জামানত ছাড়া ব্যাংক লোন বিদেশ গমনকারীদের জন্য সুখবর। বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ধারায় রেমিট্যান্স অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি পাতে বৈধ ভাবে চাকরি নিয়ে শ্রমিকদের বিদেশ গমন লক্ষে, বেশ কিছু ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছে এবং জামানত ছাড়া ঋণ প্রকল্প চালু করেছে দেশের ৫ টি ব্যাংক ।
যারা টাকার অভাবে বিদেশ গমন করতে পারছেন না , তাদের জন্য এটি একটি বিরাট সুযোগ। স্বল্প পরিমাণ সুদে লোন দিয়ে সহযোগিতা করবে ব্যাংক গুলো। তবে শর্ত হলো বৈধ ভাবে চাকরি নিয়ে আপনাকে বিদেশ যেতে হবে এবং বিদেশে গিয়ে চাকরি করে ঋণ পরশোধ করতে পারবেন । এখন পর্যন্ত যে সকল ব্যাংক জামানত ছাড়া ব্যাংক লোন প্রকল্প চালু করেছে, এবার সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবো ।
জামানত ছাড়া ব্যাংক লোন দাতা ব্যাংক সমূহঃ
- ১. সোনালী ব্যাংক
- ২. প্রবাসী ব্যাংক
- ৩. অগ্রণী ব্যাংক
- ৪. পূবালী ব্যাংক
- ৫. এন আর বি গ্লোবাল ব্যাংক
৯ থেকে ১০ % সুদে লোন দিচ্ছে এই ৫ টি ব্যাংক । শুধু মাত্র বৈধ ভাবে চাকরি নিয়ে বিদেশ যেতে আগ্রহী শ্রমিকদের জন্য ।আপনি ২.৫ লক্ষ টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারবেন এবং লোন পরিশোধের মেয়াদ হচ্ছে ১ থেকে তিন বছর পর্যন্ত। তবে ভিসা নিশ্চিন্ত হওয়ার পরই আপনি লোন এর জন্য আবেদন করতে পারবেন । আবেদনকারীকে ভিসার ২টি ফটো কপি অবশ্যই ব্যাংকে দাখিল করতে হবে। আপনার কাগজ পত্র গুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই এর পর তিন দিনের মধ্যে ফোন কল অথবা এস এম এস এর মাধ্যমে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্বান্ত জানিয়ে দেবে ।

সোনালী ব্যাংক- জামানত ছাড়া লোনঃ
প্রবাসী কর্মসংস্থান ঋণ প্রকল্প নামে বিদেশীদের সুবিধার্থে এ ঋণ প্রকল্প চালু করেছে সোনালী ব্যাংক। নিয়মানুযায়ী অনধিক ৩ লক্ষ টাকা লোন নিতে পারবেন সোনালী ব্যাংকের এ প্রকল্পের মাধ্যমে। দুই অথবা তিন বছরের মধ্যে ২৪/৩৬টি কিস্তিতে ঋন পরিশোধ করতে হবে। প্রথম তিন মাস আপনাকে কিস্তি পরিশোধ করতে হবে না। সোনালী ব্যাংকের এ প্রকল্পের ঋণের জন্য আপনাকে পরিশোধ করতে শতকরা ১২% সুদ।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক – জামানত ছাড়া লোনঃ
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কর্তৃক বিদেশীদের জন্য জামানত ব্যতিত যে ঋণ প্রকল্পটি প্রদান করে থাকে তার নাম দিয়েছে অভিবাসন ঋণ প্রকল্প। অভিবাসন ঋণ প্রকল্পের আওতায় ঋণ প্রাপ্ত হলে শতকরা ৯% হারে আপনাকে সুদ প্রদান করতে হবে। বিভিন্ন দেশ অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ভিন্ন হবে। যেমন- আপনি যদি সিঙ্গাপুর যেতে চান তাহলে, আপনার লোন পরিশোধের মেয়াদ থাকবে প্রতি মাসে ১ (এক) বছর। যা প্রদান করতে প্রতি মাসে মাসিক কিস্তি হিসাবে। তাছাড়া অন্য কোন দেশে যেতে চাইলে তা ২২টি কিস্তিতে পরিশোধ যোগ্য। এই লোনের বিশেষ সুবিধা হচ্ছে লোনটি আপনি পাওয়ার পর প্রথম দুই মাস কোন প্রকার কিস্তি প্রদান করতে হবে না।
আরো পড়ুন: কিভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফ্রান্স যাবেন?
অগ্রণী ব্যাংক- জামানত ছাড়া লোনঃ
অগ্রণী ব্যাংক বিদেশীদের জন্য লোনের যে সুযোগ রেখেছে সেটির নাম হচ্ছে প্রবাসী ঋণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় অগ্রণী ব্যাংক দিচ্ছে ৫০ হাজার হতে অনধিক ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। তবে আপনার বয়সসীমা ১৮-৪৫ বৎসর বয়সের মধ্যে এবং অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। এ লোন প্রকল্পে ১৫-১৮ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক- জামানত ছাড়া লোনঃ
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক কর্তৃক এ প্রকল্পটির নাম এনআরবি মাইগ্রেশন লোন। অনধিক ৩ লক্ষ টাকা লোন নিতে পারবেন এ প্রকল্পের আওতায়। শতকরা ১৪% হারে সুদে ১/২/৩ বছরে এই লোন পরিশোধ করতে হবে। প্রথম ৩ মাস আপনাকে কোন কিস্তি প্রদান করতে হবে না। লোন প্রাপ্যতার বয়সসীমা ১৮-৫৫ বছর এবংঅবশ্যই বাংলাদেশের একজন নাগরিক হতে হবে।
পূবালী ব্যাংক – জামানত ছাড়া লোনঃ
পূবালী ব্যাংক কর্তৃক এ প্রকল্পটির নাম নন রেসিডেন্ট ক্রেডিট স্কিম। ৫০ হাজার হতে ২.৫ লক্ষ টাকা লোন দিবে পূবালী ব্যাংক। ১৩% সুদে ২৪টি কিস্তিতে সর্বোচ্চ ২ বছরের জন্য এ লোন প্রদান করা হবে। কোন প্রকার জামানতের প্রয়োজন নেই এবং প্রথম ২ মাস কোন কিস্তি দিতে হবে না।
লোন লাভের যোগত্যা সমুহঃ
পারিবারিক একজন জামিনদার এবং অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল একজন ব্যক্তিকে এ লোন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। আপনার ভিসা সত্যতা যাচাই-বাছাই হয়ে গেলে, সরাসরি ব্যাংক ম্যানেজার বরাবরে লোনের জন্য দরখাস্ত করতে হবে। ঐ ব্যাংকে সচল একটি সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে অথবা থাকতে হবে। আপনাকে অবশ্যই এই অ্যাকাউন্টটির মাধ্যমে সকল টাকা / রেমিট্যান্স পাঠাতে হবে। তাছাড়াও আপনাকে একটি পরিচ্ছন্ন অঙ্গিকারনামা প্রদান করতে হবে।
আরো পড়ুন: আজকের টাকার রেট (বিভিন্ন দেশের)
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
আবেদনকারীকে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ফরম পূরণ করে এবং স্বাক্ষর প্রদান করে আবেদন করতে হবে। উক্ত আবেদনপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য যে সকল কাগজপত্রাদি জমা দিতে হবে তা হলোঃ
- সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভা/ ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক আবেদনকারীর নামীয় নাগরিক সনদপত্র।
- এক কপি জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- পাসপোর্ট সাইজের রঙিন তিন কপি ছবি (সত্যায়িত)।
- পাসপোর্টের এক কপি ফটোকপি (সত্যায়িত)।
- ভিসার এক কপি ফটোকপি (সত্যায়িত)।
- বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও জনশক্তি এবং প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের অনুমোদনপত্র, গমন পত্র এবং প্রতয়ন পত্রের ১ কপি ফটোকপি।
লোনের জন্য যেভাবে আবেদন করতে হবেঃ
উপরে উল্লেখিত কাগজপত্রাদি নিয়ে ব্যাংকের লোন সেকশনে যোগাযোগ করুন। পরবর্তী সকল কার্যক্রম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ করবে।
উপরোক্ত পাঁচটি ব্যাংক বিদেশ যাওয়ার জন্য জামানত ছাড়া ব্যাংক লোন প্রদান করে থাকে। এ লোনগুলোর বিশেষ সুবিধা হলো আপনাকে জামানত ছাড়া লোন নিয়ে বৈধভাবে বিদেশ গমন করতে পারবেন। এ পোস্টে যদি আপনার কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হলে নিচের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন আমরা আপনার কমেন্টের উত্তর দিব। আপনি নিজে উপকৃত হোন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার মাধ্যমে অন্যকে উপকৃত করুন। আপনার বিদেশ যাত্রা শুভ হোক, ধন্যবাদ।
বিদেশ অবস্থারত ব্যাক্তির পাসপোর্ট এবং বিসা দিয়ে ঋন নেয়া যাবে কি। এবং নিতে হলে কি কি?কাগজ পত্র জমা দিতে হবে সেটা জানাইল অনেল উপকৃত হইতাম।