আপেল এর উপকারিতা 

আপেল এর উপকারিতা ও অপকারিতা

আপেল শীত প্রধান দেশ সমূহের একটি প্রধান ফল। ইউরোপে প্রাচীনকাল থেকে আপেল খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এছাড়া মধ্য-এশিয়াসহ, চীন, জাপানেও অনেক আগে থেকে আপেল খাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে আপেল একটি বিলাসী ফল। ব্রিটিশরা যখন এদেশে আসে তখন এই দেশের স্থানীয় ফলগুলোকে ইংরেজি নামকরণ করা শুরু করে। শুধু এই দেশেই নয়, ব্রিটিশদের অন্যান্য যে সকল জায়গায় উপনিবেশ ছিল সেখানকার স্থানীয় ফলগুলোকেও ইংরেজিতে নামকরণ করা শুরু করে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এদের বেশিরভাগ নামগুলোতে আপেল শব্দটি ব্যবহার করেছে। কেননা ব্রিটিশরা সবচাইতে বেশি আপেল ফল খেয়েই বড় হয়েছে।

যেমন আনারসের নাম পাইন-আপেল, কদবেলের নাম উড আপেল, তালের শাঁস এর নাম আইস আপেল। এছাড়া অন্যান্য দেশের কিছু স্থানীয় ফলের নাম রেখেছে স্টার আপেল, আপেল গোয়াভা ইত্যাদি।

আপেল এর পুষ্টিমান

আপেলের অধিকাংশ অংশ পানি দিয়ে তৈরি। আমরা এতদিন আপেলের অনেক প্রশংসা শুনেছি। আজ জানবো আপেলের মধ্যে থাকা ভিটামিন, খনিজ উপাদান সমূহের পরিমাণ। 

১০০ গ্রাম খোসাসহ আপেলের মধ্যে থাকা পুষ্টিমান—

  • খাদ্যশক্তি ৫২ কিলোক্যালরি
  • শর্করা ১৩.৮১ গ্রাম
  • চিনি ১০.৩৯ গ্রাম
  • খাদ্যআঁশ ২.৪ গ্রাম
  • চর্বি ০.১৭ গ্রাম
  • আমিষ ০.২৬ গ্রাম
  • জলীয় অংশ ৮৫.৫৬ গ্রাম
  • ভিটামিন এ ৩ আইইউবিটা
  • ক্যারোটিন ২৭ আইইউ
  • লুটেইন ২৯ আইইউ
  • থায়ামিন ০.০১৭ মিলিগ্রাম
  • রিবোফ্লেভিন ০.০২৬ মিলিগ্রাম
  • নিয়াসিন ০.০৯১ মিলিগ্রাম
  • প্যানটোথেনিক অ্যাসিড ০.০৬১ মিলিগ্রাম
  • ফোলেট ৩ আইইউ
  • ভিটামিন সি ৪.৬ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন ই ০.১৮ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন কে ২.২ আইইউ
  • ক্যালসিয়াম ৬ মিলিগ্রাম
  • আয়রন ০.১২ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম ৫ মিলিগ্রাম
  • ম্যাংগানিজ ০.০৩৫ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস ১১ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম ১০৭ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম
  • জিংক ০.০৪ মিলিগ্রাম
  • ফ্লোরাইড ৩.৩ আইইউ

আপেল এর উপকারিতা 

আপেল এর উপকারিতা 

বলা হয়ে থাকে প্রতিদিন আপেল খেলে চিকিৎসক থেকে দূরে থাকা যায়। অর্থাৎ রোগ বালাই কম হয় তাই চিকিৎসকের ধারের কাছেও যেতে হয় না। আসলেই কি তাই? আসুন জেনে নিই আপেল খাওয়ার উপকারিতা সমূহ। 

আরও পড়ুন: তালমাখনা উপকারিতা ও অপকারিতা 

  • পরিপাক সহজ করে আপেল: প্রতিদিন নিয়মিত  একটি করে আপেল খাওয়া পরিপাকতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ভালো। আপেলে আঁশের পরিমাণ থাকে অনেক বেশি— যা খাবার হজমে খুবই সাহায্য করে। এছাড়া আপেলের মধ্যে আছে একটি বিশেষ ধরনের আঁশ— যা পরিপাকতন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করে। এতে হজম হয় সহজ, পরিপাকতন্ত্রও থাকে সুস্থ। আপেলে থাকা আশ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকেও পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করে।
  • কোলেস্টেরল কমায় আপেল:   হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষায় আপেলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন সংক্ষেপে এলডিএল। এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর কোলেস্টেরল, যার পরিমাণ রক্তে বেড়ে গেলে হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন রোগ, হার্ট অ্যাটাক, এমনকি স্ট্রোক অবধি হতে পারে। আপেল রক্তে এই এলডিএল হ্রাস করতে সাহায্য করে। যারা প্রতিদিন একটি করে আপেল খান তাদের রক্তে এই ক্ষতিকর কোলেস্ট্রলের মাত্রা অনেক কম থাকে। ফলের হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকে।
  • ওজন কমায় আপেল:   যদি নিয়ত করে থাকেন দ্রুত ওজন কমানোর, তাহলে রোজ মাত্র একটি আপেল আপনাকে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। এর মধ্যে থাকা আর আপনার ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমিয়ে দেবে। এতে করে আপনার অতিরিক্ত ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। ফলে অনেক অংশে আপনি ওজন বৃদ্ধি হতে রক্ষা পাবেন।
  • ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম আপেল:   বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে আপেল ক্যান্সার হতে রক্ষা করে। ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে হ্রাস করে। 
  •  ডায়াবেটিস রোগীর মিষ্টি ফল:   আপেলের মধ্যে আছে প্রাকৃতিক চিনি। ডায়াবেটিস রোগীরা যেহেতু অতিরিক্ত চিনি খাদ্যে গ্রহণ করতে পারে না তাই তারা মিষ্টি স্বাদ পেতে আপেল খেতে পারে। তবে পরিমাণ মতো আপেল খেলে ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা কম। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে দেহে সুগারের পরিমাণ বেশি থাকলে কখনোই আপেল খাওয়া যাবে না।

আপেল এর অপকারিতা

বাংলাদেশের সিনেমা নাটকে একটি জিনিস ফলাও করে প্রচার করা হয় যে— বড়লোকদের খাবার টেবিলে ফলের ঝুড়ি থাকে। এবং সেখানে শোভা পায় আপেল। আপনি নিঃসন্দেহে খুবই পুষ্টিকর একটি ফল। কিন্তু আপনি কি জানেন এটার কিছু অপকারিতা রয়েছে। 

জেনে নিন: সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আপেলের উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলে আপেলের অপকারিতা সমূহ তুলে ধরা হলো।

  • আপেলে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। তাই বেশি পরিমাণে আপেল খেলে আপেলে থাকা কীটনাশক অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার আশঙ্কা বৃদ্ধি করে। এমনকি, অন্ত্রে ক্যানসারও হয়ে যেতে পারে। পাকস্থলীর অনেক ক্ষতি হতে পারে। মলদ্বারে নানাবিধ অসুখ হতে পারে কীটনাশকের কারণে। এছাড়া, রক্তে দূষিত পদার্থের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, দেহে বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • বাজারে যে সকল আপেল দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো সব সময় চকচক করতে থাকে। কিন্তু আপনি কি জানেন কেন আপেল এত চকচক করে? আপেলকে চকচকে করাতে কৃত্রিম মোম ব্যবহার করা হয়। যদিও প্রাকৃতিক ভাবে আপেলের গায়ে অল্প পরিমাণ মোম জাতীয় পদার্থ থাকে। কিন্তু ওটা বেশি দিন দীর্ঘ স্থায়ী হয় না। তাই ব্যবসায়ীরা আপেলকে তাজা দেখাতে এতে পেট্রোলিয়াম জেল ও মোম ব্যবহার করে। হলে এই সকল পদার্থ পেটে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • আপেল একটি মিষ্টি ফল। এটাতে ফ্রুট্রোজ নামে এক প্রকার চিনি থাকে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এইজন্য ডাক্তারগণ ডায়াবেটিস রোগীদেরকে দিনে সর্বোচ্চ দুইটি আপেল খাওয়ার কথা বলেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে ওই অবস্থায় যেন তার সুগারের মাত্রা কম থাকে। এছাড়া আপেল বেশি খেলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়।
  • আপেলে একপ্রকারের এসিড রয়েছে। এই অ্যাসিড দাঁতের বহিরাবরণ ক্ষতিগ্রস্ত করে। যদি কারো দাঁতে সমস্যা থাকে তাহলে তার উচিত হবে ডাক্তারের পরামর্শক্রমে আপেল খাওয়া। 

“আপেল নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা: আপেল আমাদের দেশীয় কোনো ফল নয়। বাংলাদেশ আপেলের চাষ হয় না। ভিনদেশ থেকে আপেল ক্রয় করে আনতে হয়— এতে করে বাংলাদেশের প্রচুর পরিমাণে অর্থ বিদেশে চলে যায়। আপেল খুবই দামি ফল, কিন্তু আমাদের দেশের পেয়ারা, টমেটো এগুলোর থেকে এর পুষ্টিমান কম। তাই আমি মনে করি আমাদের দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে হলেও দেশীয় ফল গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। 

আমাদের দেশের একটি রেওয়াজ হচ্ছে কোনো রোগী দেখতে গেলে আপেল নিয়ে যাওয়া। মনে করা হয় আপেল অনেক পুষ্টিকর তাই রোগীর জন্য এটা ভালো হবে। কিন্তু এই আপেলে যে কত প্রকারের রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছে তা কি আমাদের জানা? একটি আপেল বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসে গ্রাহকের হাতে পৌঁছাতে কম করে হলো ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। একটিবার চিন্তা করুন, একটি ফল এতদিন কীভাবে তাজা থাকে? নিশ্চয়ই এটা রাসায়নিক ছাড়া সম্ভব নয়। 

