওয়ার উপকারিতাগুলো। এর ফলে আপনি গরম পানি পান করার প্রতি উৎসাহিত হবেন এবং অন্য কেউ উৎসাহিত করতে পারবেন। তাই আপনাদের জন্য ধারাবাহিকভাবে গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা নিচে বর্ণনা করা হলো।

  • যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যথা, গ্যাস ও অম্বলের সমস্যায় আছে, তাদের জন্য গরম পানি খুব ভালো উপকারে আসে। প্রত্যেকদিন সকালবেলা নিয়ম করে গরম পানি খেলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। 
  • আরও জেনে নিন: ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা 
  • অনেক মানুষ আছেন যাদের খাদ্য হজমে সমস্যা হয়। ফলে পেটে হালকা ব্যথা অথবা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। আমার অবস্থা গরম পানি আপনার জন্য মহৌষুধ হয়ে উঠতে পারে। খাদ্য হজম করার জন্য হলেও গরম পানি খেয়ে দেখতে পারেন। খাদ্য খুব দ্রুত হজম হয়ে যাবে।
  • আমাদের শরীরে বিভিন্ন প্রকার দূষিত পদার্থ থাকে। কিন্তু এই গরম পানি খাওয়ার ফলে সেই সকল দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়। এছাড়া গরম পানি দিয়ে যদি আপনি নিয়মিত গোসল করতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের মাংসপেশীর ব্যথা অনেকাংশে কমে যাবে। 
  • গরম পানি পান করার ফলে সাথে সাথে আপনি একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন। সেটা হচ্ছে গরম পানি খাওয়ার সাথে সাথেই দেখবেন শরীরে রক্ত সঞ্চালনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা মানব দেহের জন্য অনেক উপকারী।
  • মোটা দেহের অধিকারী মানুষদের জন্য গরম পানি খুবই উপকারী। গরম পানি পান করলে শরীরের চর্বি কেটে যায়। ফলে আপনি গরম পানি পান করলে দৈনন্দিন ব্যায়ামের সাথে আরো দ্রুত মেদ কমাতে পারবেন। মেদ ঝরাতে এক গ্লাস গরম পানির মধ্যে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়া লেবুর রসের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি। 
  • নারীদের প্রতি মাসে নির্দিষ্ট কয়েকটা দিন একটি দারুণ কষ্টের মধ্যে পার করতে হয়। নারী ক্ষেত্রে এই দিনগুলো প্রচণ্ড তল পেট ব্যথা হয়। এমতাবস্থায় গরম পানি কিছুটা হলেও আপনাকে প্রশান্তি দিতে পারে। কারণ অনেকের অভিজ্ঞতার দেখা গেছে তল পেট ব্যথা হলে গরম পানি খাওয়ার পর ব্যথা অনেকটা কমে গেছে। 
  • মাথা ব্যথা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। দুশ্চিন্তা করলেও মাথা ব্যথা। কিন্তু গরম পানি পান করার পর মাথা ব্যথা কমে যায়। তাই এখন থেকে মাথা ব্যথার ট্যাবলেট না খেয়ে গরম পানি খেয়ে দেখতে পারেন।
  • অনেক মানুষ আছে যাদের বারবার পিপাসা লাগে। গলা শুকিয়ে যায়। তাদের জন্য গরম পানি একটি ঔষধের মতো। গরম পানি পান করার ফলে গলা শুকিয়ে যাওয়ার হাত থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়। 
  • মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে গরম পানির জুড়ি নেই। গরম পানির সাথে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে কুলি করলে মুখের ব্যাকটেরিয়াসমূহ মারা যায়। ফলে মুখের দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

গরম পানি খাওয়ার অপকারিতা ও গরম পানি খাওয়ার নিয়ম এবং সর্তকতা

অনেকেই আছেন যারা সকালবেলা গরম পানি পান করেন। কিন্তু গরম পানি পান করার নিয়ম জানেন না। যেগুলো না জানার ফলে জিতে বিপরীত হতে পারে। প্রত্যেকদিন সকালে হালকা গরম পানি পান করা খুবই স্বাস্থ্যকর ও উপকারী অভ্যাসের মধ্যে একটি । এর রয়েছে বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্যগত উপকারি দিক। গরম পানি হজমে সাহায্য করে, বিপাক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, টক্সিন বের করে দেয় এবং হাইড্রেশন বজায় রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু নিয়ম না মেনে এবং অসতর্ক অবস্থায় গরম পানি পান করার ফলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই গরম পানি পান করার ক্ষেত্রে কয়েকটি সর্তক-বার্তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

জেনে নিন: লটকনের উপকারিতা ও অপকারিতা

পানি কি খুব গরম: যার রোজ সকালে শারীরিক উপকারিতার জন্য গরম পানি পান পান করেন— তাহা কতটুকু তাপমাত্রার গরম পানি খান? মনে রাখবেন গরম পানি খাওয়ার ক্ষেত্রে এটি কোনোভাবেই খুব গরম হওয়া যাবে না। কেননা বেশি তাপমাত্রার গরম পানি মুখ, গলা এবং পরিপাকতন্ত্রের সূক্ষ্ম টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ জন্য অবশ্যই গরম পানি পান করতে হবে কম তাপমাত্রা। এর ফলে পান করতে যেমন আরাম পাবেন দেহেরও তেমনি উপকার হবে।

ফিল্টার করা পানি ব্যবহার: জীবাণু থেকে বাঁচার জন্য শহরাঞ্চলের মানুষজন পানি ফুটিয়ে পান করে। যা খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু শহরের পানির মধ্যে অনেক সময় ধাতু জাতীয় বস্তু যথা— শিশা, দস্তা পাওয়া যায়। এছাড়া অনেক সময় ওয়াশার লাইনের ফাটলের ফলে কারখানার নানান ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল সমৃদ্ধ পানি মিশ্রিত হয়ে যায়। যেগুলো যতই ফুটিয়ে পান করা হোক না কেন সেটা মানুষের দেহের জন্য ক্ষতিকর হবেই। তাই শহরাঞ্চলে শুধুমাত্র ফুটিয়ে পানি পান করলেই তা নিরাপদ নয়। এর জন্য প্রয়োজন ভালোভাবে পানি ফিল্টার করা।

মুখ ধুয়ে পানি পান করুন: সকালবেলা খালি পেটে পানি পান করা নিঃসন্দেহে উপকারী। কিন্তু পানি পান করার আগে অবশ্যই মুখ ধুতে হবে। কেননা রাতের বেলা প্রচুর জীবাণু মুখে জামে। এমতাবস্থায় মুখ না ধুয়ে পানি পান করলে সেগুলো পেটে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা ক্ষতিকর। তাই অবশ্যই পানি পান করার আগে ব্রাশ করতে হবে।

দাঁত শিরশির থেকে রক্ষা: গরম পানি পান করার সাথে সাথে অনেক সময় দাঁত শিরশির করে। অনেকের মনে হতে পারে এটা গরম পানি খাওয়ার জন্য দাঁতে সমস্যা হচ্ছে। মূলত এটা মাঁড়িতে সমস্যা থাকার কারণে এমনটা হয়। এই সমস্যা যদি বেশি দেখা যায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয়।

অনেক পানি একত্রে না পান করা: স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষ যেভাবে একসাথে একগ্লাস দুই গ্লাস পানি পান করে ফেলে, গরম পানি সেভাবে পান করা উচিত নয়। চা যেভাবে আস্তে আস্তে চুমুক দিয়ে পান করা হয় ঠিক সেভাবে পান করা উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে— ধীরে ধীরে গরম পানি পান করলে উপকার পাওয়া যায়। নচেৎ এটা স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার না করা: গরম পানি কখনোই প্লাস্টিকের পাত্রে খাওয়া উচিত নয়। শুধু গরম পানি নয়, চা কফি ইত্যাদি রাস্তার দোকানগুলোতে ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের কাপে বিক্রি করা হয়। সেগুলোকে পরিহার করতে হবে। কেননা গরম পানির সংস্পর্শে আসলে প্লাস্টিক থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক নিঃসৃত হয়। এছাড়া প্লাস্টিক থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা বের হতে থাকে। যা মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলো কিডনিতে গিয়ে কিডনি ড্যামেজ করতে পারে। তাই কাচের গ্লাস অথবা সিরামিক, স্টিলের গ্লাস ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া অনেকে ইলেকট্রিক কেতলির সাহায্যে পানি গরম করে। খেয়াল রাখতে হবে সেই ইলেকট্রিক কেতলি কোনো অবস্থাতেই যেন প্লাস্টিকের না হয়।

About Juyel Ahmed Liton

সুপ্রিয় “প্রোবাংলা” কমিউনিটি, ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ ছিলো এবং হয়তো সেই আকর্ষণটা অন্য দশ জনের থেকে একটু বেশি। ওয়েবসাইট, টাইপিং, আর্টিকেল লেখাসহ টেকনোলজি সবই আমার প্রিয়। জীবনে টেকনোলজি আমাকে যতটা ইম্প্রেস করেছে ততোটা অন্যকিছু কখনো করতে পারেনি। আর এই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ থেকেই লেখালেখির শুরু.....

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *