চিয়া সিড এর উপকারিতা - Chia Seeds

চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা

চিয়া সিড (Chia seeds) একটি সুষম খাদ্য বীজ। এটি বহুগুণ সমৃদ্ধ এবং অসংখ্য পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি খাদ্য উপাদান। সুস্বাস্থ্যের জন্য চিয়া সিড এর উপকারিতা রয়েছে অনেক। 

বর্তমানে অত্যাধিক গুনাগুনের কারণে চিয়া সিড বাংলাদেশেও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যদিও আমরা এই বীজের মাধ্যমে কতভাবে উপকৃত হতে পারি, তা এখনো আমাদের মাঝে প্রচারিত হয়নি। হয়তো আপনিও ভাবছেন বিভিন্ন অনলাইন সবথেকে চিয়া সিড ক্রয় করবেন। 

তাই আগে থেকেই চিয়া সিড এর উপকারিতা, চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা, চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম, দাম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন এই লেখা থেকে।

চিয়া সিড কি?

চিয়া সিড হলো মরুভূমিতে জন্মানো একটি সালভিয়া হিসপানিকা (Salvia Hispanica) উদ্ভিদের বীজ। এই উপকারি বীজটির আদি জন্মস্থান হলো সেন্ট্রাল আমেরিকা। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গাতে এটি পাওয়া যায়। এটি একটি বীজ হলেও এর পুষ্টিগুণ বিভিন্ন ফল ও গোটা শস্যকেও হার মানায়। তাই এটিকে সুপারফুডও বলা হয়।

আরও পড়ুন: কিসমিসের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

চিয়া সিডে কি কি উপাদান আছে | চিয়া সিড এর পুষ্টিগুন

চিয়া সিড একটি বহু পুষ্টি সমৃদ্ধ বীজ। ওজনের অনুপাতে চিয়া সিডে আছে:

  • দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম,
  • কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি,
  • পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন,
  • কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম,
  • মুরগির ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন,
  • এবং স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩।

প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিডে যেসকল পুষ্টিগুণ থাকে সেগুলো নিচে দেওয়া হলো:

  • ভিটামিন এ – ৫৪ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন সি – ১.৬ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন ই – ০.৫ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম – ৬৩১ মিলিগ্রাম
  • প্রোটিন – ১৫.৫ গ্রাম
  • মনোস্যাচুরেটেড – ২.৩ গ্রাম
  • পলিঅনস্যাচুরেটেড – ২৩.৭ গ্রাম
  • খাদ্য শক্তি – ৪৮৬ ক্যালোরি
  • কার্বোহাইড্রেট – ৪২.১ গ্রাম
  • ফাইবার – ৩৪.৪ গ্রাম
  • ফ্যাট – ৩০.৭ গ্রাম
  • স্যাচুরেটেড – ৩.৩ গ্রাম
  • ওমেগা ৩ – ১৭.৮ গ্রাম
  • ওমেগা ৬ – ৫.৮ গ্রাম
  • রিবোফ্লাভিন – ০.১৭ মিলিগ্রাম
  • নিয়াসিন – ৮.৮৩ মিলিগ্রাম
  • ফোলেট – ৪৯ মাইক্রোগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম – ৩৩৫ মিলিগ্রাম
  • ম্যাঙ্গানিজ – ২.৭২ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস – ৮৬০ মিলিগ্রাম
  • থায়ামিন – ০.৬২ মিলিগ্রাম
  • আয়রন – ৭.৭ মিলিগ্রাম
  • পটাসিয়াম – ৪০৭ মিলিগ্রাম
  • দস্তা – ৪.৬ মিলিগ্রাম
  • এবং পানি – ৫.৮ গ্রাম।

এতো সকল পুষ্টি উপাদান থাকার কারণেই পুষ্টিবিদরা একে সুপার ফুড বলে সম্মোধন করেছেন।

চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা

চিয়া সিড আমাদের অনেকের কাছে পরিচিত। তবে এর যে ব্যাপক উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে আমরা সকলে অবগত নই। আমাদের শারীরিক সুস্থতা, কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, সৌন্দর্য রক্ষা, ওজন নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি নানা শারীরবৃত্তীয় কাজে এই বীজের স্পষ্ট উপকারী প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। নিচে চিয়া সিডের উপকারিতা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি তুলে ধরা হলো:

  • এটি শরীরের কর্মক্ষমতা ও শক্তি বাড়ায়।
  • চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।
  • চিয়া সিড মলাশয় পরিষ্কার রাখে, এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
  • এটি হাড়ের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • এটি রক্তে চিনির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে বলে ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক।
  • হাটু ও শরীরের জয়েন্টের ব্যথা দূর করে।
  • এটি শরীরের বিষাক্ত পদার্থগুলোকে বের করতে সাহায্য করে।
  • প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করে।
  • বাচ্চাদের শরীরের পর্যাপ্ত পুষ্টির জন্য চিয়া সিড খাওয়াতে পারেন।
  • এটি ভ্রুনের দুর্বলতা কমায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে, শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে ও কোষ্টকাঠিন্য দূর করে। একজন গর্ভবতী মায়েরা প্রতিদিন মাত্র ২৮ গ্রাম বীজ খেতে পারবেন। তবে পরিমাণ এর চেয়ে বেশি পরিমাণে খেলে শরীরে সমস্যা ও দেখা যেতে পারে।
  • আমাদের ত্বককে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
  • দেহের অভ্যন্তরীণ মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করার মাধ্যমে এটি ওজন কমাতে সহায়তা করে।