তাই আমাদের উচিত হবে দেশীয় তাজা ফলগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া এবং রাসায়নিক মুক্ত খাদ্য আহার করা। তবেই তো মানুষ থাকবে সুস্থ।”

আপেল সিডার ভিনেগার তৈরির রেসিপি

বিদেশে আপেল দিয়ে নানা ধরনের রেসিপি তৈরি করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে যেহেতু এটা বিলাসী খাদ্য তাই সাধারণত এটা ফল হিসেবেই মাঝেমধ্যে খাওয়া হয়। কিন্তু আপেল দিয়ে আপনি বানাতে পারেন খুব সহজেই আপেল সিডার ভিনেগার। এটা শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া রূপচর্চায়ও এটার ব্যবহার রয়েছে।

আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি:   তিন থেকে চারটি লাল রঙের আপেল পুষ্ট আপেল নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে আপেলে যেন কোনো প্রকার দাগ বা ক্ষত না থাকে। এরপর এটা ভালোভাবে ধুয়ে প্রত্যেকটা আপেল চার থেকে পাঁচটা টুকরো করে নিতে হবে।

এরপর গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করা কাঁচের বোয়ামে আপেলের টুকরোগুলো ঢেলে দিন। খেয়াল রাখবেন বয়াম যেন সম্পূর্ণ না ধরে। এক চতুর্থাংশ ভরবেন। এরপর দেড় কাপ পানিতে তিন টেবিল চামচ ব্রাউন সুগার বা দেশি চিনি গুলে নেবেন। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন চিনি গলার পাত্র এবং চামচ যেন পরিষ্কার হয়। সবচাইতে ভালো হয় গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে। কারণ গরম পানি দিয়ে ধুলে কোনো প্রকার ব্যাকটেরিয়া থাকবে না এবং ভিনেগার সুন্দরভাবে তৈরি হবে।

চিনি মিশ্রিত পানি বোয়ামে ঢেলে দিয়ে একটি মোটা পরিষ্কার সাদা কাপড় দিয়ে বয়াম ভালোভাবে আটকে ফেলুন। এরপর একটি অন্ধকার স্থানে সেটা দুই সপ্তাহের জন্য রেখে দিতে হবে। খেয়াল রাখবেন— ওই স্থান যেন কোন মতে স্যাঁতস্যাঁতে বা পোকামাকড় ইঁদুরের আস্তানা না হয়। দুইদিন পর পর কাপড় সরিয়ে কাঠের চামচ দিয়ে আপেল গুলোকে নিচের দাবিয়ে দেবেন। কখনোই কোনো ধাতব চামচ ব্যবহার করবেন না। কেননা এই ভিনেগার খুবই এসিডিক যা ধাতব বস্তুর সাথে বিক্রিয়া করতে পারে।

দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর দেখবেন আপনার ভিনেগার তৈরি হয়ে গিয়েছে। এরপর একটি সুতির কাপড়ে আলতো করে ছেকে ভিনেগারটুকু আলাদা করে নেবেন। অবশ্যই কাচের বয়ামে রাখতে হবে এবং সূর্যালোক থেকে দূরে রাখতে হবে।

আরও জানুন: কুমড়া বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা 

আপেল খাওয়ার আগে সতর্কতা 

আপেলের বীজে স্বল্প পরিমাণে অ্যামিগডালিন থাকে। এটা একটি চিনি এবং সায়ানাইড যৌগিক— যাকে সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড বলা হয়। আপেলের বীজ অল্প পরিমাণে খাওয়ার ফলে তেমন কোনো খারাপ প্রভাব পড়ে না। 

তবে বেশি পরিমাণে খেলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। গৃহপালিত পশু পাখিকে ইউরোপে প্রচুর পরিমাণে আপেল খাওয়ানো হতো। দেখা যেত মাঝেমধ্যে বিষক্রিয়া হয়ে পশুর মৃত্যু ঘটেছে। 

এছাড়া মানুষ আপেলের বীজকে বিষ হিসেবেও ব্যবহার করেছে অন্যকে হত্যা করতে। এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে ইতিপূর্বে।

About Juyel Ahmed Liton

সুপ্রিয় “প্রোবাংলা” কমিউনিটি, ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ ছিলো এবং হয়তো সেই আকর্ষণটা অন্য দশ জনের থেকে একটু বেশি। ওয়েবসাইট, টাইপিং, আর্টিকেল লেখাসহ টেকনোলজি সবই আমার প্রিয়। জীবনে টেকনোলজি আমাকে যতটা ইম্প্রেস করেছে ততোটা অন্যকিছু কখনো করতে পারেনি। আর এই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ থেকেই লেখালেখির শুরু.....

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *