ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা

ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা | ড্রাগন ফল বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি জনপ্রিয়, আশ্চর্যময় ও চাহিদা সম্পন্ন ফল হয়ে উঠেছে। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে চাষ করা হয়। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

আমরা অনেকেই ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানি। তবুও এটি খাবার পূর্বে সর্তকতার জন্য ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন এই লেখা থেকে।

ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদান

ড্রাগন ফল পুষ্টি উপাদানের জন্য সুপরিচিত। এটি একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর ফল। এটি ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে যেসকল পুষ্টি উপাদান থাকে, সেগুলোর পরিমাণ সহ নিচে তুলে ধরা হলো:

  • ক্যালোরি: ৫০ ক্যালোরি
  • প্রোটিন: ১.১ গ্রাম
  • ফ্যাট: ০.১ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট: ১১ গ্রাম
  • ভিটামিন সি: ৩.৫ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম: ৬ মিলিগ্রাম
  • আয়রন: ১.৯ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম: ১৮ মিলিগ্রাম 

এছাড়াও ড্রাগন ফলে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা

ড্রাগন ফলের উপকারিতা

ড্রাগন ফল বর্তমানে বাংলাদেশসহ সমগ্র পৃথিবীতে অসাধারণ পুষ্টিগুণের জন্য বিখ্যাত। আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ড্রাগন ফলের ব্যাপক উপকারিতা রয়েছে। নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে আমরা যেসকল উপকারিতা পেতে পারি, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিচে তুলে ধরা হলো:

(১) দৈহিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ

ড্রাগন ফল বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১, বি২, এবং বি৩। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে। এই সকল উপাদান গুলো আমাদের দৈনিক প্রস্তুতি চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করে। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আবার ভিটামিন বি শক্তি উৎপাদন এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রমে সহায়ক।

(২) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ 

ড্রাগন ফল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আমাদের শরীরকে মুক্ত র‍্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এতে বিটালেইন, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ফেনোলিক অ্যাসিডও থাকে। এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ক্যান্সারসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

(৩) হজমশক্তি বৃদ্ধি করে

ড্রাগন ফলে প্রচুর ফাইবার রয়েছে। এই ফাইবার আমাদের হজম প্রক্রিয়া আরও উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। তাই ড্রাগন ফল হজম নালীর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক এবং পেটের সমস্যা কমাতে কার্যকরী।

(৪) রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে

ড্রাগন ফল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। এটি ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়াতেও সহায়ক। তাই ড্রাগন ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীদের স্বল্প পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

(৫) হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

ড্রাগন ফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এতে থাকা ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এটি রক্তনালীর প্রাচীরকেও শক্তিশালী করে।

(৬) ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে 

ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বলিরেখা ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি কমায়। ত্বকের উপর ড্রাগন ফলের রস প্রয়োগ করলে, তা ময়েশ্চারাইজিং প্রভাব ফেলে।

(৭) ওজন কমাতে সহায়তা করে

ড্রাগন ফল কম ক্যালোরিযুক্ত এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ। ফলে এটি বারবার ক্ষুধা লাগার প্রবণতা দূর করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। 

(৮) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি সর্দি-কাশি এবং অন্যান্য সাধারণ সংক্রমণ প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

(৯) স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে

ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন বি এবং ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি মানসিক চাপ কমাতে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতেও কার্যকর।

ড্রাগন ফল একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং স্বাস্থ্যসম্মত ফল। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে এটি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তাহলে উপরোক্ত উপকারিতা গুলোর পাশাপাশি আরও বিভিন্ন উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।

গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি গ্রহণ মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ড্রাগন ফল গর্ভাবস্থায় বেশ কিছু উপকারিতা প্রদান করে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের সরবরাহ: ড্রাগন ফল ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১, বি২, এবং বি৩ সমৃদ্ধ। এগুলো মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। এছাড়া এতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, এবং ম্যাগনেসিয়ামও আছে যা গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
  • আয়রনের উৎস: গর্ভাবস্থায় আয়রনের চাহিদা বেড়ে যায়। ড্রাগন ফলে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। ফলে এটি অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
  • ফাইবারে ভরপুর: ড্রাগন ফল ফাইবারে সমৃদ্ধ হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। গর্ভাবস্থায় হজমের সমস্যা কমাতে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এটি উপকারী।
  • ফোলেটের চাহিদা পড়ুন: ড্রাগন ফলে কিছু পরিমাণ ফোলেট থাকে। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশে এই ফোলেটের চাহিদা অপরিসীম।
  • হাইড্রেশন: ড্রাগন ফলের উচ্চ জলীয় উপাদান মা ও শিশুকে হাইড্রেটেড রাখতে সক্ষম। এটি গর্ভাবস্থায় শরীরের পানি শূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি সর্দি-কাশি এবং অন্যান্য সাধারণ সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

তাই গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেয়েদের সাথে পরিমাণে ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত।

ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা

ড্রাগন ফলের খোসারও কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। ড্রাগনের খোসার মাধ্যমে আমরা যেসকল উপকারিতা গুলো পেতে পারি, নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো:

  • ড্রাগন ফলের খোসা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি কোষের ক্ষতি রোধ করে এবং বার্ধক্যের লক্ষণ কমায়।
  • খোসায় ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • ড্রাগন ফলের খোসা প্রাকৃতিক রং হিসেবে বিভিন্ন খাদ্য ও পানীয়তে ব্যবহার করা যায়।
  • খোসার পেস্ট ত্বকে লাগালে তা ময়েশ্চারাইজিং প্রভাব ফেলে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
  • ড্রাগন ফলের খোসা প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

সাধারণত ড্রাগন ফলের খোসার তেমন ব্যবহার দেখা যায় না। তবে এটি স্পষ্ট যে, ড্রাগন ফল এবং এর খোসা উভয়ই পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে থাকে। তবে খোসা ছাড়িয়ে ভিতরের মূল অংশটি খাওয়াই উত্তম।

ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম

ড্রাগন ফল উপকারী পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এবং নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে এর সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। এর জন্য আমরা নিম্নোক্তভাবে ড্রাগন ফল খেতে পারি:

প্রথমে, তাজা ড্রাগন ফল বেছে নিন। তারপর ড্রাগন ফলটি মাঝ বরাবর কেটে দুটি ভাগ করে নিন। এরপর একটি চামচ ব্যবহার করে ভিতরের সাদা বা লাল অংশটি বের করে নিন। এবার এটি সরাসরি খেতে পারেন। অথবা, আপনি চাইলে সালাদ, দই বা দুধের সাথে মিশিয়ে এবং জেলি বা ডেজার্ট বানিয়েও খেতে পারেন।

ড্রাগন ফলের অপকারিতা

ড্রাগন ফল সাধারণত স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর হলেও কিছু মানুষের জন্য এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। ড্রাগন ফলের যেসকল ক্ষতিকারক দিকগুলো দেখা দিতে পারে, সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:

  • কিছু লোকের ড্রাগন ফলে বিভিন্ন প্রকার এলার্জি হতে পারে। যেমন: ত্বকের র‍্যাশ, চুলকানি, ফোলা, শ্বাসকষ্ট, এবং মুখের ভিতরে বা গলার ফোলা ইত্যাদি।
  • ড্রাগন ফলের উচ্চ ফাইবার উপাদান কিছু মানুষের জন্য অন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে গ্যাস, ফোলাভাব এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
  • অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা, পেটের ব্যথা হতে পারে।
  • এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করলেও, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। 
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ঔষধ সেবনকারীদের জন্য এটি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। 
  • ড্রাগন ফলের রস ত্বকে লাগলে অনেকের চুলকানি বা র‍্যাশ হতে পারে।
  • ছোট শিশুদের ড্রাগন ফল খাওয়ানোর সময় সতর্ক থাকা উচিত।

শেষকথা 

ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এই ছিল আজকের বিস্তারিত আলোচনা। ড্রাগন ফল খাওয়ার সময় এর অপকারিতার কথা মাথায় রেখে পরিমিত পরিমাণে এবং সঠিকভাবে খেলে এটি আমাদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top