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে, চিয়া সিড এর ব্যাপক পুষ্টিগুণ রয়েছে। কিন্তু এই পুষ্টিগুণ গুলোর সঠিক ও ১০০ ভাগ উপযুক্ত ফলাফল পেতে সঠিক নিয়মে এটি সেবন করা উচিত। নিচে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সমূহ তুলে ধরা হলো:

  • সাধারণভাবে পরিষ্কার পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে খেয়ে নিতে পারেন।
  • পছন্দের যেকোনো ফলের রসের সাথে ২-৩ টেবিল চামচ চিয়া সীড দিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে খেয়ে নিন।
  • হালকা গরম পানিতে ২০-৩০ মিনিট চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে সেটি পান করুন।
  • বাদাম, শুকনো ফল, ওটস, চিয়া সিড এবং অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে মিশ্রণ, তৈরি করে দিনের যেকোনো সময় খেতে পারেন।
  • টক দই, চিয়া সিড ও শসা দিয়ে স্মুথি বানিয়ে হালকা খাবার হিসেবে খেতে পারেন। 
  • হজম ক্ষমতা বাড়াতে রাতে ঘুমনোর আগে চিয়া সিড ভেজানো পানি পান করুন।
  • রুটি বানানোর সময় আটার মিশ্রণে চিয়া সিড ব্যবহার করতে পারেন।
  • ফ্রুট সালাদে মিশিয়ে খেতে পারেন। 
  • পছন্দের ফল, মধু ও চিয়া সিড মিশিয়ে জেলি তৈরি করে খেতে পারেন।
  • বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি শরীর থেকে সমস্ত টক্সিন দূর করতে চান, তাহলে সকালে খালি পেটে ভেজানো চিয়া সিড ও এর পানি পান করুন।

ইত্যাদি বিভিন্নভাবে আপনি চিয়া সিড সেবন করতে পারবেন। এর জন্য কোন নির্ধারিত নিয়ম নেই। তবে অবশ্যই মাত্রাতিরিক্ত সেবন করা থেকে বিরত থাকবেন।

ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম 

বাংলাদেশে বহু মানুষের মাঝে ওজন কমানোর জন্য বিশেষ খাবার হিসেবে চিয়া সিড খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। আমাদের শরীরের ওজন দ্রুত কমাতে এর বিশেষ উপকারিতা রয়েছে। ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়ার পাশাপাশি শরীরচর্চা ও ডায়েট চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে খুব দ্রুতই ফলাফল পাবেন। 

ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম হলো:

  • ১ গ্লাস পানির মধ্যে ২ চা চামচ চিয়া সিড ও ২ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে পানিতে সাধারণ তাপমাত্রায় অথবা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন। তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

এছাড়াও যেকোন নিয়মে পরিমিত পরিমাণে চিয়া সিড খেলে তা ওজন কমাতে কার্যকরী প্রভাব ফেলবে।

চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা | চিয়া সিড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

চিয়া সিড এর উপকারিতার পাশাপাশি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। পরিমাণের তুলনায় বেশি সেবন করলে এর ক্ষতিকারক প্রভাব গুলো আপনার দেহে লক্ষণীয় হতে পারে। যেমন:

  • চিয়া সীড বেশি পরিমাণে সেবন করলে প্রোটেস্ট ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
  • পরিপাকজনিত রোগে এখনতো ব্যক্তিদের জন্য চিয়া সিড খাওয়া উচিত নয়।
  • বদহজমের সমস্যা হতে পারে।
  • অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে ত্বকে ফুসকুড়ি, অ্যালার্জি, চুলকানি, এমনকি অ্যানাফিল্যাক্সিসের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত সেবন করলে রক্তচাপ বেশি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • অস্বাভাবিক ভাবে ওজন কমে যেতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় বেশি পরিমাণে চিয়া সীড খেলে ডিহাইড্রেশন, ডায়রিয়া ও রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন ইত্যাদি। 

চিয়া সিড এর দাম কত?

বাংলাদেশের চিয়া সিডের মানের উপর ভিত্তি করে এর দাম ভিন্ন হয়। সাধারণ মানের ১ কেজি চিয়া সিডের দাম ৮০০-১,০০০ টাকা। ভালো কোয়ালিটির ১ কেজি চিয়া সিড এর দাম ১,৫০০-৩,০০০ টাকা।

শেষকথা 

য়া সিড এর উপকারিতা যে কত বেশি, তা উপরোক্ত আর্টিকেল থেকেই ধারণা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন মসলার ও ভেষজ বীজের পাইকারি দোকান গুলো থেকে এই বীজ ক্রয় করতে পারবেন। এছাড়াও বর্তমানে সবচেয়ে সহজ উপায় হলো- বিভিন্ন ‘অনলাইন শপ’ থেকে অর্ডার করা।

About Juyel Ahmed Liton

সুপ্রিয় “প্রোবাংলা” কমিউনিটি, ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ ছিলো এবং হয়তো সেই আকর্ষণটা অন্য দশ জনের থেকে একটু বেশি। ওয়েবসাইট, টাইপিং, আর্টিকেল লেখাসহ টেকনোলজি সবই আমার প্রিয়। জীবনে টেকনোলজি আমাকে যতটা ইম্প্রেস করেছে ততোটা অন্যকিছু কখনো করতে পারেনি। আর এই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ থেকেই লেখালেখির শুরু.....

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *